'বেবিটিউব' শিশু-কিশোরদের জন্য নিরাপদ ভিডিও শেয়ারিং সাইট
জোবায়ের বিন আতাউর
|
সন্তান চাওয়া মাত্রই আমরা মোবাইল তাদের হাতে দিয়ে দেই। তারাও দেখছে ভিডিও। বিভিন্ন কার্টুনসহ নানান ভিডিও। কিন্তু এ ব্যাপারে অভিভাবকরা সচেতন কতটুকু। কি দেখছে বাচ্চা। খেয়াল রাখা সম্ভব কি? সম্ভব হলেও কতটুকু খেয়াল করছি। প্রযুক্তির ব্যবহারে সারাক্ষন বসে থেকে পাহারা দেয়া সম্ভব নয়। আর তাই প্রয়োজন এমন কিছু পদক্ষেপ যা শিশু-কিশোরদের হাতে নিশ্চিন্তে মোবাইল এবং ডিজিটাল ডিভাইসগুলোর মাধ্যমে দেয়া যায়। বাংলাদেশের নতুন প্রজন্মের কিছু তরুণ তৈরি করেছে নিরাপদ একটি অ্যাপ। শিশু-কিশোরদের নিয়ে ইউটিউবের মতো এই অ্যাপের নাম বেবিটিউব। যে কোনো বয়সের যে কেউ এই সাইটে ভিডিও আপলোড করতে পারবেন। তবে বেবিটিউবে শিশুদের বিকাশের পথে বাধা হয়, এমন কোনো ভিডিও দেয়া যাবে না। এমনটি করার কারণ হচ্ছে, প্রতিটি শিশু যেন নিরাপদে থাকে, ইন্টারনেট ব্যবহারে। অভিভাবকরাও যেন হতে পারেন নিশ্চিন্ত। এ বিষয়ে সার্বক্ষনিক মনিটরিংয়ের মাধ্যমের অনুমোদনের পরই স্বল্প সময়ের মধ্যে অ্যাকাউন্ট হোল্ডারদের ভিডিওটি আপলোড করা হবে। সব ক্যাটাগরির ভিডিও আপলোড করা যাবে। যেমন খেলাধুলা, কার্টুন, পড়াশোনা, মুভি, নাটক, গেম, গান, গজল, ট্রাভেল, ব্লগ, টেকনোলজিসহ শিশু-কিশোর নির্ভর সব ধরনের ক্যাটাগরিতে ভিডিও আপ করা যাবে। তবে সেগুলো হতে হবে শিশুদের জন্য নিরাপদ ইতিবাচক ও মজাদার। বাংলাদেশে শিশুদের অনলাইন নিরাপত্তা' শীর্ষক সমীক্ষার অংশ হিসেবে স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থার ইন্টারনেট ব্যবহারকারী ১০-১৭ বছর বয়সী ১হাজার ২'শ ৮১ জন শিশুর ওপর জরিপ চালানো হয়। সমীক্ষা ফলাফল অনুযায়ী দেখা যায়, প্রায় ২৫ শতাংশ শিশু ১১ বছর বয়স হওয়ার আগেই ডিজিটাল বিশ্বে প্রবেশ করতে শুরু করে। আর এসব শিশুরা অধিক মাত্রায় সাইবার নিপীড়নের শিকার হওয়ার ঝুঁকিতে থাকে, তবে সার্বিকভাবে সব শিশুরাই ক্ষতিকর কনটেন্ট, যৌন হয়রানি এবং সাইবার নিপীড়ন আশংকায় রয়েছে। বেবিটিউবের চেয়ারম্যান সাইদুল করিম মিন্টু বলেন, 'আজকের শিশু-কিশোররা মোবাইল ও ইন্টারনেট ব্যবহার বান্ধন। তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার বেড়ে যাওয়ার কারণে প্রায় সব শিশু কিশোররা মোবাইল ও ইন্টারনেট ব্যবহারে বেশ আগ্রহী। আর তাই অভিভাবকদের দুশ্চিন্তা; তাদের সন্তান যেনো কোনোভাবেই খারাপ কিছুতে জড়িয়ে না যায়? তাদের দুশ্চিন্তার অবসান ঘটাতেই বেবিটিউবের উদ্যোগ।' এদিকে বেবিটিউব করার ধারণা কখন কিভাবে এলো জানতে চাইলে বেবিটিউবের প্রতিষ্ঠাতা শামীম আশরাফ বলেন, 'আমি যখন 'মেন্টর মশাই' নিয়ে কাজ করি তখন দেখলাম শিশু-কিশোররা ইন্টারনেট প্রচুর ব্যবহার করছে। ব্যবহারের মাত্রা দিনদিন বাড়ছে । আমার পরিবারেও একই অবস্থা।' তিনি বলেন, 'আমরা সচেতনতামূলক কাজ শুরু করি কয়েকজনে মিলে মেন্টর মশাই সংগঠন নিয়ে । কিন্তু পরে তাদের মাথায় আসে যে শিশু-কিশোররা ভিডিও বেশি দেখে থাকে । সেখান থেকেই ভাবনা আসে যে, বাচ্চাদের জন্য আলাদ একটি ভিডিও শেয়ারিং সাইট তৈরি করা যায় কিনা। আর এই চিন্তা থেকেই আমি ও আমার টিম কাজ শুরু করি এবং সাজ্জাদুল