স্কুল শিক্ষক অপহরণ, নেপথ্যে একাধিক ছাত্রীর সঙ্গে অশ্লীলতা
নতুন সময় ডেস্ক
|
![]() স্কুল শিক্ষক অপহরণ, নেপথ্যে একাধিক ছাত্রীর সঙ্গে অশ্লীলতা বিষয়টি নিয়ে ভুক্তভোগী ছাত্রী পুলিশ সুপারের কাছে অভিযোগ দিয়েছেন। এদিকে অপহরণের ঘটনায় কোতয়ালী থানায় মামলা দায়ের করেছেন ওই শিক্ষক। শংকর বৈরাগী শহরের ঈশান বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের আইসিটি বিভাগের সহকারী শিক্ষক হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। তিনি ওই স্কুলের নবম-দশম শ্রেণিতে গণিতের ক্লাস নিতেন। গত ৩ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় শহরের অম্বিকা মেমোরিয়াল সামনে থেকে একটি রিকশায় কয়েক যুবকের সঙ্গে চলে যায় সে। এর মাত্র ২০ মিনিটের মধ্যে তার স্ত্রী কোতয়ালী থানা পুলিশকে অবগত করেন এবং তার স্বামী অপহরণের শিকার হয়েছেন বলে পুলিশকে জানান। পরে কোতয়ালী থানা পুলিশ রাত ১০টার দিকে শহরতলীর আদমপুর মোল্যাডাঙ্গীর কালাম মোল্যার বাড়ি থেকে উদ্ধার করে শংকর বৈরাগীকে। এ ঘটনায় ওই শিক্ষক বাদী হয়ে কোতয়ালী থানায় অপহরণ মামলা করেছেন। মামলায় শহরের গুহলক্ষীপুরের সেকেন্দার আলী মোল্যার ছেলে আশিকুজ্জামান সানিম (২৮) কে একমাত্র আসামি হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। তবে এ ঘটনায় নেপথ্যে চাঞ্চল্যকর তথ্য ওঠে এসেছে। স্কুলটির দুইজন এসএসসি পরীক্ষার্থীর (ক ও খ) সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ওই শিক্ষক তার বাসায় ছাত্রীদের প্রাইভেট পড়াতেন। সেই সুবাদে ছাত্রীদের পরীক্ষায় ভালো ফলাফলের আশ্বস্ত করে বিভিন্ন সময় কুপ্রস্তাব দিতেন। রাজি না হলে পরীক্ষা না দেওয়ার এবং ফেল করিয়ে দেওয়ার হুমকিও দেওয়া হয়। এই সুযোগে এক ছাত্রীর সঙ্গে সম্পর্কে রুপ নেয় তার। পরে ওই ছাত্রীর সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্ক গড়ে ওঠে। বিষয়টি তারা স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা শামসুন নাহারকে গত তিন মাস আগে অবগত করেন। কিন্তু স্কুল কর্তৃপক্ষ বিষয়টি ধামাচাপা দেন এবং ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে কার্যকরী পদক্ষেপ না নেওয়ায় আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠেন তিনি। বিষয়টি নিয়ে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা শামসুন নাহারের কাছে জানতে চাইলে তিনি সবকিছুর ঊর্ধ্বে শিক্ষক অপহরণের বিচারের দাবি করেন এবং কিছু অভিযোগ পাওয়ার পর প্রতিষ্ঠানের স্বার্থে ধামাচাপা দেওয়া হয়েছে বলে স্বীকার করেন। তিনি বলেন, আমি আজও লিখিত অভিযোগ পাইনি এবং অশ্লীল কিছু দেখিনি। তারপরও মৌখিকভাবে আমাকে জানালে আমি ওই শিক্ষককে নবম-দশম শ্রেণির ক্লাস নিতে নিষেধ করেছি। ঘটনার পর নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ‘ক’ ছাত্রী জানান, স্যার (শংকর বৈরাগী) একাধিক ছাত্রীর সঙ্গে কুকর্ম করেছেন। কিছুদিন আগে স্কুল থেকে স্যার আমাকে ডেকে শারিরীক সম্পর্কের প্রস্তাব দেয় এবং টাকা দেওয়ার প্রলোভন দেখায়। আমি রাজি না হওয়ায় পরীক্ষা দিতে দিবে না বলে হুমকি দেয়। অনেক বড় আপুদের সঙ্গেও এরকম ঘটনা ঘটিয়েছে। আমার এক বান্ধবীর (গ) সঙ্গেও শারিরীক সম্পর্ক করেছে। বিষয়টি হেডম্যাডামকে বললে তিনি চুপ থাকার কথা বলেন এবং জানাজানি করলে পরীক্ষা দিতে দিবে না বলে ম্যাডামও হুমকি দেন। তখন আমার পরিবারকে জানাই। পরে এলাকার বড় ভাইদের ঘটনাটি জানানো হয়। বর্তমানে আমি স্কুলেও যেতে পারতেছি না। ‘ক’ ছাত্রীর সূত্রে জানা যায়, একই ‘গ’ ছাত্রীর সাথে নিয়মিত যোগাযোগ হয় ওই শিক্ষকের। তাকে পড়ালেখার বিভিন্ন খরচের জন্য