ই-পেপার সোমবার ১৪ নভেম্বর ২০২২
ই-পেপার |  সদস্য হোন |  পডকাস্ট |  গুগলী |  ডিসকাউন্ট শপ
শনিবার ২৬ এপ্রিল ২০২৫ ১৩ বৈশাখ ১৪৩২
যা যা থাকছে বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের সুপারিশে
নতুন সময় প্রতিবেদক
প্রকাশ: Tuesday, 4 February, 2025, 10:59 AM

যা যা থাকছে বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের সুপারিশে

যা যা থাকছে বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের সুপারিশে

পৃথক বিচার বিভাগীয় সচিবালয় প্রতিষ্ঠা করা, বিচারক নিয়োগে স্বচ্ছতা আনা, বিচার প্রক্রিয়া দ্রুততর করাসহ এই বিভাগের নানা পর্যায়ে সংস্কার আইনজীবীসহ অংশীজনের দীর্ঘদিনের দাবি।

সরকার পরিবর্তনের পর নানা ক্ষেত্রে সংস্কার উদ্যোগের মধ্যে বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন বেশকিছু প্রস্তাব দিয়েছে খসড়া প্রতিবেদনে।

পৃথক বিচার বিভাগীয় সচিবালয় প্রতিষ্ঠা, প্রধান বিচারপতি ছাড়া অন্য বিচারক নিয়োগে পৃথক কমিশন গঠন, দেশের সব প্রশাসনিক বিভাগে হাই কোর্টের স্থায়ী বেঞ্চ প্রতিষ্ঠা, জেলা পর্যায়ে বাণিজ্যিক আদালত প্রতিষ্ঠা, উপজেলায় দেওয়ানি ও ফৌজদারি আদালত প্রতিষ্ঠা, স্থায়ী অ্যাটর্নি সার্ভিস গঠনের মত সুপারিশ রয়েছে এর মধ্যে।

বুধবার বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন জমা দেওয়ার কথা রয়েছে, যার খসড়া ইতোমধ্যে আইন ও বিচার বিভাগে পাঠানো হয়েছে।


বিচার বিভাগ নিয়ে সংবিধান সংস্কার কমিশনও তাদের প্রতিবেদনে সংস্কারের প্রস্তাব রেখেছে। গত ১৫ জানুয়ারি প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে প্রতিবেদন দিয়েছে এ কমিশন।

পৃথক বিচার বিভাগীয় সচিবালয় প্রতিষ্ঠা করা, বিচারক নিয়োগে স্বচ্ছতা আনা, বিচার প্রক্রিয়া দ্রুততর করাসহ এই বিভাগের নানা পর্যায়ে সংস্কার আইনজীবীসহ অংশীজনের দীর্ঘদিনের দাবি।

আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর নানা ক্ষেত্রে সংস্কার উদ্যোগের মধ্যে আট সদস্যের বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন গঠন করা হয় গত ৩ অক্টোবর।

কমিশনের প্রধান আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি শাহ আবু নাঈম মোমিনুর রহমান গণমাধ্যমকে বলেন, “কমিশন একটি খসড়া প্রতিবেদন আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন বুধবার প্রধান উপদেষ্টার কাছে জমা দেওয়া হবে।”

আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠতম বিচারককে প্রধান বিচারপতি করার রীতি প্রচলিত থাকলেও সবসময় তা মানা হয় না। কোনো কোনো সময় জ্যেষ্ঠতা লংঘন করে এ পদে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে রাজনৈতিক বিবেচনায়। কমিশন তাদের খসড়া সুপারিশে প্রবীণতম বিচারককে শীর্ষপদে রাখার প্রস্তাব করেছে।

কমিশনের এই সুপারিশ মানা হলে প্রধান বিচারপতি নিয়োগের প্রক্রিয়ায় রাষ্ট্রপতির কোনো স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতা থাকবে না বা নির্বাহী বিভাগের কোনো প্রভাব থাকবে না।

প্রধান বিচারপতি ছাড়া অন্য বিচারকদের নিয়োগে স্বাধীন ও স্বতন্ত্র কমিশন গঠনের প্রস্তাব করা হয়েছে খসড়ায়।

