ই-পেপার সোমবার ১৪ নভেম্বর ২০২২
ই-পেপার |  সদস্য হোন |  পডকাস্ট |  গুগলী |  ডিসকাউন্ট শপ
রোববার ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১২ আশ্বিন ১৪৩২
প্রবাসী বাংলাদেশিরা রাজনীতিতে জড়ায় কার স্বার্থে?
নতুন সময় প্রতিবেদক
প্রকাশ: Thursday, 25 September, 2025, 7:36 PM

প্রবাসী বাংলাদেশিরা রাজনীতিতে জড়ায় কার স্বার্থে?

প্রবাসী বাংলাদেশিরা রাজনীতিতে জড়ায় কার স্বার্থে?

দেশে সংঘর্ষ-সহিংতার রাজনীতির যে চর্চা দেখা যায়, বিদেশের মাটিতেও আওয়ামী লীগ, বিএনপিসহ বিভিন্ন দলের রাজনীতি এভাবেই কেন চলছে–– এই প্রশ্নে নতুন করে আলোচনা বা বিতর্ক দেখা দিয়েছে।

বিভিন্ন সময়ই যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ ইউরোপ এবং মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোয় বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর সমর্থনে প্রবাসীদের দলাদলি এমনকি সংঘর্ষে জড়ানোর অনেক অভিযোগ উঠেছে।

সর্বশেষ অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সফরসঙ্গী এনসিপি নেতা আখতার হোসেনের ওপর নিউইয়র্কে ডিম নিক্ষেপ বা হেনস্তা করার ঘটনায় সেখানে দেশি রাজনীতির উত্তাপ ছড়িয়েছে।

কিন্তু বাংলাদেশের আইনে ভৌগোলিক সীমানার বাইরে দেশের রাজনৈতিক দলের শাখা বা কমিটি গঠনে বিধি-নিষেধ থাকলেও তা কাগজে-কলমেই রয়ে গেছে।

বরং, বিদেশে অব্যাহতভাবে চলছে দেশীয় রাজনীতির সমর্থনে দলাদলিসহ নানা তৎপরতা। আর এ ক্ষেত্রে ক্ষমতার সাথে থাকা বা ব্যক্তিস্বার্থ বড় একটা বিষয় এবং একইসঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোরও দায় রয়েছে বলে মনে করেন রাজনীতির পর্যবেক্ষকেরা।

এখানে উদাহরণ টানলে দেখা যায়, ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের শাসনে যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের একজন নেতা দেশে এসে ওই দলের মনোনয়নে সিলেটে মেয়র হয়েছিলেন। অনেকের এমপি হওয়ার গল্পও রয়েছে।

এখন আবার জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশ থেকে বিএনপি সমর্থক অনেকে দেশে এসেছেন, অনেকে আছেন আসা-যাওয়ার মধ্যে।

যদিও কোনো রাজনৈতিক দলই বিদেশে দেশীয় রাজনীতির তৎপরতা বা দলাদলি সমর্থন করে না–– এমন বক্তব্যই দিচ্ছেন নেতারা।

কিন্তু তারা তাদের কথা ও কাজের ফারাকটা লুকাতে পারছেন না। দেশের বাইরে দলীয় কর্মকাণ্ড বন্ধে কোনো দলের কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেই। বরং তারা ফায়দা নিচ্ছেন বলে বিশ্লেষকেরা মনে করেন।


প্রবাসীরা কেন দেশি রাজনীতিতে

যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যে বিএনপি ও আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সম্পৃক্ত কয়েকজনের সঙ্গে কথা বললে তারা দাবি করেন, অন্য দেশের নাগরিকত্ব নিলেও তারা নিজ দেশের উন্নয়নের জন্য, অর্থাৎ বাংলাদেশের স্বার্থে এই রাজনীতি করছেন।

কিন্তু সাধারণ চোখে দেখলে ব্যক্তি ও দলের নেতাদের স্বার্থ সেখানে বড় বিষয় বলে মনে হয়। আর ব্যক্তিস্বার্থের ক্ষেত্রে বড় লক্ষ্য থাকে নিজ দেশে ক্ষমতার স্বাদ পাওয়া বা ক্ষমতার কাছাকাছি থাকা।

লন্ডন ও নিউইয়র্কে একাধিক প্রবাসী সাংবাদিকের সঙ্গে কথা বলেও এমন ধারণা পাওয়া যায়। এর অনেক উদাহরণ দেশের মানুষের কাছেও আছে।

