প্রধান শিক্ষকের পদত্যাগ দাবীতে 'আইএইচটি'র' শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ- আহত-৪
ফাহিম ফরহাদ, গাজীপুর
প্রকাশ: Monday, 16 September, 2024, 7:51 PM
নানা অনিয়ম, দূর্নিতির অভিযোগে গাজীপুর ইন্সটিটিউট অব-হেল্থ টেকনোলোজি (আইএইচটির) প্রধান শিক্ষক ডা. আশরাফুলের পদত্যাগের ১দফা দাবীতে আন্দোলন করেছে প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার্থীদের একাংশ। রবিবার (১৫সেপ্টেম্বর) সকাল থেকে মহানগরীর মালেকের বাড়ি মোড় শরিফপুর রোডে অবস্থিত ইন্সটিটিউট অব-হেলথ টেকনোলজি (আইএইচটি) এর প্রধান শিক্ষক ডা. আশরাফুলের অনিয়ম দূর্নিতির প্রতিবাদে এ বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করে শিক্ষার্থীদের মধ্যে একটি বৃহদাংশ ছাত্ররা।
এসময় অপরদিকে অবস্থান নিয়ে ছাত্রীরা দাবি করেন শিক্ষকের বিরুদ্ধে আনিত অধিকাংশ অভিযোগ ভিত্তিহীন। ছাত্রীরা জানান আমাদের শিক্ষক ঘাটতি (সংকট) থাকা সত্বেও ডা. আশরাফুল স্যারের অক্লান্ত পরিশ্রমে হাতে গুনা কয়েকজন শিক্ষক পুরো ইন্সটিটিউট পরিচালনা করেন। তাদের (ছাত্রীদের) দাবী স্যারের পদত্যাগের একদফা দাবী তৃতীয় পক্ষের ইন্ধনে উদ্দ্যেশ্য প্রণোদিত।
এর আগে সকাল থেকে ২৫ দফা দাবীতে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করে শিক্ষার্থীরা। দুপুর গড়ীয়ে বিকেল হলেও দাবী আদায়ে কোন আশ্বাস না পেলে পদত্যাগের একদফা দাবীতে বিক্ষোভ শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। এসময় ২৫দফা দাবীর স্বারকলিপি নিয়ে প্রধানশিক্ষক ডা. আশরাফুলের কক্ষে যাওয়ার সময় নারী শিক্ষার্থীদের বাঁধার সম্মূখিন হন ছেলে শিক্ষার্থীরা। এ নিয়ে উভয়ের মাঝে ধ্বস্তাধস্তিতে প্রতিষ্ঠানের দরজার গ্লাস ভাঙচুর হয়ে আহত হন কয়েকজন শিক্ষার্থী।
ছাত্ররা জানান এর আগেও নানা হয়রানির শিকার হয়ে আসছেন প্রতিষ্ঠানটির ছেলে শিক্ষার্থীরা। তাদের অভিযোগ পরীক্ষা ও ভায়বা-তে নারী শিক্ষার্থীদের পাশের হার তুলনা মূলক ছেলে শিক্ষার্থীদের চেয়ে অধিক। কারন হিসেবে ডা. আশরাফুলের কারসাজিকে দায়ী করছেন প্রতিষ্ঠানটির বিক্ষুব্ধ ছেলে শিক্ষার্থীরা। এছারাও প্রতিষ্ঠানের বরাদ্দের মালামালের কমিশন না পেয়ে মালামাল ফেরত পাঠানোর ঘটনারও বর্ণনা দেন কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী শিক্ষার্থীরা।
এসময় জাতীয় জরুরী সেবা ৯৯৯এ খবর পেয়ে পরিস্থিতী নিয়ন্ত্রনে এগীয়ে আসেন মহানগরীর গাছা মেট্রোপলিটন পুলিশ ও র্যাবের সদস্যরা। তারাএকযোগে এসে শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলে প্রতিষ্ঠান প্রধান শিক্ষক ডা. আশরাফুলের কক্ষে ছেলে ও মেয়ে শিক্ষার্থীদের আলাদা দু'টি দলকে সাথে নিয়ে একই দিন সন্ধ্যায় আলোচনায় বসেন।
