|
নির্বাচন সামনে রেখে অবৈধ অস্ত্রের ব্যবহার বাড়ার আশঙ্কা
নতুন সময় প্রতিবেদক
|
![]() নির্বাচন সামনে রেখে অবৈধ অস্ত্রের ব্যবহার বাড়ার আশঙ্কা বিভিন্ন রাজনৈতিক দল তাদের সম্ভাব্য প্রার্থীর তালিকা ঘোষণা করার পর মাঠের চিত্র পালটে গেছে। গুরুত্বপূর্ণ সংসদীয় এলাকাগুলোতে অনেক প্রার্থীর প্রতিপক্ষরা মহড়া দিচ্ছে। এ নিয়ে প্রকাশ্যে অবৈধ অস্ত্রের মহড়াও দেখা যাচ্ছে। এ নিয়ে রাজনৈতিক মহলগুলোতে নানা ধরনের উদ্বেগ-উত্কণ্ঠা দেখা দিয়েছে। এমন উদ্বেগের মধ্যেই গত বুধবার সন্ধ্যায় চট্টগ্রামের চান্দগাঁও চালিতাতলী এলাকায় নির্বাচনি জনসংযোগের সময় বিএনপির মনোনীত প্রার্থী এরশাদ উল্লাহ গুলিবিদ্ধ হন। সন্ত্রাসীদের ছোড়া গুলিতে এক জন নিহত হন। তবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র উদ্ধার হলেও ৫ আগস্টের পর লুট হওয়া আগ্নেয়াস্ত্রের প্রায় ৩০ শতাংশ উদ্ধার হয়নি বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। একটি গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ৫ আগস্টের পর লুট হওয়া আগ্নেয়াস্ত্রের মধ্যে কিছু অস্ত্র স্থানীয় সন্ত্রাসী চক্রের হাতে এখনো রয়েছে। এসব অস্ত্র দিয়ে সন্ত্রাসী চক্র নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে। রাজধানীসহ চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ, কুমিল্লা, গাজীপুর, যশোর ও সিলেট অঞ্চলে রাজনৈতিক দলগুলোর অভ্যন্তরীণ কোন্দল ও আধিপত্য বিস্তারকে ঘিরে অস্ত্রের প্রদর্শন ও ব্যবহারের প্রবণতা বেড়েছে। এ ব্যাপারে নিরাপত্তা বিশ্লেষক এয়ার কমোডর (অব.) ইসফাক ইলাহি বলেন, নির্বাচনের আগেই যেভাবে অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবহার দেখা যাচ্ছে, তাতে তো আমাদের নারী ভোটার ও সংখ্যালঘু ভোটারদের মধ্যে একটা আতঙ্কের সৃষ্টি করতে পারে। নির্বাচনের আগেই এসব আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করতে হবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে। আমাদের পুলিশের গোয়েন্দা নেটওয়ার্ক ও তাদের সক্ষমতা এখনো স্বাভাবিক স্থানে নিতে পারিনি। তবে যৌথ বাহিনী বা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে আরো অভিযান চালাতে হবে। যাতে জনগণের মধ্যে স্বস্তি আসে। ৫ আগস্টের পর যৌথ বাহিনীর চলমান অভিযানে এখন পর্যন্ত ৩৫০টির বেশি আগ্নেয়াস্ত্র ও প্রায় ৫ হাজার রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়েছে। যৌথ বাহিনীর এই অভিযান চলমান রয়েছে। গত বুধবার সেনা সদর দপ্তরে সেনাবাহিনীর এক প্রেস ব্রিফিংয়ে সেনা সদরের পরিচালক (মিলিটারি অপারেশন্স) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল দেওয়ান মোহাম্মদ মনজুর হোসেন বলেন, ৫ আগস্টের পর লুট হওয়া অস্ত্র-গোলাবারুদের ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ উদ্ধার হয়েছে। সেনাবাহিনী গত ২৬ অক্টোবর রাজশাহী থেকে ছেড়ে আসা বনলতা এক্সপ্রেস ট্রেনের একটি বগি তল্লাশি করে আটটি বিদেশি পিস্তল, ১৪টি ম্যাগাজিন, ২৬ রাউন্ড অ্যামুনিশন, ২.৩৯ কেজি গান পাউডার ও ২.