ফেব্রুয়ারিতে কি পিআর নির্বাচন সম্ভব?
নতুন সময় প্রতিবেদক
|
![]() ফেব্রুয়ারিতে কি পিআর নির্বাচন সম্ভব? জামায়াতে ইসলামীসহ কয়েকটি রাজনৈতিক দল নির্বাচন পদ্ধতিতে পরিবর্তনের দাবি তুলেছে। তাদের মতে, আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব বা পিআর পদ্ধতি গ্রহণ করলে দেশের বহুমাত্রিক রাজনৈতিক মতামত ও ক্ষুদ্র দলগুলোর উপস্থিতি সংসদে যথাযথভাবে প্রতিফলিত হতো। তবে নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা জানাচ্ছেন, সংবিধান অনুযায়ী তাদের হাতে খুব বেশি বিকল্প নেই। তাই তারা ধাপে ধাপে ভোটার তালিকা হালনাগাদ, ভোটকেন্দ্র নির্ধারণ, প্রযুক্তিগত প্রস্তুতি, নিরাপত্তা পরিকল্পনা এবং আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক আমন্ত্রণের কাজ এগিয়ে নিচ্ছে। এরই মধ্যে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দিন বৃহস্পতিবার জানিয়েছেন, আরপিওতে (গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ) পিআর নেই এবং আরপিও সামনে রেখেই কমিশনকে এগোতে হচ্ছে। যদিও তার এই বক্তব্যের সমালোচনা করেছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। দলটির সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, ‘প্রধান নির্বাচন কমিশন কর্মকর্তা একটা দলের মতো কথা কেন বলবেন?’ এখন ফেব্রুয়ারিতেই ভোট করতে হলে হাতে থাকা সময়ের মধ্যে পিআর পদ্ধতিতে যাওয়ার বাস্তবতা আর আছে কি না, সেই প্রশ্ন সামনে আসছে। নির্বাচন কমিশনের সাবেক অতিরিক্ত সচিব জেসমিন টুলি মনে করেন, পিআর পদ্ধতি বাস্তবায়নে রয়েছে আইনগত, প্রশাসনিক ও জনসচেতনতার চ্যালেঞ্জ। তিনি বলেন, ‘ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন আয়োজনের যে লক্ষ্য, সেই সময়ের মধ্যে পিআর পদ্ধতি বাস্তবায়ন কোনোভাবেই সম্ভব নয়। মিয়া গোলাম পরওয়ার অবশ্য সময়ের প্রতিবন্ধকতা মানতে নারাজ। তিনি বলেন, “যদি রাজনৈতিক দলগুলো পিআর পদ্ধতির দাবিতে একমত হয়, তাহলে এটি বাস্তবায়ন করা ‘ম্যাটার অব ওয়ান মান্থ (এক মাসের ব্যাপার)’।” বাংলাদেশে যে পদ্ধতিতে সংসদ সদস্য নির্বাচন হয়, তাকে বলা হয় ফার্স্ট পাস্ট দ্য পোস্ট বা এফপিটিপি। সর্বোচ্চ ভোট যেখানে একমাত্র নিয়ামক। যুক্তরাজ্যের ইলেকশন রিফর্ম সোসাইটির তথ্য বলছে, ওয়েস্টমিনস্টার ধারার অনেক গণতান্ত্রিক দেশ এই পদ্ধতি অনুসরণ করে। আবার অনেক দেশ এই পদ্ধতি থেকে বেরিয়ে আনুপাতিক পদ্ধতির দিকে ঝুঁকেছে। বাংলাদেশে আগে থেকেই বিভিন্ন দল আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বের কথা বলে আসলেও চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানের পর এই দাবি জোরেশোরে উঠতে থাকে। বিশেষ করে, আন্দোলনের নেতৃত্বদানকারী তরুণদের দল জাতীয় নাগরিক পার্টি এবং ইসলামপন্থী দল জামায়াতে ইসলামী সোচ্চার হয়। অন্যদিকে বর্তমানে বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ রাজনৈতিক দল বিএনপি এই পদ্ধতির বিরোধিতা করে প্রচলিত সংসদীয় পদ্ধতিতে নির্বাচনের পক্ষেই অবস্থান করছে। দুই পক্ষ অনড় অবস্থানে থাকায় এ বিষয়ে কোনো অগ্রগতি হয়নি ঐকমত্য কমিশনের আলোচনায়। নির্বাচন বিশেষজ্ঞ জেসমিন টুলি বলছিলেন, এমন বাস্তবতায় যদি এখন পিআর চালু করতেও হয়, বেশ কয়েকটি ধাপ অতিক্রম করতে হবে, যা সময়সাপেক্ষ। প্রথমত সংবিধানের ৬৫ অনুচ্ছেদে সংশোধনী আনতে হবে। এই অনুচ্ছেদে সংসদ প্রতিষ্ঠার বিধান বর্ণনা করা হয়েছে। এরপর সেই সংশোধনের ভিত্তিতে আইন প্রণয়ন করতে হবে। আইনের আলোকে বিধিমালা তৈরি করতে হবে। আর এই বিধিমালা বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজন প্রশিক্ষিত জনবল। বাংলাদেশে দীর্ঘদিন ধরে এফপিটিপি পদ্ধতিতে নির্বাচন হয়ে আসছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, মাঠ পর্যায়ে মানুষ এই পদ্ধতিতে অভ্যস্ত। তারা নিজের এলাকার প্রার্থীকে ভোট দেয়। পিআর পদ্ধতিতে ভোট দেওয়ার ধরন ভিন্ন, তাই জনগণকে নতুনভাবে বোঝাতে হবে। পিআর পদ্ধতির ধরন, ক্যান্ডিডেট নির্বাচন, ভোট গণনা—সবকিছু ভোটারদের ‘বুঝিয়ে বলার জন্য প্রয়োজন ব্যাপক জনসচেতনতা কর্মসূচি’। জেসমিন টুলি বলেন, “ফেব্রুয়ারির মধ্যে পিআর পদ্ধতি বাস্তবায়ন ‘কোনোভাবেই সম্ভব নয়’। সব মিলিয়ে যে সিস্টেমটা তৈরি করতে হবে সেটা বছর দেড়েকের আগে শেষ করা সম্ভব হবে বলে মনে করি না।” জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, “সংবিধান, আরপিও সবই সংশোধনযোগ্য। সিইসির বক্তব্য ‘একপেশে’। এগুলো কোনো একটা দলকে খুশি করার জন্য বলা।” |
পূর্ববর্তী সংবাদ | পরবর্তী সংবাদ |