স্মার্ট বাংলাদেশ দিবস নিয়ে তারুণ্যের ভাবনা, স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের মূল শক্তি দক্ষ তরুণ
নাজমুল হাসান
|
“প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত উন্নত দেশগুলোর মতো কারিগরি ও প্রযুক্তিগত শিক্ষার গুরুত্ব বাড়ানো প্রয়োজন। একই সাথে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের স্বপ্নের বীজ বপন করতে হবে শিক্ষাজীবনের প্রারম্ভে। প্রযুক্তি শিক্ষার পাশাপাশি চতুর্থ শিল্পবিপ্লব সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের সম্যক ও ব্যবহারিক ধারণা দেয়া প্রয়োজস। কারণ এই তরুণ প্রজন্মই হবে “স্মার্ট বাংলাদেশ” বিনির্মাণের মূল শক্তি।” আজ ১২ ডিসেম্বর, “স্মার্ট বাংলাদেশ দিবস”। গত ১২ ডিসেম্বর ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্ন বাস্তবায়ন করে এবার “স্মার্ট বাংলাদেশ” গড়ার ঘোষণা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের অঙ্গীকার সফলতার সঙ্গে বাস্তবায়নের পর এখন বাংলাদেশ সরকার ২০৪১ সালের মধ্যে স্মার্ট বাংলাদেশ করার পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। যা এই শতাব্দীর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, দূরদর্শী ও সময়োপযোগী পরিকল্পনা। আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তির ব্যাপক ব্যবহার ও প্রসারের মাধ্যমে বাংলাদেশ একটি অসাধারণ বিপ্লবের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নের জন্য সবার কানেকটিভিটি, দক্ষ মানবসম্পদ উন্নয়ন, ই-গভর্নমেন্ট এবং আইসিটি ইন্ডাস্ট্রি প্রোমোশন-এ চারটি সুনির্দিষ্ট প্রধান স্তম্ভ নির্ধারণ করে ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়ন হয়েছে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি, ব্যবসা-বাণিজ্য প্রভূতি ক্ষেত্রে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার ব্যাপক হারে বেড়েছে, প্রযুক্তিনির্ভর হয়ে উঠেছে বাংলাদেশ। এর মাধ্যমে জনগণের জীবন যাত্রা সহজ হয়েছে। এই ডিজিটাল বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে হলে আমাদের আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারে আরো দক্ষ ও উন্নত হতে হবে। একই সাথে তথ্যপ্রযুক্তি নির্ভর সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে স্মার্ট বাংলাদেশ করার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে হবে। তখনেই ২০৪১ সালের স্মার্ট বাংলাদেশ হবে সাশ্রয়ী, টেকসই, বুদ্ধিদীপ্ত, জ্ঞানভিত্তিক, উদ্ভাবনী বাংলাদেশ। স্মার্ট বাংলাদেশের সকল নাগরিক সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা পাবে, তখন শহর এবং গ্রামের মানুষের মধ্যে জীবপযাপন এবং সুযোগ-সুবিধা প্রাপ্তির ক্ষেত্রে তেমন কোনো পার্থক্য থাকবে না। শহরের নাগরিক যেমন ঘরে বসেই সব কিছু করতে পারবে, ঠিক তেমনি প্রত্যন্ত গ্রামের মানুষও সেই কাজটি করতে পারবে। তখন সব কাজই হবে স্মার্ট, অল্প সময়ে সমাধান হবে কঠিন কাজ। স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার স্তম্ভ চারটি, যথা- স্মার্ট সিটিজেন, স্মার্ট ইকোনমি, স্মার্ট গভর্নমেন্ট, এবং স্মার্ট সোসাইটি। স্মার্ট নাগরিক ও স্মার্ট সরকার এর মাধ্যমে সব সেবা এবং মাধ্যম ডিজিটালে রূপান্তরিত হবে। একই সাথে দেশের সকল নাগরিক প্রযুক্তি ব্যবহারে দক্ষ হবে। আর স্মার্ট সোসাইটি ও স্মার্ট অর্থনীতি প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করলে অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ গঠন এবং ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ গড়ে তুলতে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। ইতিমধ্যেই অনেক উন্নত দেশগুলি স্মার্ট দেশে রূপান্তরিত হয়েছে এবং অধিকাংশ উন্নয়নশীল দেশও স্মার্ট দেশে পরিণত হওয়ার পথে রয়েছে। ভবিষ্যতে প্রযুক্তি নির্ভর দেশগুলো বাণিজ্য, আন্তর্জাতিক লেনদেন এবং যোগাযোগে বাড়তি সুবিধা পাবে। প্রতিটি দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা বাস্তবায়নের কিছু চ্যালেঞ্জ থাকে। একইভাবে, স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের ক্ষেত্রেও প্রধান চ্যালেঞ্জ দক্ষ জনশক্তি। সেই দৃষ্ঠিকোণ থেকে আমরা এখনো পিছিয়ে আছি। স্মার্ট বাংলাদেশের জন্য স্মার্ট জনশক্তি তৈরি করা জন্য প্রয়োজন সম্মিলিত প্রচেষ্টা। আমাদের দেশের তরুণদেরকে দক্ষ জনশক্তি হিসেবে তৈরি করতে হবে। জনসংখ্যার বিবেচনায় বৃহৎ অংশ তরুন। বর্তমানে দেশে প্রায় ৪ কোটি ২০ লক্ষ তরুণ। ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়নের লক্ষমাত্রা অর্জন ও ২০৪১ সালের মধ্যে একটি স্মার্ট দেশে পরিণত হওয়ার জন্য এই বিশাল তরুণ প্রজন্মকে উন্নয়ন কর্মে নিয়োজিত করতে হবে। বর্তমানে এই আধুনিকতার যুগে তরুণ প্রজন্মকে প্রযুক্তিগত উন্নয়ন সম্পর্কে জানাতে হবে। একই সাথে চতুর্থ শিল্পবিপ্লব মোকাবিলায় বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে প্রযুক্তিশিক্ষায় পারদর্শী করে তুলতে হবে এবং ডিজরাপ্টেড টেকনোলজি সম্পর্কে ধারাণা দিতে হবে। বাংলাদেশকে একটি স্মার্ট দেশে পরিণত করার জন্য, তরুণদের প্রযুক্তির দক্ষতা বৃদ্ধি ও সাহসী প্রতিভা আবিষ্কার করা প্রয়োজন। “প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত উন্নত দেশগুলোর মতো কারিগরি ও প্রযুক্তিগত শিক্ষার গুরুত্ব বাড়ানো প্রয়োজন। একই সাথে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের স্বপ্নের বীজ বপন করতে হবে শিক্ষাজীবনের প্রারম্ভে। প্রযুক্তি শিক্ষার পাশাপাশি চতুর্থ শিল্পবিপ্লব সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের সম্যক ও ব্যবহারিক ধারণা দেয়া প্রয়োজস। কারণ এই তরুণ প্রজন্মই হবে “স্মার্ট বাংলাদেশ” বিনির্মাণের মূল শক্তি।” কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, ইন্টারনেট অফ থিংক, ব্লক চেইন, রোবোটিক্স, বিগ ডাটা, মেডিকেল স্ক্রাইব, সাইবার নিরাপত্তার মতো উন্নত প্রযুক্তিতে দক্ষ মানবসম্পদ তৈরি করতে হবে। এই সকল বিষয় গুরুত্ব দিয়ে পাঠ্যসূচিতে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। পাশাপাশি নির্দিষ্ট এই বিষয়গুলোর উপর স্নাতক ডিগ্রি অথবা সম্মান কোর্স, প্রয়োজনে সমতুল্য কোর্স চালু করা যেতে পারে। সম্প্রতি আমরা স্মার্ট শহরগুলিতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং ইন্টারনেট অফ থিংস এর সুরক্ষা-ভিত্তিক অ্যাপ্লিকেশনগুলির গবেষণা করেছি। আমরা আমাদের গবেষণায় তথ্যের সুরক্ষা ও ঝুঁকির বিষয়ে গুরত্ব দিয়েছি। গবেষণায় দেখা যায় প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহার না জানার কারনে ৩১.২৫% মানুষের তথ্যের সুরাক্ষা রাখতে ব্যাহত হচ্ছে। অধিকাংশ মানুষ তথ্য সুরাক্ষার হুমকি বিষয়ে অবগত নন। স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে আমাদের তথ্যের সুরক্ষা নিশ্চিত করা প্রয়োজন, আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারে মানুষদেরকে উৎসাহিত করা যেতে পারে। আমরা সকলেই অবগত যে চতুর্থ শিল্পবিপ্লব তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর একটি ডিজিটাল বিপ্লব। এ বিপ্লব অনেক ধরনের সম্ভাবনা নিয়ে আসছে তার মধ্যে অন্যতম বিভিন্ন ঝুঁকিপূর্ণ কাজে রোবটিক্সের ব্যবহারের মাধ্যমে ঝুঁকি হ্রাস, কাজের গতি মান ও গতি বৃদ্ধি করতে অটোমেশনের ব্যবহার। এই চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের সুফল গ্রহণের মাধ্যমে স্মার্ট বাংলাদেশ করতে হবে। ভবিষ্যৎ প্রযুক্তির সঙ্গে নিজেদের মানিয়ে নিতে এখনই প্রস্তুত হতে হবে, ভবিষ্যতে যাদের আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তির যোগ্যতা ও দক্ষতা থাকবে, তারাই ভালো চাকুরির সুযোগ পাবে। চতুর্থ শিল্পবিপ্লব উৎকর্ষে স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের পথ সুগম হবে। উদ্ভাবনীমূলক পরিকল্পনা ও ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে ২০৪১ সালে বাংলাদেশ হবে একটি জ্ঞানভিত্তিক, বুদ্ধিদীপ্ত, টেকসই উন্নয়নের স্মার্ট বাংলাদেশ। এই সাথে চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের সঙ্গে সামঞ্জস্যতা রেখে দক্ষ জনবল তৈরি, তরুদের সফল অংশগ্রহণ ও দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার অঙ্গীকার পূরণে আমরা সক্ষম হবো, এই আমাদের প্রত্যাশা। লেখক পরিচিতি নাজমুল হাসান, রোভার স্কাউট লিডার, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি এয়ার রোভার স্কাউট গ্রুপ ই-মেইলঃ [email protected] |
� পূর্ববর্তী সংবাদ | পরবর্তী সংবাদ � |