চুয়াডাঙ্গায় শীতে সর্বনিম্ন, গ্রীষ্মে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা কেন?
নতুন সময় প্রতিবেদক
|
চুয়াডাঙ্গায় শীতে সর্বনিম্ন, আর গ্রীষ্মে সর্বোচ্চ তাপমাত্রার রেকর্ড হচ্ছে। এতে প্রশ্ন উঠেছে–জেলায় কেন এমন পরিস্থিতির তৈরি হয়েছে। তাহলে কী মরুতে পরিণত হবে এ অঞ্চল? তবে এ আশঙ্কা নাকচ করে আবহাওয়াবিদেরা বলছেন, কর্কটক্রান্তি রেখায় অবস্থান ছাড়াও জলাশয়ের স্বল্পতা, ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়া, অনাবৃষ্টি ও পশ্চিম দিক থেকে আসা লু হাওয়ায় চরমভাবাপন্ন হচ্ছে এ অঞ্চল। বৈরি আবহাওয়ার কবলে পড়েছে দক্ষিণ এশিয়া। এর বাইরে নয় বাংলাদেশও। রাজধানীসহ গোটা দেশ যখন তীব্র তাপপ্রবাহে পুড়ছে তখন নতুন ভিন্ন এক মাত্রা নিয়ে সামনে এসেছে দক্ষিণ-পশ্চিমের জেলা চুয়াডাঙ্গা। সৌদি আরব-আফ্রিকার মরু অঞ্চলের সমান্তরালে এ অঞ্চলের ওপর দিয়ে গেছে কর্কটক্রান্তি রেখা। সূর্য এখানে মার্চ থেকে জুন পর্যন্ত মাথার ওপর থাকে। আবহাওয়াবিদেরা বলছেন, এপ্রিলে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, বিহার, উত্তর ও মধ্য প্রদেশ থেকে যে শুষ্ক বাতাস বয়ে আসে তার মুখেই পড়ে চুয়াডাঙ্গা। এই লু হাওয়ার সঙ্গে তাপমাত্রার ঊর্ধ্বগতি পরিস্থিতি করে তোলে ভয়াবহ। এ সময় পারদ উঠে যায় ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপরে। আবহাওয়া অফিসের জ্যেষ্ঠ আবহাওয়াবিদ ড. আবুল কালাম মল্লিক ইনডিপেনডেন্ট টেলিভিশনকে বলেন, উত্তপ্ত বায়ু বাংলাদেশের চুয়াডাঙ্গা, সাতক্ষীরা এবং মংলা অঞ্চল দিয়ে প্রবেশ করে ওই অঞ্চলের তাপমাত্রাকে উত্তপ্ত করে ফেলে। ফলে চুয়াডাঙ্গা ভৌগোলিক অবস্থানগত কারণে একটু উত্তপ্ত। পরিবেশবিদেরা বলছেন, সাতক্ষীরা-যশোর ছাড়াও এই বলয়ে পড়ে ফরিদপুর-কুষ্টিয়া। তবে সেখানে জলাধার কাছে থাকায় তুলনামূলকভাবে তাপমাত্রা সহনীয় থাকে। কিন্তু চুয়াডাঙ্গার মাথাভাঙ্গা, নবগঙ্গাসহ শাখা নদীগুলো শুকিয়ে গেছে। নিচে নেমে গেছে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর। একই সঙ্গে বনভূমি কমে যাওয়া ও অনাবৃষ্টিতে আবহাওয়া চরমভাবাপন্ন হয়ে উঠছে। অস্ট্রেলিয়ার সিডনির কার্টিন বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. আশরাফ দেওয়ান বলেন, পানি যত বেশি প্রবাহমান সে তত বেশি হিট ডিসচার্জ করে। পানিপ্রবাহ হিট ডিসচার্জ করে তাপমাত্রাকে নিচের দিকে নিয়ে যায়। কিন্তু ভরাটের মাধ্যমে এটাকে যখন বন্ধ করে ফেলা হলো তখন এই মেকানিজম তো আর থাকছে না। এর ফলে ভূমি তাপমাত্রাকে অ্যাবজর্ভ করে আবার তাপমাত্রা বাড়িয়ে দিচ্ছে। এক দশক আগেও নাটোরের লালপুর ছিল দেশের সবচেয়ে উষ্ণতম এলাকা। জলবায়ু পরিবর্তন ছাড়াও মানবসৃষ্ট সংকটে সে জায়গা নিয়েছে চুয়াডাঙ্গা। ২০১৪ সালের ২১ মে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৪৩ দশমিক ২ ডিগ্রি। গত বছরের ১৭ এপ্রিলেও তা ছিল ৪৩ ডিগ্রি। এবারও সেই একই অবস্থা। |
পূর্ববর্তী সংবাদ | পরবর্তী সংবাদ |