ই-পেপার সোমবার ১৪ নভেম্বর ২০২২
ই-পেপার |  সদস্য হোন |  পডকাস্ট |  গুগলী |  ডিসকাউন্ট শপ
শনিবার ৫ অক্টোবর ২০২৪ ২০ আশ্বিন ১৪৩১
আমেরিকা কি লেবাননে আটকা নিজেদের নাগরিকদের পরিত্যাগ করেছে?
নতুন সময় ডেস্ক
প্রকাশ: Friday, 4 October, 2024, 4:16 PM
সর্বশেষ আপডেট: Friday, 4 October, 2024, 4:24 PM

আমেরিকা কি লেবাননে আটকা নিজেদের নাগরিকদের পরিত্যাগ করেছে?

আমেরিকা কি লেবাননে আটকা নিজেদের নাগরিকদের পরিত্যাগ করেছে?

সংঘাতপূর্ণ লেবাননে আটকা পড়েছেন কারাম নামের এক মার্কিন নাগরিক। তিনি মনে করছেন, হয়ত মার্কিন সরকারের কাছে তিনি কোনো গুরুত্ব বহন করেন না। 

লেবাননে মার্কিন সমর্থনে লাগাতার বিমান হামলা চালাচ্ছে ইসরায়েল। জাতিসংঘের হিসেবে, ইসরায়েলের এ অভিযানে শতাধিক মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। বাস্তুচ্যুত হয়েছেন অন্তত ১০ লাখ। 

সম্প্রতি দক্ষিণ লেবাননে ইসরায়েলের স্থল অভিযানে সংঘাত আরও বেড়েছে। 

এই সহিংসতা থেকে বেড়িয়ে আসতে গত সোমবার কারাম বৈরুতে মার্কিন দূতাবাসে যোগাযোগ করেন। তিনি জানান, তাকে নিজ উদ্যোগে এ দেশ থেকে বের হওয়ার উপায় খুঁজতে বলা হয়েছে। 

গত বছরের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের হামলার পর মার্কিন নাগরিকদের দ্রুত দেশে ফেরাতে বিশেষ ফ্লাইট চালু করেছিল পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। 

আমেরিকানদের চেয়ে কম গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এটা অনেকটা এরকম যে আমাদের কোনো অস্তিত্বই নেই।’ 

লেবাননে সংঘাত শুরুর ৯দিন পর গত বুধবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসন আটকে পড়া মার্কিন নাগরিকদের বৈরুত থেকে ইস্তাম্বুলে নিয়ে আসতে প্রথম ফ্লাইটের ঘোষণা দেয়।  

মার্কির পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার জানান, ওই ফ্লাইটে ১০০ জন মার্কিন নাগরিককে বহন করা হয়েছে। অন্যদিকে সহযোগিতা চেয়ে মার্কিন দূতাবাসে যোগাযোগ করাদের সংখ্যা প্রায় ৬ হাজার। 

মিলার জানান, মার্কিন প্রশাসন আরও ফ্লাইটের ব্যবস্থা করার আশা করছে। তবে তিনি কোনো সংখ্যা ঘোষণা করেন নি। এক্ষেত্রে বাণিজ্যিক ফ্লাইটগুলোকে প্রাধান্য দেওয়ার ইঙ্গিতও দেন তিনি। মিলার বলেন, ‘আমরা বাণিজ্যিক ফ্লাইটগুলোতে আসন সংগ্রহ করতে কাজ করছি।’ 

২০০৬ সহ ইসরায়েল এবং হিজবুল্লাহর মধ্যে হওয়া অন্যান্য সংঘাতগুলোতে ইসরায়েলি বাহিনী বৈরুত বিমানবন্দরের রানওয়েতে বোমা হামলা চালায়। সাম্প্রতিক সময়ে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী বিমানবন্দর সংলগ্ন স্থানগুলোকে অভিযান চালাচ্ছে। এতে দেশটির বেসামরিক বিমান চলাচলের নিরাপত্তা ঝুঁকিতে পড়েছে। 

গত ২৩ সেপ্টেম্বরের পর সব বিদেশি এয়ারলাইনস লেবাননে ফ্লাইট বাতিল করেছে। এখন শুধুমাত্র লেবানিজ মালিকানার মিডল ইস্ট এয়ারলাইনস (এমইএ) একমাত্র প্রতিষ্ঠান হিসেবে বৈরুত থেকে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট পরিচালনা করছে।

এমইএ প্রতিতিনি ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য গন্তব্যে ৩০টির মতো ফ্লাইট পরিচালনা করছে। মূলত যারা লেবানন ছাড়ছেন তারাই এসব ফ্লাইটের যাত্রী। 

