কনডেম সেল নিয়ে হাইকোর্টের রায় স্থগিত
নতুন সময় প্রতিবেদক
|
বিচারিক ও প্রশাসনিক প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার আগে মৃত্যুদণ্ডাদেশের আসামিকে কনডেম সেল বা নির্জন কারাকক্ষে রাখা যাবে না বলে হাইকোর্টের সিদ্ধান্ত ২৫ আগস্ট পর্যন্ত স্থগিত করা হয়েছে। এই সময়ের মধ্যে রাষ্ট্রপক্ষকে রায়ের বিরুদ্ধে লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) করতে বলেছেন আদালত। ওইদিন লিভ টু আপিলটি আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে শুনানির জন্য রাখা হয়েছে। রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনে আপিল বিভাগের বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমের চেম্বার আদালদ এ আদেশ দেন। আদালতে আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জোনারেল এ এম আমিন উদ্দিন। রিটকারী পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির। সব ধরনের বিচারিক ও প্রশাসনিক প্রক্রিয়া শেষ না হলে মৃত্যুদণ্ডাদেশের আসামিকে কনডেম সেল বা নির্জন কারাকক্ষে রাখা যাবে না বলে গত ১৩ মে রায় দেন হাইকোর্ট। এ সংক্রান্ত রুল নিষ্পত্তি করে বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি মো. বজলুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ পর্যবেক্ষণসহ এ রায় দেন। কনডেম সেলের বন্দিদের দুই বছরের মধ্যে সাধারণ সেলে স্থানান্তর করতে জেল কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেওয়া হয় রায়ে। আদালত রায়ের পর্যবেক্ষণে বলেন মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত বন্দিদের সঙ্গে অন্য বন্দিদের মতোই আচরণ করা উচিত। ব্যতিক্রম পরিস্থিতি যেমন ছোঁয়াচে রোগ বা সমকামিতা থাকলে বিশেষ বিবেচনায় যে কোনো বন্দিকে বিচ্ছিন্ন কক্ষে রাখা যেতে পারে। সেক্ষেত্রে দণ্ডিত ব্যক্তির উপস্থিতিতে শুনানি হতে হবে। এ ছাড়া মৃত্যুদণ্ডাদেশ পাওয়া বন্দিদের অন্যান্য বন্দিদের মত জামিন আবেদনের অনুমতি দেওয়া উচিত। উপযুক্ত ক্ষেত্রে হাইকোর্টের উচিত ফৌজদারি কার্যবিধির ৪২৬ ধারা অনুসারে আবেদনকারীকে জামিন দেওয়া। এ রায় স্থগিত চেয়ে গত মঙ্গলবার আপিল বিভাগের চেম্বার আদালতে আবেদন করে রাষ্ট্রপক্ষ যা আজ চেম্বার আদালতে শুনানির জন্য ওঠে। মৃত্যুদণ্ডাদেশ চূড়ান্ত হওয়ার আগে দণ্ডিত বা দণ্ডিতদের কনডেম সেলে রাখার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ২০২১ সালের ২ সেপ্টেম্বর হাইকোর্টে রিট করেন চট্টগ্রাম সিলেট ও কুমিল্লা কারাগারের কনডেম সেলের তিন কয়েদি। তারা হলেন সাতকানিয়ার জিল্লুর রহমান সুনামগঞ্জের আব্দুল বশির ও খাগড়াছড়ির শাহ আলম। বিচারিক আদালতের মৃত্যুদণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে তাদের আপিল ও ডেথ রেফারেন্স (মৃত্যুদণ্ডাদেশ অনুমোদনের আবেদন) হাইকোর্টে বিচারাধীন। ফৌজদারি কার্যবিধির ৩৭৪ ধারা অনুসারে বিচারিক আদালতে আসামির মৃত্যুদণ্ড হলে সে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করতে হাইকোর্ট বিভাগের অনুমোদন লাগে। তাছাড়া মৃত্যুদণ্ডের আসামিরা প্রথমে হাইকোর্টে পরে আপিল বিভাগে আপিল বা জেল আপিল করতে পারেন। হাইকোর্টের পর সর্বোচ্চ আদালত মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখলে দন্ডিত ব্যক্তি সর্বোচ্চ আদালতের রায় পুনর্বিবেচনা (রিভিউ) চেয়েও আবেদন করতে পারেন। সেটি খারিজ হলে আর কোনো বিচারকি প্রক্রিয়া থাকে না। সংবিধানের ৪৯ অনুচ্ছেদ ও কারাবিধির ৯৯১ বিধি অনুসারে দণ্ডিত ব্যক্তি রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা চেয়ে প্রাণভিক্ষার আবেদন করতে পারবেন। রাষ্ট্রপতি তা নাকচ করলে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার আইনগত বৈধতা পায়। মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের প্রক্রিয়া শুরু করে কারা কর্তৃপক্ষ। তবে কারাবিধি ৯৯১ বিধির ৬ উপবিধি অনুসারে পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদন খারিজ আদেশের অনুলিপি পাওয়ার ২১তম দিন থেকে ২৮তম দিন অর্থাৎ সাত দিনের মধ্যে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করতে হবে। কিন্তু বিচারিক আদালত কোনো আসামির মৃত্যুদণ্ডাদেশ ঘোষণার পরই দণ্ডিত ব্যক্তি বা ব্যক্তিদের কনডেম সেলে বন্দি রাখা হচ্ছে। |
� পূর্ববর্তী সংবাদ | পরবর্তী সংবাদ � |