আকাশচুম্বী বাজারদরে দিশেহারা নিম্ন ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষ
নতুন সময় প্রতিবেদক
প্রকাশ: Monday, 23 September, 2024, 3:41 PM
"ক্ষুধার রাজ্যে পৃথিবী গদ্যময়, পূর্ণিমা চাঁদ যেন ঝলসানো রুটি'—কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যের কবিতার এ লাইন যেন চিরসত্যের চরম শিখরে এ সময়ে। খাদ্যাভাব নেই, তবে অর্থের অভাব এসে ভর করেছে সাধারণ মানুষের ঘাড়ে। ফলস্বরূপ প্রয়োজনীয় খাবার সামনে থাকলেও পকেটের দিকে তাকিয়ে শুধু দেখে যেতে হচ্ছে বাজারের সারিবদ্ধ দোকানগুলোর দিকে। আজকের দিনে দেশের বহুমুখী উন্নয়ন হলেও এ দেশের বহুসংখ্যক মানুষই অপর্যাপ্ত আয়ের অন্তর্ভুক্ত। বর্তমানের বাজারে দ্রব্যমূল্যের ক্রমাগত বৃদ্ধিতে নাকানিচুবানি খেতে হচ্ছে নিম্ন আয়ের মানুষের। এ সব মানুষের দুর্দিন ক্রমশই ঘনিয়ে আসছে নিত্যদিনের অতি প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের মূল্য ভারসাম্যহীনতার কারণে।
নিত্যপণ্যের মূল্য দিন দিন লাগামহীন হয়ে ওঠায় ভালো নেই মধ্যবিত্ত ও নিম্ন আয়ের সাধারণ মানুষ। বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম যে হারে আকাশচুম্বী হয়ে উঠেছে, সে অনুপাতে বাড়ছে না তাদের আয়। ফলে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে জীবনযাপনে হিমশিম খেতে হচ্ছে তাদের। মাসিক আয়ের সঙ্গে ব্যয়ের হিসাব মিলাতে পারছেন না তারা।
১ কেজি পেঁয়াজ কিনতে এখন গুনতে হচ্ছে ১২০ টাকা। চাল, ডাল, তেল, চিনি, আটা, ময়দা, শাকসবজি সহ প্রায় সব ধরনের পণ্যের দাম বেড়েই চলেছে। বিশেষ করে ডিমের দাম। প্রতি হালি ডিমের দাম বিক্রি করা হচ্ছে ৫০থেকে ৫৫ টাকা। কাঁচা মরিচ ১৯০ থেকে ২০০ টাকা, আলু ৫০ থেকে ৬০ টাকা, রসুন ২০০ টাকা। আর মাছ-মাংসের তো কোন কথাই নেই। ০৬ গতকা ধনবাড়ী উপজেলার বিভিন্ন হাট বাজার ঘুরে দেখা যায়, আলু, বেগুন, পেঁয়াজ রসুন সহ সব ধরনের নিত্যপণ্যের দাম বেড়েই চলেছে। ফলে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত পরিবারের মানুষগুলোর বাজার করা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে। বাড়তি চাল, ডাল, ডিম সহ সব ধরনের পণ্যের দাম বাড়ার কারণে অধিকাংশ নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারের সংসার চালানোই কঠিন হয়ে পড়েছে। উপজেলার বিভিন্ন হাট বাজার ঘুরে বেশ কয়েকজন ক্রেতার সঙ্গে কথা হলে তারা বলেন, মাসে যে টাকা ইনকাম হয়, পরিবার নিয়ে সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হয় তাদের। এদিকে কাঁচা বাজারের বেশ কয়েকজন দোকানদারদের সাথে কথা হলে তারা জানান, এখানে আমাদের করার কিছু নেই। আমরা যে দামে পণ্য ক্রয় করে থাকি, সে অনুযায়ী সামান্য কিছু লাভ রেখে ক্রেতাদের নিকট বিক্রি করে থাকি।
নিম্ন-মধ্যবিত্ত আলাল হোসেন জানান, একসময় ঢাকার একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতেন তিনি। বৈশ্বিক মহামারি করোনাকালে সেই চাকরিটা হারান। তারপর থেকে কিছু মাস বেকার ছিলেন। পরে চাকরিবাকরি না-পেয়ে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালানো শুরু করেন। স্ত্রী সন্তান নিয়ে কোনোমতে চলছিল সংসার। তবে দিন দিন নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম হাতের নাগাল ছাড়িয়ে যাওয়ায় আয়ের সঙ্গে ব্যয়ের হিসাব মিলাতে পারছেন না। এতে তিনি ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন।
কথা হয় ধনবাড়ী উপজেলার পাইস্কা ইউনিয়নের বিল পাইস্কা এলাকার বাসিন্দা হেলাল এর সঙ্গে। তিনি বলেন, বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করছি। সীমিত টাকা বেতন পাই। দ্রব্যমূল্যের সীমাহীন ঊর্ধ্বগতির কারণে দিন দিনই আয়ের চেয়ে ব্যয়ের পাল্লা ভারি হচ্ছে। মা-বাবা, স্ত্রী-সন্তান নিয়ে ৫ সদস্যদের সংসার খরচের জোগান দিতে দিতে হাঁপিয়ে উঠেছি।
ভ্যানচালক আক্তার বলেন, বাজারে গেলে জিনিসপত্রের দাম শুনে মাথা ঘুরে যায়। যে টাকা নিয়ে বাজারে যাই তাতে সংসারের চাহিদা অনুযায়ী বাজার আনতে পারি না। পেটের ক্ষুধা তো এতকিছু বোঝে না। ছেলেসন্তান নিয়ে কষ্টে জীবনযাপন করছি।