২৩ কেজি প্লাস্টিক বিস্ফোরক উদ্ধার করে। ধারণা করা হচ্ছে, অস্ত্র ও গোলাবারুদ সীমান্তের ওপার থেকে চোরাচালানের মাধ্যমে আনা হয়েছে। এ ঘটনার পর ৩১ অক্টোবর সুনামগঞ্জের ছাতকের সীমান্তবর্তী এলাকা ছনবাড়ী থেকে বিজিবি ২৫০ গ্রাম প্লাস্টিক বিস্ফোরক ও দুইটি ডেটোনেটর উদ্ধার করে। র্যাব জানায়, এ পর্যন্ত তারা ৪৮৪টি অস্ত্র উদ্ধার করেছে। এর মধ্যে র্যাবের লুট হওয়া ১৬৮টি অস্ত্রের মধ্যে ৯০টি, পুলিশের লুট হওয়া অস্ত্রের মধ্যে ২২৮টি উদ্ধার করা হয়েছে। এ ছাড়া ১৬৬টি অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। গোলাবারুদের ক্ষেত্রে র্যাবের ৭ হাজার ৩০৩ রাউন্ড, পুলিশের ১১ হাজার ৯৪১ রাউন্ড উদ্ধার করা হয়েছে। আর অবৈধ গোলাবারুদ ১ হাজার ২৮০ রাউন্ড উদ্ধার করা হয়েছে। অস্ত্র উদ্ধার-সংক্রান্ত মামলায় ৯৩ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অস্ত্র-গোলাবারুদ আসছে সীমান্ত পথে :পুলিশ সদর দপ্তরের একজন কর্মকর্তা বলেন, অবৈধ অস্ত্রের বড় অংশ সীমান্তপথে আসছে। কিছু অস্ত্র সরকারি বাহিনীর লুট হওয়া অস্ত্রের সঙ্গেও মিশে গেছে। নির্বাচনের আগেই এসব নিয়ন্ত্রণে না আনলে পরিস্থিতি অস্থিতিশীল হতে পারে। ঐ কর্মকর্তা আরো জানান, সীমান্তের অন্তত ২৫টি পথ দিয়ে দেশে অবৈধ অস্ত্র ঢুকছে। এর মধ্যে রয়েছে বান্দরবানের নাইক্ষংছড়ি, থানচি, নেফিউ পাড়া, তমব্রু, কক্সবাজারের টেকনাফের কুতুবপালং ও উখিয়া, কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম, আখাউড়া, রাজশাহীর গোদাগাড়ি, চাপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ, রহনপুর, সোনা মসজিদ, আজমতপুর, বিলভাতিয়া, ঝিনাইদহের মহেশপুরের জুলুলি, সাতক্ষীরার কলারোয়ার তলুইগাছা ও শাঁকারা, চুয়াডাঙ্গার দর্শনা, মেহেরপুরের গাংনী ও কুষ্টিয়ার প্রাগপুর সীমান্ত এলাকা। নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা মনে করেন, নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক দলগুলোর উচিত অস্ত্রবিহীন পরিবেশ নিশ্চিতে প্রশাসনকে সহযোগিতা করা। তারা সতর্ক করে বলেন, অবৈধ অস্ত্রের বিস্তার শুধু নির্বাচনি সহিংসতা নয়, সাধারণ মানুষের নিরাপত্তাকেও বড় ঝুঁকির মুখে ফেলছে। এ ব্যাপারে পুলিশ সদর দপ্তরের মিডিয়া অ্যান্ড প্ল্যানিং শাখার সহকারী মহাপরিদর্শক এ এইচ এম শাহাদাত হোসাইন বলেন, সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়ে অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধার অভিযান পরিচালিত হচ্ছে। সম্প্রতি অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধারে পুরস্কারও ঘোষণা করা হয়েছে। এটা অভিযানে আরো সুফল বয়ে আনবে। উল্লেখ, গত ৭ অক্টোবর খুলনায় ইমরান মুন্সী (৩২) নামে এক যুবককে গুলি করে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। গত ২৫ অক্টোবর চট্টগ্রাম শহরের বাকলিয়া এলাকায় দুই পক্ষের গোলাগুলিতে মো. সাজ্জাদ নামে ছাত্রদলের এক কর্মী নিহত হন। সর্বশেষ ৬ নভেম্বর খুলনার পূর্ব রূপসায় সোহেল হাওলাদার (৩৫) নামে এক প্রবাসীকে গুলি করে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। এসব ঘটনায় একাধিক আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার হয়েছে বলে গোয়েন্দা সংস্থা সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে। |
| পূর্ববর্তী সংবাদ | পরবর্তী সংবাদ |
তাড়াশে জমি নিয়ে বিরোধের ঘটনায় একই পরিবারের সাজাপ্রাপ্ত ৯ জন গ্রেফতার
ঘিলাছড়ি বাজারে তারেক রহমানের ৩১ দফা রাষ্ট্রগঠন কর্মসূচির লিফলেট বিতরণে দীপেন দেওয়ান
নির্বাচিত হলে কেউ বৈষম্যের শিকার হবে না: পাইকগাছায় এমপি প্রার্থী বাপ্পি
হালদা নদীকে 'মৎস্য হেরিটেজ এলাকা' ঘোষণা, ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত বলছেন বিশেষজ্ঞরা
