ই-পেপার সোমবার ১৪ নভেম্বর ২০২২
ই-পেপার |  সদস্য হোন |  পডকাস্ট |  গুগলী |  ডিসকাউন্ট শপ
শনিবার ১৭ মে ২০২৫ ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২
দেশের প্রথম নারী এগ্রি ইনফ্লুয়েন্সার কে এই উম্মে কুলসুম পপি?
নতুন সময় প্রতিবেদক
প্রকাশ: Friday, 11 October, 2024, 10:57 AM
সর্বশেষ আপডেট: Tuesday, 15 October, 2024, 2:23 PM

দেশের প্রথম নারী এগ্রি ইনফ্লুয়েন্সার কে এই উম্মে কুলসুম পপি?

দেশের প্রথম নারী এগ্রি ইনফ্লুয়েন্সার কে এই উম্মে কুলসুম পপি?

আমাদের অনেকের মতো পপিও শাইখ সিরাজের কৃষি বিষয়ক ডকুমেন্টরি দেখে বড় হয়েছেন। তিনি তালহা জুবায়ের মাসরুর ও আজহারুল ইসলামের মতো সমসাময়িক উদ্ভিদবিদদের দ্বারাও অনুপ্রাণিত হয়েছেন। 

উম্মে কুলসুম পপি নিজেকে 'গ্রামের মেয়ে' হিসেবে গর্বভরে পরিচয় দেন। তিনি বেড়ে উঠেছেন বাংলাদেশের উত্তরবঙ্গের লালমনিরহাট জেলার ছোট্ট এক গ্রামে।   

পপির শৈশব ও কৈশোরের স্মৃতির একটি বড় অংশ জুড়ে রয়েছে বাংলাদেশের গ্রামীণ সৌন্দর্য। ঐ সময়টায় পচা পাটের ঘ্রাণ অনুভব করে, ধান ক্ষেতের মধ্যে থাকা সরু আইল দিয়ে আনন্দে হেঁটে কিংবা নদীর তীরে চুপচাপ ঘণ্টার পর ঘণ্টা শান্তিতে কাটিয়ে তার সময় কেটেছে।

এক পর্যায়ে প্রকৃতি ও কৃষির প্রতি ভালোবাসার দরুণ পপি ছোট, তথ্যবহুল ভিডিও বানাতে থাকেন। যেখানে তিনি নানা ধরনের ফুল, ফলের চাষ নিয়ে কথা বলার পাশাপাশি কৃষিজ নানা কৌশল নিয়ে ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করে থাকেন। এক্ষেত্রে ভিডিওগুলি অনলাইনে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে বৃহৎ সংখ্যক দর্শককে প্রভাবিত করছে।


বর্তমানে পপির ফেসবুকে প্রায় ১৭ লাখ ফলোয়ার রয়েছে। ইউটিউবে তার সাবস্ক্রাইবারের সংখ্যা ৩ লাখ ৭১ হাজার। এতে করে অনলাইন জগতের কৃষিজ কমিউনিটির মধ্যে তিনি একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হিসেবে নিজেকে তুলে ধরেছেন। একইসাথে তিনিই হচ্ছে দেশের প্রথম নারী এগ্রি ইনফ্লুয়েন্সার।  

পপি বলেন, "মানুষ স্বাভাবিকভাবেই প্রকৃতির সাথে গভীর সম্পর্ক গড়ে তোলে। এটা সহজভাবে দেখায় আমরা কীভাবে সম্পর্কযুক্ত। এই সার্বজনীন বন্ধনের কারণেই আমার ভিডিওগুলি সকল পেশা ও সামাজিক অবস্থান নির্বিশেষে বৈচিত্র্যময় দর্শকদের সাথে মিলে যায়।"

পপি এটাও মনে করেন যে, তার কন্টেন্টগুলো কৃষক থেকে শুরু করে ব্যাংকার পর্যন্ত সকলের কাছে আগ্রহ তৈরি করে। তারা ভিডিওগুলো দেখার পাশাপাশি নিজ থেকে ফিডব্যাকও জানান।

