ই-পেপার সোমবার ১৪ নভেম্বর ২০২২
সদস্য হোন |  আমাদের জানুন |  পডকাস্ট |  গুগলী |  ডিসকাউন্ট শপ
সোমবার ৬ মে ২০২৪ ২২ বৈশাখ ১৪৩১
পতঞ্জলির বিতর্কিত ঔষধ নিয়ে বেকায়দায় বাবা রামদেব
নতুন সময় ডেস্ক
প্রকাশ: Thursday, 25 April, 2024, 10:00 AM
সর্বশেষ আপডেট: Thursday, 25 April, 2024, 6:39 PM

পতঞ্জলির বিতর্কিত ঔষধ নিয়ে বেকায়দায় বাবা রামদেব

পতঞ্জলির বিতর্কিত ঔষধ নিয়ে বেকায়দায় বাবা রামদেব

২০২১ সালে কোভিড-১৯ মহামারি চলাকালীন পতঞ্জলি ‘করোনিল’ নামের ভেষজ ট্যাবলেট চালু করেছিল। তাদের দাবি ছিল, এটি করোনভাইরাসের ‘চিকিৎসা ও নিরাময়’ করতে পারে।

ভারতের জনপ্রিয় যোগগুরু বাবা রামদেবের বিশ্বজুড়ে রয়েছে কোটি কোটি ভক্ত। দীর্ঘদিন ধরেই তিনি দাবি করে আসছেন, তার কোম্পানির পণ্যগুলি গুরুতর অসুস্থতার 'নিরাময়' করতে পারে। তবে ভারতের শীর্ষ আদালত এই দাবিকে 'মিথ্যা' বলে অভিহিত করেছেন এবং তাকে ক্ষমা চাওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। এতে করে বেশ সমালোচনার মুখোমুখি হচ্ছেন দেশটির এই প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব।

বাবা রামদেবের ইউটিউব চ্যানেলে রয়েছে প্রায় ১০ মিলিয়ন সাবস্ক্রাইবার। যেখানে তিনি পতঞ্জলি আয়ুর্বেদের তৈরি নানা ঔষধের প্রচারণা চালিয়ে থাকেন।

কোম্পানিটি ২০০৬ সালে রামদেব ও তার ঘনিষ্ঠ সহযোগী আচার্য বালকৃষ্ণ প্রতিষ্ঠা করেন। পতঞ্জলি টুথপেস্ট থেকে ত্বকের যত্ন এবং সুস্থতা সম্পর্কিত সব পণ্যই বিক্রি করে থাকে। তবে কোম্পানিটির আয়ুর্বেদিক ওষুধগুলির সর্বাধিক কাঙ্ক্ষিত পণ্যগুলির মধ্যে একটি।

ভিডিওতে দেখা যায়, রামদেব জ্বর-টাইফয়েড থেকে শুরু করে লিভারের ক্ষতি ও ত্বকের সমস্যা ইত্যাদি নানা ধরনের অসুস্থতার চিকিৎসার জন্য 'বিষাক্ত, সিন্থেটিক' ওষুধ ব্যবহার করার জন্য শ্রোতাদের তিরস্কার করেন। তিনি এগুলোর পরিবর্তে পতঞ্জলির পণ্য ব্যবহার করার আহ্বান জানান।

অন্য এক ভিডিওতে রামদেব ক্যানসার কী তা নিজের মতো করে ব্যাখ্যা দিয়েছেন। সেখানে তিনি দাবি করেছেন, কেমোথেরাপি, রেডিয়েশন ও সার্জারির মাধ্যমে রোগটি নিরাময় করা যায় না।

ভিডিওতে রামদেব দাবি করেন, পতঞ্জলির 'ক্যান্সার-প্রতিরোধী জুস' সাত দিন থেকে দুই মাসের মধ্যে সব ধরনের ক্যান্সার নিরাময় করতে সাহায্য করে। তার এই বক্তব্য ভিডিওতে শুনে দর্শকদের তালি দিতেও দেখা যায়।

কিন্তু গত সপ্তাহে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট পতঞ্জলির বিজ্ঞাপনগুলিকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছেন। আদালত বলেন, যোগগুরু ভুল তথ্য ছড়াচ্ছেন এবং গ্রাহকদের বিভ্রান্ত করছেন।

ভারতের ড্রাগস অ্যান্ড ম্যাজিক রেমেডিজ আইন ১৯৫৪ অনুযায়ী, ক্যান্সার, হৃদ্‌রোগ ও রক্তচাপসহ ৫৪টি রোগের চিকিৎসা ও নিরাময়ের জন্য নিজ উদ্যোগে বানানো ওষুধের প্রচার করা বেআইনি।

বিচারকরা বাবা রামদেব ও বালকৃষ্ণের 'নিঃশর্ত ক্ষমা' গ্রহণে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। আদালত জানান, তারা তাদের আদেশ 'ইচ্ছাকৃতভাবে' অমান্য করেছেন। 

