ইমরান খান গ্রেপ্তার, পাকিস্তান জুড়ে বিক্ষোভের ডাক
একটি রিয়েল এস্টেট কোম্পানির ৫০ বিলিয়ন রুপির বৈধতা দেওয়ার বিনিময়ে কয়েক বিলিয়ন রুপি নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে ইমরান খান এবং তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে।
নতুন সময় ডেস্ক
|
পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে আদালত প্রাঙ্গণ থেকে একটি দুর্নীতি মামলায় গ্রেপ্তার করেছে দেশটির ন্যাশনাল অ্যাকাউন্টেবিলিটি ব্যুরো-এনএবি। আধাসামরিক বাহিনী রেঞ্জার্সের সহায়তায় মঙ্গলবার বিকালে ইসলামাবাদ হাই কোর্টের সামনে থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয় বলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রানা সাইফুল্লাহর বরাত দিয়ে জানিয়েছে ডন। ইন্সপেক্টর জেনারেল আকবর নাসির খানকে উদ্ধৃত করে ইসলামাবাদ পুলিশ এক বিবৃতিতে বলেছে, একটি রিয়েল এস্টেট কোম্পানির ৫০ বিলিয়ন রুপির বৈধতা দেওয়ার বিনিময়ে কয়েক বিলিয়ন রুপি নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে ইমরান খান এবং তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে। সেই মামলাতেই গ্রেপ্তার করা হয়েছে সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীকে। ইমরানের দলের পক্ষ থেকে সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে নির্যাতনের অভিযোগ করে দেশজুড়ে তাৎক্ষণিক বিক্ষোভের ডাক দেওয়া হয়েছে। তবে পুলিশ নির্যাতনের অভিযোগ অস্বীকার করেছে। ডন জানিয়েছে, ইমরানকে আটক এবং আইনজীবীদের মারধরেরর অভিযোগ করে টু্ইট করেছেন পিটিআইয়ের ভাইস প্রেসিডেন্ট ফাওয়াদ চৌধুরী। তিনি লিখেছেন, নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা ইমরানের গাড়িবহরকে ঘিরে ধরেছিল। পিটিআইয়ের আরেক নেতা আজহার মাসওয়ানি অভিযোগ করেছেন, ইমরানকে আদালতের ভেতর থেকেই তুলে নেওয়া হয়। এর প্রতিবাদে দলের পক্ষ থেকে এখনই মাঠে নামতে নেতা-কর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তারা। পিটিআই নেতা মোশাররাত চিমা টুইটারে এক ভিডিও বার্তায় বলেন, “তারা এখন ইমরান খানকে নির্যাতন করছে। তারা ইমরান সাহেবকে মারধর করছে। তারা খান সাহেবকে কিছু একটা করেছে।” পিটিআইয়ের অফিসিয়াল টুইটার অ্যাকাউন্টে ইমরানের আইনজীবীর ভিডিও প্রকাশ করে লিখেছে, আদালতের সামনে তিনি ‘বাজেভাবে জখম’ হয়েছেন। ইসলামামাবাদের পুলিশ জানিয়েছে, শহরে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। তারা এটাও বলেছে, কাউকে নির্যাতন করা হয়নি। তবে ইমরান খানের গাড়ি ঘিরে রাখার কথা স্বীকার করেছে তারা। এর আগে ইমরান খানকে গ্রেপ্তারের জন্য লাহোরের জামান পার্কে তার বাসভবনে বেশ কয়েকটি অসফল অভিযান চালিয়েছিল পুলিশ। তবে সে সময় গ্রেপ্তার এড়াতে সক্ষম হন সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী। লং মার্চে তাকে হত্যাচেষ্টায় গোয়েন্দা বাহিনীর শীর্ষ এক কর্মকর্তার জড়িত থাকার অভিযোগ তুলেছিলেন ইমরান; সামরিক বাহিনী ওই অভিযোগ অস্বীকার করলে সাবেক প্রধানমন্ত্রী মঙ্গলবার এক ভিডিও বার্তায় দ্বিগুণ জোরের সঙ্গে ওই অভিযোগ উত্থাপন করেন। এর পরই তাকে আদালত প্রাঙ্গণ থেকে আটক করা হল। তাৎক্ষণিক এক টুইটে ফাওয়াদ অভিযোগ করেন, ইমরানকে আদালত প্রাঙ্গণ থেকে ‘অপহরণ’ করা হয়েছে এবং আইনজীবী ও সাধারণ মানুষের ওপর নির্দয় নির্যাতন চালানো হয়েছে। “অজ্ঞাত লোকজন ইমরান খানকে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে গেছে,” বলেছিলেন তিনি। পরে এক বিবৃতিতে পুলিশের মহাপরিদর্শক আকবর নাসির খান জানান, ইমরানকে আল-কাদির ট্রাস্ট মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পাঞ্জাবের ঝিলুমে একটি বিশ্ববিদ্যালয় বানাতে গঠিত এই ট্রাস্টের মাধ্যমে ইমরান দুর্নীতির আশ্রয় নিয়েছিলেন বলে অভিযোগ; মামলাটিতে ইমরানের স্ত্রী বুশরা বিবি, ঘনিষ্ঠ সহচর জুলফিকার বুখারি ও বাবর আওয়ানের নামও জড়িয়ে আছে। সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে গ্রেপ্তারের পর পাকিস্তানের একাধিক শহরে বিক্ষোভের খবর পাওয়া গেছে। লাহোরে সেনেটর ইজাজ চৌধুরীর নেতৃত্বে পিটিআইয়ের সমর্থকরা লিবার্টি চকে জড়ো হয়েছেন। ইমরানের অনুসারীরা ওই শহরের আকবর চক, পেকো রোড, মেইন কানাল রোড ও ফয়সাল টাউনও বন্ধ করে দিয়েছে বলে জানিয়েছেন ডনের এক প্রতিনিধি। সেখানে পিটিআইয়ের সমর্থকদের টায়ার পোড়াতে এবং জোট সরকারের বিরুদ্ধে স্লোগান দিতে দেখা যাচ্ছে, বলেছেন তিনি। ইমরানের জামান পার্কের বাসভবনের বাইরেও সমর্থকদের সরকারি ব্যানার ছিড়তে দেখা গেছে। করাচিতে পিটিআইয়ের বিধায়ক ও এমপিরা রাস্তায় নামার পর শরিয়া ফয়সালের উভয় লেনেই যান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। পিটিআইয়ের সিন্ধু শাখা নেতাকর্মীদেরকে স্থানীয় সময় বিকাল ৪টার মধ্যে ইনসাফ হাউসের বাইরে জড়ো হওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। এর বাইরে পেশোয়ারের হস্তনগরেও বিক্ষোভের খবর পাওয়া গেছে।
|
� পূর্ববর্তী সংবাদ | পরবর্তী সংবাদ � |