এম এস দোহা
|
![]() লেখক: এম এস দোহা, উপদেষ্টা সম্পাদক, দৈনিক নতুন সময় এরশাদের শাসনামলে বিশেষ ক্ষমতা আইনের প্রয়োজনীয়তা ও অপব্যবহার প্রসঙ্গে মুখোমুখি হয়েছিলাম রাজধানীর বাবর রোডস্থ তার বাসবভনে। প্রায় এক ঘন্টা কথা বলে তার মুখ থেকে না অথবা হ্যাঁ এ ধরনের জবাব বের করতে পারিনি। তিনি বলেন, মনে করো তোমার বোন অথবা স্ত্রীকে নিয়ে রাস্তায় চলার সময় বখাটে কিছু ছেলে উত্যক্ত শুরু করল, পাশে একজন পুলিশ হেঁটে যাচ্ছে। আইনগত বিধি বিধান মানলে তাৎক্ষনিক স্বাক্ষী প্রমাণ ছাড়া ইভটিজারকে থানায় সোপর্দ্দ করা যায় না। কারণ এটি অনেক সময় কাউকে ফাঁসানোর ষড়যন্ত্রও হয়ে থাকে। অপর দিকে বিশেষ ক্ষমতা আইনে কাউকে গ্রেফতার করতে স্বাক্ষী প্রমাণ লাগেনা। সন্দেহজনক মনে হলে পুলিশ যে কাউকে গ্রেফতারের অধিকার সংরক্ষণ করে। প্রসঙ্গে পার্কে এক ব্যায়ামকারীর মজার ঘটনা উল্লেখ করেন তিনি। ব্যয়ামরত ব্যক্তির হাত চালাচালিতে পথচারীর নাক ফেটে রক্তাক্ত। বিষয়টি আদালতে গড়ায়। বিবাদীর ভাষ্য স্বাধীনভাবে মুক্ত পরিবেশে হাত খুলে ব্যায়ামের অধিকার তার রয়েছে। কার নাকের কি হলো এটা তার দেখার বিষয় নয়। কিন্তু আদালত চুড়ান্ত রায়ে বলে- ‘পথচারীর নাকের ডগা যেখান থেকে শুরু, ব্যয়ামকারীর স্বাধীনতা সেখানে শেষ।’ কারণ নাক নিয়ে মুক্তভাবে চলাফেরার অধিকার সংবিধানই তাকে দিয়েছে। স্বাধীনতা অর্থ স্বেচ্ছাচারীতা নয়। আমরা কেউ জবাবদিহিতার উর্ধ্বে নই। জন্ম থেকে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত আমাদের সবার ক্ষেত্রে এটি প্রযোজ্য। ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে মৃত্যুর পরও আমাদের নিস্তার নেই। কৃতকর্মের জবাবদিহিতা ব্যধতামুলক। বাস্তব জীবনেও তাই। ভিক্ষুক থেকে শুরু করে প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রপতিকে কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হয়। বিধি বিধানের আলোকে পালন করে চালাতে হয় কার্যক্রম। দেশের প্রধান বিচারপতিকেও ইমপিচমেন্টের ক্ষমতা সংবিধানে বিদ্যমান। যার জলন্ত উদাহারণ সাবেক প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার বিরুদ্ধে কারাদন্ডের আদেশ। রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, সরকারের মন্ত্রী, এমপি, আমলা, উপজেলা চেয়ারম্যান, পৌরসভার মেয়র, চেয়ারম্যান, মেম্বার সবাই একটি বিধিবিধানের আলোকে নিয়ন্ত্রিত। অথচ আমাদের স্থানীয় সরকারের কতিপয় নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের বিষয়টি মানতে কেনজানি অনীহা! তারা চায় শায়ত্বশাসনের নামে জবাদিহিমুক্ত স্বাধীনতা। