৫ বছর আগে যুক্তরাষ্ট্রে হাসিনার পতনের প্লট তৈরি করা হয়?
নতুন সময় প্রতিবেদক
|
শেখ হাসিনার পদত্যাগ নিয়ে নানা বিতর্ক। ছাত্র-জনতার গণবিপ্লবে দেশ ছেড়ে ভারতে পালিয়েছেন তিনি। হাসিনা বারবারই বলছেন, তাকে হটাতে আমেরিকার হাত ছিল। কিন্তু আমেরিকা বলছে, তারা এর সঙ্গে যুক্ত নয়। বাংলাদেশের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানেই হাসিনা পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছেন। এই অবস্থায় ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য সানডে গার্ডিয়ান চাঞ্চল্যকর একটি খবর দিয়েছে। দ্য সানডে গার্ডিয়ান বলছে, পাঁচ বছর আগে থেকেই হাসিনাকে উৎখাতের প্লট তৈরি করে যুক্তরাষ্ট্র। কিছু নথিপত্র ঘাঁটাঘাঁটি করে তাদের এই ধারণাই হয়েছে। ২০১৯ সন থেকে যুক্তরাষ্ট্র হাসিনাকে উৎখাতের প্লট নিয়ে কাজ শুরু করে। এ নিয়ে পাঠকদের কৌতূহল থাকবে। আর সেটা বিবেচনায় নিয়েই দ্য সানডে গার্ডিয়ানের রিপোর্টটি এখানে উপস্থান করছি। Documents show U.S. set in motion plan to oust Hasina শীর্ষক রিপোর্টে বলা হয়, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অপসারণের পরিকল্পনা শুরু হয়েছিল ২০১৯ সালের প্রথম দিকেই। দ্য সানডে গার্ডিয়ানের হাতে আসা নথিগুলো সেদিকেই ইঙ্গিত করে। নথি মোতাবেক, এই কার্য সম্পাদনের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে সরকারি অর্থায়নে পরিচালিত সংস্থাগুলোর ওপর ৷ মঙ্গোলিয়া (১৯৯৬), হাইতি (২০০১) এবং উগান্ডা (২০২১) এর পর, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইনস্টিটিউটের (আইআরআই) কাছে সর্বশেষ সাফল্য 'বাংলাদেশ' , এটি সফলভাবে ঢাকার শাসনব্যবস্থায় পরিবর্তন আনতে সক্ষম হয়েছে। দ্য সানডে গার্ডিয়ান শোতে দেওয়া অভ্যন্তরীণ নথি অনুসারে, ন্যাশনাল এনডাউমেন্ট ফর ডেমোক্রেসি (এনইডি) এবং ইউনাইটেড স্টেটস এজেন্সি ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট (ইউএসএআইডি) এর বৃহত্তর উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন করেছে আইআরআই। নথিগুলো আরও দেখায় যে, কীভাবে ভারতের হস্তক্ষেপ প্রতিহত করার জন্য প্রকল্পটি প্রয়োজনীয় ছিল। ওয়াশিংটন-ভিত্তিক আইআরআই-এর উদ্দেশ্য হলো- গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান, রাজনৈতিক দল, সুশীল সমাজ এবং নির্বাচনি প্রক্রিয়াকে সমর্থন করার মাধ্যমে গণতন্ত্রের প্রচার করা এবং গণতান্ত্রিক শাসনকে উন্নত করার লক্ষ্যে ইউএসএআইডি অর্থায়িত প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়নে অংশীদার হওয়া। ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক ইনস্টিটিউট (এনডিআই), সেন্টার ফর ইন্টারন্যাশনাল প্রাইভেট এন্টারপ্রাইজ (সিআইপিই) এবং সলিডারিটি সেন্টারের পাশাপাশি এনইডির চারটি মূল প্রতিষ্ঠানের মধ্যে আইআরআই একটি। একইভাবে, এনইডি গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান এবং প্রক্রিয়াগুলোকে শক্তিশালী করার লক্ষ্যে বিভিন্ন প্রকল্পের জন্য আইআরআইকে অনুদান প্রদান করে। ১৯৮৩ সালে প্রতিষ্ঠিত ন্যাশনাল এনডাউমেন্ট ফর ডেমোক্রেসি বা এনইডি হল একটি বেসরকারী, অলাভজনক সংস্থা যা প্রাথমিকভাবে মার্কিন কংগ্রেস দ্বারা অর্থায়ন করা হয়। এটি স্বাধীনভাবে কাজ করে, পররাষ্ট্র দপ্তরের মাধ্যমে বার্ষিক বরাদ্দ পায়। ইউনাইটেড স্টেটস এজেন্সি ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট (ইউএসএআইডি) হলো একটি সরকারি সংস্থা যা বিদেশী সহায়তা ও উন্নয়ন পরিচালনার সঙ্গে সম্পৃক্ত । ২০১৯ সালের মার্চ মাসে ,ইউএসএআইডি এবং এনইডি থেকে অনুদান পাওয়ার পর আইআরআই, ঢাকায় শাসনব্যবস্থার পরিবর্তন আনতে একটি কর্মসূচি বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া শুরু করে। উল্লিখিত কর্মসূচির নামকরণ করা হয়েছিল প্রমোটিং অ্যাকাউন্টেবিলিটি, ইনক্লুসিভিটি এবং রেজিলিয়েন্সি সাপোর্ট প্রোগ্রাম (PAIRS) এবং এটি ২২ মাস ধরে ২০২১ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত চলে। আইআরআই জানিয়েছে, বাংলাদেশের নাগরিকদের রাজনৈতিক অংশগ্রহণ বাড়াতে এবং কর্তৃত্ববাদ বিরোধী কণ্ঠকে প্রসারিত করার জন্য এই কর্মসূচির প্রয়োজন ছিল। রাজনৈতিক সম্পৃক্ততার জন্য সামাজিক ক্ষমতায়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে আইআরআই নাগরিক-কেন্দ্রিক, স্থানীয় এবং অপ্রথাগত ফোরামগুলোকে লালন করেছে। এর জন্য, আইআরআই সঙ্গীতশিল্পী, অভিনয় জগতের ব্যক্তিত্ব বা সংস্থাগুলোকে ১১ অ্যাডভোকেসি অনুদান প্রদান করেছে। যারা বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক সমস্যাগুলোকে তুলে ধরতে ২২৫টি শিল্পসামগ্রী তৈরি করেছে যা প্রায় চার লাখ বার দেখানো হয়েছে। এলজিবিটিআই, বিহারি এবং জাতিগত সম্প্রদায়ের তিনটি সুশীল সমাজ আইআরআই-কে ৭৭ কর্মীকে প্রশিক্ষণ দিতে এবং ৩২৬ নাগরিককে ৪৩টি সুনির্দিষ্ট নীতিগত দাবি তৈরিতে নিযুক্ত করতে সহায়তা করেছিল। এটি ৬৫ জন সরকারি কর্মকর্তার সামনে প্রস্তাব করা হয়েছিল। তিনটি ফোকাস গ্রুপ বাংলাদেশে এলজিবিটিআই জনগণের ওপর বৃহত্তম সমীক্ষা সহ সম্প্রদায়-ভিত্তিক গবেষণা পরিচালনা করেছে। প্রসঙ্গত, চলতি বছর ১৬ মার্চ আরেকটি ওয়াশিংটন-ভিত্তিক সংস্থা ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক ইনস্টিটিউট (এনডিআই) এবং আইআরআইয়ের টেকনিক্যাল অ্যাসেসমেন্ট মিশন (টিএএম) ২০২৪ সালের জাতীয় নির্বাচনে শেখ হাসিনার জয়ী হওয়ার বিষয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। সংস্থাটি ২২মাস ধরে PAIRS প্রোগ্রাম চালানোর পরে উল্লিখিত প্রতিবেদনটি প্রকাশ করে। প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে- ২০২৪ সালের নির্বাচনে অর্থাৎ নির্বাচনি প্রচারের সময়কাল, নির্বাচনের দিন এবং অব্যবহিত পরে পূর্ববর্তী নির্বাচনের তুলনায় কম শারীরিক এবং অনলাইন সহিংসতা দেখা গেছে। প্রাথমিকভাবে দেশব্যাপী পক্ষপাতমূলক প্রতিযোগিতার অনুপস্থিতি এবং নির্বাচনের নিরাপত্তার উপর রাষ্ট্রের বর্ধিত মনোযোগের কারণে। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে- জানুয়ারির নির্বাচনের মান রাষ্ট্র, ক্ষমতাসীন দল এবং বিরোধীদের সহিংসতার ঘটনাগুলোর দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। প্রাক-নির্বাচনি পরিবেশে রাজনৈতিক মেরুকরণ, নেতাদের মধ্যে সহিংসতা, নাগরিকস্থান সংকুচিত এবং স্বাধীনতার অবনতির কথা উল্লেখ করা হয়েছে। দ্য সানডে গার্ডিয়ানের হাতে আসা নথিগুলোতে বিশদ বিবরণ রয়েছে, কীভাবে ব্যক্তিদের ইভেন্ট, বই প্রকাশ, গল্প বলা, ফটো প্রদর্শনী, শিল্প প্রদর্শনী, থিয়েটার পারফরম্যান্স, নাচের অনুষ্ঠান, চলচ্চিত্র এবং ডকুমেন্টারি স্ক্রীনিং, রাউন্ড টেবিল মিট, অ্যাডভোকেসি প্রশিক্ষণ প্রোগ্রামের জন্য সচেতন করা হয়েছিল। এর মধ্যে কিছু ছিল একচেটিয়া আমন্ত্রণ, যেখানে রাজনৈতিক কর্মকর্তা এবং মার্কিন দূতাবাসের কনস্যুলার কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন। আইআরআই অনুসন্ধান অনুসারে, এই কর্মসূচি ৪ লাখ বাংলাদেশী নাগরিককে সরাসরি প্রভাবিত করেছিল। একইভাবে, অন্য একটি প্রকল্পে আইআরআই সংস্থাটি ফেব্রুয়ারি ২০২১ থেকে সেপ্টেম্বর ২০২২ পর্যন্ত কাজ করেছিল, যার জন্য ন্যাশনাল এনডাউমেন্ট ফর ডেমোক্রেসি (এনইডি) দ্বারা সংস্থাটিকে ৯ লাখ ডলার অনুদান দেওয়া হয়েছিল। আইআরআই বলেছে, তাদের লক্ষ্য ছিল রাজনৈতিক বিতর্ক এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য প্রান্তিক কণ্ঠস্বর, বিশেষত যুবক এবং নারীদের ক্ষমতাকে প্রসারিত করা। রাজনীতিতে আসতে নারীদের উৎসাহিত করা। পাশাপাশি প্রধান দুই রাজনৈতিক দলের ছাত্র শাখার প্রতিনিধিদের সঙ্গে সম্পৃক্ততার মাধ্যমে রাজনৈতিক অংশগ্রহণের অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং অহিংস উপায় সম্পর্কে তাদের বোঝান। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে নির্দলীয় ছাত্র নেতাদের নেতৃত্বদানের দক্ষতা বাড়ানো এবং সাংস্কৃতিক জগতের সঙ্গে জড়িত ছাত্রদের সমর্থন। নথিতে ওয়াশিংটন-ভিত্তিক মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের পাঁচ কর্মকর্তা এবং ঢাকা-ভিত্তিক তিন মার্কিন কর্মকর্তা, ইউএসএআইডির দুইজন এবং মার্কিন দূতাবাসের একজন রাজনৈতিক কর্মকর্তাকে প্রাথমিক যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। যদিও সানডে গার্ডিয়ান তাদের নাম প্রকাশ করতে চায়নি। হিল আউটরিচ শিরোনামের অধীনে এই পুরো প্রোগ্রামটি সম্পাদনের তত্ত্বাবধানে যে সিনিয়র কর্মকর্তাদের নাম দেওয়া হয়েছিল তারা হলেন- ক্রিস মারফি (ডি-সিটি), এসএফআরসি (দক্ষিণ এশিয়া উপকমিটিতে নিযুক্ত ), সুমনা গুহ, দক্ষিণ এশিয়া পরিচালক, ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিল, ডোনাল্ড লু, এসসিএ, স্টেট ডিপার্টমেন্টের ইনকামিং অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি, সারাহ মার্গন, ডিআরএল, স্টেট ডিপার্টমেন্টের ইনকামিং অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি এবং ফ্রান্সিসকো বেনকোসমে, ইএপি, স্টেট ডিপার্টমেন্টের সিনিয়র অ্যাডভাইজার (অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এ থাকাকালীন বাংলাদেশকে কভার করেছেন)।
|
� পূর্ববর্তী সংবাদ | পরবর্তী সংবাদ � |