আদালত বলেন, "কাগজে-কলমে আপনি যে ক্ষমা চেয়েছেন তার কোনো মূল্য নেই। আপনাকে পরিণতি ভোগ করতে হবে।"

বিচারকরা আইন লঙ্ঘনের পরেও পতঞ্জলির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেওয়ার জন্য আয়ুর্বেদিক ও অন্যান্য প্রথাগত ওষুধের তদারকির দায়িত্বে থাকা রাজ্যের লাইসেন্সিং অথরিটি এবং উত্তরাখণ্ড সরকারকে (যেখানে পতঞ্জলির সদর দফতর অবস্থিত) তিরস্কার করেছেন।

আদালত পতঞ্জলি এবং এর প্রতিষ্ঠাতাদের আগামী ২৩ এপ্রিল, অর্থাৎ পরবর্তী শুনানির আগে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।

তবে বিশেষজ্ঞরা অবশ্য বলছেন, আদালতের এই ভর্ৎসনা খুবই সামান্য এবং অনেক দেরিতে করা হয়েছে।

আদালত উল্লেখ করেছেন যে, পতঞ্জলি ও বাবা রামদেবের অ্যালোপ্যাথিক ওষুধ ও বৈধ চিকিৎসা পদ্ধতিকে 'অকার্যকর' অভিহিত করে বরখাস্ত করার দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। অন্যদিকে তারা নিজেদের পণ্য ও ঔষধগুলোকে কার্যকর ও সবচেয়ে ভালো বলেই প্রচার করেছে।

২০২১ সালে কোভিড-১৯ মহামারি চলাকালীন পতঞ্জলি 'করোনিল' নামের ভেষজ ট্যাবলেট চালু করেছিল। তাদের দাবি ছিল, এটি করোনভাইরাসের 'চিকিৎসা ও নিরাময়' করতে পারে।

তবে ভারত সরকারের হস্তক্ষেপের পর 'করোনিল' এর বিপণন বন্ধ করেছিল পতঞ্জলি। এটি যে নিরামক হিসাবে কাজ করেছে তা দেখানোর জন্য কোনও ডেটাও নেই। তবে কোম্পানিটি জোর দিয়ে বলেছিল যে, এটি ভাইরাসের বিরুদ্ধে কাজ করেছে।

শুধু ওষুধ নয়, বরং পতঞ্জলির ভোজ্য পণ্যগুলিও নিম্নমানের বলে অভিযোগ উঠেছে। ২০২২ সালে কোম্পানিটি 'গরুর খাটি ঘি' পণ্যটির খাদ্য নিরাপত্তা পরীক্ষায় ব্যর্থ হয়েছিল। কিন্তু বাবা রামদেব তখন নমুনাগুলির সাথে কারচুপি করা হয়েছে বলে ফলাফল প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। 

এছাড়াও ২০২৩ সালে ব্র্যান্ডটিকে নিরামিষ হিসাবে চিহ্নিত একটি দাঁতের পণ্যে কাটলফিশ ব্যবহারের অভিযোগে আইনি নোটিশ পাঠানো হয়েছিল।

প্রকৃতপক্ষে পতঞ্জলি গত এক দশক ধরে বহু বিতর্কের মুখোমুখি হয়েছে। সাধারণ এক গুগল সার্চেই এমন অজস্র সংবাদ চোখের সামনে ভেসে ওঠে। 

ব্র্যান্ডটির বিরুদ্ধে বিচার প্রক্রিয়া শুরু হয় ২০২২ সালে; ইন্ডিয়ান মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (আইএমএ) একটি 'মিথ্যা' বিজ্ঞাপনের অভিযোগে আদালতে যাওয়ার পর। যেই বিজ্ঞাপনে দাবি করা হয়, তাদের পণ্যগুলি থাইরয়েড, ডায়াবেটিস এমনকি ম্যাকুলার অবক্ষয় নিরাময় করতে পারে।

গত বছর আদালত পতঞ্জলিকে এমন সব দাবি থেকে সরে আসার নির্দেশ দেয়। একইসাথে প্রতিটি পণ্যের জন্য ১০ মিলিয়ন রুপি জরিমানা আরোপেও হুমকি দেয়।

এক্ষেত্রে কোম্পানির আইনজীবীরা আদেশটি মানতে সম্মত হন। কিন্তু একদিন পরে বাবা রামদেব দাবি করেন যে, তার আয়ুর্বেদিক ওষুধের 'নিরাময়' ক্ষমতা দ্বিগুণ। এক্ষেত্রে তার দাবিগুলি মিথ্যা প্রমাণিত হলে তিনি 'মৃত্যুদণ্ডের মুখোমুখি' হতে প্রস্তুত বলেও অভিহিত করেন।

রামদেব কিছু চিকিৎসককে প্রথাগত ওষুধের পক্ষে পক্ষপাতদুষ্টের অভিযোগ করেন। তিনি দাবি করেন, ঐসব চিকিৎসকেরা তার ব্র্যান্ড সম্পর্কে মিথ্যা প্রচারণা চালাচ্ছেন।

