অভিনয়ের ভূত যাকে দেয় না স্থিরতা
সোহেল মাহমুদ বাপ্পী
|
ময়মনসিংহ শহরের সাধারন এক মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান দেবাশীষ বসাক। বাবা, মা, বড় ভাই, ভাবী, স্ত্রী আর কন্যা সন্তান নিয়ে ছোট্ট সংসার। বাবা অবসরপ্রাপ্ত সরকারী চাকুরীজীবি, মা গৃহীনী এবং বড় ভাই আমেরিকা প্রবাসী। ছোট বেলায় ময়মনসিংহের রামকৃষ্ণ মিশন আশ্রমে মঞ্চ নাটক দেখতে গিয়ে তার খুব কৌতুহল জাগলো অভিনয় শিল্পীরা কিভাবে অভিনয় করেন কিভাবে বিভিন্ন সাজে সজ্জিত হন এটা দেখার জন্য রুপসজ্জা কক্ষে প্রবেশ করার সময় সেখানকার এক সদস্য তাকে প্রচন্ডভাবে হুংকার দিয়ে কক্ষ থেকে বের করে দেয়। বিষয়টি ছোট্ট দেবাশীষের হৃদয়ে খুব কড়া ভাবে আঁচড় কাটে। তখন থেকেই তার জেদ চাপে সেও অভিনয়শিল্পী হবে। কিন্তু কিভাবে অভিনয় শেখা যায় তার কোন রাস্তা পাচ্ছিলেন না। অভিনয়ের ভূত তাকে কোনভাবেই স্থিরতা দিচ্ছিলো না। ভাবনা চিন্তায় এভাবেইে কেটে গেলো আরও কিছু বছর। ছেলেবেলা থেকেই সংস্কৃতি চর্চার প্রতি প্রবল আগ্রহের দ্বরুন ৭ম শ্রেণীতে পড়াশোনাকালিন সময়ে সংগীত শেখার জন্য তাকে ভর্তি করা হয় ময়মনসিংহের উদীচী শিল্পী গোষ্ঠীতে। সংগীত শেখার পাশাপাশি তখন থেকেই হাতেখঁড়ি হয় অভিনয় শেখার। উদীচীর তত্বাবধানে বিভিন্ন মঞ্চনাটকে অভিনয় করতে শুরু করেন। পরিবারের প্রত্যক্ষ্য পৃষ্ঠপোষকতায় তার বিচরন ছিলো সংগীত, আবৃত্তি, ও মঞ্চ নাটকে। তিনি উদীচীর সংগীত শিল্পী হিসাবে জাতিয় পর্যায়ে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশগ্রহন করেন। স্কুল জীবনে ছাত্র ইউনিয়নের হয়ে ছাত্র রাজনীতির সাথে জড়িত হন সেখানেও তিনি মঞ্চনাটকে অভিনয় চালিয়ে যেতে থাকেন। এরপর এক পর্যায়ে তিনি এবং কয়েকজন সিনিয়র সহ নব-কল্লোল সামাজিক সাংস্কৃতিক গোষ্ঠী নামের নতুন একটি সংগঠন গড়ে তুলেন এবং সেখানেও বিভিন্ন ধরনের সামাজিক সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডের পাশাপাশি অভিনয়টা চালিয়ে যেতে থাকেন। একবার মঞ্চে তার অভিনয়ে মুগ্ধ হয়ে তৎকালীন স্বনামধন্য চলচ্চিত্র পরিচালক ছটকু আহমেদ তাকে তাঁর চলচ্চিত্রে অভিনয় করার সুযোগ দেন, কিন্তু ঐ মূহুর্তে দেবাশীষ’র এসএসসি পরীক্ষা থাকার কারনে সুযোগটি হাতছাড়া হয়ে যায়। ধীরে ধীরে সময়ের চাপে সংগীত ও আবৃত্তি থেকে দূরে সরে আসলেও অভিনয়টাকে আঁকড়ে ধরে রাখেন। স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে নিয়মিত কাজ করেছেন মঞ্চে। কলেজ জীবন শেষ করে উচ্চতর ডিগ্রীর জন্য পাড়ি জমান ঢাকায়। ঢাকায় একটি বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে বি.এস.