স্ত্রীর চিকিৎসায় স্বামীর গৃহত্যাগ, স্ত্রী মৃত্যুকে আলিঙ্গন করার এক দৃশ্যমান মূর্তি
আহম্মেদুল কবির, কুড়িগ্রাম
|
কুড়িগ্রাম রাজারহাট ছিনাই ইউনিয়নের চতুর্ভুজ গ্রামের মৃত: জয়েন উদ্দিনের পুত্র দরিদ্র অসহায় ভূমিহীন শ্রমিক শহীদুল ইসলাম তার স্ত্রী রওশনারা'কে বাঁচাতে গৃহত্যাগ করেছে। এদিকে স্ত্রী রওশনারা খেয়ে না খেয়ে প্রায় বিনা চিকিৎসায় ধুঁকে ধুঁকে মরছে। খোঁজ খবর নিয়ে জানা যায়, শ্রমিক শহীদুলের ২ মেয়ে ও ১ নাবালক ছেলে সন্তান রয়েছে। সংসার জীবন ভালোই কাটছিলো তার। দুই মেয়েকে বিয়েও দিয়েছেন। তারাও স্বামীর ঘরে অভাব অনটনে থাকলেও খেয়ে পরে জীবন যাপন করছে। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস শহীদুলের ভাগ্যে নেমে আসে অন্ধকারের কালো ছায়া। স্ত্রী হটাৎ অসুস্থ। সর্বশেষ রংপুর ম্যডিকেল কলেজ হসপাতালের ইউরোলজি বিভাগের ডাক্তার জানিয়ে দিলেন, তার স্ত্রী রওশনারা' কে উন্নত চিকিৎসার জন্য আরও ১ লক্ষ টাকার প্রয়োজন। এত টাকা কোন ভাবেই উপার্জন করা সম্ভব নয় শহীদুলের। স্ত্রীকে বাঁচাতে বাধ্য হয়েই গৃহত্যাগ করেছেন শহীদুল। প্রায় ৪ বছর থেকে ঢাকার বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন কাজ করে স্ত্রীর চিকিৎসার জন্য টাকা পাঠাচ্ছেন। সেই টাকা দিয়েই একদিকে চিকিৎসা অপরদিকে নাবালক পুত্র রাকীবুল হাসান রনি'কে নিয়ে সংসারের খরচ চালাতে হচ্ছে অসুস্থ রওশনারাকে। রওশনারা এখন মৃত্যু পথযাত্রী, একপ্রকার বিনা চিকিৎসায় ধুঁকে ধুঁকে মরছে। এই পরিস্থিতিতে রওশনারার সাথে কথা বলতে গিয়ে, মোবাইলে কথা হয় শহীদুলের সাথে, শহীদুল বলেন, ইচ্ছা থাকলেও স্ত্রী ও নাবালক পুত্রের সাথে দেখা করতে পারছিনা, একদিন কাজ না করলে তার স্ত্রীর ওষুধের টাকা যোগাড় করা সম্ভব নয়। কেউ ১ টাকা দিয়ে সাহায্যে করে না। স্ত্রীকে বাঁচাতে কতজনের হাতে পায়ে ধরেছি, ইউনিয়ন পরিষদে গিয়েছি, ইউএনও অফিসে গিয়েছি, নিজের আত্নীয় স্বজনদের কাছে গিয়েছি, সর্বশেষ স্থানীয় নেতাদের সুপারিশে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে মে/২০২১ সালে আর্থিক সাহায্যের জন্য আবেদন করেও কোন ভাবেই টাকার যোগার করতে পারি নাই। আসলে এ পৃথিবীতে কেউ কারো নয়। টাকা যোগার করতে না পেয়ে বাধ্য হয়েই গৃহত্যাগ করেছি বলেই শহীদুল হাউমাউ করে কেঁদে ফেলেন। তিনি দুঃখ করে আরও বলেন, ছেলেটাকে দেখতে খুব মন চায়, ওর মাকে বাঁচানোর চেষ্টা করতে গিয়ে ওর পড়ালেখাও করাতে পারলাম না। ছেলেকে নিয়ে পিতার স্বপ্নগুলোও শেষে হারিয়ে গেল। এদিকে রওশনারা বলেন, অনেকদিন আগে সরকার ০৬ শতক খাস জমি দিচে, সেটাই আছি। সরকার থাকি একটা ভালো করি থাকার ঘর তুলি দিলে বাকী জীবনটা ব্যাটাক নিয়া ভালো মতোন থাকলোং হয়। রওশনারার চোখসহ গালমুখ ও সর্ব শরীর ফোলা দেখা গেছে। রওশনারাকে চিকিৎসার অভাবে মৃত্যুকে আলিঙ্গন করার এক দৃশ্যমান মূর্তি মনে হয়েছে। বিত্তশালীরা ইচ্ছে করলেই রওশনার পাশে দাঁড়াতে পারেন।
|
� পূর্ববর্তী সংবাদ | পরবর্তী সংবাদ � |