‘আবহাওয়ার জরুরি অবস্থা’ জারি করা প্রয়োজন
সাক্ষাৎকার: ড. মোহন কুমার দাশ
|
![]() ‘আবহাওয়ার জরুরি অবস্থা’ জারি করা প্রয়োজন মোহন কুমার দাশ: এ বছর এপ্রিলের প্রথম দিন থেকেই তাপপ্রবাহ চলছে। টানা এক মাস তাপপ্রবাহ একটি বিপজ্জনক রেকর্ড! সিলেট বিভাগ ছাড়া প্রায় গোটা দেশেই এমন তাপপ্রবাহ ১৯৪৮ সাল থেকে সংরক্ষিত ডেটাবেজে আগে কখনও দেখা যায়নি। তাপপ্রবাহজনিত মৃত্যুও এ মাসে রেকর্ড ছাড়িয়েছে! পুরো এপ্রিল মাসে উত্তর-পশ্চিম থেকে সৃষ্ট কালবৈশাখী কম হওয়াতেও ব্যতিক্রম রেকর্ড হয়েছে। মোহন কুমার দাশ: এ তীব্র গরম বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপ, থাইল্যান্ডসহ দক্ষিণ, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াজুড়ে। একটি অতি উচ্চ তাপবলয় অঞ্চল সৃষ্টি হয়েছে এখানে। যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ওশেনিক অ্যান্ড অ্যাটমোস্ফেরিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (নোয়া) মহাসাগরে বিদ্যমান সামুদ্রিক তাপপ্রবাহ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। এদিকে ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল সেন্টার ফর ওশান ইনফরমেশন সার্ভিসেসের (ইনকোয়েস) নিয়মিত বুলেটিনে উল্লেখ করা হয়েছে, বঙ্গোপসাগরে মাঝারি মাত্রার তাপপ্রবাহ বিরাজমান, যা জলজ বাস্তুসংস্থানের জন্য হুমকিস্বরূপ। সমকাল: আইপিসিসি বলছে, এই শতাব্দীর শেষ নাগাদ বৈশ্বিক তাপমাত্রা শিল্পবিপ্লবের আগের চেয়ে দেড় ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি বাড়তে দেওয়া যাবে না। বর্তমান তাপপ্রবাহ কী বলছে? মোহন কুমার দাশ: আমরা দেখছি, এবারের তাপপ্রবাহ স্বাভাবিকের চেয়ে ৩-৪ ডিগ্রি বেশি! এ তাপপ্রবাহের আরেকটি রেকর্ড ব্রেকিং দিক হলো, এটি দীর্ঘ সময় ধরে চলমান। মোহন কুমার দাশ: গরমের মানবসৃষ্ট কারণগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য– অপরিকল্পিত নগরায়ণ, শিল্প ও পরিবহন থেকে গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন, সবুজ গাছপালার ধ্বংস সাধন, ঘনবসতি, বায়ুদূষণ, জলাশয় ভরাট, নদী খালের দখল-দূষণ, ঘনবসতি ইত্যাদি। অপ্রয়োজনীয়, অপরিকল্পিত অতি নগরায়ণের ফলে কংক্রিটের কাঠামো নগরাঞ্চলকে একটি তাপীয় দ্বীপে পরিণত করছে। করপোরেট কাচের বিল্ডিং, গায়ে গায়ে লাগানো ভবন, টিনের ঘর, যানবাহন এবং শিল্পকারখানার অতি ঘনত্ব তাপমাত্রাকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে। যেমন খোলামেলা আগারগাঁওয়ে তাপমাত্রা যখন ৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস, তখন