সি ইন কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং পড়াশোনার পাশাপাশি “আরোতি থিয়েটার, ঢাকা” তে জড়িত হয়ে নিয়মিত মঞ্চ নাটকে অভিনয় চালিয়ে যান। ২০০৫ সালে চ্যানেল আই এর নিয়মিত আয়োজন বসুধা প্রতিদিনের গান নামক অনুষ্ঠানে মিউজিক ভিডিওর মডেল হবার জন্য পরিচালক সুমন বিশ্বাস বাপ্পির ডাক পান, শুরু হয় টেলিভিশন পর্দায় তার অভিনয়ের যাত্রা, এবং তিনি নিয়মিত মডেল হিসাবে কাজ করতে থাকেন। ২০০৬ সালে হোয়াইট ব্যালেন্স নামের একটি বিজ্ঞাপণ নির্মানকারী সংস্থার প্রধান সহকারী পরিচালক আতিকুর রহমান বেলালের মাধ্যমে সর্বপ্রথম বিজ্ঞাপনে কাজ করার সুযোগ পান। এরই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশের অনেক গুণী বিজ্ঞাপন নির্মাতাদের পরিচালনায় বেশ কিছু বিজ্ঞাপনে মডেল হিসেবে কাজ করেন যার মাঝে বাংলালিংক বিজ্ঞাপন, এস.এম সালাউদ্দীন এর ‘মেগা ফ্রিজ’, ‘রয়েল টিভি’, ‘অলিম্পিক নাটি বিস্কুট’, নাফিজ রেজা’র ‘প্রাণ ঝাল মুড়ি’, ‘প্রাণ মিল্ক পাউডার’, আদনান আল রাজীব’র ‘প্রাণ টম ক্যান্ডি’ উল্লেখযোগ্য। কিন্তু নাটকেই অভিনয় করাটা যার মূল লক্ষ্য সেই দেবাশীষ কোনো ভাবেই মনের ভেতর শান্তি পাচ্ছে না। অনেক পরিশ্রমের বিনিময়ে নাট্য পরিচালক রওশন আরা নিপা’র সহকারী শফিকুল ইসলামের মাধ্যমে ধারাবাহিক ‘কুঁয়াশার ফনা’ শিরোনামে জনপ্রিয় মডেল কন্যা “সাদিয়া ইসলাম মৌ” এর ঘনিষ্ঠ বন্ধু হিসেবে পার্শ্ব চরিত্রে টিভি নাটকে সর্বপ্রথম অভিনয় করেন। এরপর একেএকে নাট্য নির্মাতা ফেরারী অমিত ও খন্দকার শাহাদাত হোসেন (সুজন)এর যৌথ পরিচালনায় মা দিবসের একক নাটক ‘মা’, ‘তালাকনামা’, রুলিন রহমানের ধারাবাহিক ‘সন্তরণ’, এম সাখাওয়াৎ হোসেন এর ০৭ পর্বের ঈদ ধারাবাহিক নাটক ‘বিজনেস অব বাটপারী’, পল্লব বিশ্বাস’র ঈদ ধারাবাহিক নাটক ‘আলাল দুলাল ও দিশেহারা হাজী চাঁন’, তানীম পারভেজ’র ‘পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দ্যা সাইড ইফেক্ট’, ‘নেটওয়ার্ক - আনপ্লাগড’ অরুণ চৌধুরী ও তাহের শিপন’র পরিচালনায় চ্যানেল আই’এ প্রচারিত মেগাসিরিয়াল ‘মোহর আলী’, রেজানুর রহমান’র পরিচালনায় চ্যানেল আই’এর টেলিফিল্ম ‘এখনিই সময়’, এস.এ.হক অলিকের ‘ফাঁদ’, সঞ্জয় বড়ুয়া’র ‘টিয়ার শেষ পর্ব’, ‘এক পলকের ভালোবাসা’, ইমেল হক’র ‘দোটানা লাভ’, ইমরাউল রাফাত’র ‘সম্পর্কের আড়ালে’, সানি’র ‘সহশিল্পী’, মাহমুদুল হাসান রানা’র ‘রিমুর চিঠি’, ‘জামাই ফাঁদ’, ‘ভাই আপনি সেরা’, এস.এম সালাউদ্দীন’র ‘কাজল রেখা’, কাজল আরেফিন অমি’র ‘শেষমেষ’ মুসাফির রনি’র ‘দাবা’ নাটক বিভিন্ন চ্যানেলে প্রচার হয়। বর্তমানে তিনি নির্মাতা মাহমুদুল হাসান রানা’র ডজন খানেক নাটক, দীপ্ত টিভির মেগাসিরিজ ‘দেনা-পাওনা’, কাজল আরেফিন অমি’র ‘ফিমেল-৪’, নুহুাশ হুমায়ুনের পরিচালনায় ওটিটি’র কাজ নিয়ে ব্যাস্ত সময় পার করছেন। |
� পূর্ববর্তী সংবাদ | পরবর্তী সংবাদ � |