কোনো রকম সংকট না থাকা সত্বেও বন্যার কারণে যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকার পাশাপাশি ত্রাণ কাজে বিপুল পরিমাণ চাল লাগছে, এই দুই অজুহাতে ১০ দিনের ব্যবধানে ৫০ কেজির প্রতি বস্তায় চালের দাম বেড়েছে ২০০ থেকে ৪০০ টাকা পর্যন্ত। একইসঙ্গে দেশের উত্তর এবং দক্ষিণাঞ্চলের মোকামগুলোতে ধান ও চালের মজুত গড়ে তুলে সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীরা কৃত্রিম সংকট দেখিয়ে দাম বাড়াচ্ছে বলেও অভিযোগ উঠেছে।
দেশে বন্যা দেখা দেয়ার আগে, অর্থাৎ গত ২০ আগষ্ট পর্যন্ত চট্টগ্রামের বাজারে সাধারণ মানের মোটা সিদ্ধ ৫০ কেজির প্রতি বস্তা চাল বিক্রি হয়েছে ২ হাজার টাকা দরে। কিন্তু এখন সেই চালের দাম বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৪০০ টাকায়। একইভাবে ২ হাজার ২০০ টাকার গুটি স্বর্ণা ২ হাজার ৬০০ টাকা, ২ হাজার ৫০০ টাকার নূরজাহান স্বর্ণা ২ হাজার ৮০০ এবং ৩ হাজার ২৫০ টাকার ঝিরাশাইল ৩ হাজার ৪৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। সব ধরনের চালের দাম বস্তা প্রতি বেড়েছে ২০০ থেকে ৪০০ টাকা পর্যন্ত।
বন্যার কারণে আড়তগুলোতে চাল আমদানি কম হয়েছে। পাশাপাশি কিছু অসাধু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট করে চাল মজুত করায় দাম বাড়ছে।
এদিকে, সিদ্ধ চালের মতো অবস্থা আতপ চালের বাজারেও। ১ হাজার ৯০০ টাকার ইরি আতপ ২ হাজার ৪০০ টাকা, ২ হাজার ৫০০ টাকার বেথি ২ হাজার ৮০০ টাকা এবং ৩ হাজার ২০০ টাকার কাটারী ৩ হাজার ৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
পাইকারী ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, পর্যাপ্ত মজুত থাকার পাশাপাশি সরবরাহ ব্যবস্থা স্বাভাবিক থাকা সত্বেও শুধুমাত্র বন্যা এবং ত্রাণের অজুহাতে বাড়ানো হচ্ছে চালের দাম। চট্টগ্রাম পাহাড়তলী ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ রেজা খান জানান, অসাধু ব্যবসায়ীরা ধান-চাল মজুত করে বাজারে সংকট তৈরি করে চালের দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে।
ধান উৎপাদন এলাকা হিসেবে পরিচিত রাজশাহী, নওগাঁ, কুষ্টিয়া, দিনাজপুর, পাবনা এবং বগুড়ার মোকামে ধান-চাল মজুত রেখে বাজারে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টির চেষ্টা চলছে বলে অভিযোগ উঠেছে। মোকাম মালিক এবং মিলাররা আগের চাহিদা পত্র অনুযায়ী চাল দিতে অস্বীকৃতি জানালেও বাড়তি দাম পেলেই গুদামগুলোতে চালবাহী ট্রাক পাঠাচ্ছে। এক্ষেত্রে সিন্ডিকেট প্রথা ভাঙতে চাল আমদানির এলসি উন্মুক্ত করার দাবি ব্যবসায়ীদের।
চট্টগ্রাম পাহাড়তলী ব্যবসায়ী সমিতির সহ-সভাপতি মো. জাফর আলম বলেন,চালের বাজার নিয়ন্ত্রণে এলসি খুলে রাখা যেতে পারে। এতে করে দেশে চালের সংকট দেখা দিলে বা দাম বেড়ে গেলে বাইরে থেকে সহজেই চাল আমদানি করা যাবে। পাশাপাশি বাড়াতে হবে মনিটরিং। তা না হলে লাগামহীন হয়ে পড়তে পারে চালের বাজার।
উল্লেখ্য, চট্টগ্রামে চালের কোনো মোকাম না থাকলেও নগরীর পাহাড়তলী বাজারের ২০০ গুদামে প্রতিদিন ১০০ ট্রাক বোঝাই দেড় হাজার মেট্রিক টন এবং চাক্তাই বাজারের ১০০ গুদামে ১ হাজার ৩০০ মেট্রিক টন চাল আসছে।