ই-পেপার সোমবার ১৪ নভেম্বর ২০২২
ই-পেপার |  সদস্য হোন |  পডকাস্ট |  গুগলী |  ডিসকাউন্ট শপ
রোববার ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১২ আশ্বিন ১৪৩২
জাতিসংঘে ভাষণে ফিলিস্তিন নিয়ে কোন দেশের নেতা কী বললেন
নতুন সময় ডেস্ক
প্রকাশ: Saturday, 27 September, 2025, 1:12 PM

জাতিসংঘে ভাষণে ফিলিস্তিন নিয়ে কোন দেশের নেতা কী বললেন

জাতিসংঘে ভাষণে ফিলিস্তিন নিয়ে কোন দেশের নেতা কী বললেন

জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৮০তম বার্ষিক অধিবেশনের চতুর্থ দিন গতকাল শুক্রবার ১৫ দেশের রাষ্ট্রপ্রধান, প্রধানমন্ত্রী বা প্রতিনিধি ভাষণ দেন। নিউইয়র্কে সংস্থাটির সদর দপ্তরে স্থানীয় সময় সকাল ৯টায় এ দিনের কার্যক্রম শুরু হয়।

শুরুতেই ভাষণ দেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। অন্যদের মধ্যে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসসহ চীন, পাকিস্তান, লুক্সেমবার্গ, আয়ারল্যান্ডের নেতারা ভাষণ দেন।

আগের তিন দিনের মতো বিশ্বনেতাদের গতকালের ভাষণেও ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলের আগ্রাসন ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রসঙ্গ প্রাধান্য পেয়েছে।

ভাষণ দিতে বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু মঞ্চে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে গাজায় ইসরায়েলের চলমান জাতিগত নিধনের প্রতিবাদে বেশ কিছু দেশের কয়েক শ নেতা ও প্রতিনিধি অধিবেশন কক্ষ ছেড়ে চলে যান। এতে বক্তৃতা মঞ্চের ঠিক সামনের জায়গাটি প্রায় ফাঁকা হয়ে পড়ে।

মিডল ইস্ট আইয়ের প্রতিবেদনে বলা হয়, বিভিন্ন দেশের নেতা ও কূটনীতিকদের কক্ষ ছাড়ার সময় যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিদলকে হাততালি দিতে দেখা যায়। এ সময় মঞ্চে নেতানিয়াহুকে কিছুক্ষণের জন্য চুপ থাকতে ও এদিক–ওদিক তাকাতে দেখা গেছে।

বিভিন্ন দেশের নেতা ও কূটনীতিকদের অধিবেশন কক্ষ ছেড়ে যাওয়ার ঘটনাকে ইসরায়েলের ‘বিচ্ছিন্ন’ হয়ে পড়ার প্রমাণ বলে এক বিবৃতিতে মন্তব্য করেছে হামাস।

এদিকে নেতানিয়াহুর ভাষণ সরাসরি সম্প্রচার করার জন্য ইসরায়েলের সেনারা গাজাবাসীর মুঠোফোনের নেটওয়ার্ক নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়েছিলেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে নেতানিয়াহু নিজেই এ খবর জানিয়েছেন।

এদিকে গতকাল নেতানিয়াহুর আগমন উপলক্ষে নিউইয়র্কে কয়েক হাজার মানুষ বিক্ষোভ করেন। এসব বিক্ষোভকারীর একটি বড় অংশই ছিল ইহুদি।

অন্যদিকে একই সময় নিউইয়র্কের বিভিন্ন স্থানে, জাতিসংঘ ভবনের সামনে ও টাইমস স্কয়ারে বড় বড় পোস্টারে ‘রিমেম্বার অক্টোবর সেভেন’ লেখা দেখা গেছে। অনেকগুলো ট্রাককেও একই ধরনের পোস্টার নিয়ে শহরজুড়ে ঘুরতে দেখা গেছে। ইসরায়েল সরকার জানায়, নেতানিয়াহুর ভাষণ উপলক্ষে তারা এ উদ্যোগ নিয়েছে।

ফিলিস্তিন নিয়ে কোন নেতা কী বললেন
নেতানিয়াহু গাজায় ‘কাজ শেষ করা’র (ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসকে নির্মূলের) প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। প্রায় ৪৫ মিনিটের ভাষণে তিনি গাজা যুদ্ধ, হামাস, ইরান যুদ্ধ, হিজবুল্লাহ, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও অন্যান্য মিত্র এবং আব্রাহাম চুক্তিসহ নানা বিষয়ে কথা বলেন। যথারীতি তিনি গাজায় জাতিগত নিধনের কথা অস্বীকার করেন।

ভাষণের এক পর্যায়ে নেতানিয়াহু বলেন, ‘এখন আমি আপনাদের একটি সহজ প্রশ্ন করতে চাই, একটি সাধারণ যৌক্তিক প্রশ্ন। যদি কোনো দেশ সত্যিই জাতিগত নিধন চালাত, তবে কি তার নিশানায় থাকা সাধারণ মানুষদের আগে সতর্ক করে প্রাণে বাঁচতে পালানোর সুযোগ দিত?’

