ই-পেপার সোমবার ১৪ নভেম্বর ২০২২
ই-পেপার |  সদস্য হোন |  পডকাস্ট |  গুগলী |  ডিসকাউন্ট শপ
বৃহস্পতিবার ২৮ নভেম্বর ২০২৪ ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
চার খুনের আসামি ‘২৮ লাখে’ জামিনে বেরিয়ে ফের ৩ খুন
নতুন সময় ডেস্ক
প্রকাশ: Wednesday, 4 October, 2023, 11:14 AM

চার খুনের আসামি ‘২৮ লাখে’ জামিনে বেরিয়ে ফের ৩ খুন

চার খুনের আসামি ‘২৮ লাখে’ জামিনে বেরিয়ে ফের ৩ খুন

চার-খুনের-আসামি-২৮-লাখে-জামিনে-বেরিয়ে-ফের-৩-খুনশনিবার আশুলিয়া থেকে তিন মরদেহ উদ্ধারের পর সোমবার স্ত্রীসহ গ্রেপ্তার হন সাগর।

সাগরকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাতে র‍্যাব জানায়, কারাগারে থাকা অবস্থায় টাঙ্গাইলেরই এক প্রভাবশালী নেতার সঙ্গে পরিচয় হয় সাগরের। ওই নেতা তার প্রতিপক্ষকে খুন করার জন্য সাগরের সঙ্গে চুক্তি করেন। খুনের বিনিময়ে জামিন এবং তার ভরণপোষণের দায়িত্ব নেন তিনি।

২০২০ সালে টাঙ্গাইলের মধুপুরে ২০০ টাকার জন্য একই পরিবারের চারজনকে চেতনানাশক ওষুধ খাইয়ে গলা কেটে হত্যা করেন সাগর আলী। ওই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় সাগরকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব। এরপর থেকে টাঙ্গাইল কারাগারে ছিলেন সাগর।

সাগরকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাতে র‍্যাব জানায়, কারাগারে থাকা অবস্থায় টাঙ্গাইলেরই এক প্রভাবশালী নেতার সঙ্গে পরিচয় হয় সাগরের। ওই নেতা তার প্রতিপক্ষকে খুন করার জন্য সাগরের সঙ্গে চুক্তি করেন। খুনের বিনিময়ে জামিন এবং তার ভরণপোষণের দায়িত্ব নেন তিনি।

চার খুনের আসামি হয়েও মাত্র সাড়ে তিন বছর কারাভোগ করে চলতি বছরের জুন মাসে জামিনে বের হন সাগর।

এ ব্যাপারে র‍্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘গ্রেপ্তার সাগর আমাদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছেন, টাঙ্গাইল কারাগারে বসবাসরত একজন রাজনৈতিক প্রভাবশালী ২৮ লাখ টাকা খরচ করে সাগরকে জামিনে বের করার ব্যবস্থা করেন। আসন্ন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নিজের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে খুন করতেই সাগরকে জামিনে বের করেন তিনি। ওই ব্যক্তি নিজেও হত্যা মামলার আসামি। খুনের বিনিময়ে সাগরকে জামিনে বের করা ও তার পরিবারের ভরণপোষণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন ওই নেতা। সাগরের দেয়া প্রাথমিক এই তথ্য যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘সাগর নিজেই বলেছেন, তিনি একজন সিরিয়াল কিলার। খুন করে তিনি পৈশাচিক আনন্দ পান।’

সাগরের হিংস্রতার বর্ণনা দিয়ে র‍্যাবের মুখপাত্র বলেন, ‘সাগর যে চার খুন করে কারাগারে গিয়েছিলেন, ওই পরিবারের সদস্য ছিল ৬ জন। পরিবারটির বাকি দুজনকে খুন করতে না পারায় দুঃখ রয়েছে তার।’

চার খুনের পর তিন খুন সিরিয়াল কিলার সাগর

সংবাদ সম্মেলনে র‍্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার খন্দকার আল মঈন জানান, সাগর সাড়ে তিন বছর পর জামিনে বের হওয়ার কিছুদিন পর গত ২৮ সেপ্টেম্বর সাভার বারইপাড়া এলাকার একটা চায়ের দোকানে চা খাওয়ার সময় পাশেই এক কবিরাজি ও ভেষজ ওষুধের দোকানে মোক্তার হোসেন নামে একজনকে তার শারীরিক সমস্যার বিষয়ে চিকিৎসা নিয়ে কথা বলতে দেখেন। মোক্তার ওই দোকানে ভেষজ ও কবিরাজি চিকিৎসা বাবদ ১৫-২০ হাজার টাকা খরচ করেও কোনো ফলাফল পাননি বলে জানতে পারেন সাগর।

