জবি শিক্ষার্থী তিথির পাঁচ বছরের কারাদণ্ড, আসলে কী ঘটেছিল?
নতুন সময় প্রতিবেদক
|
মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-কে নিয়ে কটূক্তির অভিযোগে দায়ের করা মামলায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) থেকে সাময়িক বহিষ্কৃত শিক্ষার্থী তিথি সরকারকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। সঙ্গে এক বছরের জন্য প্রবেশনে পাঠানো হয়েছে। গতকাল ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক এ এম জুলফিকার হায়াত আসামির উপস্থিতিতে এই রায় ঘোষণা করেন। এই রায়ের ফলে তিথি সরকারকে কারাভোগ করতে হবে না। তবে এক বছরের জন্য সমাজসেবা অধিদপ্তরের একজন প্রবেশন কর্মকর্তার পর্যবেক্ষণে থাকতে হবে তাঁকে। আইন অনুসারে প্রবেশন হলো যে অবস্থায় প্রথম অপরাধের শাস্তি মওকুফ করা হয় এবং আদালতের দেওয়া কিছু শর্ত মেনে চলতে হয়। প্রবেশন কর্মকর্তা যদি সাজাপ্রাপ্ত আসামির আচরণ সন্তোষজনক মর্মে প্রতিবেদন দেন, তবে আসামির কারাদণ্ড মওকুফ হবে। অন্যদিকে, প্রবেশন কর্মকর্তা সাজাপ্রাপ্ত আসামির আচরণ অসন্তোষজনক মর্মে প্রতিবেদন দেন তাহলে প্রবেশন বাতিল ও প্রদত্ত শাস্তি ভোগ করতে হবে। সংশ্লিষ্ট আদালতের বিশেষ পিপি মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম শামীম বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি জানান, রায়ের সময় তিথি সরকার আদালতে উপস্থিত ছিলেন এবং রায় শেষে তিনি নিজ বাড়িতে গেছেন। রোববার এই মামলায় তিথি সরকারের আত্মপক্ষ সমর্থনের দিন ধার্য ছিল। ওই দিন তিনি ট্রাইব্যুনালে দোষ স্বীকার প্রবেশন চান। তাঁর আইনজীবী বলেন, তিথি সরকার প্রথমবারের মতো অপরাধ করেছেন। তিনি ভবিষ্যতে আরহ৭-এর পাতায় দেখুন কী ঘটেছিল? তিথী সরকার বিভিন্ন সময় নিজের ফেসবুক আইডি থেকে ধর্মীয় উস্কানিমূলক পোস্ট, কমেন্ট ও শেয়ার করেছিলেন বলে গত ২৪শে অক্টোবর তার বিরুদ্ধে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে কিছু শিক্ষার্থী। এর ধারাবাহিকতায় গত বছরের ২৬শে অক্টোবর জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিথীকে সাময়িকভাবে বহিষ্কার করা হয়। এর আগে অক্টোবরের ২৫ তারিখ থেকে তিনি নিখোঁজ ছিলেন বলে পল্লবী থানায় সাধারণ ডায়রি করেছিল তার পরিবার। পল্লবী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কাজী ওয়াজেদ আলী তখন জানান, গত ২৭শে অক্টোবর সকালে তিথি সরকারের বোন থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি দায়ের করেন। তিনি বলেন, "তার বোন জানিয়েছিলেন যে ২৫শে অক্টোবর সকালে ঘর থেকে বের হয়ে যাওয়ার পর থেকে তিথি সরকারের আর কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না।" তিথী সরকার নিজে ২৩শে অক্টোবর নিজের 'ফেসবুক অ্যাকাউন্ট হ্যাক' হয়েছে এই অভিযোগ করে ঢাকার পল্লবী থানায় একটি সাধারণ ডায়রি দায়ের করেছিলেন বলে জানান পুলিশ কর্মকর্তা ওয়াজেদ আলী। তবে সিআইডি পুলিশ তখন তাদের বিবৃতিতে উল্লেখ করেছিল যে, তিথী সরকার 'নিজেকে নিরাপদ রাখতে' নিজের ফেসবুক আইডি হ্যাক হয়েছে মর্মে ২৩শে অক্টোবর পল্লবী থানায় মামলা করেন। তিনি 'স্বেচ্ছায় আত্মগোপনে' থেকে 'অপহরণের দায়ভার অন্যের ওপর চাপিয়ে দিয়ে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত সংক্রান্ত ঘটনা থেকে রেহাই' পাওয়ার কৌশল হিসেবে নরসিংদীতে আত্মগোপনে ছিলেন বলে অভিযোগ করা হয়েছে পুলিশের বিবৃতিতে। তবে তিথী সরকারের বোন স্মৃতি সরকার তখন জানিয়িছিরেন, ফেসবুক আইডি হ্যাক হওয়ার বিষয়টি জানতে পারার কিছুক্ষণের মধ্যেই তার বোন সাধারণ ডায়রি করেন। স্মৃতি সরকার বলেন, "ফেসবুক আইডি হ্যাক হয়েছে যখন সে বুঝতে পারে, তখন আমার সাথে পরামর্শ করে তার কিছুক্ষণের মধ্যেই থানায় জিডি করতে যায়।" স্মৃতি সরকার বলেছেন, তিথী আতঙ্কিত ছিলেন। তবে 'অপহরণের নাটক সাজানোর জন্য উদ্দেশ্যমূলকভাবে পালিয়ে ছিলেন না' বলে দাবি করেন তিনি। এ ঘটনার তদন্তে নেমে গুজব রটনাকারী নিরঞ্জন বড়াল নামের একজনকে রাজধানীর রামপুরার বনশ্রী এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। নিরঞ্জনসহ অজ্ঞাত আরও কয়েকজনের বিরুদ্ধে একই বছরের ২ নভেম্বর পল্টন থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলাটি করা হয়। ২০২১ সালের ১১ মে মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডি পুলিশের এসআই মেহেদি হাসান তাঁদের দুজনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। ২০২১ সালের ৪ নভেম্বর তিথি সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন আদালত।
|
� পূর্ববর্তী সংবাদ | পরবর্তী সংবাদ � |