পপি আরও বলেন, "আপনি যদি মানুষকে তাদের অবসরের পরের পরিকল্পনা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেন, তবে বেশিরভাগই আপনাকে বলবে যে তারা প্রকৃতির কাছাকাছি থাকতে চান। বাগান কিংবা কৃষিকাজ করে আরও বেশি সময় কাটাতে চান। কৃষি যেহেতু প্রকৃতির সাথে অবিচ্ছেদ্যভাবে জড়িত, তাই শুধু কৃষকদের জন্য নয় বরং এই আগ্রহটি যে কারোও ক্ষেত্রে কাজ করতে পারে।"

পপি ভিন্নধর্মী কী করে থাকেন?
পপির কন্টেন্টগুলো বেশ রিফ্রেশিং ও সহজবোধ্য। একের পর এক ফলের বাগান থেকে শুরু করে বিস্তৃত মাঠে তিনি ঘুরে বেড়ান। এক্ষেত্রে তিনি কন্টেন্ট তৈরির জন্য একেকটি সুনির্দিষ্ট টপিক খুঁজে বের করেন। তারপর তিনি এটিকে সহজ, সরল বাংলায় তুলে ধরেন যেন বিষয়টি সবার কাছে বোধগম্য হয়।

পপির ইউটিউব চ্যানেলের প্লে-লিস্টও সুনির্দিষ্ট কন্টেন্ট দিয়ে সুসজ্জিত। যার ফলে দর্শকেরা নিজেদের পছন্দ অনুযায়ী কন্টেন্ট খুঁজে নিতে পারে। কেউ যাতে নানা ধরনের মাছ, মশলা, ফল কিংবা ঔষধি গাছ সম্পর্কে জানতে পারে পপি তার ওপর ভিত্তি করে নানা কন্টেন্ট তৈরি করেছেন।

নিজের শুরুর দিকের কাজের কথা স্মরণ করে পপি বলেন, "আমার প্রথম ভিডিওটি তিস্তার একটি চরে করেছিলাম। যেখানে আমি কুমড়া চাষ নিয়ে কথা বলেছিলাম। ভিডিও থেকে আমি প্রত্যাশার চেয়েও বেশি প্রশংসা পেয়েছি।"

পপির পথচলা সম্পর্কে আরেকটি উল্লেখযোগ্য বিষয় হচ্ছে কৃষকদের সাথে তার সক্রিয় সম্পৃক্ততা। তিনি বলেন, "কৃষকরাই প্রকৃত উদ্ভাবক। তারা প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে ফসলের নতুন কৃষি জাত এবং কৌশল পরীক্ষা ও প্রয়োগ করে আসছে। তবুও তাদের জ্ঞান প্রায়শই তাদের স্থানীয় এলাকায় সীমাবদ্ধ থাকে। তাদের এই জ্ঞানকে আরও সমৃদ্ধ করতে ও বৃহত্তর কল্যাণের জন্য আরও বিস্তৃতভাবে ছড়িয়ে দেওয়া আমাদের দায়িত্ব।"

পপি গতবছর রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ভূগোল ও পরিবেশ বিষয়ে স্নাতক পাশ করেছেন। তবে কৃষির প্রতি গভীর অনুরাগ থেকে তিনি এই বিষয়ে ক্রমাগত শিখছেন। তিনি কৃষি বিষয়ক বই পড়ে সচেতনতা ও জ্ঞান বৃদ্ধি করছেন।

পপি বলেন, "এই সেক্টরে শেখার ও শেয়ার করার অনেক কিছু আছে। সম্প্রতি, আমি নিম পাতা ব্যবহার করে জৈব কীটনাশক তৈরির একটি ভিডিও আপলোড করেছি। এটি এমন একটি সমাধান যা আমি ব্যক্তিগতভাবে কার্যকর বলে মনে করেছি। ভিডিওটি দেখার পর এমনটা চেষ্টা কয়া অনেক লোক ইতিবাচক ফলাফলের কথা জানিয়েছেন। এই ধরনের ব্যবহারিক জ্ঞান থেকে অনেকে উপকৃত হচ্ছে; যা দেখা বেশ আনন্দদায়ক।"

আমাদের অনেকের মতো পপিও শাইখ সিরাজের কৃষি বিষয়ক ডকুমেন্টরি দেখে বড় হয়েছেন। তিনি তালহা জুবায়ের মাসরুর ও আজহারুল ইসলামের মতো সমসাময়িক উদ্ভিদবিদদের দ্বারাও অনুপ্রাণিত হয়েছেন। 