সংঘাতের কারণে টিকিটের দামও আকাশচুম্বী। যেমন গত বুধবারের পর ইস্তানবুলের জন্য এমইএর ফ্লাইটের টিকিট পাওয়া যাচ্ছে ২৭ অক্টোবরের। প্রতিটি ওয়ানওয়ে টিকিটের দাম পড়ছে ৩১০ ডলার। অন্য ফ্লাইটগুলোতে কোনো সিট ফাঁকা নেই। 

চতুর্দিকে শুধু বোমা
গত সপ্তাহে মিশিগানে লেবানিজ কমিউনিটির নেতা কংগ্রেস সদস্য রাশিদা ত্লাইব অভিযোগ করেন, আমেরিকা তার নাগরিকদের রক্ষা করতে পারছে না। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের এক পোস্টে তিনি লেখেন, ‘আমাদের নাগরিকরা ক্রমাগতভাবে ফ্লাইটে বুকিং দিচ্ছেন এবং এগুলো ক্রমাগত বাতিল হচ্ছে। চিন্তা করুন, একটি বাণিজ্যিক ফ্লাইটের টিকিটির দাম উঠছে ৮ হাজার ডলারে।’ 

কারাম এখন অবস্থান করছেন দক্ষিণ লেবাননের পাহাড়ি একটি এলাকায়। এটি বৈরুত থেকে পূর্বে। এখনও এখানে ইসরায়েল বড় মাত্রায় কোনো হামলা করেনি। তবে তিনি দেশের মধ্যেই এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যেতে ভয় পাচ্ছেন। তিনি বৈরুতে তার ছেলের কাছে যেতে পারছেন না কারণ তিনি মনে করছেন, ইসরায়েল যে কোনো সময়, যে কোনো স্থানে হামলা চালাতে পারে। 

কারাম বলেন, ‘ইসরায়েল বলছে, তারা হিজবুল্লাহকে লক্ষ্যবস্তু করছে। কিন্তু তারা সর্বত্র বোমা ফেলছে। দক্ষিণ এবং দাহিরের নিরপরাধ মানুষকে মূল্য দিতে হয়েছে। আমরা এখনও জানি না, এই মানুষগুলো আর কতদিন ঘরবাড়ি ছাড়া হয়ে থাকবে।’ 

কামাল মাক্কি নামে মিশিগানের এক বাসিন্দা বলছিলেন, ফ্লাইট বাতিল হওয়ায় তার বাবা লেবাননে আটকা পড়েছেন। সহিংসতা থেকে রক্ষা পেতে তার বাবা মার্কিন সরকারের কোনো সহযোগিতা পান নি।  

মাক্কি বলেন, ‘এটা সত্যি বাণিজ্যিক ফ্লাইটে টিকিট পাওয়া যাচ্ছে, কিন্তু এটা সবার জন্য নয়। অনেক মানুষ ফ্লাইটে ওঠার অপেক্ষায় আছেন। সুতরাং আপনাকে আপনার সময় আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। অবশ্য যদি আপনার ফ্লাইট বাতিল ঘোষণা না করা হয়।’  

মাক্কির বাবাও একজন মার্কিন নাগরিক। তিনি সংঘাত শুরুর আগে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দেখা করতে লেবানন গিয়েছিলেন। কয়েকদিনের অপেক্ষার পর গত মঙ্গলবার তিনি বাগদাদের একটি ফ্লাইট পান। তবে ইসরাইলে ইরানের মিসাইল হামলার কারণে ফ্লাইটটি বাতিল হয়ে যায়। ফলে তিনি আবার আটকা পড়েন। 

ইসরায়েল যতোই তার আক্রমণের ধার বাড়াচ্ছে, সমালোচকরা বলছেন আমেরিকার তার নাগরিকদের স্থল বা সাগরপথে হলেও ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ জোরালো করা উচিত। এক্ষেত্রে বারবার গত অক্টোবরে ইসরায়েলে মার্কিন উদাহরণ টানা হচ্ছে। 

মাক্কি অভিযোগ করেন, বাইডেন প্রশাসন আরব আমেরিকানদের একই চোখে দেখছে না। তিনি বলেন, ‘সব সময় একই দৃষ্টিভঙ্গি, আরবদের চেয়ে ইসরায়েলি জীবন বেশি গুরুত্বপূর্ণ।’ 

আমেরিকান আরব অ্যান্টি–ডিসক্রিমিনেশন কমিটির নির্বাহী পরিচালক আবেদ আইয়ুব মনে করছেন, মার্কিন দূতাবাসের দুর্বল জনসংযোগের কারণে লেবাননে আটকে পড়া আমেরিকানরা দ্বিধান্বিত হয়ে পড়েন। তার মতে শুধুমাত্র একটি ফ্লাইট আটকে পড়াতের ফিরিয়ে আনতে যথেষ্ট নয়। আইয়ূব জানান, কীভাবে আটকে পড়া নাগরিকদের নিরাপদে ফিরিয়ে আনতে হবে এ বিষয়ে আমেরিকা যথেষ্ট অভিজ্ঞ। 