২০২৩ সালের জুন মাসে অনুষ্ঠিত সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের টিকেটে মেয়র নির্বাচিত হন যুক্তরাজ্যপ্রবাসী আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী। বিলেত থেকে এসে তার মেয়র প্রার্থী হওয়ার ঘটনায় খোদ আওয়ামী লীগের সিলেটের নেতা-কর্মীরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন, জানিয়েছিলেন প্রতিবাদ। কিন্তু সে সময় স্থানীয় নেতা-কর্মীদের সেই ক্ষোভ-প্রতিবাদ আমলে নেয়নি আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃত্ব।

অভিযোগ রয়েছে, শীর্ষ নেতৃত্বের আশীর্বাদে যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী লন্ডন থেকে দেশে এসে সিলেটে দলটির মেয়র প্রার্থী হয়েছিলেন। তবে জুলাই গণ-অভ্যত্থানে আওয়ামী লীগের শাসনের পতন হলে দেশ ছেড়ে আবার লন্ডন চলে গেছেন মি. চৌধুরী।

লন্ডন থেকে আরেকজনের দেশে এসে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নিয়ে এমপি হওয়ার গল্পটা আরও চমকপ্রদ। জানা গেছে, ওই ব্যক্তির লন্ডনে একটি কমিউনিটি হল আছে। সেই হলে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হতো। এর জন্য কোনো অর্থ নিতেন না ওই ব্যক্তি।

এর প্রতিদান তিনি নিয়েছিলেন এবং দেশে এসে আওয়ামী লীগের টিকেটে এমপি হয়েছিলেন। বিদেশে থাকা বিএনপির সমর্থকদের ক্ষেত্রেও অনেক উদাহরণ আছে এবং এখন নতুন করে তৈরি হচ্ছে।

দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বিগত আওয়ামী লীগের শাসনের সময়টাতে ১৭ বছর ধরে লন্ডনে অবস্থান করছেন। সেকারণে যুক্তরাজ্যে বিএনপির সমর্থকদের তৎপরতা ছিল বেশি।

দেশে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর লন্ডন থেকে বিএনপির অনেকেই এখন দেশে এসেছেন। শুধু যুক্তরাজ্য নয়, যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলোতে বসবাসকারী বিএনপির রাজনীতিতে সম্পৃক্ত অনেকেই আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার চিন্তা থেকে বাংলাদেশমুখী হয়েছেন বলে দলটির সূত্রে জানা গেছে।

লন্ডন প্রবাসী সাংবাদিক বুলবুল হাসান বিবিসি বাংলাকে বলেন, "ব্রিটেনে প্রবাসী বাংলাদেশিদের রাজনীতিতে যুক্ত হওয়ার পেছনে নানা বাস্তবতা কাজ করে। কেউ কেউ বাংলাদেশে ক্ষমতার কাঠামোর কাছাকাছি থাকতে চান, কেউ আবার দেশে জমি রক্ষা, ব্যবসা-বাণিজ্য কিংবা তদবিরের মাধ্যমে আর্থিকভাবে লাভবান হন।

যুক্তরাষ্ট্রের চিত্রটাও একইরকম বলে জানিয়েছেন নিউইয়র্কের একাধিক সাংবাদিক। বিদেশে থেকে দেশি রাজনীতিতে সম্পৃক্তদের একটা অংশের কাছে দেশে সম্পদ ও ব্যবসা-বাণিজ্য রক্ষা করাটা বড় বিষয়। দেশের বড় কোনো দলের সঙ্গে যুক্ত থাকলে সেটা করা সম্ভব বলে তাদের ধারণা।

প্রবাসে যারা দেশের কোনো দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত, সেই দল ক্ষমতায় গেলে তাদের জন্য তদবির করা সহজ–– বলছিলেন লন্ডনে বসবাসকারী একাধিক বাংলাদেশি। এর কারণ ব্যাখ্যায় তারা বলেন, দেশে মন্ত্রী, এমপিদের সঙ্গে দেখা করা বেশ কঠিন।

কিন্তু দলের নেতারা যখন লন্ডনে আসেন, তখন সেখানকার সমর্থকেরা তাাদের সংবর্ধনা দেওয়াসহ যথেষ্ট সময় দিয়ে থাাকেন। এগুলোও এক ধরনের বিনিয়োগ। সেই নেতারা মন্ত্রী-এমপি হলে অতীতের বিনিয়োগের প্রতিদান পাওয়ার সুযোগ তৈরি হয়। ফলে অনেকে তদবির বাণিজ্যে জড়িয়ে পড়েন।