সম্প্রতি যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, কানাডা ও অস্ট্রেলিয়াসহ ঐতিহাসিকভাবে ইসরায়েলের মিত্র হিসেবে পরিচিত কিছু দেশ ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। এ প্রসঙ্গে নেতানিয়াহু বলেন, অনেক দেশের নেতাই প্রকাশ্যে নিন্দা জানালেও ব্যক্তিগতভাবে আমাদের ধন্যবাদ জানান।

স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রসঙ্গে নেতানিয়াহু বলেন, ‘(২০০১ সাল) ১১ সেপ্টেম্বর হামলার পর আল-কায়েদাকে নিউইয়র্ক সিটি থেকে এক মাইল দূরে একটি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে দিলে সেটি যেমন হতো, (২০২৩ সাল) ৭ অক্টোবরের পর ফিলিস্তিনিদের জেরুজালেম থেকে এক মাইল দূরে একটি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে দেওয়াও তেমন হবে।’

নেতানিয়াহু মঞ্চ ছাড়ার সময় কিছু দেশের নেতা ও কূটনীতিক হাততালি দেন; কিন্তু এর চেয়ে বেশিসংখ্যক দেশের নেতা ও কূটনীতিক নেতানিয়াহুকে উদ্দেশ করে ব্যঙ্গ করেন।

বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা
গাজায় ইসরায়েলি গণহত্যার কথা উল্লেখ করে শান্তিতে নোবেলজয়ী অধ্যাপক ইউনূস বলেন, শিশুরা না খেয়ে অকালে মৃত্যুবরণ করছে, বেসামরিক জনগোষ্ঠীকে নির্বিচার হত্যা করা হচ্ছে। হাসপাতাল, স্কুলসহ একটি গোটা জনপদ নিশ্চিহ্ন করে ফেলা হচ্ছে। জাতিসংঘের স্বাধীন তদন্ত কমিশনের সঙ্গে একমত যে সবার চোখের সামনেই একটি নির্বিচার গণহত্যা সংঘটিত হচ্ছে। দুর্ভাগ্য যে মানবজাতির পক্ষ থেকে এর অবসানে সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হচ্ছে না। এ অবস্থা চলতে থাকলে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম ও ইতিহাস ক্ষমা করবে না।

স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের জন্য বাংলাদেশের জনগণ ও বিশ্বের বিবেকবান নাগরিকদের পক্ষ থেকে জোরালো দাবি জানিয়ে বাংলাদেশের সরকারপ্রধান বলেন, পূর্ব জেরুজালেমকে রাজধানী করে একটি স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে এ সমস্যার দ্বিরাষ্ট্রভিত্তিক সমাধান এখনই বাস্তবায়ন করতে হবে।

পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী
নেতানিয়াহুর পর ভাষণ দেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ। তিনি ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীরে ইসরায়েলের অবৈধ বসতি সম্প্রসারণ ও গাজায় ইসরায়েলের জাতিগত নিধনমূলক হামলার নিন্দা জানান।

গাজা যুদ্ধকে ‘আমাদের সময়ের সবচেয়ে হৃদয়বিদারক ঘটনা’ হিসেবে উল্লেখ করেন শাহবাজ শরিফ।

হিন্দ রজব নামের ছয় বছর বয়সী ফিলিস্তিনি শিশুকে হত্যার ঘটনাও তুলে ধরেন শাহবাজ। রজব গাজা শহর থেকে পরিবারসহ পালাতে গিয়ে নিহত হয়। গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনের সবচেয়ে ভয়াবহ ঘটনাগুলোর একটি হিসেবে তার গল্প সামনে এসেছে।

‘আমরা সবাই সেই ফোনকল শুনেছি, ছোট্ট হিন্দ মৃত্যুর মুখোমুখি দাঁড়িয়ে ইসরায়েলি আগ্রাসনের মধ্যে বাঁচার জন্য লড়াই করতে করতে কাঁপা গলায় কথা বলছিল’, বলেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী।

‘আপনি কি কল্পনা করতে পারেন, সেই ছোট্ট মেয়ে হিন্দ রজব—যেন আমাদেরই মেয়ে’, প্রশ্ন রেখে শাহবাজ যুদ্ধ বন্ধের আহ্বান জানান।

চীনের প্রধানমন্ত্রী
চীনের প্রধানমন্ত্রী লি কিয়াং তাঁর দীর্ঘ ভাষণে ফিলিস্তিন ইস্যু ছাড়াও আন্তর্জাতিক সহযোগিতা, বিভিন্ন দেশের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কারোপ এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসহ (এআই) আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক নানা বিষয়ে কথা বলেন।