টাকাও দিতেন এবং প্রাইভেট পড়ানোর নামে বাসায় ডেকে নিতেন। তাদের মধ্যে হোয়াটসঅ্যাপে চ্যাটিংয়ে অশ্লীল কথাবার্তা হয়। এমন কয়েকটি স্ক্রিনশর্ট এ প্রতিবেদকের সংগ্রহে রয়েছে। যেখানে দেখা যায়, ওই ছাত্রী একাধিক স্পর্শকাতর ছবি তুলে দেন। শিক্ষকও অশ্লীল বাক্য বিনিময় করেন। বিষয়টি নিয়ে ‘গ’ ছাত্রীর সঙ্গে যোগাযোগে এক ভিডিও বক্তব্যে জানান, এই শিক্ষকের কাছে প্রাইভেট পড়ার সুবাদে তাকে পরীক্ষায় ভালো ফলাফলের এবং চাকরি পাইয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে কুপ্রস্তাবে রাজি হতে বলতেন। এভাবে একদিন সকাল ৯টায় প্রাইভেট পড়ানো হবে বলে তাকে হোয়াটসঅ্যাপে জানান। পরে সকাল ৯টায় গেলে অন্য কাউকে দেখতে পায়নি সে। তখন তাকে কুপ্রস্তাব দেওয়া হয়। এছাড়া হোয়াটঅ্যাপে চ্যাটিংয়ে অশ্লীল ছবি দেওয়ার বিষয়ে জানায়, টেস্ট পরীক্ষায় ফেলের ভয় দেখিয়ে তার অশ্লীল ছবি নিতেন শংকর বৈরাগী। অনুসন্ধানে ওঠে এসেছে, এসব ঘটনার কয়েকটি স্ক্রিনশর্ট ও ছবি ওই ছাত্রীর মোবাইল থেকে গোপনে নিয়ে নেন আরেক বান্ধবী ‘খ’ (আদমপুরের বাসিন্দা)। পরে তার বান্ধবীর মাধ্যমে ওই ছবি চলে যায় আশিকুজ্জামান সানিমের কাছে। এই ছবিগুলো নিয়ে শিক্ষক শংকর বৈরাগীর সঙ্গে তারা যোগাযোগ করেন। এমনকি পূর্বে সানিম টাকাও নিয়েছে বলে ফরিদপুর জিলা স্কুলের ইংরেজী শিক্ষক মো. রেজভী জানান। ঘটনার দিন শংকর বৈরাগীর সঙ্গে হাটছিলেন মো. রেজভী। তিনি বলেন, টেন মিনিট কোচিংয়ে পড়ানোর কথা বলে মোবাইলের মাধ্যমে আমাদের এক ব্যক্তি স্প্রিং হিল হাসপাতালের পাশে যেতে বলেন। আমরা তিনজন শিক্ষক হেটেই ওই এলাকায় যাচ্ছিলাম। হঠাৎ সানিম ও আরও কয়েকজন এসে শংকর স্যারকে রিকশায় উঠিয়ে নিয়ে যান। স্যারও কোনো ধস্তাধস্তি না করে তাদের সঙ্গে চলে যায়। পরে তার স্ত্রীকে ঘটনাটি জানাই। এসব বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করা হয় আশিকুজ্জামান সানিমের সাথে। তিনি ছাত্রীকে এলাকার ছোটবোন দাবি করে বলেন, আমার এলাকার ছোট বোনকে শংকর বৈরাগী স্যার ব্ল্যাকমেইল করে ধর্ষণের শিকার হচ্ছে বলে আমি জানতে পারি। এমনকি আমরা প্রমাণও পাই। এসব বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য স্যারকে আমরা নিয়ে আসি। স্যার নয়, আমরা একজন ধর্ষণকারীকে ধরে নিয়ে আসছিলাম। এটা যদি আমাদের অপরাধ হয়ে থাকে এবং আমরা যদি অপহরণ করে থাকি তাহলে শাস্তি মাথা পেতে নেব। এ ঘটনার পেছনে তদন্ত করে ওই শিক্ষককে উপযুক্ত শাস্তির আওতায় আনতে হবে। তবে শিক্ষক শংকর বৈরাগী ছাত্রীদের সঙ্গে যৌন হয়রানির বিষয়টি অস্বীকার করেন। তিনি অপহরণের শিকার হয়েছেন বলে দাবি করেন। অপহরণের পর তাকে মারধর করেন চক্রটি। তিনি বলেন, আমাদের মিথ্যা কথা বলে ওরা অস্বীকার পাশে নিয়ে বলে এক ছাত্রীর সাথে আপনার সম্পর্ক আছে, ওই ছাত্রীর ভাই আপনাকে মারবে। আপনি এখান থেকে দ্রুত চলে যান। এ সময় রিকশায় উঠে যেতে গেলে সানিম আমার রিকশায় উঠে মুখ চেপে ধরে নিয়ে যায়। পরে পুলিশ গিয়ে উদ্ধার করে আমাকে। ওই ছাত্রীদের সঙ্গে আচরণের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি। তবে তিনি দাবি করেন তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা হয়েছে। এদিকে ভুক্তভোগী ছাত্রীরা ওই শিক্ষকের বিচারের দাবি জানিয়ে পুলিশ সুপারের কাছে অভিযোগ দিয়েছেন। এ বিষয়ে কোতয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আসাদউজ্জামান জানান, এ ঘটনায় শিক্ষক শংকর বৈরাগী থানায় অপহরণের এজাহার দিয়েছেন। তার অভিযোগের ভিত্তিতে আমরা মামলা নিয়েছি। ঘটনাটি তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। |
পূর্ববর্তী সংবাদ | পরবর্তী সংবাদ |