স্ত্রী যদি বিচ্ছেদ চান
নতুন সময় ডেস্ক
|
কোনো কারণে স্ত্রী বিচ্ছেদ চাইছেন। স্বামীর কোনো বদভ্যাস, পরকীয়া, পুরুষত্বহীনতা কিংবা মনের অমিল যেকোনো আইনসংগত কারণেই হোক না কেন, স্ত্রী চাইছেন স্বামীর সংসার আর করবেন না। স্বামীকে জানিয়ে দিলেন এ কথা। কিন্তু স্বামী স্ত্রীকে ছাড়তে নারাজ। স্ত্রী এর আগে অনেকবার হয়তো স্বামীকে শোধরানোর সুযোগ দিয়েছেন। কিন্তু বারবার সেই আগের মতোই। দেয়ালে একেবারেই পিঠ ঠেকে গেছে স্ত্রীর। স্ত্রীর মতে বিচ্ছেদই পরিণতি এখন। স্ত্রী যদি বিবাহবিচ্ছেদ চান, তাহলে তাঁর এ অধিকার রয়েছে। তাঁকে জোর করে সংসার করানো কিংবা সে চেষ্টা করা কতটা যুক্তিসংগত হবে বা হচ্ছে, তা স্বামীর ভেবে দেখা উচিত। যদি সংসারে সন্তান থাকে তাহলে সন্তানের মঙ্গলের কথা দুজনের ভাবা উচিত। ভেবে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। স্ত্রী বিচ্ছেদের সিদ্ধান্তে যখন অটল স্ত্রী যদি বিচ্ছেদের সিদ্ধান্তে অটল থাকেন, তবে এ নিয়ে আর জটিলতা না বাড়ানো ভালো। তবে বিচ্ছেদ কী উপায়ে চাইছেন, এটি স্ত্রীর কাছেই জেনে নিতে হবে। আইনসংগত উপায়ে বিবাহবিচ্ছেদ হতে হবে। আবার স্ত্রীর কিছু অধিকার রয়েছে। বিশেষ করে দেনমোহর অবশ্যই স্ত্রীকে পরিশোধ করতে হবে। তবে এ নিয়ে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে দেনমোহর-সংক্রান্ত যেকোনো সিদ্ধান্ত উভয়ে নিতে পারেন। স্ত্রী যদি বিচ্ছেদ চান, তবে তাঁর কাবিননামার ১৮ নম্বর কলামটিতে তালাকের ক্ষমতা প্রদান করা হয়েছে কি না, তা দেখে স্ত্রী সরাসরি তালাক দিতে পারেন। যদি ১৮ নম্বর কলামে কোনো ক্ষমতা না দেওয়া থাকে, তাহলে স্বামীর উচিত হবে না এ নিয়ে স্ত্রীকে কোনো ধরনের জটিলতায় ফেলা। তখন দুজনের সম্মতিতে স্বামীই তালাক দিয়ে দিতে পারেন। সাধারণ নিয়ম হচ্ছে স্ত্রীর তালাকের ক্ষমতা না থাকলে পারিবারিক আদালতের মাধ্যমে তালাকের ডিক্রি নিতে হয়। এটি সময়সাপেক্ষ ব্যাপার এবং কিছুটা জটিলও বটে। তবে মুসলিম আইনে খোরা তালাক নামে একটি পদ্ধতি আছে, যা দুজনের সম্মতিতে হয়ে থাকে। এ তালাক পারস্পরিক চুক্তি দ্বারা, কাজি বা আদালতের নির্দেশে হতে পারে। এ তালাকের উল্লেখযোগ্য দিক হলো, স্ত্রী স্বামীকে তালাক দেওয়ার প্রস্তাব দিয়ে থাকেন। স্বামী ওই প্রস্তাবে সম্মতি জানিয়ে থাকেন। এ ধরনের তালাকের ক্ষেত্রে অনেক সময় স্ত্রীকে তালাক দেওয়ার সময় স্বামী বিনিময়ে স্ত্রীর কাছ থেকে প্রতিদান নিয়ে থাকেন এবং স্ত্রী তা দিয়ে থাকেন বা দিতে সম্মত হন। অনেক সময় স্ত্রী যদি রাজি থাকেন, তাহলে মোহরানা দিতে হয় না। তবে ইদ্দত পালনকালে (বিচ্ছেদের দিন থেকে তিন মাস পর্যন্ত) স্ত্রী তাঁর গর্ভস্থ সন্তানের জন্য স্বামীর কাছ থেকে ভরণপোষণ পাওয়ার অধিকারী হবেন। স্ত্রী বিচ্ছেদ চাইলে শান্তিপূর্ণভাবে বিচ্ছেদের প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা উচিত। অনেক সময় দেখা যায় স্বামী তালাক চাইলেও স্ত্রীকে আগে তালাকের নোটিশ পাঠাতে বলেন। আমাদের সমাজে একটি ভুল ধারণা রয়েছে যে স্ত্রী যদি স্বেচ্ছায় কিংবা আগে তালাকের নোটিশ পাঠান, তাহলে দেনমোহর পরিশোধ করতে হবে না। এটি সম্পূর্ণ ভুল ধারণা। স্ত্রী আগে তালাক দিলেও তাঁর মোহরানা পরিশোধ করতে হবে। এ ছাড়া যদি স্ত্রীকে আগে কোনো ভরণপোষণ না দেওয়া হয়, এ বকেয়া ভরণপোষণসহ ইদ্দতকালীন ভরণপোষণও প্রদান করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এ-সংক্রান্ত কোনো দাবিদাওয়া থাকলে স্ত্রী পারিবারিক আদালতেও যেতে পারেন। তবে স্ত্রী গর্ভবতী হলে সন্তান প্রসব না হওয়া পর্যন্ত তালাক কার্যকর হবে না। স্ত্রী কি আলাদা থাকতে চাইছেন? অনেক সময় স্ত্রী ঠিক বিচ্ছেদ না নিয়ে আলাদা বসবাস করতে চাইছেন। এ রকম হলেও আলোচনা করে নেওয়া উচিত। স্ত্রীর মর্যাদা তাঁকে তখনো দিতে হবে। বিশেষ করে হিন্দুধর্মের স্ত্রীরা অনেক সময় পৃথক থাকতে চান। যেহেতু বাংলাদেশে এখনো হিন্দুদের বিবাহবিচ্ছেদের কোনো বিধান কার্যকর হয়নি, তাই পৃথক থাকাই অনেকে বেছে নেন। এ-সংক্রান্ত আইনও বাংলাদেশে কার্যকর রয়েছে। এ বিধিবিধানও মেনে চলতে হবে। লেখক: তানজিম আল ইসলাম, আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট |
� পূর্ববর্তী সংবাদ | পরবর্তী সংবাদ � |