পশ্চিমা অন্য দেশগুলো থেকেও একইরকম ধারণা পাওয়া যায়। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ পশ্চিমা দেশগুলোতে নাগরিকত্ব পেয়ে যারা বসবাস করছেন, তাদের একটা বড় অংশ ওই দেশগুলোর মূলধারার রাজনীতিতে যেতে পারেন না বা সেভাবে অবস্থান তৈরি করতে পারেন না।

তাদের অনেকে সেখানকার কমিউনিটিতে প্রভাব তৈরি করা এবং দেশে সুবিধা পাওয়ার ব্যক্তিস্বার্থ থেকে দেশি রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হন। একেবারে রাজনৈতিক আদর্শ ধারণ করেও অনেকে দেশি রাজনীতিতে যুক্ত রয়েছেন। তবে সেই সংখ্যাটা অনেক কম। এমন ধারণা পাওয়া যায় প্রবাসীদের অনেকের সঙ্গে কথা বলে।

আরেকটি অংশ আছেন, যারা অবৈধভাবে ওই দেশে যান, তারা রাজনৈতিক আশ্রয় চেয়ে আবেদন করেন। তারা তাদের অবস্থানের কারণে দেশি রাজনীতির সঙ্গ যুক্ত হন। দলগুলোরও স্বার্থ রয়েছে। কোনো কোনো দলের জন্য ডোনেশন বা আর্থিক সহায়তা পাওয়ার একটা বিষয় রয়েছে বলে পর্যবেক্ষকেরা বলছেন।

দেশের দলগুলো কাজ করছে কীভাবে?

মধ্যপ্রাচ্য এবং পশ্চিমা দেশগুলোসহ যে সব দেশে প্রবাসীরা দেশি রাজনীতিতে যুক্ত। সে সব দেশে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির অবস্থান অনেক পুরোনো।

যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যে কোনো দল বা সংগঠন করতে হলে তার নিবন্ধন করতে হয়। তবে বাংলাদেশের বিভিন্ন দলের নামে যারা রাজনীীতি করেন, সে সব ব্যানারের কোনো নিবন্ধন নেই বলে জানা গেছে। এছাড়া বাংলাদেশের আইনে বিদেশে কোনো দলের শাখা গঠনে বিধি-নিষেধ আছে।

সে কারণে পশ্চিমা দেশগুলোয় দলের শাখা হিসেবে ব্যবহার করা হয় না। যেমন যুক্তরাষ্ট্র বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ, যুক্তরাষ্ট্র বিএনপি। এই একইরকম ব্যানার ব্যবহার করা হয় যুক্তরাজ্যেও।

তবে তাদের কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে দেশের মূল দলের শীর্ষ নেতৃত্বের অনুমোদন নেওয়া হয় বলে সংশ্লিষ্টরা বলছেন।

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের ছাত্র নেতৃত্বের দল জাতীয় নাগরিক পার্টি বা এনসিপিও বিভিন্ন দেশে কমিটি করেছে বলে জানা গেছে। গণঅধিকার পরিষদের ৫০টির মতো দেশে প্রবাসী অধিকার পরিষদ নামে সংগঠন রয়েছে দলটির একাধিক নেতা জানিয়েছেন।

তবে বিদেশে দলের তৎপরতায় জামায়াতে ইসলামী কৌশল একেবারে ভিন্ন। দলের নাম দিয়ে বিদেশে তাদের কোনো তৎপরতা নেই।

জামায়াতের নেতা-কর্মী-সমর্থকেরা যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ ইউরোপে ও মধ্যপ্রাচ্যে তাদের দলীয় নাম বাদ দিয়ে সামাজিক, স্বেচ্ছ্বাসেবক, মুসলিম উম্মাহসহ বিভিন্ন নামে বা ব্যানারে তৎপরতা চালায়।

এ সব সংগঠনের ব্যানারেই পশ্চিমা দেশগুলোয় প্রবাসী বাংলাদেশিদের মধ্যে একটা শক্ত অবস্থান তৈরি করেছে তারা। প্রবাসীদের রাজনীতির পর্যবেক্ষকেরা বলছেন, বিদেশেও তৎপরতা চালানোর ক্ষেত্রে কৌশলী জামায়াত।

