কুড়িগ্রামে জমি সংক্রান্ত বিরোধ থানায় অভিযোগ করায় ভুমিদস্যুর হামলায় ৭ জন আহত
আহম্মেদুল কবির, কুড়িগ্রাম
প্রকাশ: Wednesday, 23 October, 2024, 9:39 PM
সরকারি ভাবে ভুল রেকর্ড হওয়ায় জমির দখল সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে জীবন নাশের হুমকি ও সন্ত্রাসী কর্মকান্ড হওয়ার আশংকায় থানায় অভিযোগ দায়েরের ১০ দিন পরেই প্রতিপক্ষ ভুমিদস্যু ও তাদের ভাড়া করা রাজনৈতিক দলের গুন্ডা বাহিনীকে নিয়ে দেশীও অস্ত্র- অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে বাড়িতে অনধিকার প্রবেশ করে হামলা চালিয়ে বাড়িতে থাকা ২ বৃদ্ধা মহিলাসহ ৭ ব্যক্তি গুরুতর আহত করা হয়েছে। আহতদের মধ্যে মুমূর্ষু ৩ জনকে রংপুর মেডিকেল হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়েছে, ২ জনকে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে চাড়পত্র দেয়া হয়েছে ২জন কুড়িগ্রাম সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। অপরদিকে অভিযুক্ত হামলাকারী মহির উদ্দিন ও তার এক মেয়ে শরীরে আঘাত জনিত কারণে হাসপাতালে ভর্তি থাকতে দেখা গেছে।
ঘটনাটি ঘটেছে গতকাল ২২ অক্টোবর বেলা সাড়ে ১২ টায় কুড়িগ্রাম সদর, বেলগাছা ইউনিয়নের নাজিরা মৌজার গোডাউন পাড়া এলাকায় কবি মোকলেছুর রহমানের বাড়িতে।
কবি মোকলেছুর রহমানের অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, তার পিতা আকবর আলী ওই একই এলাকার মৃত: খতি মামুদের পুত্র জনৈক ঝড়ু মামুদের নিকট মৌজা কালে, জেএল নং- ২৫, সিএস খং নং- ২২২, আর এস খং নং- ২২৮, সিএস ও আরএস দাগ নং- ৩৪২/৭৯৭ মোট জমি ৩২৷ শং- এর মধ্যে ৬.৫ শং ক্রয় করে উক্ত তফশিল বর্নিত জমিতে নিজ দখলে থাকা একটি পুকুরে দীর্ঘ ২৩ বছর মাছ চাষ করে আসছিলো। উক্ত খতিয়ান ভুক্ত জমির মধ্যবর্তী স্থানে থাকা ২. ৫ শং জমি ভুল বসত জনৈক ঝড়ু মামুদের বড়ভাই মৃত আব্দুস সাত্তার ওরফে আলসিয়ার নামে দিক নির্ণয়ে ভুল রেকর্ড হয়।
সরকারি জরিপ চলাকালে এধরণের দিক নির্ণয়ে ভুল রেকর্ড ভুঁড়িভুৃঁড়ি। বিষয়টি প্রতিপক্ষকে বারবার বুঝানো হলেও তারা বিষয়টি কোনভাবেই মেনে নিচ্ছিলো না এবং বারবার জমি ছেড়ে দেয়ার জন্য কবি মোকলেছুর রহমানের পরিবারকে হুমকি ধমকি দিয়ে আসছিলো। কবি মোকলেছুর রহমানের পরিবার বিষয়টি গ্রাম্য সালিশ বৈঠক আহবান করেও বারবার ব্যর্থ হয়। গত ১২ অক্টোবর অভিযুক্ত আসামি ওই একই এলাকার মহির উদ্দিনের পুত্র হযরত আলী(৪২), মৃত বিশকেতু মামুদের পুত্র মহির উদ্দিন(৬৭)- গং জমি ছেড়ে না দিলে কবি মোকলেছুর রহমানের পরিবারকে প্রকাশ্য জীবন নাশের হুমকি প্রদর্শন করে। কবি মোকলেছুর রহমান বাধ্য হয়ে ওই দিনেই ৪ জনকে অভিযুক্ত করে কুড়িগ্রাম সদর থানায় জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।