ইসলাম পুরো সাইট ও অ্যাপ সম্পূর্ণ করেন।' মনিটাইজেশন সম্পর্কে জানতে চাইলে বেবিটিউবের হেড অব পিআর মাঈনুল ইসলাম বলেন, 'বেবিটিউব একটি ভিডিও শেয়ারিং সাইট। এটি একটি অ্যাপ যেখানে ভিডিও কনটেন্ট তৈরী করে আপলোড করা যাবে। শর্ত শুধু একটাই কনটেন্ট গুলো হতে হবে শিশুকিশোর ভিত্তিক। বেবিটিউবে সহজ শর্তে মনিটাইজেশান সিস্টেম আছে কন্টেন্ট ক্রিয়েটরদের জন্য। যারা শিশুতোষ কন্টেন্ট আপলোড করবে তারা বেবিটিউব থেকে মনিটাইজেশানের মাধ্যমে আয় করার সুযোগ পাবে।' বেবিটিউবে ইতিমধ্যে ৬'শ এর অধিক ভিডিও কন্টেন্ট রয়েছে। বেবিটিউবের পিছনে কাজ করছে একদল উদ্যোমী তরুণ। এই দলে রয়েছে রাফিন, আবির, প্রনিন, আদিবা, সময়, রবিউল, জোবায়ের, বাবুল, জামিল, হাসিবা, পান্ত, তনুশ্রী, আয়শা, আনিকা, সুনয়না, সামিনাসহ অনেক কর্মঠ তরুণ। ফেসবুক, টুইটার, ইনস্ট্রাগ্রাম, লিংকড-ইন, বেবিটিউব ফেসবুক পেইজ, ওয়েবসাইট এবং অ্যাপসে প্রায় দুই লাখ মানুষ যুক্ত হয়েছেন। বেবিটিউব (BabyTube) অ্যাপ মানুষ ব্যবহার করছে গুগল প্লেস্টোর থেকে ডাউনলোডের মাধ্যমে। সহজে জানার জন্য ওয়েবসাইটে চোখ বুলিয়ে আসতে পারেন baby-tube.com এ। বেবিটিউবের সুবিধা পাওয়ার সম্পর্কে বেবিটিউবের কো-ফাউন্ডার সাজ্জাদুল ইসলাম বলেন, 'বেবিটিউবে একসঙ্গে পাওয়া যাচ্ছে খেলাধুলা, কার্টুন, পড়াশোনা, মুভি, নাটক, গেম, গান, গজল, ট্রাভেল, ব্লগ, টেকনোলজিসহ শিশু-কিশোরনির্ভর সকল ধরনের কনটেন্ট। দিন দিন বাড়ছে শিশু-কিশোরদের মোবাইল ফোন ও ইন্টারনেটের ব্যবহার। তথ্যপ্রযুক্তির এই যুগে বেশির ভাগ শিশু-কিশোরই এখন ইন্টারনেটে সময় কাটাতে অভ্যস্ত হয়ে উঠছে। বিনোদনের মাধ্যম হিসেবেও ইউটিউবে ঘুরে বেড়াচ্ছে তারা।' তবে অনেক সময় দেখা যায়, আপত্তিকর অনেক ভিডিও তাদের সামনে চলে আসে। অভিভাবকরাও এ নিয়ে দুশ্চিন্তায় থাকেন। বেবিটিউবে শিশু-কিশোরদের জন্য নিরাপদ, মজাদার এবং শিক্ষণীয় ভিডিও শেয়ার করার সুযোগ তৈরী করেছে উদ্যোক্তারা। অ্যাপের পাশাপাশি সেবা পাওয়া যাবে বেবিটিউবের প্রাতিষ্ঠানিক ওয়েবসাইটেও। বয়সভেদে যে কেউ এই সাইটে ভিডিও আপলোড করতে পারবেন। তবে বেবিটিউবে শিশুদের মানসিক বিকাশের পথে বাধা হয়, এমন কোনো কন্টেন্ট আপলোড করা যাবেনা। এ বিষয়ে সার্বক্ষণিক মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা করেছে বেবিটিউবের টেকনিক্যাল টিম। বেবিটিউবের উপদেষ্টা সুশান্ত কুমার সাহা জানান, 'আমরা যখন দেখেছি শিশু-কিশোররা বিভিন্ন অপরাধে জড়িয়ে যাচ্ছে। ভবিষ্যৎ প্রজন্ম ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। বাবা মায়ের কথা অমান্য করা। সামাজিক অবক্ষয়, কিশোর গ্যাংসহ নানান অপরাধে শিশু-কিশোরদের নাম। আমরা বিভিন্ন শিশু-কিশোর এবং অভিভাবকদের উপর জরিপ করি। জরিপ করে পেলাম শিশু-কিশোরদের অপরাধের অন্যতম একটি কারণ হচ্ছে ঝুকিপূর্ণ ইন্টারনেট ব্যবহার। যে ইন্টারনেটে অনেক খারাপ কন্টেন্ট থাকে। যা শিশু-কিশোরদের জন্য নিরাপদ নয়। এসব কন্টেন্ট দেখে শিশু-কিশোররা অনুকরণ করে। উৎসাহীত হয়। এবং বাজে ও অসামাজিক কাজে জড়িয়ে পড়ে।' লেখক: জোবায়ের বিন আতাউর, (বেবিটিউব, বিজনেস ডেবালপমেন্ট ডিপার্টমেন্ট)
|
পূর্ববর্তী সংবাদ | পরবর্তী সংবাদ |