প্রকাশ: Saturday, 26 November, 2022, 11:45 AM সর্বশেষ আপডেট: Saturday, 26 November, 2022, 11:49 AM
সোহরাওয়ার্দীতে কেন সমাবেশ করতে চায় না বিএনপি
আগামী ১০ ডিসেম্বর বিএনপির ঢাকার মহাসমাবেশ নিয়ে নানা জল্পনার মধ্যে সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, নয়াপল্টন নয়, শর্ত সাপেক্ষে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশের অনুমতি দেওয়া হবে। তবে বিএনপির নীতিনির্ধারকরা এখনো নয়াপল্টনেই সমাবেশ করার বিষয়ে অনড়।
বিএনপির আশঙ্কা, ঢাকার মহাসমাবেশকে ঘিরে সরকার বাধা দেবে। অন্যান্য বিভাগীয় গণসমাবেশের মতো কয়েক দিন আগে থেকে সারা দেশের সঙ্গে ঢাকাকে বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হবে।
এতে বিপাকে পড়বেন সমাবেশে যোগ দিতে আসা নেতাকর্মীরা।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যের সূত্র ধরে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশের অনুমতি দেওয়ার বিষয় জানার পর বিএনপির জ্যেষ্ঠ নেতারা গত বৃহস্পতিবার রাতে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে কথা বলেছেন। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশের ব্যাপারে তাঁদের অনড় থাকার নির্দেশ দেন।
গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সদরঘাটে একটি অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, শর্ত সাপেক্ষে বিএনপিকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ১০ ডিসেম্বর সমাবেশের অনুমতি দেওয়া হবে। তিনি বলেন, ‘বিএনপি একটি রাজনৈতিক দল। তাদের রাজনীতি করার অধিকার রয়েছে। তাদের আমরা কখনোই মানা করিনি, তারা সারা দেশেই মিটিং করছে, সমাবেশ করছে। ঢাকার সমাবেশকেও আমরা মানা করিনি। আমরা শুধু তাদের আশঙ্কার কথাগুলো বলেছি। আপনারা ২৫ থেকে ৩০ লাখ লোক নিয়ে আসবেন, এই লোকগুলো কোথায় বসাবেন? কোথায় থাকবেন তাঁরা? পুরো ঢাকা শহর অচল করে দেবেন আপনারা। আমরা বলেছি তাঁদের, বড় কোনো জায়গায় যান। ’
এই সমাবেশের বিষয়ে গত বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী হাছান মাহমুদ সাংবাদিকদের বলেন, জনসমাগম কম হওয়ার শঙ্কা ও গণ্ডগোল সৃষ্টির উদ্দেশ্যেই আগামী ১০ ডিসেম্বর নয়াপল্টনে সমাবেশ করতে চাইছে বিএনপি। তিনি বলেন, ‘সমাবেশে যে লোকসংখ্যা ৩০ থেকে ৫০ হাজারের বেশি হবে না, সেটি বিএনপি আগে থেকেই জানে। নয়াপল্টনের পুরো এক কিলোমিটার রাস্তাজুড়ে বসলেও সেখানে ৫০ হাজারের বেশি মানুষ হবে না। এতে এটাই প্রমাণিত হয় যে তারা জনসমাগম নিয়ে শঙ্কিত। ’
গত ১৫ নভেম্বর বিএনপির একটি প্রতিনিধিদল ডিএমপি কমিশনারের সঙ্গে দেখা করে মহাসমাবেশের জন্য নয়াপল্টনের কার্যালয়ের সামনের সড়কের অনুমতি চেয়ে চিঠি দেয়। এর পর থেকে সমাবেশের স্থান নিয়ে নানা বক্তব্য আসে গণমাধ্যমে।
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ না করতে চাওয়ার পেছনে বিএনপি কয়েকটি যুক্তি দেখাচ্ছে। দলের নীতিনির্ধারকরা বলছেন, বিএনপি প্রতিদিনই নয়াপল্টনে সমাবেশ করছে। এতে যদি সমস্যা না হয়, তাহলে মহাসমাবেশ অনুমতি কেন দেওয়া সম্ভব নয়?
