আদর্শের বইয়ে কি আছে, কেন বইগুলো নিয়ে বিতর্ক?
নতুন সময় ডেস্ক
|
![]() আদর্শের বইয়ে কি আছে, কেন বইগুলো নিয়ে বিতর্ক? আদর্শ প্রকাশনীর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মাহাবুব রাহমান বাংলাদেশ জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতির নেতৃবৃন্দের বরাত দিয়ে জানান, এ দুটির সঙ্গে আরো একটি বই নিয়ে আপত্তি আছে বাংলা একাডেমির৷ অ্যাকটিভিস্ট ও বিশ্লেষক জিয়া হাসানের লেখা ওই বইয়ের নাম ‘উন্নয়ন বিভ্রম’৷ এ তিন লেখক সামাজিক মাধ্যমে সরকার-বিরোধী হিসেবে পরিচিত৷ ফেসবুকে তারা নিয়মিত আলোচনায় থাকেন৷ বাংলা একাডেমি বলছে, পুলিশের পক্ষে থেকেও এই বইয়ের ব্যাপারে আপত্তি দেওয়া হয়েছে৷ ফাহাম আব্দুস সালাম এবং ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব ফেসবুকে লিখেছেন, তাদের বই তুলে নিয়ে আদর্শকে যেন বইমেলায় স্টল বরাদ্দ দেওয়া হয়৷ তবে মাহাবুব রাহমান বলেছেন, ‘‘এ ধরনের কোনো পরিকল্পনা আমাদের নেই৷ আমি বইগুলো ওন করি৷’’ এমিরেটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘‘রাজনীতি নিয়ে বই লিখলে বিতর্ক হবেই৷ কোনো রাজনৈতিক দল সেই বই পড়ে খুশি হবে, কোনো দল নাখোশ হবে৷ শুধু এই বিতর্কের কারণে কোনো প্রকাশনীকে স্টল বরাদ্দ না দেওয়া খুবই অযৌক্তিক৷ আমি মনে করি, বাংলা একাডেমি এ ব্যাপারে দ্রুতই ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নেবে৷’’ অমর একুশে গ্রন্থমেলা-২০২৩ এ প্রাপ্যতা ও যোগ্যতা অনুযায়ী নিজেদের জন্য প্যাভিলিয়ন বরাদ্দ চেয়েছে আদর্শ প্রকাশনী৷ আদর্শ প্রকাশনী বলছে, বাংলা একাডেমি প্রতি বছরই বিভিন্ন অজুহাতে বিভিন্ন প্রকাশনীকে হয়রানি করে৷ ‘‘২০১৯ সালেও যেসব অভিযোগ আনা হয়েছিল তা অমূলক প্রমাণ করে আদর্শ স্টল পেয়েছিল৷ পরিস্থিতি যা-ই হোক, লেখকদের বই প্রকাশে, বিক্রিতে এবং পাঠকদের বই পেতে যাতে কোনো সমস্যা না হয় আমরা তার সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো,’’ বলেন মাহাবুব রাহমান৷ মাহাবুব রাহমান বলেন, ‘‘করোনার কারণে বাংলাদেশের প্রকাশনা শিল্প মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে৷ এছাড়া কাগজের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধিতে ক্ষতির পরিমাণ আরো বেড়েছে৷ এ অবস্থায় অমর একুশে গ্রন্থমেলা উপলক্ষে ঋণ করে আদর্শ অর্থ বিনিয়োগ করেছে৷ অনেকগুলো বই প্রেসে আটকে আছে, অনেকগুলো বই বাঁধাইখানায় আটকে আছে৷ গত ১২ জানুয়ারি বিকেলে বাংলা একাডেমি স্টল বরাদ্দের তালিকা প্রকাশ করে৷ প্রকাশিত তালিকার কোথাও আদর্শর নাম নেই৷ পরের দুইদিন শুক্র-শনিবার বাংলা একাডেমি বন্ধ থাকার কারণে গত ১৫ জানুয়ারি আমি বাংলা একাডেমিতে যাই৷ মেলা কমিটির সদস্য সচিব মুজাহিদুল