প্লেবয় থেকে রাজনীতিবিদ, খেল খতম ইমরানের?
নতুন সময় ডেস্ক
|
১৯৫২ সালে পাকিস্তানের পাঞ্জাবের লাহোরে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারের ঘরে জন্মগ্রহণ করেন ইমরান খান। এরপর ১৯৭১ সালে মাত্র ১৮ বছর বয়সে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের ময়দানে নাম লেখান। ক্রিকেটের ময়দানে তিনি যখন দ্যুতি ছড়াচ্ছিলেন তখন ১৯৭০ এর দশকের শেষদিকে লন্ডনে প্লেবয় তকমাও পেয়ে যান। ১৯৯২ সালে তার নেতৃত্বে পাকিস্তান প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপ জেতে। এ ছাড়া স্বয়ং ২০২৩ সালের শুরুর দিকে দেশটির বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে বলা হয়, ইমরান খানও স্বীকার করেন তিনি একজন প্লেবয় ছিলেন। খবর ইত্তেফাক ১৯৯১ সালে ইমরান খান দাতব্য ক্যানসার হাসপাতাল গড়েন। এরপর ১৯৯৬ সালে পাকিস্তানের রাজনীতির খাতায় নিজের নাম লেখান। গঠন করেন পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই)। ২০০২ সালে দেশটির সাধারণ নির্বাচনে পার্লামেন্টে এক আসনে জয়লাভ করেন। ২০১৩ সালের সাধারণ নির্বাচনের পর দেশটির উত্তরপশ্চিমাঞ্চলীয় খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশ পাঁচ বছরের জন্য শাসন করে ইমরানের দল পিটিআই। এরপর ২০১৮ সালে দেশটির ২২ তম প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন ইমরান খান। বিভিন্ন বিশ্লেষকদের ধারণা, পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর সাহায্যে প্রধানমন্ত্রীর পদে আসীন হন ইমরান খান। সেই সময় দেশটির বিরোধীদল অভিযোগ করেন, নির্বাচনে কারচুপির মাধ্যমে ক্ষমতায় আসেন ইমরান এবং তিনি সেনাবাহিনীর পুতুল। এখানে বলা বাহুল্য, পাকিস্তানের ৭৫ বছরের ইতিহাসে অর্ধেক সময় দেশটির সেনাবাহিনীর দখলে ছিল। এ সময় তিনবার সেনা অভ্যুত্থান হয়েছে এবং চারজন সামরিক শাসক দেশটি শাসন করেন। ১৯৫৮-৭১, ১৯৭৭-৮৮ এবং ১৯৯৯-৮৮ সাল সেনাবাহিনীর অধীনে ছিল। এরপরে 'গণতান্ত্রিক সরকার' দেশটিতে আসলেও পেছন থেকে কলকাঠি নাড়ে দেশটির প্রভাবশালী সেনাবাহিনী। 'সেনাবাহিনীর সুসম্পর্কের খাতিরে' ইমরান খান ক্ষমতায় এলেও অল্প সময়ের মধ্যে শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তাদের সঙ্গে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েন। তাই যেন কাল হয় ইমরান খানের। ২০২১ সালে দেশটির শক্তিশালী গোয়েন্দা সংস্থা ইন্টার সার্ভিস ইন্টিলিজেন্সের (আইএসআই) প্রধানের নতুন করে নিয়োগ নিয়ে ইমরানের সঙ্গে সেনাবাহিনীর বৈরিতা শুরু হয়। ইমরান চাইছিলেন জেনারেল ফাইজ হামিদ এ গোয়েন্দা পদে আরও থাকুক কিন্তু তৎকালীন সেনাপ্রধান অন্যকাউকে ঠিক করেন। এরপর ২০২২ সালের এপ্রিলে এক অনাস্থা ভোটের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে ক্ষমতাচ্যুত হন ইমরান খান। পাকিস্তানের ইতিহাসে তিনিই একমাত্র প্রধানমন্ত্রী যাকে অনাস্থা ভোটের মাধ্যমে গদি হারাতে হয়। প্রধানমন্ত্রিত্ব যাওয়া পর থেকে একের পর এক বিশাল র্যালি করেন ইমরান খান। সেখানে তিনি প্রকাশে তাকে ক্ষমতা থেকে হটানোর জন্য সেনাবাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তা ও যুক্তরাষ্ট্রকে দায়ী করেন। যদিও পরবর্তীতে তিনি যুক্তরাষ্ট্রকে তার দায়ীর তালিকা থেকে বাদ দেন। তবে এরপরেও সামরিক কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ইমরানের সমালোচনা থামেনি। সবশেষ গত বছরের নভেম্বরে পাঞ্জাব প্রদেশে এক র্যালিতে হত্যাচেষ্টার শিকার হন পিটিআই প্রধান। এ ঘটনার পরের দিনেই তিনি তিনজনকে দায়ী করেন- প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং একজন শীর্ষ গোয়েন্দা কর্মকর্তা। এরপরে গত মার্চে ইমরান খানকে লাহোরে তার বাসভবন থেকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চালায় দেশটির পুলিশ। কিন্তু পিটিআই সমর্থকদের বাধার মুখে পিছু হটে ইসলামাবাদ পুলিশ। তবে শেষমেশ গত মঙ্গলবার ইসলামাবাদ হাইকোর্ট প্রাঙ্গণ থেকে আকস্মিক গ্রেপ্তার করা হয় ইমরান খানকে। ইতোমধ্যে ইমরান খানকে আট দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও তাবাদল্যাবের আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক সংযোগ কেন্দ্রের পরিচালক জীসান সালাউদ্দিন বলেছেন, ১৩ মাস আগে যখন ইমরান খানকে ক্ষমতাচ্যুতের মাধ্যমে পুরো প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে, এটা ক্রিস্টাল ক্লিয়ার ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক এলিট এবং এস্টাব্লিশমেন্ট (পাকিস্তানের সেনাবাহিনী) ইমরান খানকে আর ক্ষমতায় চায় না, কোনো খানেই না। এটা নিশ্চিত করার জন্য তারা যেকোনো কিছু করবে। এদিকে ইমরান খানকে গ্রেপ্তারের জেরে পাকিস্তানজুড়ে ব্যাপক সহিংসতা শুরু হয়েছে। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত আটজনের নিহতের খবর পাওয়া যাচ্ছে। গ্রেপ্তার করা হয়েছে পিটিআই-এর শত শত কর্মীকে। বিভিন্ন খবরে বলা হচ্ছে, পাকিস্তানের সরকারি ভবন, নিরাপত্তা বাহিনীর স্থাপনা লক্ষ্য করে হামলা চালাচ্ছে পিটিআই সমর্থকরা। এ নিয়ে গতকাল বুধবার কড়া ভাষায় বার্তা দিয়েছে দেশটির সেনাবাহিনী। দেশটির সেনাবাহিনী ইমরানের গ্রেপ্তার পরবর্তী সহিংসতাকে ‘কালো অধ্যায়’ হিসেবে উল্লেখ করেছে। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর মিডিয়া উইং ইন্টার-সার্ভিসেস পাবলিক রিলেশন্স (আইএসপিআর) বলেছে, ৯ মে কালো অধ্যায় হিসেবে স্মরণীয় থাকবে। আইএসপিআর বিবৃতিতে বলেছে, ৭৫ বছরে শত্রুরা যা করতে পারেনি ক্ষমতার লোভে রাজনৈতিক পোশাক পরা এই দল তা করেছে। পাকিস্তানে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান একইসঙ্গে বিবৃতিতে হুঁশিয়ারির সুরে বলা হয়েছে, সেনাবাহিনীসহ যে কোনো আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ওপর এবং সামরিক ও সরকারি স্থাপনা ও সম্পত্তির ওপর আর কোনো ধরনের হামলা হলে ভয়াবহভাবে প্রতিশোধ নেওয়া হবে। তবে ইমরানের যে বিশাল শ্রেণির একটা সমর্থক পাকিস্তানজুড়ে হয়েছে-এটাও দেশটির সেনাবাহিনীর মাথাব্যথার কারণ। এ ছাড়া আজ বৃহস্পতিবার পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্ট ইমরান খানের গ্রেপ্তারকে অবৈধ ঘোষণা করেছে। সুপ্রিম কোর্ট ইমরান খানকে অবিলম্বে মুক্তি দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। যা পিটিআই- এর জন্য বিশাল স্বস্তির খবর। তবে দেশটির শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তাদের সঙ্গে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে ইমরান খান 'খেলার ময়দানে' কতদিন আর টিকতে পারেন তাই এখন দেখার বিষয়।
|
� পূর্ববর্তী সংবাদ | পরবর্তী সংবাদ � |