বিএনপি ধারণা করছে, ঢাকার মহাসমাবেশকে ঘিরে সরকার বাধা দেবে। অন্যান্য বিভাগীয় গণসমাবেশের মতো কয়েক দিন আগে থেকে সারা দেশের সঙ্গে ঢাকাকে বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হবে। ঢাকার আবাসিক হোটেলগুলোতে বিএনপি নেতাকর্মীরা রুম ভাড়া পাবেন না। তা ছাড়া হোটেলে থাকলে গ্রেপ্তারও হতে পারেন। এমন অবস্থার মধ্যে তাঁদের নেতাকর্মীদের সমাবেশস্থলে এসেই থাকতে হতে পারে। নয়াপল্টন দলটির নেতাকর্মীদের চেনা জায়গায়। সেখানে কেন্দ্রীয় কার্যালয় এবং ভাসানী ভবনে মহানগর কার্যালয়সহ আশপাশে নেতাকর্মীরা থাকতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন।
তা ছাড়া আগামী ৮ ও ৯ ডিসেম্বর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। সমাবেশের আগের দিন পর্যন্ত ক্ষমতাসীন দলের ছাত্রসংগঠনের দখলে থাকবে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান। তাহলে বিএনপি সমাবেশের প্রস্তুতি কিভাবে নেবে? কয়েক দিন আগে এসে নেতাকর্মীরাই বা কিভাবে থাকবেন?
দলের এক জ্যেষ্ঠ নেতা বলেন, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের মধ্যে। ক্যাম্পাসে এবং আশপাশের এলাকায় সব সময় ছাত্রলীগের সরব উপস্থিতি থাকে। বিএনপি নেতাকর্মীরা সেখানে নানাভাবে বাধা পেতে পারেন। তা ছাড়া সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের কয়েকটি নতুন স্থাপনা তৈরি হয়েছে। ফলে সমাবেশের স্থানও অনেক ছোট হয়ে গেছে।
এ সমাবেশ ঘিরে এর মধ্যে বেশ উত্তেজনা তৈরি হয়েছে। বিএনপি বড় ধরনের জমায়েত করে নয়াপল্টনের সামনে অবস্থান নিতে পারে, এমন গুজব আছে। এমন পরিস্থিতিতে সম্প্রতি বিএনপি সংবাদ সম্মেলনে বলেছে, এ সমাবেশ সরকার পতনের আন্দোলন নয়। সমাবেশ থেকে দেশব্যাপী নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।
এর পরই মূলত সমাবেশ ঘিরে সরকারের তরফ থেকে ভিন্নভাবে চিন্তা করা হচ্ছে। তবে দলটির অভিযোগ, সমাবেশ লোক সমাগম ঠেকাতে তাদের নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। নতুন করে গায়েবি মামলা দিচ্ছে সরকার।
বিএনপি নেতাকর্মীরা মনে করছেন, ছাত্রলীগ তারিখ পরিবর্তন করে কেন তাঁদের সমাবেশের আগের দুই দিন সমাবেশস্থলে সম্মেলন ডাকল? দলের নেতাকর্মীরা মনে করছেন, এর পেছনে হয়তো কোনো উদ্দেশ্য আছে।
শুক্রবার (২৫ নভেম্বর) বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘এখন পর্যন্ত নয়াপল্টনেই সমাবেশ করার সিদ্ধান্ত আছে। কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে আমরা অনেক সমাবেশ করেছি। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার উপস্থিতিতেও সমাবেশ হয়েছে। তাহলে এখন সমস্যা কোথায়?’ তিনি বলেন, ১০ ডিসেম্বর শনিবার। ওই দিন সাপ্তাহিক ছুটি। জনসাধারণের কোনো সমস্যা হবে না।