১১ মাসের চেষ্টায় করোনার ওষুধ উদ্ভাবন করলেন বাংলাদেশি, চলছে ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল
নতুন সময় প্রতিনিধি
প্রকাশ: Tuesday, 20 July, 2021, 3:51 PM
পুরো বিশ্বকে চমকে দিয়েছেন পাবনার সন্তান ড. রায়ান সাদী। করোনাভাইরাসের ওষুধ উদ্ভাবন করেছেন বাংলাদেশি-আমেরিকান এ চিকিৎসক। তার উদ্ভাবিত ওষুধ টিভিজিএন-৪৮৯ এবং সাইটোটক্সিক টি লিম্ফোসাইটস-এর ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের অনুমতি দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফডিএ)। ১২ জুলাই থেকে এ ট্রায়াল শুরু হয়েছে।
এ সংবাদ নিশ্চিত করেছেন ড. রায়ান সাদীর ভাই পাবনার ঈশ্বরদী পাকুড়িয়া স্কুল অ্যান্ড কলেজের সহকারী শিক্ষক মো. আবু হেনা।
ড. রায়ান সাদী নিউজার্সির বায়ো-টেকনোলজি কোম্পানি ‘টেভোজেন বায়ো’র সিইও এবং গবেষণা টিমের প্রধান। তার ডাক নাম শাহীন। তিনি ঈশ্বরদীর সাহাপুর গ্রামের তৈয়ব হোসেনের ছেলে। তৈয়ব হোসেন ঈশ্বরদী সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ ছিলেন।
পাকুড়িয়া স্কুল অ্যান্ড কলেজের সহকারী শিক্ষক মো. আবু হেনা জানান, আগে থেকেই ক্যান্সার চিকিৎসার সবচেয়ে বেশি কার্যকর ওষুধ নিয়ে গবেষণা করছিলেন ড. রায়ান সাদী। পরে সেটিকে করোনাভাইরাস নির্মূলের দিকে ধাবিত করেন। গত বছরের অক্টোবরে গবেষণা শেষ হয় এবং তিনি এফডিএর অনুমতির আবেদন করেন। প্রচলিত রীতি অনুযায়ী এফডিএ পর্যবেক্ষণ-বিশ্লেষণ শেষে এটি করোনা নির্মূলে ভূমিকা রাখবে কিনা তা যাচাইয়ের জন্যে ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে পাঠিয়েছে। সে অনুযায়ী ১২ জুলাই ‘টেভোজেন-বায়ো’ আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়েছে ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের। এ ট্রায়ালের মাধ্যমে ‘টিভিজিএন-৪৮৯’ মানবদেহের জন্যে কতটা নিরাপদ তা নিশ্চিত হতে চায় এফডিএ।
আবু হেনা জানান, করোনা রোগীকে সুস্থ করার এ ওষুধ ব্যবহারের জন্যে এফডিএর অনুমতি পাওয়ার পর বাংলাদেশ চাইলে তা বিনামূল্যে দেবেন ড. সাদী। তবে বাংলাদেশে তা সংরক্ষণের যথাযথ ব্যবস্থা ও প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত চিকিৎসক প্রয়োজন হবে। সেল থেরাপি দেওয়ার মত আনুষঙ্গিক সামগ্রীর পাশাপাশি এইচএলএ টেস্টিং মেশিনও লাগবে।
ড. সাদীর বরাত দিয়ে তার স্বজনরা জানান, বাংলাদেশের চিকিৎসকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থাও তিনি নিজ খরচে করে দেবেন।
শিক্ষক আবু হেনা আরো জানান, সার্স-সিওভি-২’র সংক্রমণ রোধে সক্ষম কোষগুলোকে আরো শক্তিশালী করার ক্ষেত্রে সেল থেরাপি অপরিসীম ভূমিকা রাখবে। সেল থেরাপির মাধ্যমে মহামারি দেখা দেওয়া অঞ্চলেও এ ওষুধের সুফল মিলবে। এ ওষুধ কোষে সংক্রমিত হওয়া ভাইরাসকে একেবারে নিঃশেষ করবে। ফলে রোগী স্বল্প সময়ে আরোগ্য লাভে সক্ষম হবে।
তিনি জানান, এটি ভাইরাসের গতি-বিধি চিহ্নিত করতে পারে এবং তা মেরে ফেলে সুস্থ মানুষের কোষের ন্যায় অর্থাৎ স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় নতুন কোষ সৃষ্টিতে সক্ষম হবে। এরই মধ্যে পরিচালিত পর্যবেক্ষণ জরিপে (প্রি-ক্লিনিক্যাল) ড. রায়ানর গবেষণা টিম তা নিশ্চিত হয়েছে।
করোনাভাইরাস যেভাবে আর যে নামেই আবির্ভূত হোক না কেন সেই ভাইরাসকে চিরতরে নির্মূলে সক্ষম হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন টিভিজিএন-৪৮৯ উদ্ভাবনের নেপথ্য পৃষ্ঠপোষক, বিশ্বখ্যাত সেল থেরাপি বিশেষজ্ঞ এবং ফিলাডেলফিয়ার থমাস জেফারসন ইউনিভার্সিটির মেডিকেল অনকোলজি ডিপার্টমেন্টের চেয়ারম্যান ড. নীল ফ্লোমেনবার্গ।
ড. নীল বলেন, প্রাথমিক পর্যবেক্ষণে আমরা এ ওষুধকে নিরাপদ ভাবতে পারি। এখন ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালেও তা সব ধরনের ভাইরাসকে নির্মূলে কার্যকর ভূমিকা রাখবে বলে আমরা আশাবাদী।
৭০ বছরের বেশি বয়সের রোগী, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপসহ নানা জটিল রোগে আক্রান্ত এবং করোনায় সংক্রমিত হওয়ার প্রচণ্ড ঝুঁকিতে থাকা ১৮ বছরের অধিক বয়সী মানুষ, আগে থেকেই জটিল রোগে আক্রান্ত এবং এখন করোনা সংক্রমিত রোগীর ওপর ট্রায়াল চালানো হবে বলে জানিয়েছেন ড. সাদী।
প্রসঙ্গত, করোনার টিকা গ্রহণ করলে মানুষ সংক্রমণ প্রতিহত করার ক্ষমতা অর্জন করে। এ টিকা ভাইরাসকে মেরে ফেলতে পারে না। ড. সাদীর উদ্ভাবিত ওষুধ করোনা সংক্রমিত সেলকে নির্মূল করবে। ট্রায়ালের মাধ্যমে করোনায় আক্রান্তরা এ ওষুধ গ্রহণ করলে মৃত্যুর ঝুঁকিতে পড়বে না- সেটি নিশ্চিত হতে চায় মার্কিন স্বাস্থ্য প্রশাসন। এছাড়া, এ ওষুধ গ্রহণকারীরা কত দীর্ঘ সময়ের জন্য করোনার মত ভয়ঙ্কর ভাইরাসের আক্রমণ থেকে দূরে থাকতে সক্ষম-তাও ট্রায়ালের অন্তর্ভুক্ত। করোনাভাইরাস প্রতিনিয়ত রূপ পাল্টে আরো ভয়ঙ্কর হচ্ছে। সেদিকে খেয়াল রেখে এ ওষুধ তৈরি করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ড. রায়ান সাদী।
ড. রায়ান সাদী ওরফে শাহীন ছোটবেলা থেকেই অত্যন্ত মেধাবী। ১৯৮১ সালে তিনি এসএসসি পাস করেন। এইচএসসি পাসের পর ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিএস পাশ করেন। এরপর তিনি পাড়ি জমান যুক্তরাষ্ট্রে।