পপি বলেন, "আমাদের কৃষি শিল্প সম্ভাবনায় ভরপুর। কিন্তু উদ্বেগের বিষয় এই যে, এই সেক্টরের প্রতি আমাদের আগ্রহ কম। এই সেক্টরে আরও লোকের এগিয়ে আসা ও যুক্ত হওয়ার প্রয়োজন। যাতে করে সকল সম্ভাবনার দ্বার উন্মুক্ত করে নতুন শক্তি ও আইডিয়া নিয়ে আসা যায়।"

পপির উদ্যোক্তা হিসেবে পথচলা
উদ্যোক্তা হিসেবে পপির যাত্রা শুরু হয় ২০১৬ সালে; বিডি অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে। এটি রংপুরে ইলেকট্রনিক ডিভাইস সার্ভিসিংয়ের জন্য বিশেষায়িত একটি অনলাইন প্ল্যাটফর্ম। কোম্পানিটি মূল সার্ভিসের বাইরেও পণ্য স্থানান্তরের কাজ করে থাকে। যার ফলে স্থানীয় সম্প্রদায়ের এর মাধ্যমে বহুমুখী সেবা পাচ্ছে।

২০২০ সালে কোভিড-১৯ মহামারীর চ্যালেঞ্জের মধ্যেই পপি তার স্বামী আবু সাইদ আল সাগরের সাথে প্রিমিয়াম ফ্রুটস নামের একটি প্রতিষ্ঠান চালু করেছিলেন। বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের তাজা ও উচ্চমানের আম সারা দেশের গ্রাহকদের কাছে পৌঁছে দেওয়াই এই উদ্যোগের লক্ষ্য ছিল।


পপি বলেন, "আমাদের ব্যবসায়িক কৌশল বেশ সহজ। আমরা দেশের নানা জেলার বাগান থেকে বিভিন্ন ফল ভোক্তাদের কাছে পৌঁছে দেই।"

আমের জন্য রংপুর, রাজশাহী, নওগাঁ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও সাতক্ষীরা বিখ্যাত। প্রিমিয়াম ফ্রুটস খাগড়াছড়ি থেকে পেঁপে, বান্দরবান থেকে বন্য কলা এবং রাঙ্গামাটি থেকে আপেল ও জাম্বুরা সরবরাহ করে থাকে।

পপি ব্যবসায় ক্ষেত্রে কৃষক ও বাগান মালিকদের সাথে সরাসরি কাজ করে। তিনি অগ্রিম ক্রয় চুক্তির মাধ্যমে এক বছর আগে বাগানের ইজারা নেন।

পপি ফসল ফলানোর প্রক্রিয়ার সাথে বেশ ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত। গুণমান বজায় রাখতে তিনি প্রতিটি পর্যায় নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন। ফলের নিরাপত্তা ও বিশুদ্ধতা নিশ্চিত করতে তিনি ফসল কাটার কমপক্ষে ১৫ দিন আগে গাছগুলোতে কোনও রাসায়নিক বা কীটনাশক ব্যবহার করেন না।

পপি বলেন, "কন্টেন্টের প্রতি আমার যে আগ্রহ আমার ব্যবসা সেক্ষেত্রে পরিপূরক হিসেবে কাজ করে। আমি কাজের জন্য একেক জায়গায় যাওয়ার সুবাদে ক্রমাগত নতুন ভিডিও তৈরি করি। এক্ষেত্রে নতুন বিষয় তুলে ধরতে এবং দর্শকদের সাথে সেটি শেয়ার করতে অনুপ্রাণিত হই।"

� পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ �







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ
সম্পাদক : নাজমুল হক শ্যামল
দৈনিক নতুন সময়, গ্রীন ট্রেড পয়েন্ট, ৭ বীর উত্তম এ কে খন্দকার রোড, মহাখালী বা/এ, ঢাকা ১২১২।
ফোন: ৫৮৩১২৮৮৮, ০১৯৯৪ ৬৬৬০৮৯, ইমেইল: [email protected]
সম্পাদক মন্ডলীর সভাপতি: এমদাদ আহমেদ | প্রকাশক : প্রবাসী মাল্টিমিডিয়া কমিউনিকেশন লি.-এর পক্ষে কাজী তোফায়েল আহম্মদ | কপিরাইট © দৈনিক নতুন সময় সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত | Developed By: i2soft
DMCA.com Protection Status