কিন্তু অন্য দলগুলো প্রকাশ্যে দেশের ধারাতেই তাদের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড চালায়। তাদের কমিটি গঠন নিয়ে দ্বন্দ্ব অনেক সময় সংঘর্ষেও রুপ নেয়। আবার প্রতিপক্ষকে হেনস্তা করার অনেক ঘটনা ঘটে বলেও অভিযোগ রয়েছে।

প্রতিপক্ষকে হেনস্তা করার ঘটনা বেড়েছে কেন

অল্প সময়ের ব্যবধানে হেনস্তা বা অপদস্ত করার কয়েকটি ঘটনায় নানা আলোচনার জন্ম দিয়েছে।

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের সভায় যোগ দিতে যুক্তরাষ্ট্রে গেছেন। তার সফরসঙ্গী হয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, জামায়াতের নায়েব আমির সৈয়দ আব্দুল্লাহ মো. তাহেরসহ তিনটি দলের পাঁচজন রাজনীতিক।

অধ্যাপক ইউনূসের সফরের বিরোধিতা করে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সমর্থকেরা নিউইয়র্কে কর্মসূচি নিয়েছিল, এর পাল্টা কর্মসূচি পালন করেছে বিএনপি। তবে নিউ ইয়র্কে বিমানবন্দরে আওয়ামী লীগের কর্মসূচি থেকে প্রধান উপদেষ্টার সফরসঙ্গী এনসিপির সদস্য সচিব আখতার হোসেনের পিঠে ডিম নিক্ষেপ করা হয়। যে ঘটনায় বাংলাদেশের রাজনীতির উত্তাপ ছড়ায় নিউইয়র্কে।

এর অল্প কিছুদিন আগে সেপ্টেম্বর মাসেই অন্তর্বর্তী সরকারের তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলমের ওপর নিউইয়র্কে আক্রমণের চেষ্টার অভিযোগ ওঠে। যুক্তরাষ্ট্র থেকে মাহফুজ আলম লন্ডন সফরে যান। সেখানেও তার ওপর আক্রমণের চেষ্টা বা হেনস্তা করার অভিযোগ ওঠে আওয়ামী লীগের সমর্থকদের বিরুদ্ধে।

এই দুটি ঘটনার ভিডিও ভাইরাল হয় সামাজিক মাধ্যমে। এর আগে গত জুলাই মাসে সুইজারল্যান্ডে সফরে গিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল হেনস্তার শিকার হন। একটা ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই এ ঘটনাগুলো ঘটেছে।

জুলাই গণ-অভ্যত্থানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক কার্যক্রম দেশে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। ফলে দলটি ইউরোপ, আমেরিকাসহ বিভিন্ন দেশে আওয়ামী লীগের ব্যানারে তৎপরতা বাড়িয়েছে।

তাদের ক্ষোভ মূলত তাদের শাসনের পতনের আন্দোলনের নেতৃত্ব ও অন্তর্বর্তী সরকারের ওপর। আর সে কারণে সরকারের উপদেষ্টারা কোনো দেশে সফরে গেলে সেই দেশে আওয়ামী লীগের ব্যানারে কর্মসূচি নিয়ে প্রতিবাদ করতে দেখা যাচ্ছে। তবে বিদেশে দলের ব্যানারে ক্ষোভ প্রকাশ বা প্রতিবাদের ঘটনা নতুন নয় বলে বিশ্লেষকেরা বলছেন।

এর আগে আওয়ামী লীগের শাসনের সময়ে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যখন আমেরিকা, ইউরোপসহ যেখানেই সফরে গেছেন, বিএনপির সমর্থকেরা তাদের দলের ব্যানারে সেই সফরের প্রতিবাদ করেছেন। তখন আওয়ামী লীগও পাল্টা স্বাগত জানানোর কর্মসূচ পালন করতো।

আরও পিছনে গেলে দেখা যায়, বিএনপি যখন ক্ষমতায় ছিল, সে সময়ের প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া বিদেশ সফরে গেলে তখন সেই দেশে আওয়ামী লীগ প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করেছে। অতীতেও স্বাগত জানানো, অন্যদিকে প্রতিবাদ-পাল্টাপাল্ট কর্মসূচি ছিল।

