রান্নাঘরে দাঁড়িয়ে আছেন, হঠাৎ বলা নেই কওয়া নেই মাথা ঘুরে উঠল। অথবা ঘরের এক জায়গায় বসে কাজ করছেন, তখনও হঠাৎ মাথা ঘোরা শুরু হল। মাথা ঘোরা সুখকর বিষয় নয়। মাথা যখন ঘোরে, তখন মনে হয় যেন দুনিয়াটা টলছে। একে বলা হয় ভার্টিগো। ভার্টিগোতে আক্রান্ত ব্যক্তির চারপাশ ঘুরছে এমন অনুভূতি কাজ করে। ভার্টিগো হলে যে কোনো মানুষ ভয়ে আতঙ্কবোধ করেন।
উপসর্গ মাথা ঘোরা, মাথা ঝিম ঝিম লাগা, বমি বমি ভাব বা বমি হবে মনে হয়। ভার্টিগোর সমস্যার মূলে দেহের কিছু অংশ জড়িত থাকে। ভার্টিগো বেশির ভাগ ক্ষেত্রে অভ্যন্তরীণ কানের সমস্যার কারণে ঘটে, যা মানুষের অঙ্গবিন্যাস এবং ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য দায়ী অঙ্গগুলোর মধ্যে একটি। আমাদের অন্তকর্ণের ভেতরে আছে ভারসাম্য ব্যবস্থার একটি অংশ। এই অংশের সমস্যা হলে মানুষের ব্যালেন্স রাখতে সমস্যা হয়। এ সময় মনে হয় মাথা ঝিম ঝিম করছে বা আশপাশের সবকিছু ঘুরছে। আবার অনেক সময় কানের ভেতরে অংশে সংক্রমণ হতে পারে। ডাক্তারি ভাষায় ভেস্টিবুলার নিউরাইটিসের কারণেও হতে পারে ভার্টিগো। এমন হলে বেশ কদিন ধরে বমি বমি ভাব এবং মাথা ঘোরার সমস্যা চলতে থাকে।
আর একটি হলো মেনিয়ার ডিজিজ। এতে ঘন ঘন মাথা ঘোরার অনুভূতি হতে পারে। এই অসুখে কর্ণ নালির ভেতরে জমে তরল। অবহেলা করলে নষ্ট হতে পারে শ্রবণশক্তি। আবার মগজের কোনও অসুখের সংকেত হতে পারে ভার্টিগো। এ ছাড়া মাইগ্রেনের সমস্যার কারণেও মাথা ঘুরতে পারে।
ভার্টিগো হলেই মহাবিপদ, তা কিন্তু নয়। এই রোগ এমনিতেই চলে যেতে পারে। তবে কিছু উপসর্গ বাড়তি হলে সতর্কতার প্রয়োজন। প্রয়োজনে নিতে হবে চিকিৎসকের পরামর্শ। মাথাব্যথা, মাথা ঘোরা, মাথার ঝিমঝিমানি কমছে না, কানে কিচ্ছু শুনতে পারছেন না, মুখ বেঁকে যাওয়া—এমন উপসর্গ দেখা দিলে অবশ্যই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
আরেকটা কথা বলি, যাদের ডায়াবেটিস, স্ট্রোক, উচ্চ রক্তচাপ ইত্যাদির ইতিহাস আছে, তাদের জন্য প্রয়োজন বাড়তি সতর্কতা।
ভার্টিগো হলে কী করবেন? ১. মাথা ঝিম ঝিম করলে বা ব্যালেন্স রাখতে পারছেন না মনে হলে বসে পড়ুন। তবে দ্রুত না, আস্তে আস্তে বসুন। ২. বসে স্বস্তি না পেলে অন্ধকার ঘরে শুয়ে পড়ুন। এতে মাথা ঝিম ঝিম আর ঘোরা কমে আসবে। ৩. কোন কিছু নিচ থেকে তুলতে হলে নুয়ে তুলবেন না, মাথা সোজা রেখে হাঁটু ভেঙ্গে বসে তুলুন। ৪. ব্যায়ামের সময় গলা বা গ্রীবা টান টান করবেন না। ৫. উচুঁ শেলফ থেকে কিছু নিতে গেলে অন্য কারও সাহায্য নিন। ৬. দ্রুত বা জোরে মাথা ঘোরাবেন না। ৭. বসে আছেন বা শুয়ে আছেন, এই অবস্থায় মাথা ঘোরালে সঙ্গে সঙ্গে দ্রুত উঠে দাঁড়াবেন না। ৮. রাতে ১–২টি বালিশের উপর মাথা রাখুন, যাতে মাথা সোজা থাকে। ৯. সকালে ঘুম থেকে ওঠার ক্ষেত্রে সময় নিন। বিছানার কিনারে বসুন, এরপর আস্তে আস্তে দাঁড়ান। ১০. দুশ্চিন্তা থেকে হতে পারে মাথা ঘোরা, তাই মন শিথিল করার ব্যায়াম করুন।