চীন বিশ্বশান্তি ও নিরাপত্তার দৃঢ় রক্ষক এবং ভবিষ্যতেও তা–ই থাকবে উল্লেখ করে লি বলেন, ‘ইউক্রেন– সংকট এবং ফিলিস্তিন-ইসরায়েলের মতো সংঘাতময় এলাকার সমস্যায় শান্তি আলোচনা নিয়ে কাজ করছে চীন। ভবিষ্যতেও এ ধরনের সমস্যা রাজনৈতিকভাবে সমাধান করতে চীন গঠনমূলক ভূমিকা রাখবে।’

সেন্ট ভিনসেন্টের প্রধানমন্ত্রী
ক্যারিবীয় অঞ্চলের দেশ সেন্ট ভিনসেন্ট অ্যান্ড দ্য গ্রেনাডাইন্সের প্রধানমন্ত্রী রালফ গঞ্জালেস বলেন, গাজায় ইসরায়েলের যুদ্ধ ফিলিস্তিনিদের ও আন্তর্জাতিক আইনের প্রতি অবমাননা।

রালফ গঞ্জালেস বলেন, ‘নিশ্চয়ই, নরকের সবচেয়ে উষ্ণ পথ তাদের জন্য সংরক্ষিত, যারা গণহত্যার দায়ে অপরাধী বা এতে সহায়ক।’ কাতারে হামাস নেতাদের ওপর ইসরায়েলের হামলাকে ‘গ্রহণযোগ্য নয়’ বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

আয়ারল্যান্ডের নেতা
আয়ারল্যান্ডের নেতা মাইকেল মার্টিন বিশ্ব সম্প্রদায়ের প্রতি গাজায় ইসরায়েলের জাতিগত নিধনের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান।

মার্টিন বলেন, আয়ারল্যান্ড গাজাবাসীর সঙ্গে সংহতি বজায় রাখে। তিনি ইসরায়েলের যুদ্ধকে ‘মানবিক মর্যাদা ও নৈতিকতার প্রতি অবজ্ঞা’ হিসেবে সমালোচনা করেন।

মার্টিন আরও বলেন, ‘আমরা দেখছি, ক্ষুধাকে যুদ্ধের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। শিশুরা ক্ষুধায় মারা যাচ্ছে, অথচ ত্রাণ সীমান্তে (দাঁড়িয়ে থাকা ট্রাকে) নষ্ট হচ্ছে। খাবার সংগ্রহের চেষ্টাকালে মানুষকে গুলি করা হচ্ছে। স্কুল, হাসপাতাল, মসজিদ ও সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানকে উদ্দেশ্যমূলকভাবে ধ্বংস করা হচ্ছে।’

গ্রিসের প্রধানমন্ত্রী
গাজায় চলমান যুদ্ধ ইসরায়েলের আন্তর্জাতিক বিচ্ছিন্নতার ঝুঁকি বাড়াচ্ছে বলে মন্তব্য করেন গ্রিসের প্রধানমন্ত্রী কিরিয়াকোস মিতসোটাকিস।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর বিশ্ব বর্তমানে সবচেয়ে বেশি সশস্ত্র সংঘাত প্রত্যক্ষ করছে উল্লেখ করে মিতসোটাকিস বলেন, কোনো সামরিক লক্ষ্য তা যত মূল্যবানই হোক, সেটির মাধ্যমে হাজার হাজার শিশুর মৃত্যু, ১০ লাখের বেশি ফিলিস্তিনিকে জোরপূর্বক স্থানান্তর ও ফিলিস্তিনি জনগণের মানবিক ভোগান্তিকে যৌক্তিক হিসেবে দাঁড় করাতে পারে না।

কিরিয়াকোস মিতসোটাকিস ইসরায়েল–ফিলিস্তিন সংকটের দ্বিরাষ্ট্রীয় সমাধান, গাজায় যুদ্ধবিরতি এবং বড় পরিসরের মানবিক সহায়তা পৌঁছানোর ওপর জোর দেন।

এদিকে গতকাল সকাল থেকে ইসরায়েলি হামলায় গাজায় অন্তত ৫২ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এ নিয়ে অবরুদ্ধ উপত্যকাটিতে ইসরায়েলের প্রায় দুই বছরের আগ্রাসনে নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ৬৫ হাজার ৫৪৯ এ।

পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ
সম্পাদক : নাজমুল হক শ্যামল
দৈনিক নতুন সময়, গ্রীন ট্রেড পয়েন্ট, ৭ বীর উত্তম এ কে খন্দকার রোড, মহাখালী বা/এ, ঢাকা ১২১২।
ফোন: ৫৮৩১২৮৮৮, ০১৯৯৪ ৬৬৬০৮৯, ইমেইল: info@notunshomoy.com
সম্পাদক মন্ডলীর সভাপতি: এমদাদ আহমেদ | প্রকাশক : প্রবাসী মাল্টিমিডিয়া কমিউনিকেশন লি.-এর পক্ষে কাজী তোফায়েল আহম্মদ | কপিরাইট © দৈনিক নতুন সময় সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত | Developed By: i2soft
DMCA.com Protection Status