এখন আওয়ামী লীগের দিক থেকে মাত্রাটা বেড়েছে। বিশ্লেষকেরা বলছেন, দেশের ভেতরে কার্যক্রম নিষিদ্ধ থাকায় আওয়ামী লীগ বিদেশে বেশি সক্রিয় হয়েছে। সেজন্য প্রতিপক্ষ কেউ কোনো দেশে সফরে গেলেই আওয়ামী লীগ সেখানে কর্মসূচি নিচ্ছে, যা চোখে পড়ছে।

বাংলাদেশের বিধানে দুর্বলতা কোথায়

এক এগারোর সরকার বা সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ও সংস্কার একটা বড় ইস্যু ছিল। সেই সরকারের আমলে ২০০৮ সালে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে যুক্ত করা হয়েছিল যে, দেশে কোনো দল অন্য কোনো দেশে দলের শাখা রাখতে পারবে না।

এট রাজনৈতিক দলের শর্ত হিসেবে বিধান রাখা হয়েছে। তবে আইনে বিধি-নিষেধ থাকলেও শাস্তির বিষয় রাখা হয়নি বলে জানান নির্বাচন পর্যবেক্ষক আব্দুল আলীম।

তিনি বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ে নির্বাচন কমিশন সম্পর্কিত সংস্কার কমিশনের সদস্য।

তিনি বলেন, বিদেশে কোনো দলের শাখা থাকলে তার নিবন্ধন বাতিল হবে কিনা অথবা শাস্তি কী হবে-তা বলা নেই। এটি আইনের বড় দুর্বলতা বলে মনে করেন মি. আলীম। তারা এ ব্যাপারে সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে প্রস্তাব দিয়েছেন।

এছাড়া তিনি উল্লেখ করেন, নির্বাচন কমিশনের তদারকি করার ব্যবস্থাও গড়ে তোলা হয়নি। ফলে আইন বা বিধি-নিষেধ কাগজে-কলমেই রয়ে গেছে বলে মন্তব্য করেন ওই নির্বাচনি পর্যবেক্ষক।

দলগুলো কি দায় এড়াতে পারে

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ, জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারী জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার এবং গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খাঁনসহ কয়েকজন রাজনীতিকরে সঙ্গে বিষয়ে কথা হয়।

তারা কিন্তু বিদেশে তাদের দলের শাখা হিসেবে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনার অভিযোগ মানতে রাজি নন।

বিষয়টাতে তাদের সবার বক্তব্য একইরকম। তারা বলছেন, যে সব দেশে তাদের দলের সমর্থকেরা রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে, তা সেই দেশের আইন মেনেই তারা করছেন। বাংলাদেশের আইনও অমান্য করা হচ্ছে না।

তবে এই রাজনীতিকেরা বলছেন, নিউইয়র্কে এনসিপি নেতা আখতার হোসেনকে হেনস্তা করা বা এ ধরনের ঘটনাগুলো আন্তর্জাতিক পর্যায়ে দেশে ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করছে।

বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন আহমদ আহমদ মনে করেন, বিদেশে বাংলাদেশের দলগুলো সমর্থকদের তৎপরতা একতরফাভাবে বা কোনো একট দল এককভাবে বন্ধ করবে না। আলোচনার মাধ্যমে সব দল ঐকমত্যে এলে তখন তা সম্ভব হতে পারে।

কিন্তু এ বিষয়ে দলগুলোর সদিচ্ছা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে বিশ্লেষকদের। তারা বলছেন, আইনে যাই থাকুক না কেন, রাজনৈতিক দলগুলো না চাইলে বিদেশে দেশি রাজনীতির প্রশ্নে কোনো পরিবর্তন আসবে না।

পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ
সম্পাদক : নাজমুল হক শ্যামল
দৈনিক নতুন সময়, গ্রীন ট্রেড পয়েন্ট, ৭ বীর উত্তম এ কে খন্দকার রোড, মহাখালী বা/এ, ঢাকা ১২১২।
ফোন: ৫৮৩১২৮৮৮, ০১৯৯৪ ৬৬৬০৮৯, ইমেইল: info@notunshomoy.com
সম্পাদক মন্ডলীর সভাপতি: এমদাদ আহমেদ | প্রকাশক : প্রবাসী মাল্টিমিডিয়া কমিউনিকেশন লি.-এর পক্ষে কাজী তোফায়েল আহম্মদ | কপিরাইট © দৈনিক নতুন সময় সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত | Developed By: i2soft
DMCA.com Protection Status