|
চট্টগ্রাম বন্দরের প্রবেশপথে স্কপের অবরোধ
নতুন সময় প্রতিনিধি
|
![]() চট্টগ্রাম বন্দরের প্রবেশপথে স্কপের অবরোধ বুধবার সকাল ১০টা থেকে নগরীর তিনটি পয়েন্টে অবস্থান নিয়ে বন্দর অবরোধ কর্মসূচি শুরু করেন স্কপের নেতাকর্মীরা। তাদের এ কর্মসূচিতে সমর্থন দিচ্ছে বাম গণতান্ত্রিক জোট এবং সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন। চট্টগ্রাম বন্দর ও আশেপাশের এলাকায় সভা সমাবেশের ওপর পুলিশি নিষেধাজ্ঞা থাকায় বন্দরে প্রবেশের তিনটি পয়েন্ট বড়পুল মোড়, সিম্যান্স হোস্টেল গেইপ এবং বনবদর টোল প্লাজার মোড়ে অবস্থান নিয়েছেন স্কপের কর্মীরা। তারা সকাল ১০টার পর বন্দর টোল প্লাজার সড়কে অবস্থান নিয়ে যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেন। তাদের অবরোধের কারণে বন্দরমুখী কভার্ডভ্যান, ট্রাক, ট্রেইলার চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ওই এলাকায় অবস্থান নেওয়া স্কপ নেতা ও ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সভাপতি তপন দত্ত বলেন, “আমরা চট্টগ্রাম বন্দর বিদেশিদের ইজারা দেওয়ার প্রতিবাদে আন্দোলন করছি। তিনটি স্থানে আমাদের অবরোধ চলছে।” বন্দর কর্তৃপক্ষ তাদের সিদ্ধান্ত থেকে সরে না আসা পর্যন্ত এই আন্দোলন চলবে জানিয়ে তিনি বলেন, “আমাদের অবরোধ কর্মসূচি বেলা ১টা পর্যন্ত চলবে।” স্কপ ও বাম গণতান্ত্রিক জোটের নেতারা সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বড়পুল মোড়ে জড়ো হয়ে সমাবেশ করেন এবং পরে বন্দরমুখী সড়ক অবরোধ করেন। স্কপ নেতা ফজলুল কবির মিন্টু বলেন, “বন্দরের টার্মিনাল ইজারা দেওয়ার প্রতিবাদে আমাদের আন্দোলন। সরকারকে এ সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসতে হবে।” কমিউনিস্ট পার্টির সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি মো. শাহ আলমসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ বড়পুল মোড়ের সমাবেশে উপস্থিত আছেন। বন্দর সচিব মো. ওমর ফারুক বলছেন, স্কপের অবরোধ কর্মসূচির কারণে চট্টগ্রাম বন্দরের অপারেশনাল কাজে কোনো সমস্যা হচ্ছে না। চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল বিদেশিদের ইজারা দেওয়ার চুক্তির প্রতিবাদে এবং লালদিয়ার চর ও পানগাঁও টার্মিনালে বিদেশি অপারেটরদের ইজারা চুক্তি বাতিলের দাবিতে গত শনিবার স্কপের চট্টগ্রাম বিভাগীয় সম্মেলন থেকে অবরোধের এ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। সে অনুযায়ী, নগরীর তিন পয়েন্টে অবরোধের পাশাপাশি চট্টগ্রাম বিভাগের বিভিন্ন জেলায় বিক্ষোভ মিছিল হওয়ার কথা রয়েছে। ২০০৭ সালে হওয়া নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল দিয়েই চট্টগ্রাম বন্দরের অধিকাংশ কনটেইনার পরিবহন করা হয়। আওয়ামী লীগের আমলে এ টার্মিনাল পরিচালনার দায়িত্বে ছিল সাইফ পাওয়ারটেক। তাদের সঙ্গে চুক্তির মেয়াদ শেষে নৌবাহিনীর প্রতিষ্ঠান চিটাগং ড্রাইডক লিমিটেডকে অস্থায়ীভাবে টার্মিনাল পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হয়। নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল পরিচালনায় ২০১৯ সালে আমিরাতভিত্তিক কোম্পানি ডিপি ওয়ার্ল্ডের সঙ্গে পিপিপি কর্তৃপক্ষের একটি সমঝোতা স্মারক হয়েছিল। বন্দর কর্তৃপক্ষ ডিপি ওয়ার্ল্ডের সঙ্গে চুক্তির প্রক্রিয়া এগিয়ে নিতে চাইলে এর বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে হাই কোর্টে রিট আবেদন করেন বাংলাদেশ যুব অর্থনীতিবিদ ফোরামের সভাপতি মির্জা ওয়ালিদ হোসাইন। আগামী ৪ ডিসেম্বর ওই রিট মামলার রায় দেবে হাই কোর্ট। এদিকে লালদিয়া ও কেরানীগঞ্জের পানগাঁও নৌ টার্মিনাল পরিচালনার জন্য ইতোমধ্যে দুই বিদেশি কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি করেছে সরকার। এর মধ্যে ডেনমার্কের এপি মোলার মায়ের্সক গ্রুপের সহযোগী কোম্পানি এপিএম টার্মিনালস লালদিয়া কনটেইনার টার্মিনাল নির্মাণ এবং ৩০ বছরের জন্য পরিচালনার দায়িত্ব পেয়েছে। আর সুইজারল্যান্ডের কোম্পানি মেডলগ এসএকে ২২ বছরের জন্য পানগাঁও নৌ টার্মিনাল পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। দেশের প্রধান সমুদ্রবন্দরের অদূরেই আরেকটি টার্মিনালে পশ্চিমা কোম্পানিকে যুক্ত করাকে গুরুত্বপূর্ণ ‘অবকাঠামো ছেড়ে দেওয়া’ হিসেবে দেখছেন অনেকে। ভবিষ্যতে আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ার পাশাপাশি বিদেশি শক্তির ‘ভূ-রাজনৈতিক আধিপত্য বিস্তারের’ কৌশলের অংশ হওয়ার শঙ্কার বিষয়টিও আলোচনা আসছে। তবে ব্যবসায়ী ও বন্দর ব্যবহারকারীদের অনেকে এ বন্দরে লাভই দেখছেন বেশি। দীর্ঘদিন থেকে বাস্তবায়নের অপেক্ষায় থাকা এ টার্মিনালের কাজের সঙ্গে ইউরোপের একটি কোম্পানি যুক্ত হওয়া বিদেশি বিনিয়োগের জন্য ভালো বার্তা বলে মনে করছেন তারা। |
| পূর্ববর্তী সংবাদ | পরবর্তী সংবাদ |