বলা হয়েছে, সুপ্রিম কোর্টের উভয় বিভাগের বিচারক নিয়োগের ক্ষেত্রে বর্তমানে প্রচলিত প্রধান বিচারপতির একক পরামর্শ প্রদান পদ্ধতির পরিবর্তে একটি সম্মিলিত এবং প্রতিনিধিত্বশীল সুপারিশ পদ্ধতি প্রতিষ্ঠা করা ‘যৌক্তিক এবং বাঞ্ছনীয়’ বলে কমিশন মনে করে।

“যথাসম্ভব স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় মেধা, সততা ও দক্ষতার মূল্যায়নকারী একটি স্বাধীন ও স্বতন্ত্র কমিশনের মাধ্যমে গ্রহণযোগ্য নিয়োগ-পদ্ধতি প্রবর্তন করা এবং কমিশনের সুপারিশের ভিত্তিতে সুপ্রিম কোর্টে বিচারপতি নিয়োগ করা প্রয়োজন। হাই কোর্ট বিভাগে অতিরিক্ত বিচারক ও স্থায়ী বিচারক এবং আপিল বিভাগের বিচারক নিয়োগে কমিশনের মতামতই প্রাধান্য পাবে।”

এ নিয়োগে স্বচ্ছতা, দক্ষতা ও সততা নিশ্চিত করার জন্য যথাযথ পদ্ধতিসহ আনুষঙ্গিক বিষয়গুলো সুনির্দিষ্ট করতে একটি আইন প্রণয়ন এবং এ বিষয়ে সংবিধানে একটি নতুন অনুচ্ছেদ সংযুক্ত করার সুপারিশ রয়েছে খসড়ায়।

আপিল বিভাগে বিচারক নিয়োগের ক্ষেত্রে নিয়োগ কমিশনের কার্যক্রমে স্বার্থের সংঘাত পরিহার করতে হাই কোর্ট বিভাগের দুইজন বিচারক, অ্যাটর্নি জেনারেল, সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এবং সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবীকে সদস্য করা থেকে বিরত থাকার সুপারিশ করেছে কমিশন। অর্থাৎ সেক্ষেত্রে কমিশন হবে ৪ সদস্যবিশিষ্ট।

খসড়ায় বলা হয়েছে, হাই কোর্টে বিচারক নিয়োগের ক্ষেত্রে ন্যূনতম বয়স ৪৮ বছর নির্ধারণের আলোকে কমিশন সংবিধানের ৯৬ অনুচ্ছেদ সংশোধন করে প্রধান বিচারপতি ও অন্যান্য বিচারকদের অবসরের বয়স ৭০ বছর পুনঃনির্ধারণ করার প্রস্তাব করেছে।

সুপ্রিম কোর্টের বিচারকদের শৃঙ্খলা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠনের প্রস্তাব করা হয়েছে।

সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা করে আপিল বিভাগের দেওয়া ওই রায়ের মাধ্যমে ইতোমধ্যে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল কাজ শুরু করেছে।

বিচারপতি অপসারণ হবে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের মাধ্যমে

আরও কয়েকজন বিচারপতির বিষয়ে তদন্ত করবে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল

সুপ্রিম কোর্টের পৃথক সচিবালয়

পৃথক সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয় স্থাপন বিষয়ে খসড়ায় বলা হয়েছে, বিচার বিভাগের পূর্ণাঙ্গ স্বাধীনতা নিশ্চিতকরণ এবং সর্বোপরি নির্বাহী বিভাগ থেকে বিচার বিভাগের পৃথককরণে আলাদা সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয় স্থাপন করতে হবে। সেজন্য একটি স্বতন্ত্র আইন বা অধ্যাদেশ প্রণয়ন করতে হবে।

ইতোমধ্যে গত ২৭ অক্টোবর সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন থেকে একটি ধারণাপত্রসহ বিচার বিভাগের জন্য পৃথক সচিবালয় গঠনের প্রস্তাব আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।

