যশোরে ২৭ বিলে অথৈই পানি, অনিশ্চয়তায় ২০ হাজার হেক্টর জমির বোরো আবাদ
প্রিয়ব্রত ধর,অভয়নগর
প্রকাশ: Saturday, 23 November, 2024, 12:42 PM
বোরো আবাদ নিয়ে অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছে দক্ষিণ অঞ্চলের যশোরের কৃষকরা। কারণ হিসেবে তারা বলছেন, নভেম্বরের শেষ সপ্তাহ থেকে ডিসেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহের মধ্যে শুরু হয় বোরো আবাদের মৌসুম তবে এবারের চিত্র ভিন্ন রুপ ধারণ করেছে। ফসল রোপন চলে ফেব্রুয়ারির মধ্যভাগ পর্যন্ত কিন্তু যশোরে ৩টি উপজেলার অন্তত ২৭ টি বিল এখনো পানিতে টৈটুম্বুর হয়ে আছে। মুক্তেশ্বরী টেকা, শ্রী, হরি ও শৈলমারী নদীতে পলি পড়ায় এসব বিলের পানি-নিষ্কাশন বন্ধ হয়ে আছে বলছে ভবদহ পাড়ের কৃষকরা।
স্থানীয় কর্মকর্তা ও কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, যশোর জেলার অভয়নগর,কেশবপুর ও মনিরামপুর উপজেলার হাজার হাজার হেক্টর কৃষি জমি পানিতে নিমজ্জিত। এর মধ্যে অভয়নগর এলাকার হাজার হাজার হেক্টর জমি এখনো তলিয়ে আছে।
মনিরামপুর উপজেলায় কুলটিয়া ইউনিয়ে প্রায় ২৩৫০ হেক্টর জমি পানি বন্দী। যেখানে বোরো আবাদ অনিশ্চিত হয়ে পড়ছে বলে জানান উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তা রেখা বিশ্বাস। তবে মনিরামপুর উপজেলা জুড়ে প্রায় ৭ হাজার হেক্টর জমি এখনো কোমর সমান পানির নিচে।
অভয়নগর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোছাম্মদ লাখলী খাতুন জানান, ‘সাধারণত নভেম্বরের শেষ সপ্তাহ থেকে ডিসেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহের মধ্যে বোরো মৌসুম শুরু হয়। শিগরই আবাদি জমি থেকে পানি নিষ্কাশন করে চাষযোগ্য করে তুললার চেষ্টা চলছে, নয়তো কৃষক বোরো মৌসুম ধরতে পারবেন না।’ তবে এখনো পর্যন্ত ১৫ হাজার হেক্টর জমি বোরো চাষের অনুপযোগী। ইতি মধ্য কৃষকদের মাঝে সরকারী ভাবি বীজ পৌছে দেওয়া হয়েছে। পাশা পাশি তিনি কৃষকদের পরামর্শ দেন উঁচু কোন স্থানে ধানের পাতা তৈরি করবার জন্য, যাতে করে জমি থেকে পানি কমলেই দ্রুত সেখানে বোরো আবাদ শুরু করতে পারে।
ভবদহ পানি নিষ্কাশণ সংগ্রাম কমিটির আহ্বায়ক রনজিত বাওয়ালী বলছে‘বৃষ্টির পানি মূলত খাল দিয়ে নদ-নদীতে চলে যায়। তবে ভবদহ অঞ্চলের বেশির ভাগ খাল দখল-দূষণে নাব্যতা হারিয়েছে। পলি জমেছে নদ-নদীতে । ফলে দ্রুত সময়ে পানি নিষ্কাশন হচ্ছে না।’
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, অভয়নগর,মনিরামপুর,কেশবপুর,ফুলতলা উপজেলায় ২৭ বিল রয়েছে জলাব্ধতা। তবে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে ৫২ টি বীল জলাবদ্ধ। পানি প্রবাহের প্রতিবন্ধকতায় এ অঞ্চলের অধিকাংশ আবাদি জমিতে এখনও কোমর সমান পানি। হাজার হাজার মাছের ঘের পানির নিচে তলিয়ে আছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড যশোরের নির্বাহী প্রকৌশলী পলাশ কুমার ব্যানার্জি বলেন, এলাকার জলাবদ্ধতা দূরীকরণে দ্রুত সমায়ে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। আমডাঙ্গা খালের অধিগ্রহ করে খাল বড় করবার ব্যবস্থা হচ্ছে, ইতি মধ্য ভবদহের উজানে প্রায় ৩০ কিঃমিঃ নদী প্রস্থ ও গভীর করণের কাজ চলমান।
সুত্র বলছে এলাকার প্রায় ৫০ হাজার কৃষক পরিবার অন্তত ২৫ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ করে থাকে সরজমিনে খোজ নিলে স্থানীয়রা বলছেন, টিআরএম চালু ছাড়া কোন ভাবেই এই বানভাসি মানুষদের সমস্যার সমাধান হবে না।
ভবদহ সুইচ গেটের উজানে নদী খনন কাজে দ্বায়ীত্বে থাকা পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রকৌশলী (মেকানিকাল ডিভিশন) সুব্রত আচার্য জানান ভবদহ ২১ভেন্ট স্লুইসগেট থেকে শুরু করে শ্রী নদী, হরি নদীর দোহাখোলা, শোলগাতিয়া, খুলনার খর্ণির গ্যাংরাইল নদী পর্যন্ত নদীর পলি নিষ্কাশনের কাজ করছে ৭টি স্কেভেটর। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত লাগাতার ১৫/১৬ ঘন্টার কাজ অব্যাহত রয়েছে বলে জানান । তবে সরজমিনে ৭ টি স্কেভেটরের কাছে গিয়ে ২টিতে কোন লোক পাওয়া যায়নি। স্থানীয়রা জানান মাঝে মাঝে চলে স্কেভেটরটি। অধিকাংশ সময় তা বন্ধ থাকে।
যশোর মশিয়াহাটি গ্রামের কৃষক অসীম মন্ডল বলেন দীর্যদিনের সমস্যায় ভুগছি আমরা গত দুই বছর কিছুটা বোরো আবাদ হলেও এ বার ধান হওয়ার কোন সম্ভাবনা দেখছি না।
ভবদহ ও তৎসংলগ্ন বিল এলাকার জলাবদ্ধতা নিরসনে স্থায়ী সমাধানের আশ্বাস দিয়েছেন পানিসম্পদ এবং পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। সম্প্রতি ভবদহ অঞ্চল পরিদর্শনে গিয়ে তিনি বলেন, ‘বিলগুলোর জলাবদ্ধতা নিরসনে স্থানীয় আমডাঙ্গা খালের প্রবাহ বাড়াতে হবে। অন্যদিকে ভবদহ এলাকার হরি নদী, ভৈরব নদ ও মুক্তেশ্বরী নদীতে ড্রেজিং করে পানিপ্রবাহ বাড়ানোর প্রস্তুতি আমরা গ্রহণ করেঝি।দ্রুত সমায়ে এ জলাবদ্ধতার সমাধান হবে।