প্রায় কয়েক ঘন্টা আলোচনা শেষে প্রতিষ্ঠান প্রধান শিক্ষক ডা. আশরাফুল কে বাধ্যতামূলক ৭দিনের কর্ম বিরতি (ছুটি) যাওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। তবে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা জানানা তাদের দাবী মানা না হলে পরবর্তীতে তারা তাদের আন্দোলন চালিয়ে যাবেন। তাৎক্ষণিক বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করেন গাছা মেট্রো পলিটন পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) কামরুল। তবে এ বিষয়ে জানতে মুঠোফোনে কয়েকবার কল করলেও কল রিসিভড করেননি প্রতিষ্ঠান প্রধান শিক্ষক ডা. আশরাফুল।
স্বারকলিপিতে যে ২৫ টি দাবী করেছেন বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা:-
প্রতিষ্ঠানে ল্যাবের পরীক্ষাকেন্দ্র স্থাপন, শিক্ষকদের নিরপেক্ষ ভূমিকা নিশ্চিত করণ, নির্দিষ্ট রুটিন অনুযায়ী ক্লাস কার্যক্রম পরিচালনা করা, আবাসিক হেস্টেলের যেকোন সিদ্ধান্তে শিক্ষার্থীদের সাথে সমন্বয় করা, ভাইবা পরীক্ষায় অনুত্তীর্ণের ভয় না দেখানো, ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত (দাড়ি-টুপি নিয়ে কটুক্তি) না করা।
রান্নায় গ্যাস ও বাবুর্চি বিল প্রতিষ্ঠান কর্তৃক বহন করা, ব্যাক্তি মতবিরোধে শিক্ষার্থীদের কোনও পরীক্ষায় অকৃতকার্য না করা, ব্যাক্তিগত আক্রোশের জেরে ক্লাসে সর্বসম্মূখে অপমানজনক আচরণ না করা, রশিদ ব্যাতিত গ্রহণকৃত টাকার হিসাব প্রদান, সুপেয় পানির সর্বরাহ করা, কম্পিউটার ল্যাব স্থাপন ও মাল্টিমিডিয়া ক্লাস চালু করা, জেনারেটর সুবিধা নিশ্চিত করণ, পোষাক নিয়ে হয়রানি বন্ধ করন।
শিক্ষার্থীদের দাবি, হল সুপার হোস্টেলে না থাকার কারন দর্শানো পূর্বক হোস্টেলে আবাসন নিশ্চিত করা। সম্প্রতি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়ার কারন দর্শানো-সহ শিক্ষার্থীদের হোস্টেল ত্যাগে বাধ্য করা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দিয়ে হয়রানির জবাব নিশ্চিত করা, সরকারি সম্পদ আত্মসাৎ এর জবাব নিশ্চিত করা, বিগত ৫বছরে শিক্ষার্থীদের জন্য বরাদ্দকৃত সকল আসবাবপত্র ও প্রয়োজনীয় সামগ্রী সংগ্রহ এবং তা সুষ্ঠু বন্টন না করার জবাব নিশ্চিত করা।
ব্যাচ ভিত্তিক বৈষম্য দূরীকরণ, বাৎসরিক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও ক্রিড়া প্রতিযোগিতা না হওয়ার যৌক্তিক কারণ ব্যাখ্যা করা, বাৎসরিক শিক্ষা সফর নিয়ে টালবাহানার জবাব নিশ্চিত করা, ডিপার্টমেন্ট ইন্সট্রাকটর ও বিষয়ভিত্তিক শিক্ষকের ব্যবস্থা নিশ্চিত করা, ছাত্র ও ছাত্রী হোস্টেলের জন্য প্রাতিষ্ঠানিক অর্থায়নে পরিচ্ছন্ন কর্মী ও সুইপার নিয়োগ নিশ্চিত করা, ভর্তি রশিদে উল্লেখিত সকল খাতে টাকা ব্যায়ের স্বচ্ছতা নিশ্চিতে খরচকৃত টাকার যৌক্তিক কারণ ব্যাখ্যা-সহ উপযুক্ত কারণ ব্যতীত শিক্ষার্থীদের হেনস্তর জবাব চেয়েছেন ওই স্বারকলিপিতে শিক্ষার্থীরা।