বিচার বিভাগের বিকেন্দ্রীকরণ ও সম্প্রসারণ

বিচার বিভাগের বিকেন্দ্রীকরণ ও সম্প্রসারণ বিষয়ে খসড়ায় বলা হয়, প্রতিটি স্থায়ী বেঞ্চ কোন কোন এলাকা থেকে উদ্ভূত মামলা গ্রহণ করতে পারবে, তা সুনির্দিষ্ট করে দিতে হবে। তবে বিচারকাজ পরিচালনা এবং রায়, আদেশ, নির্দেশ ইত্যাদির ক্ষেত্রে হাই কোর্ট বিভাগের এখতিয়ারের পূর্ণাঙ্গতা বজায় রাখতে হবে।

অর্থাৎ স্থায়ী বেঞ্চগুলো স্থাপনের কারণে দেশব্যাপী কর্তৃত্ব প্রয়োগের ক্ষেত্রে হাই কোর্ট বিভাগের এখতিয়ার কোনো ভৌগোলিক সীমারেখা দিয়ে বিভাজিত হবে না এবং রাষ্ট্রের একক চরিত্র ক্ষুণ্ন হবে না। এর ফলে বিচারপ্রার্থী জনগণ তাদের নিকটতম স্থায়ী বেঞ্চে মামলা দায়েরের সুবিধা পাবে।

আরও বলা হয়েছে, স্থায়ী বেঞ্চগুলো সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য আদালত ও সহায়ক কার্যালয়, বিচারক ও সহায়ক জনবলের জন্য উপযুক্ত বাসস্থানসহ প্রয়োজনীয় অবকাঠামো স্থাপন এবং প্রয়োজনীয় বাজেট বরাদ্দ নিশ্চিত করতে হবে। সবগুলো স্থায়ী বেঞ্চ একই সঙ্গে কার্যকর করা কঠিন বিবেচিত হলে প্রয়োজনে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে পর্যায়ক্রমে বিভাগীয় সদর দপ্তরগুলোতে স্থায়ী বেঞ্চ কার্যকর করা যেতে পারে।

উপজেলা পর্যায়ে আদালত

উপজেলা পর্যায়ে আদালতের কার্যক্রম বিষয়ে খসড়ায় বলা হয়েছে, উপজেলা সদরের ভৌগোলিক অবস্থান ও বৈশিষ্ট্য, জেলা সদর থেকে দূরত্ব ও যাতায়াত ব্যবস্থা, জনসংখ্যার ঘনত্ব ও বিন্যাস এবং মামলার চাপ বিবেচনা করে কোন কোন উপজেলায় আদালত স্থাপন করা প্রয়োজন, তা নির্ধারণ করতে হবে।

বর্তমানে যেসব স্থানে চৌকি আদালত আছে, সেগুলো সচল রাখার প্রয়োজন আছে কি না বা সেগুলোর ভৌগোলিক এখতিয়ার পুনর্বিন্যাসের প্রয়োজন আছে কি না, তা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে হবে।

উপজেলা আদালতগুলোতে জ্যেষ্ঠ সহকারী জজ পর্যায়ের বিচারকদের পদায়ন করতে হবে এবং তাদের দেওয়ানি ও ফৌজদারি উভয় এখতিয়ার দিতে হবে। আইনগত সহায়তা কার্যক্রম ও বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তির ব্যবস্থা, বিশেষত মধ্যস্থতা পদ্ধতি উপজেলা পর্যায় পর্যন্ত সম্প্রসারিত করতে হবে।