তিনি বলেন, ‘সাগর কৌশলে মোক্তারকে ডেকে নিয়ে আলাপচারিতায় ভেষজ ও কবিরাজি চিকিৎসার প্রতি তার আগ্রহ ও আস্থার কথা জানতে পারেন। এসময় নিজের ও তার পরিবারের সদস্যদের বেশকিছু শারীরিক সমস্যার কথাও সাগরকে জানান মোক্তার। সাগর তাকে জানান, তার স্ত্রী একজন ভালো কবিরাজ এবং সে তার সমস্যার সমাধান করে দেবে। আশ্বাস দিয়ে কথাবার্তার এক পর্যায়ে সাগরের সঙ্গে ৯০ হাজার টাকার চুক্তি করেন মোক্তার। সাগর ও তার স্ত্রী পরদিন সকালে ওষুধসহ তার বাসায় গিয়ে চিকিৎসা করবে বলে জানান।’

র‍্যাবের মুখপাত্র বলেন, ‘বাসায় গিয়ে সাগর স্ত্রী ঈশিতাকে পুরো ঘটনা ও পরিকল্পনার কথা জানান। বিপুল অঙ্কের অর্থ পাওয়ার আশায় রাজি হন ঈশিতা। ঘুমের ওষুধ খাইয়ে অর্থসহ মূল্যবান সামগ্রী লুট করার পরিকল্পনা করে সাগর গাজীপুরের মৌচাক এলাকার একটি ফার্মেসি থেকে এক বক্স ঘুমের ওষুধ কেনেন।’

র‍্যাব জানায়, পরিকল্পনা অনুযায়ী ২৯ সেপ্টেম্বর সকালে সাগর ও তার স্ত্রী গাজীপুরের মৌচাক থেকে মোক্তারের সঙ্গে জামগড়া মোড়ে সাক্ষাৎ শেষে বাসায় যান। সেখানে প্রাথমিক পরিচয়ের পর সাগরের স্ত্রী ঈশিতা তাদের সমস্যার কথা শোনেন এবং ইসবগুলের শরবতের সঙ্গে চেতনানাশক ওষুধ মিশিয়ে তাদের ভেষজ ও কবিরাজি চিকিৎসার ওষুধ বলে খাওয়ান।

কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘মোক্তার, তার স্ত্রী ও ছেলে ঘুমের ওষুধের প্রভাবে ঘুমিয়ে পড়লে সাগর ও তার স্ত্রী মিলে মোক্তার ও তার স্ত্রীর হাত-পা বাঁধেন। পরে তারা মোক্তারের মানিব্যাগ, তার স্ত্রীর ভ্যানিটি ব্যাগ ও বাসার অন্য জায়গায় অর্থ ও মূল্যবান সামগ্রীর জন্য তল্লাশি করে মাত্র পাঁচ হাজার টাকা পান। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে বটি দিয়ে প্রথমে মোক্তারের গলা কেটে হত্যা করেন সাগর। পরে ছেলে ও স্ত্রীকে একই বটি দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করেন। পালানোর আগে তারা মোক্তারের হাতে থাকা আংটিও খুলে নিয়ে যান।’

র‍্যাব জানায়, ‘মোক্তার হোসেন ও তার স্ত্রী সাহিদা বেগম আশুলিয়ার একটি পোশাক কারখানায় কাজ করতেন। তার সন্তান মেহেদী হাসান জয় স্থানীয় একটি স্কুলে সপ্তম শিক্ষার্থী।

 ৩০ সেপ্টেম্বর সাভারের আশুলিয়া জামগড়া এলাকায় বহুতল ভবনের চতুর্থ তলার একটি ফ্ল্যাট থেকে দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়লে ভবনের অন্য ভাড়াটিয়ারা বিষয়টি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে জানায়। পরে ফ্ল্যাট থেকে মোক্তার, তার স্ত্রী সাহিদা ও তাদের ১২ বছরের শিশু সন্তান মেহেদীর অর্ধগলিত গলাকাটা মরদেহ উদ্ধার করা হয়।

এ হত্যাকাণ্ডের পর রোববার আশুলিয়া থানায় অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে একটি হত্যা মামলা হয়। ওই মামলায় কথিত কবিরাজ ও সিরিয়াল কিলার সাগর আলী ও তার স্ত্রী ইশিতা বেগমকে সোমবার দিবাগত রাতে গাজীপুরের শফিপুর এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব-৪-এর একটি দল।

গ্রেপ্তারের সময় তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় হত্যাকাণ্ডের সময় মোক্তারের কাছ থেকে লুট করা আংটি।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তার দম্পতি র‍্যাবকে জানিয়েছে, প্রথমে অর্থের লোভে ও পরে কাঙ্ক্ষিত অর্থ না পেয়ে ক্ষোভ থেকে তাদের হত্যা করা হয়।’

� পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ �







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ
সম্পাদক ও প্রকাশক: নাজমুল হক শ্যামল
দৈনিক নতুন সময়, গ্রীন ট্রেড পয়েন্ট, ৭ বীর উত্তম এ কে খন্দকার রোড, মহাখালী বা/এ, ঢাকা ১২১২।
ফোন: ৫৮৩১২৮৮৮, ০১৯৯৪ ৬৬৬০৮৯, ইমেইল: [email protected]
কপিরাইট © দৈনিক নতুন সময় সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত | Developed By: i2soft
DMCA.com Protection Status