যেখানে নবীজির সঙ্গে জিনদের সাক্ষাত হয়েছিলো
নতুন সময় ডেস্ক
|
আল্লাহ তাআলা জিন ও মানুষকে সৃষ্টি করেছেন তাঁর ইবাদত করার জন্য। প্রথমে জিন সৃষ্টি করেছিলেন তারপর মানুষ। জিনকে সৃষ্টি করার পর যখন তাদের অধিকাংশই আল্লাহ তাআলার নাফরমানি করে তখন তাদের অধিকাংশকে ধ্বংস করে আল্লাহ তাআলা মানুষকে সৃষ্টি করেন। জিনদের মধ্যে যারা জীবিত ছিলো তাদেরই বংশধর এখনো পৃথিবীতে রয়ে গেছে। রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাথে এসব জিনদের একদল সাক্ষাত করে এবং ইসলাম গ্রহণ করে। যেখানে সাক্ষাত হয় সেখানে বর্তমানে একটি মসজিদ নির্মাণ করা হয়েছে। মক্কার মসজিদে হারাম থেকে এক কিলোমিটার উত্তর দিকে মসজিদে জিনের অবস্থান। এখানে নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সঙ্গে জিনদের একটি দলের সাক্ষাৎ হয়েছিল এবং তারা নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি ইমান এনেছিল। মক্কার প্রাচীনতম কবরস্থান জান্নাতুল মুআল্লার ঠিক পাশেই এর অবস্থান। এটিকে মসজিদুল হারাসও বলা হয়। কেননা ‘হারাস’ অর্থ পাহারা দেওয়া। আর এই স্থান থেকে বহিরাগতদের গমনাগমন পাহারা দিত মক্কার অধিবাসীরা। মসজিদে জিন মক্কার প্রাচীন মসজিদগুলোর একটি এবং প্রতি বছর বিপুলসংখ্যক মুসল্লি হজরত রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের স্মৃতিবিজড়িত এই মসজিদ পরিদর্শনে আসে। প্রকৃতপক্ষে ১৭০০ খ্রিস্টাব্দে এখানে একটি আন্ডারগ্রাউন্ড মসজিদ নির্মাণ করা হয়। কিন্তু বর্তমান সৌদি রাজপরিবার এই মসজিদের আধুনিকায়ন করেছে এবং তাতে মিনার যুক্ত করেছে। এখন মসজিদটিতে আধুনিক সব সুযোগ-সুবিধা রয়েছে। ঐতিহাসিকরা লেখেন তায়েফ থেকে ফেরার সময় নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নাখলা নামক স্থানে কয়েক দিন অবস্থান করেন। সেখানে আল্লাহতায়ালা জিনদের দুটি দলকে তার কাছে পাঠান। সুরা কাহাফের ২৯-৩১ আয়াতে এবং সুরা জিনের প্রথম ১৫ আয়াতে তাদের কথা বলা হয়েছে। মানুষের ইসলামবিমুখতার বিপরীতে জিনদের ইসলাম গ্রহণের মাধ্যমে আল্লাহ তার প্রিয় নবীকে সান্ত্বনা প্রদান করেন। জিনদের ইসলাম গ্রহণ রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নবুয়ত লাভের আগে জিনরা আসমানের কাছাকাছি যাওয়ার সুযোগ পেত। সেখানকার খবরাখবর গণকদের কাছে সরবরাহ করত। কিন্তু কোরআন হিফাজতের উদ্দেশ্যে সেই সুযোগ বন্ধ করে দেওয়া হয়। তখন শয়তানরা চিন্তিত হয়ে কারণ অনুসন্ধানে বেরিয়ে পড়ে। ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একদল সাহাবি নিয়ে উকাজ বাজারের উদ্দেশে রওনা হলেন। এ সময় জিনদের আসমানি খবর শোনার ব্যাপারে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে দেওয়া হয়েছে এবং ছুড়ে মারা হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে লেলিহান অগ্নিশিখা। ফলে জিন শয়তানরা ফিরে এলে অন্য জিনরা তাদের বলল, তোমাদের কী হয়েছে? তারা বলল, আসমানি খবর শোনার ব্যাপারে আমাদের ওপর বাধা সৃষ্টি করা হয়েছে এবং ছুড়ে মারা হয়েছে আমাদের প্রতি লেলিহান অগ্নিশিখা। তখন শয়তান বলল, আসমানের খবর শোনার ব্যাপারে তোমাদের ওপর যে বাধা সৃষ্টি করা হয়েছে অবশ্যই তা নতুন ঘটনা ঘটার কারণেই হয়েছে। সুতরাং তোমরা পৃথিবীর পূর্ব ও পশ্চিম দিগন্ত পর্যন্ত সফর করো এবং দেখো ব্যাপারটা কী ঘটেছে?’ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, ‘যারা হিতামার উদ্দেশে বেরিয়েছিল তারা নাখলা নামক স্থানে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে এসে উপস্থিত হলো। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এখান থেকে উকাজ বাজারের দিকে যাওয়ার জন্য মনস্থ করছিলেন। এ সময় রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাহাবিদের নিয়ে ফজরের নামাজ আদায় করছিলেন। জিনদের ওই দল কোরআন শুনতে পেয়ে আরো বেশি মনোযোগ সহকারে তা শুনতে লাগল এবং বলতে লাগল, আসমানি খবরাখবর এবং তোমাদের মধ্যে এটাই মূলত বাধা সৃষ্টি করেছে। এরপর তারা তাদের কওমের কাছে ফিরে এসে বলল, হে আমাদের জাতি! আমরা এক বিস্ময়কর কোরআন শ্রবণ করেছি, যা সঠিক পথনির্দেশ করে। এতে আমরা বিশ্বাস স্থাপন করেছি। আমরা কখনো আমাদের প্রতিপালকের কোনো শরিক স্থির করব না। এরপর আল্লাহ তাঁর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি নাজিল করলেন, ‘বলুন! আপনার প্রতি ওহি প্রেরিত হয়েছে যে জিনদের একটি দল মনোযোগসহকারে শ্রবণ করেছে।’ জিনদের উপরোক্ত কথা রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে ওহির মারফত জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল।’ (বুখারি: ৪৫৬০; মুসলিম: ৮৯০)
|
� পূর্ববর্তী সংবাদ | পরবর্তী সংবাদ � |