বাণিজ্যিক আদালত

বাণিজ্যিক আদালত স্থাপনের বিষয়ে খসড়া সারসংক্ষেপে বলা হয়েছে, বাণিজ্যিক বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য পৃথক বাণিজ্যিক আদালত স্থাপনে যথাযথ বিধানসংবলিত আইন প্রণয়ন করতে হবে এবং দেওয়ানি কার্যবিধিসহ অন্যান্য আইনের প্রয়োজনীয় সংশোধনী আনতে হবে। সালিস আইন সংশোধন করে সালিস-সংক্রান্ত বিষয়াদি (আন্তর্জাতিক বাণিজ্যিক সালিস ছাড়া) বাণিজ্যিক আদালতের ওপর ন্যস্ত করা বাঞ্ছনীয়। বাণিজ্যিক আদালত থেকে উদ্ভূত বিষয়াদির নিষ্পত্তির জন্য হাই কোর্ট বিভাগেও এক বা একাধিক সুনির্দিষ্ট ক্ষমতাসম্পন্ন বেঞ্চ গঠন করতে হবে। হাই কোর্টের স্থায়ী বেঞ্চ বিভাগীয় সদরগুলোতে স্থাপিত হওয়ার পর বিভাগীয় পর্যায়ে এ ধরনের বেঞ্চ গঠন করা যেতে পারে যেন স্থানীয় পর্যায়ে বাণিজ্যিক বিরোধগুলোর সহজ ও দ্রুত নিষ্পত্তি সম্ভব হয়।

বিচার বিভাগকে দুর্নীতিমুক্ত রাখতে কয়েকটি পদক্ষেপ জরুরিভাবে নেওয়া প্রয়োজন বলে খসড়ায় জোর দেওয়া হয়েছে।

তিন বছর পরপর সুপ্রিম কোর্ট এবং অধস্তন আদালতের বিচারকদের সম্পত্তির বিবরণ সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে পাঠানো এবং তা ওয়েবসাইটের মাধ্যমে জনগণের সামনে প্রকাশ করার প্রস্তাব করা হয়েছে।

আইনগত সহায়তা কার্যক্রমের প্রসার

আইনগত সহায়তা কার্যক্রমের প্রসারের বিষয়ে খসড়া সারসংক্ষেপে বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন বলেছে, জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থার বিদ্যমান সেবাগুলোর পরিধি বাড়িয়ে আইনি সহায়তার পাশাপাশি মীমাংসা ও মধ্যস্থতার মাধ্যমে মামলা ও বিরোধ নিষ্পত্তির ক্ষেত্র সৃষ্টি করে মধ্যস্থতার কার্যক্রমকে দেশে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে।

এ জন্য এই সংস্থাকে একটি অধিদপ্তরে রূপান্তর করতে হবে। এ ছাড়া সংশ্লিষ্ট আইন রহিত করে একটি সময়োপযোগী আইন প্রণয়ন করা যেতে পারে।

স্থায়ী ও স্বতন্ত্র সরকারি অ্যাটর্নি সার্ভিস

খসড়ায় স্থায়ী ও স্বতন্ত্র সরকারি অ্যাটর্নি সার্ভিস গঠনের প্রস্তাব করা হয়েছে। রাজনৈতিক বিবেচনায় অস্থায়ীভাবে সরকারি আইন কর্মকর্তা নিয়োগের ব্যবস্থার পরিবর্তে একটি স্থায়ী অ্যাটর্নি সার্ভিস প্রতিষ্ঠা প্রয়োজন বলে কমিশন মনে করে।

এরকম অ্যাটর্নি সার্ভিসের উদাহরণ প্রতিবেশী দেশগুলোসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে রয়েছে বলেও সুপারিশে মনে করিয়ে দেওয়া হয়েছে।

প্রস্তাবিত স্থায়ী অ্যাটর্নি সার্ভিসকে একটি পেনশনযোগ্য স্থায়ী সরকারি চাকরি হিসেবে বিবেচনা করার সুপারিশ করা হয়েছে খসড়ায়।

পাশাপাশি অ্যাটর্নি সার্ভিস ও কার্যপদ্ধতিসহ আনুষঙ্গিক বিষয়গুলো সুনির্দিষ্ট করার লক্ষ্যে একটি আইন প্রণয়ণ করা এবং এ বিষয়ে সংবিধানে একটি নতুন অনুচ্ছেদ যুক্ত করার প্রস্তাব করা হয়েছে।

ভিন্নমত

প্রধান বিচারপতি এবং আপিল বিভাগে বিচারক নিয়োগের বিষয়ে কমিশনের সুপারিশকে সমর্থন করছেন সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মনজিল মোরসেদ । স্থায়ী অ্যাটর্নি সার্ভিসও যুগোপযোগী বলে তিনি মনে করছেন।