যদিও পতঞ্জলি সংবাদপত্র, রেডিও, টেলিভিশনে বিতর্কিত বিজ্ঞাপন প্রচার অব্যাহত রেখেছে। এছাড়াও বিভিন্ন রাজ্যে বাবা রামদেবের যোগ কর্মশালায় তা প্রচার করতে থাকে।

মামলাটি জানুয়ারিতে আবার নজরে আসে যখন সুপ্রিম কোর্ট আদালতের আদেশ অনুসরণ করতে কোম্পানির অস্বীকৃতি জানিয়ে একটি বেনামি চিঠি পায়।

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, পতঞ্জলির পণ্যগুলি প্রশ্নবিদ্ধ। কারণ ফার্মটির উৎপাদন পদ্ধতি বেশ দুর্বল।

কিন্তু ব্র্যান্ডটি বেশ জোরালভাবে নিজেদের পণ্যগুলির পক্ষে যুক্তি দিচ্ছে। তাদের দাবিগুলো ক্লিনিক্যালি প্রমাণিত বলে অভিহিত করেছে। একইসাথে এটি ৩ হাজারেরও বেশি গবেষণা প্রোটোকল অনুসরণ করেছে বলে দাবি করা হয়েছে।

২০১৬ সালে দেশটির হরিদ্বারের একটি আদালত পতঞ্জলিকে নিজেদের লেবেল লাগিয়ে কিছু পণ্য বিক্রি করার জন্য ১ মিলিয়ন রুপি জরিমানা দিতে বলেছিল। কেননা পণ্যগুলো প্রকৃতপক্ষে অন্য কোম্পানি তৈরি করেছিল।

লবণ, তেল ও মধুর মতো কিছু প্রয়োজনীয় পণ্যের গুণমান পরীক্ষায় ব্যর্থ হওয়ার পরেও যদি পতঞ্জলি পণ্যের গুণমান উন্নত করতে ব্যর্থ হয় তবে আদালত জেলা কর্তৃপক্ষকে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল।

সেই সময়ে বালকৃষ্ণ টাইমস অফ ইন্ডিয়া সংবাদপত্রকে বলেছিলেন, "পতঞ্জলির পণ্যগুলি 'সম্পূর্ণ নিরাপদ', তাদের গুণমান 'সন্দেহহীন' এবং ব্র্যান্ডটি আদালতের আদেশের বিপক্ষে 'উপযুক্ত' প্রতিক্রিয়া জানাবে।

কিন্তু গুরুতর অভিযোগ সত্ত্বেও পতঞ্জলি নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষের কঠিন কোনো পদক্ষেপের সম্মুখীন হয়নি।

বিশেষজ্ঞদের মতে, রামদেব এখনও ভারতে ব্যাপক জনপ্রিয় ব্যক্তিত্ব। ভক্তরা তাকে প্রাকৃতিক ও প্রথাগত সমস্ত বিষয়ে বিশেষজ্ঞ হিসাবে মনে করেন। এমনকি পতঞ্জলিকে নিয়ে যে কোনও ধরনের সমালোচনা থেকে তারা বিরত থাকেন।

এদিকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও ক্ষমতাশীল রাজনৈতিক দল ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) নেতৃত্বাধীন সরকারের সাথে রামদেবের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে বলেও মনে করা হয়।

রামদেবও নিয়মিত মোদির প্রশংসা করেন এবং ২০২৪ সালের সাধারণ নির্বাচনে তিনি প্রকাশ্যে তার অনুসারীদের বিজেপিকে ভোট দিতে বলেছিলেন।

রয়টার্স নিউজ এজেন্সির ২০১৭ সালের তদন্তে দেখা যায়, বিজেপি ক্ষমতায় আসার পর থেকে রামদেবের ব্যবসা বেড়েছে। একইসাথে পতঞ্জলি কারখানা ও গবেষণা কেন্দ্র স্থাপনের জন্য কম দামে বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিতে হাজার হাজার একর জমি অধিগ্রহণ করতে সক্ষম হয়েছে।

এই বিষয়ে বিবিসির পক্ষ থেকে বিজেপি ও পতঞ্জলির কাছে জানতে চাওয়া হয়। তবে তাদের কাছ থেকে এখনো পর্যন্ত কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।

পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ
সম্পাদক ও প্রকাশক: নাজমুল হক শ্যামল
দৈনিক নতুন সময়, গ্রীন ট্রেড পয়েন্ট, ৭ বীর উত্তম এ কে খন্দকার রোড, মহাখালী বা/এ, ঢাকা ১২১২।
ফোন: ৫৮৩১২৮৮৮, ০১৯৯৪ ৬৬৬০৮৯, ইমেইল: info@notunshomoy.com
কপিরাইট © দৈনিক নতুন সময় সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত | Developed By: i2soft
DMCA.com Protection Status