মিলাদুন্নবী কি পালন করতেন নবীজি?
নতুন সময় প্রতিবেদক
|
নবীজির জন্মে পুরো পৃথিবী আনন্দে আত্মহারা হয়ে গিয়েছিল। সকল নবী-রসুলের সর্দার, সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ নবী এ পৃথিবীতে আগমন করেন রবিউল আউয়াল মাসে। এ মাসেই নবীজির জন্ম ও মৃত্যু হয়েছে। তাই তো ইসলাম ও মুসলিম উম্মাহর কাছে অত্যন্ত গুরুত্ববহ মাস রবিউল আউয়াল। ঈদে মিলাদুন্নবী বলতে কী বুঝায়? অশান্তি আর বর্বরতায় ভরপুর সংঘাতময় আরবের বুকে আঁধারের বুক চিড়ে মহানবি (সা.) সুখ-শান্তি কামিয়াবি ও রহমতের বার্তা নিয়ে পৃথিবীতে আগমন করেন। মানবজাতিকে সত্যের, সভ্যতার ও ন্যায়ের দিকনির্দেশনা দিয়ে গোটা বিশ্বকে শান্তিতে পরিপূর্ণ করে তোলেন। ‘ঈদ’ শব্দের আভিধানিক অর্থ খুশি হওয়া, ফিরে আসা, আনন্দ উদযাপন করা ইত্যাদি। আর ‘মিলাদ’ শব্দের অর্থ জন্মতারিখ, জন্মদিন, জন্মকাল ইত্যাদি। তাই ‘মিলাদুন্নবি’ (সা.) বলতে নবিজির আগমনকে বোঝায়। আর ‘ঈদে মিলাদুন্নবী’ (সা.) বলতে নবি করিম (সা.)-এর আগমনে আনন্দ উদযাপন করাকে বোঝায়। মিলাদুন্নবীর দিনে নবীজির আমল নবীজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজের জন্ম উদযাপন করতেন জন্মের বার হিসেবে, তারিখ হিসেবে নয়। নবীজির জন্মদিন ছিল সোমবার। এদিন তিনি কোনো উৎসব, মিছিল বা ভোজনরসিকতা করতেন না, বরং রোজা রাখতেন। হাদিস বেত্তাগণ লিখেছেন, সোমবার নবীজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জন্মের দিন হওয়ায় প্রতি সোমবার রোজা রাখা মোস্তাহাব। হজরত আবু কাতাদাহ আনসারি (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে আছে, ‘রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সোমবার রোজা রাখা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, ওই দিন আমি জন্মগ্রহণ করেছি। ওই দিনই আমি নবুয়ত লাভ করেছি বা আমার ওপর ওহি অবতীর্ণ হয়।’ (মুসলিম: ১১৬২) দিবস পালন নিয়ে ইসলাম কী বলে? ইসলামে দিবস পালনের অনুমোদন নেই। ইসলামে জন্মদিন পালনের গুরুত্ব যদি থাকতো, তাহলে সাহাবায়ে কেরাম, তাবেয়িগণ এবং তাবে তাবেইনসহ পূর্ববর্তী মহান ব্যক্তিদের থেকে এটি পালনের প্রমাণ থাকার কথা। কিন্তু আদৌ তা নেই। তারা জন্মদিন পালন করবেন তো দূরের কথা, কারও কারও জন্মসন জানা গেলেও কোন মাসের কোন তারিখে জন্মগ্রহণ করেছেন তা অবধি জানা যায়নি। এমনকি আমাদের নবীজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রবিউল আউয়াল মাসের কত তারিখে জন্মগ্রহণ করেছেন এটা নিয়েও রয়েছে মতভেদ। সংগত কারণে জন্মদিন পালন নিঃসন্দেহে একটি অনর্থক কাজ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। ইসলামে এর কোনো স্থান নেই। হাদিসে এসেছে, আবু সাঈদ (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, لَتَتَّبِعُنَّ سَنَنَ مَنْ كَانَ قَبْلَكُمْ حذو القذة بالقذة حَتَّى لَوْ دخلوا جُحْرَ ضَبٍّ لَدخلتتُمُوهُ قالوا: يَا رسول الله الْيَهُودَ وَالنَّصَارَى. قَالَ: فَمَنْ؟ অর্থ: অবশ্যই তোমরা তোমাদের পূর্ববর্তী জাতির (ইহুদি নাসারাদের) পদ্ধতি অনুসরণ করবে বিঘত বিঘত এবং হাত হাত পরিমাণ অর্থাৎ, সম্পূর্ণরূপে। এমনকি তারা যদি সাণ্ডার (গো-সাপ জাতীয় এক প্রকার হালাল জন্তুর) গর্তে প্রবেশ করে, তবে তোমরাও তাকে অনুসরণ করবে। সাহাবাগণ বললেন, আল্লাহর রসুল ইহুদি ও খ্রিস্টানরা? তিনি বললেন, তবে আবার কারা? (বুখারি: ২৬৬৯) হজরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) থেকে বর্ণিত আরেক হাদিসে নবীজি বলেন, مَنْ تَشَبَّهَ بِقَوْمٍ فَهُوَ مِنْهُمْ অর্থ: যে ব্যক্তি বিজাতির সাদৃশ্য অবলম্বন করে, সে তাদের দলভুক্ত হিসেবে গণ্য হবে। (আবু দাউদ: ৪০৩১)
|
� পূর্ববর্তী সংবাদ | পরবর্তী সংবাদ � |