আইয়ূব আল জাজিরা বলেন, ‘এটা নির্ভর করে আমেরিকার অগ্রাধিকার তালিকার ওপর। আর এতে আরব আমেরিকান এবং মুসলিম আমেরিকানদের অবস্থান তলানিতে।’ 

অবশ্য অন্যান্য অনেক দেশেই লেবানন থেকে তাদের নাগরিকদের সরিয়ে নেওয়ার বিষয়ে বেশ তৎপরতা দেখিয়েছে। গত সোমবার কানাডা জানিয়েছে, তারা বাণিজ্যিক ফ্লাইটে কানাডীয়দের জন্য ৮০০ আসন রেখেছে। অন্যদিকে জার্মানি দুটি ফ্লাইটে ২৪০ জন নাগরিককে লেবানন থেকে সরিয়ে এনেছে। 

ঝুঁকিতে মার্কিন নাগরিকরাও
লেবাননে ইসরায়েলের ক্রমাগত বিমান হামরায় মার্কিন নাগরিকরাও ঝুঁকিতে রয়েছেন। ইসরায়েলি অভিযানে অনেক সড়ক ও ভবনকে লক্ষ্য করা হয়েছে। এতে বহু নাগরিক বাস্তুহারা হয়েছেন। মঙ্গলবার ইসরায়েলি হামলায় মিশিগানের বাসিন্দা কামাল জাওয়াদ নিহত হন। 

এ ঘটনার প্রেক্ষিতে বুধবার মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার বলেন, ‘আমরা যতটা জানতে পেরেছি তিনি ছিলেন বৈধ স্থায়ী বাসিন্দা, মার্কিন নাগরিক নন। তবে যাই হোক, আমরা এ ঘটনায় তার পরিবারের প্রতি সহমর্মিতা জানাই।’

অবশ্য জাওয়াদের পরিবারের দাবি, তিনি মার্কিন নাগরিক ছিলেন। জাওয়াদের মেয়ে নাদিন জানান, তিনি দক্ষিণ লেবাননের শহর নাবাতি হতে বয়স্ক ও বাস্তুচ্যুত মানুষদের সহযোগিতা করার সময় নিহত হন। 

এক বিবৃতিতে নাদিন বলেন, ‘আমার বাবা ওই ৫০ হাজার মানুষের একজন যিনি মধ্যপ্রাচ্যে ইসরায়েলি আধিপত্যবাদের কারণে নিহত হয়েছেন। তিনি মার্কিন নাগরিক ছিলেন, এটিই সত্য। তবে তার তার জীবন অন্যদের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নয়। মুসলিম হিসেবে আমরা বিশ্বাস করি, প্রতিটি জীবনই দামি। আমার বাবার গল্প যদি আপনার কাছে গুরুত্বপূর্ণ হয়, তাহলে ইসরায়েলের হাতে নিহত অন্যদেরটাও গুরুত্বপূর্ণ হওয়া উচিত।’  

আমেরিকান আরব অ্যান্টি–ডিসক্রিমিনেশন কমিটির নির্বাহী পরিচালক আবেদ আইয়ুব জানান, জাওয়াদ ছিলেন মিশিগানের আরব আমেরিকান কমিউনিটির একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি। সবার কাছে ছিলেন শ্রদ্ধার পাত্র। 

আইয়ুব বলেন, ‘তিনি ছিলেন অনেকের প্রেরণা। তিনি সব সময় সবার প্রয়োজনে এগিয়ে আসতেন।’ 

জাওয়াদ সম্বন্ধে মিলারের বক্তব্যকে আরব এবং আরব আমেরিকানদের প্রতি মার্কিন প্রশাসনের দৃষ্টিভঙ্গিই তুলে ধরছে বলে মনে করেন আইয়ুব। তিনি বলেন, ‘মনে হচ্ছে তারা চান যাতে আমাদের মানুষেরা বেশি করে মারা যায়। তারা ইচ্ছাকৃতভাবে আমাদের অবমূল্যায়ন করছে এবং আমাদের সাথে অমানবিক আচরণ করছে।’ সূত্র: আল জাজিরা

� পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ �







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ
সম্পাদক ও প্রকাশক: নাজমুল হক শ্যামল
দৈনিক নতুন সময়, গ্রীন ট্রেড পয়েন্ট, ৭ বীর উত্তম এ কে খন্দকার রোড, মহাখালী বা/এ, ঢাকা ১২১২।
ফোন: ৫৮৩১২৮৮৮, ০১৯৯৪ ৬৬৬০৮৯, ইমেইল: [email protected]
কপিরাইট © দৈনিক নতুন সময় সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত | Developed By: i2soft
DMCA.com Protection Status