থানায় অভিযোগ দায়ের করার ১০ দিন পর গতকাল অভিযুক্ত আসামি মহির- গং ক্ষিপ্ত হয়ে নিজেরা স্বদলবলে এবং স্থানীয় রাজনৈতিক কিছু গুন্ডাপান্ডা ভাড়া করে নিয়ে এসে কবি মোকলেছুর রহমানের বাড়িতে অনধিকার প্রবেশ করে বাড়িতে থাকা কবি মোকলেছুর রহমানের বৃদ্ধা মা মমেনা বেগম, প্রতিবেশী দাদী জমিলা বেগম, জ্যাঠা জোবেদ আলী, চাচা জহুরুল হক ও আঃ গফুর এবং বাবলু মিয়া ও রফিকুল ইসলাম'কে বেধড় মারপিট করে রক্তাক্ত জখম করে বিরোধপূর্ণ জমি দখলের চেষ্টা চালায়। অনাকাঙ্ক্ষিত এ ঘটনায় এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে।
অভিযোগকারী কবি মোকলেছুর রহমান আক্ষেপ করে বলেন, গত ১০ দিন পূর্বে আমাদের পরিবারের ওপর এধরনের হামলা হতে পারে, এজন্য থানায় অভিযোগ করেছিলাম। কিন্তু থানা কতৃপক্ষ যদি একটি বার অভিযুক্ত আসামীদের সাথে কথা বলতো এবং আইনগত সমাধানের চেষ্টা করতো তাহলে আজ আমাদের এমন পরিস্থিতির শিকার হতে হতো না। কবি মোকলেছুর রহমান আসামীদের গ্রেফতারের দাবী জানান।
অপরদিকে এঘটনায় ক্ষিপ্ত এলাকার স্থানীয় ময়মুরুব্বিদের সাফ কথা, ব্যক্তিগত, পারিবারিক কিংবা স্থানীয় কোন ঘটনায় রাজনৈতিক দলের গুন্ডাপান্ডাদের ভাড়া করে নিয়ে আসার অপরাজনীতি কুড়িগ্রামের দীর্ঘদিন থেকে চলে আসছে। এই কালচার বন্ধ হওয়া দরকার, কবি মোকলেছুর রহমানের বাড়িতে রাজনৈতিক দলের ওই সমস্ত গুন্ডাপান্ডাদের চিহ্নিত করে তাদের গ্রেফতার করে দৃষ্টান্ত মুলক শাস্তিরও দাবী করেন তারা। অপরদিকে হাসপাতালে ভর্তি প্রতিপক্ষের মহির উদ্দিন বলেন, 'আমার কেনা জমি রেকর্ড-খারিজসহ বৈধ কাগজপত্র আছে। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে তারা দখল করে রেখেছে। থানায় অভিযোগ, দফায় দফায় মিটিং করলেও তারা দখল ছাড়েনি। এতদিন ক্ষমতার দাপটে দখল রেখেছে। আজ আমি ও আমার পরিবারের লোকজন আমাদের অংশ ঘিরতে গেলে তারা বাঁধা দেয়। এতে মারামারি হয়েছে। তাদের বাড়িতে প্রবেশ করা হয়নি। রাজনৈতিক দলের লোকজনকে ভাড়া করে ডেকে আনা প্রসঙ্গে মহিরউদ্দিন বলেন, না আমি বা আমাদের কোন লোকজন কোন রাজনৈতিক দলের কাউকে ডেকে আনিনি, তাদের বাড়িতে গিয়ে কোন হামলা করিনি।
এঘটনার সর্বশেষ পরিস্থিতি জানতে চাইলে কুড়িগ্রাম সদর থানার ওসি নাজমুল আলম বলেন, '৯৯৯-এর মাধ্যমে খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। সংঘর্ষের ঘটনায় কোনও পক্ষই সন্ধ্যা পর্যন্ত লিখিত অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।'