তবে বিভাগীয় পর্যায়ে হাই কোর্টের স্থায়ী বেঞ্চ হলে সেটা ‘আদালত অবমাননা’ হবে বলে তিনি সতর্ক করছে।

মনজিল মোরসেদ বলেন, “সংবিধানের অষ্টম সংশোধনীতে বিভাগীয় পর্যায়ে হাই কোর্টের স্থায়ী বেঞ্চ করা হয়েছিল। কিন্তু পরে সুপ্রিম কোর্ট তা বাতিল করেছে। এখন এটা আবার করলে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে। আমি নিজেও চ্যালেঞ্জ করতে পারি।”

আরেক জ্যেষ্ঠ আইনজীবী সুপ্রিম কোর্ট বারের সাবেক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস কাজলও বলেন, “বিভাগীয় পর্যায়ে হাই কোর্টের স্থায়ী বেঞ্চ হতেই পারে না। সংবিধানের অষ্টম সংরশাধনীতে ছয় বিভাগীয় পর্যায়ে হাই কোর্টের স্থায়ী বেঞ্চ করা হয়েছিল; কিন্তু তা সুপ্রিম কোর্ট তা বাতিল করেছে। এখন এটা আবার করলে সাংবিধানিক চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে।”

তবে বিভাগীয় পর্যায়ে হাই কোর্টের স্থায়ী বেঞ্চ স্থাপন করার পক্ষে মত দিয়েছেন আপিল বিভাগের আরেক আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির।

গণমাধ্যমকে তিনি বলেন, “সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে এটা করা সম্ভব। এর আগে অষ্টম সংশোধনীতে ছয়টি বিভাগে হাই কোর্টের স্থায়ী বেঞ্চ করা হয়েছিল; পরে সুপ্রিম কোর্ট তা বাতিল করে। তবে মানুষের ভোগান্তির কথা চিন্তা করলে এটা করা দরকার।

“বরিশালের কিংবা কুড়িগ্রামের একজন মানুষকে আগাম জামিন নিতে হলে ঢাকা আসতে হয়। অথচ বিভাগীয় পর্যায়ে হাই কোর্ট থাকলে তিনি রংপুর কিংবা বরিশালে সেটা করতে পারেন।”

সামগ্রিকভাবে প্রস্তাবের ওপর মন্তব্য করে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী আহসানুল করিম বলেন, “হাই কোর্টে বিচারক নিয়োগের বয়স ৪৮ বাস্তবসম্মত নয়; কারণ এ বয়সে যিনি ভালো আইনজীবী হয়ে ওঠেন, তিনি বিচারক হবেন না। সে ক্ষেত্রে এ বয়সেও যার প্র্যাকটিস ভালো হয়নি, তিনি যদি বিচারক হন, তাহলে ভালো ফল পাওয়া যাবে না।

“নিঃসন্দেহে অভিজ্ঞতা একটা বড় ব্যাপার। সেক্ষেত্রে ৪০/৪২ হতে পারে। তাহলে মেধাবী জাজ পাওয়া যাবে। ৪৮ বছর বয়সে চাকরিতে ঢোকা কোনোভাবেই যুক্তিযুক্ত হতে পারে না।”

বিভাগীয় পর্যায়ে হাই কোর্টের বেঞ্চ প্রতিষ্ঠান বিষয়ে তিনি বলেন, এটা মীমাংসিত বিষয়। অষ্টম সংশোধনী মামলার রায়ে সুপ্রিম কোর্ট এটা অসাংবিধানিক ঘোষণা করে বাতিল করেছিল। আর এটা করলে বিভাগীয় পর্যায়ে প্রধান বিচারপতির প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধান না থাকার কারণে দুর্নীতি বেড়ে যাবে; টাউট-বাটপার শ্রেণির দৌরাত্ম্য হবে।”

স্বতন্ত্র ফৌজদারি তদন্ত সংন্থা গঠনেরও বিরোধিতা করেন এ আইনজীবী। এ ছাড়া অন্যান্য সুপারিশ যথাযথ বলে তিনি মত দেন।