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, দেশের পৌরসভা গুলোর মাধ্যমে সরকার গ্রামীণ শহরগুলোর আধুনিক সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করণের কর্মকান্ড চালিয়ে আসছে। দু:খজনক হলেও সত্য, অধিকাংশ পৌরসভার অবস্থা লেজেগোবরে। চলছে মেয়রের একনায়কী শাসন। জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতা উপেক্ষিত। অধিকাংশ পৌরসভার মেয়ররা খেয়াল খুশি মতো অফিস করেন। নাগরিক সেবার বদলে নিজের ব্যবসার প্রসার, টেন্ডার, চাঁদাবাজীর ভাগভাটোয়ারা নিয়ে থাকেন বেশী ব্যস্ত। নাগরিক সুবিধা বৃদ্ধি সাপেক্ষে ট্যাক্স আদায় ক্ষেত্রে উদাসীন। অফিস কর্মচারীদের বেতন-ভাতা পরিশোধে মেয়রের মাথা ব্যথা নেই। পৌরসভাগুলোকে রুগ্ন ও মেরুদন্ডহীন করে রেখেছে বছরের পর বছর। অথচ অধিকাংশ মেয়দের অবস্থা দিনদিন ফার্মের মুরগীর মতো নাদুস নুদুস। এই চেয়ারটি অর্থ, বিত্ত, বাড়ী, গাড়ী উর্পাজনে আলাউদ্দিনের আলৌকিক চেরাগের মতোই। স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মো: তাজুল ইসলাম দায়িত্ব গ্রহনের পর বিষয়টি উপলব্ধি করেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সাথে আলোচনা সাপেক্ষে পৌরসভা গুলোতে বিসিএস ক্যাডার প্রধান নির্বাহী নিয়োগের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন। যা এখন আইনের বৈধতায় কার্যকর হয়েছে। বিষয়টি সহজভাবে মেনে নিতে পারেননি অনেক পৌর মেয়র। তারা প্রতিবাদ জানায়। এতে নাকি তাদের ক্ষমতা খর্ব হবে। উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানদের মতোই তাদের ক্ষমতাহীন ঠুটো জগন্নাথ বানানোর প্রক্রিয়া এটি। অপ্রিয় হলেও সত্য, গত কয়েকমাসে বেশ কয়েকটি পৌরসভায় প্রধান নির্বাহী নিয়োগের পর ধারাবাহিক কর্মকান্ডের ফলাফল ইতিবাচক। রাজস্ব আয় বেড়েছে বহুগুন। হ্রাস পেয়েছে ভূয়া, ভূতুড়ে চোরা বিল ভাউচার দৌরাত্ব । কাজের পরিবেশও ইতিবাচক। গত দু মাসে লাকসাম ও চৌমুহনী পৌরসভায় প্রধান নির্বাহীর কর্মকান্ডের ইতিবাচক ফলাফল দৃশ্যমান। পৌরসভা দুটিতে প্রায় পাঁচগুন বেশী রাজস্ব আদায় হয়েছে। এতে বুঝাযায় এতোদিন সিষ্টেমে ঘাপলা ছিলো। এধারা অব্যাহত থাকলে পর্যায়ক্রমে অন্যান্য পৌরসভাগুলোতেও রাজস্ব আদায়ে মডেল হতে পারে প্রধান নিবার্হী নিয়োগের ইতিবাচক ফলাফল। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, আইন ও বিধি বিধানের বাইরে কোন কিছুই নেই। পৌরসভার মেয়রসহ স্থানীয় সরকারের অন্যান্য সেক্টরে জনপ্রতিনিধিদের জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিতকরণ অপরিহার্য্য। উপজেলা পরিষদের ইউএনও এবং পৌরসভায় প্রধান নিবার্হীদের নিয়োগের বিষয়টিকে নেতিবাচক দৃষ্টিতে দেখার কোন অবকাশ নাই। লেখক, উপদেষ্টা সম্পাদক, দৈনিক নতুন সময়। |