ইসলামের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি আমাকে বলেন যে তার কাছে এ বিষয়ে কোনো কাগজপত্র নেই৷ তিনি তার অধস্তন কর্মকর্তা কবিরের কাছে যেতে বললে কবির জানান, তার কাছে কোনো কাগজপত্র আসেনি৷’’ তিনি বলেন, ‘‘৩১ সদস্যবিশিষ্ট মেলা কমিটিতে থাকা ৪ জন প্রকাশক প্রতিনিধিকে এ ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলে তারাও আমাকে জানান যে, তারা কিছুই জানেন না এবং কমিটির মিটিংয়েও আদর্শের স্টল বাতিলের কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি৷ তখন আমি এ বিষয়ে জানতে চেয়ে বাংলা একাডেমির ডিজিকে চিঠি দিয়ে আসি৷ সেই চিঠির কোনো উত্তর আমি পাইনি৷ গত ১৭ জানুয়ারি আরেকটি চিঠি দিই৷ সেই চিঠিরও অদ্যাবধি কোনো উত্তর আমি পাইনি৷’’ মাহাবুব রাহমান বলেন, ‘‘মেলা কমিটিতে থাকা একজন প্রকাশক প্রতিনিধি আমাকে জানিয়েছেন, আদর্শ থেকে প্রকাশিত ৩টি বই নিয়ে বাংলা একাডেমির আপত্তি আছে৷ পরে মেলা কমিটির সচিব মুজাহিদ ভাই ফোনে বলেন, আদর্শর বইতে সরকারবিরোধী মত রয়েছে৷ সংবাদপত্রের মাধ্যমে জানতে পেরেছি, বাংলা একাডেমি এখন বলছে যে আদর্শর বই বাংলা একাডেমির স্টল বরাদ্দের নীতিমালা পরিপন্থী৷ সাংবাদিকদের মাধ্যমে জানা গেছে, এই নীতিমালা মনগড়া ও পরিবর্তনশীল৷ প্রতি বছর একুশে গ্রন্থমেলার প্রাক্কালে আয়োজক কমিটি নিজেদের সুবিধা অনুযায়ী নীতিমালা তৈরি করে, যার কোনো কপি লেখক, প্রকাশক, সাংবাদিক কাউকে দেওয়া হয় না৷ এই অদৃশ্য নীতিমালা মূলত লেখক-প্রকাশকদের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা খর্ব করার কাজে ব্যবহৃত হয়, যা মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক৷’’ অমর একুশে গ্রন্থমেলা বাস্তবায়ন কমিটির সদস্যসচিব এবং বাংলা একাডেমির প্রশাসন বিভাগের পরিচালক ড. এ কে এম মুজাহিদুল ইসলাম বলেছেন, ‘‘আদর্শ চার ইউনিটের স্টল পেয়ে আসছিল৷ এবার তারা প্যাভেলিয়নের আবেদন করেছিল৷ আমরাও ভেবেছিলাম তাদের প্যাভেলিয়ন দেবো৷ তবে তখনই তাদের কিছু বই নিয়ে আপত্তি আসে৷ আমরাও দেখেছি তাদের প্রকাশিত বই আমাদের নীতিমালার সঙ্গে সাংঘর্ষিক৷ এ কারণে তাদের বরাদ্দ দেওয়া হয়নি৷ সরকারবিরোধী বিভিন্ন বক্তব্য আছে ওই বইয়ে৷’’ ৩১ সদস্যবিশিষ্ট মেলা কমিটিতে থাকা ৪ জন প্রকাশক প্রতিনিধির একজন আগামী প্রকাশনীর স্বত্তাধিকারী ওসমান গনি বলেন, ‘‘মিটিংয়ে আদর্শ প্রকাশনী নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি৷ অবশ্যই তারা স্টল পাবে৷ না পাওয়ার কোনো সুযোগ নেই৷ অযথাই এই বিতর্ক সৃষ্টি করা হয়েছে৷ এটা না করলেও হতো৷ আমি আশা করছি, দু-এক দিনের মধ্যেই এই সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে৷’’
|
পূর্ববর্তী সংবাদ | পরবর্তী সংবাদ |