সংবিধান বিশেষজ্ঞ ও সংবিধান সংস্কার কমিশনের সদস্য আইনজীবী শরীফ ভুঁইয়া বলেন, বিভাগীয় পর্যায়ে হাই কোর্টের স্থায়ী বেঞ্চ স্থাপনে বিষয়ে একটি জরিপ করা হয়েছে। দেখা গেছে, দেশের ৯০ শতাংশ মানুষ হাই কোর্ট বিকেন্দ্রীকরণ চায়।

“সুপ্রিম কোর্টের ইউনিটারি সিস্টেমকে অপরিবর্তিত রেখেও এটা করা যায়, হাই কোর্টের এখতিয়ার অক্ষুণ্ন রেখে; অর্থাৎ যে কোনো বিভাগে সারা দেশের যে কেউ বিচার চাইতে পারবে। যদি ওই বেঞ্চ মনে করে কোথায় ওই মামলাটা হলে ভালো হয়, তাহলে সে মত ব্যবস্থা নেওয়া যায়।”

অষ্টম সংশোধনী মামলার বিষয়ে তিনি বলেন, ’৮৮/’৮৯ সালের বিবেচনায় ওই রায় ঠিক ছিল। কিন্তু এখনকার বাস্তবতা ভিন্ন। তখন স্বৈরাচারী এরশাদ ইউনিটারি ব্যবস্থাকে ভেঙে দেওয়ার জন্য বিকেন্দ্রীকরণ করেছিলেন। এখন দেশে মামলা বেড়েছে, মানুষের মধ্যে মামলা করার প্রবণতা বেড়েছে। দেশের মানুষ হয়েছে প্রায় দ্বিগুণ। তাই বিভাগীয় পর্যায়ে হাই কোর্টের বেঞ্চ নেওয়া যায় এবং এটা করা উচিত।”

হাই কোর্টে বিচারক নিয়োগে বয়সের ব্যাপারে তিনি বলেন, নিয়োগের সময় সর্বনিম্ন ৪৮ বছর এবং অবসরের বয়স ৭০ নির্ধারণ ‘না করাই ভালো’।

“বিচারক নিয়োগে কাউন্সিল করা হয়েছে। নিয়োগের সময় তারা বিবেচনা করবেন যিনি নিয়োগ পাবেন তিনি ৪৮ বছরের নাকি তার চেয়ে কম বয়সের। এভাবে নির্ধারণ করে দিলে অনেক মেধাবী প্রার্থী বাদ পড়ে যেতে পারেন। তার অবসরের বয়স ৭০ স্থির করে দিলে একদিকে যেমন তরুণদের জায়গা সঙ্কুচিত হয়ে পড়বে তেমনি অন্যান্য ক্ষেত্রেও এর প্রভাব পড়বে। তখন তরুণদের জায়গা দেওয়া যাবে না।

“আমাদের দেশের ৬০ শতাংশ জনগোষ্ঠী তরুণ। আমরা ডেমোগ্রাফিক্যালি এগিয়ে আছি। অবসরের বয়স বাড়িয়ে দিয়ে স্থির করে দিলে তরুণদের সুযোগ কমে যাবে, তাই ডেমোগ্রাফিক্যাল অ্যাডভান্টেজ পাব না।”

পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ
সম্পাদক : নাজমুল হক শ্যামল
দৈনিক নতুন সময়, গ্রীন ট্রেড পয়েন্ট, ৭ বীর উত্তম এ কে খন্দকার রোড, মহাখালী বা/এ, ঢাকা ১২১২।
ফোন: ৫৮৩১২৮৮৮, ০১৯৯৪ ৬৬৬০৮৯, ইমেইল: info@notunshomoy.com
সম্পাদক মন্ডলীর সভাপতি: এমদাদ আহমেদ | প্রকাশক : প্রবাসী মাল্টিমিডিয়া কমিউনিকেশন লি.-এর পক্ষে কাজী তোফায়েল আহম্মদ | কপিরাইট © দৈনিক নতুন সময় সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত | Developed By: i2soft
DMCA.com Protection Status