ঢাকার অন্যান্য ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর সবুজ ও জলাশয়বেষ্টিত জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। প্রাকৃতিক কারণের মধ্যে বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থান, গ্রীষ্মমণ্ডলীয় জলবায়ু, উচ্চ সৌর বিকিরণ এবং সমতল টপোগ্রাফি ভূপৃষ্ঠের উত্তাপকে তীব্র করে। মৌসুমি বৃষ্টিপাতের ধরন, তীব্রতা এবং সময়ের তারতম্যও চরম তাপমাত্রাকে প্রভাবিত করে। মোহন কুমার দাশ: তাপমাত্রা বৃদ্ধির সব দায় জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে– এমনটি আদৌ যৌক্তিক হতে পারে না। জলবায়ু পরিবর্তন দীর্ঘমেয়াদি তাপমাত্রার প্রবণতাকে উল্লেখযোগ্যভাবে প্রভাবিত করে। তাপমাত্রার তারতম্য বোঝার জন্য একাধিক কারণের যৌক্তিক অনুসন্ধান ও বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণ প্রয়োজন। সে জন্য সঠিকভাবে আবহাওয়া পর্যবেক্ষণের তথ্য-উপাত্ত সংরক্ষণ জরুরি। আমাদের অতি অবশ্যই তাপমাত্রাকে অসহনীয় করে, এমন পরিবেশ বিপর্যয়কর, নেতিবাচক, অবিবেচক কর্মকাণ্ড পরিহার করতে হবে। মোহন কুমার দাশ: নদী-জলাশয়ের দখল-দূষণের পাশাপাশি জলাভূমি শুকিয়ে যাওয়া তাপমাত্রা বৃদ্ধি এবং তাপপ্রবাহ পরিস্থিতি সৃষ্টিতে উল্লেখযোগ্যভাবে ভূমিকা রাখে। পানির প্রবাহ হ্রাস প্রাকৃতিক শীতল প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করে, স্থানীয়ভাবে তাপমাত্রা বাড়িয়ে দেয়। নদী ও জলাশয়গুলোর দূষণ তাপ শোষণ প্রক্রিয়াকে পরিবর্তন করে, যার ফলে উচ্চ তাপমাত্রা তৈরি হয় এবং পরবর্তীকালে আশপাশের বায়ুমণ্ডলে তাপ নির্গত হয়। এ ছাড়া জলজ বাস্তুসংস্থান ধ্বংসের ফলে তাদের মাইক্রোক্লাইমেট নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা হ্রাস পায়। আর ক্রমবর্ধমান তাপমাত্রা পানির ঘাটতি বাড়িয়ে তোলে; নদী ও জলাভূমির শুষ্কতাকে বাড়িয়ে তাপপ্রবাহের ঝুঁকিগুলোকে আরও জটিল করে তোলে। মোহন কুমার দাশ: তাপপ্রবাহ ও লু হাওয়া বইছে সর্বত্র। জলবায়ু পরিবর্তনজনিত অভিঘাতের সতর্কতার সত্য প্রতিফলিত হচ্ছে। বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার বার্ষিক স্টেট অব দ্য গ্লোবাল ক্লাইমেটসহ বেশ কয়েকটি সাম্প্রতিক প্রতিবেদন, বিশ্বব্যাপী প্রত্যক্ষ করা তীব্র তাপপ্রবাহের ব্যাপ্তি বাড়বে বলে সতর্ক করেছে। বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থা নিশ্চিত করেছে যে, ২০২৩ সাল ছিল স্মরণকালের উষ্ণতম বছর। ২০২৪ সাল আরও ভয়াবহ হবে! মোহন কুমার দাশ: তাপপ্রবাহ একটি নীরব ঘাতক। সবচেয়ে ঝুঁকিতে থাকেন অন্তঃসত্ত্বা, শিশু, প্রবীণ ও অসুস্থ ব্যক্তি। তাপপ্রবাহের কারণে সম্প্রতি যারা মৃত্যুবরণ করেছেন, তাদের উল্লেখযোগ্য অংশের বয়স ২৫ থেকে ৫৫। সাধারণত এ বয়সের মানুষ পরিবারের অর্থ উপার্জনকারী হয়ে থাকে। তাপপ্রবাহে কিছু পেশার মানুষ উচ্চ ঝুঁকিতে থাকে যেমন– ট্রাফিক পুলিশ, শ্রমিক, রিকশাচালক, কৃষক, মার্কেটিং-সংশ্লিষ্টরা। তাপপ্রবাহ মানুষ ও প্রাণীর শরীরে পানিশূন্যতা ও ইলেকট্রোলাইটে ভারসাম্যহীনতা তৈরি করে। যদি খুব দ্রুত শরীরে তাপমাত্রা বেড়ে গিয়ে বমি ও শ্বাসকষ্ট হয়, খিঁচুনি অবস্থা ও অজ্ঞান হয়ে যায়, হৃৎস্পন্দন বাড়তে থাকে; এগুলো হিট স্ট্রোকের লক্ষণ, যা খুব মারাত্মক! এ ধরনের রোগীকে দ্রুত শীতাতপনিয়ন্ত্রিত বা ঠান্ডা ঘরে ঠান্ডা পানি দিয়ে শরীর মুছে দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। দ্রুত চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে। মোহন কুমার দাশ: তাপপ্রবাহের এই সময়ে পর্যাপ্ত বিশুদ্ধ পানিপান, বিশ্রাম নেওয়া, জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে বের না হওয়া, হালকা রঙের ঢিলেঢালা পোশাক পরিধান করা উচিত। বেলা ১১টা থেকে বেলা ৩টা পর্যন্ত সূর্যের আলো পরিহার করা উচিত। মোহন কুমার দাশ: তাপপ্রবাহের সময় ‘আবহাওয়ার জরুরি অবস্থা’ জারি করা প্রয়োজন। এ জন্য প্রয়োজনীয় পরিকল্পনা ও যথাযথ বরাদ্দের সঠিক ব্যবস্থাপনায় অগ্রাধিকার থাকতে হবে। তাপপ্রবাহের ‘হট স্পট’ নির্ধারণ করে বিশুদ্ধ জল, ত্রাণ, আশ্রয়কেন্দ্র প্রভৃতির ব্যবস্থা রাখতে হবে। মোহন কুমার দাশ: আবহাওয়া অধিদপ্তর তীব্র তাপপ্রবাহ থেকে জনগণকে সুরক্ষিত থাকার জন্য ‘হিট অ্যালার্ট’ জারি করে থাকে। ঝুঁকিপূর্ণ হটস্পট নির্ধারণসহ ইমপ্যাক্ট বেজ্ড ‘তাপপ্রবাহ আগাম সতর্ক সংকেত ব্যবস্থা’ বা ‘হিট ওয়েভ আরলি ওয়ার্নিং সিস্টেম’ উন্নত করা প্রয়োজন। জনগণের করণীয় কী এবং কীভাবে সুরক্ষিত থাকবেন সে বিষয়ে দুর্যোগ, স্বাস্থ্যসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও প্রশাসন কাজ করে। কিন্তু প্রান্তিক মানুষ কতটুকু উপকৃত হয় বা সচেতনতা মেনে চলে কিনা, সেটাও প্রশাসনের নজরদারিতে আনা প্রয়োজন। মোহন কুমার দাশ: তাপপ্রবাহের তীব্রতা অর্থনীতি, জনশক্তি, জনস্বাস্থ্য এবং পাওয়ার গ্রিডের ওপর ঝুঁকি তৈরি করে। ক্রমবর্ধমান তাপমাত্রার প্রভাব মোকাবিলায় কার্যকর হিট অ্যাকশন প্ল্যান বা তাপ কর্মপরিকল্পনা থাকা জরুরি। প্রতিবেশী ভারতে এই কর্মপরিকল্পনা প্রণীত ও কার্যকর রয়েছে। এটা তাপপ্রবাহের ক্ষতিকর প্রভাব অনুধাবনে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। তা ছাড়া চরম আবহাওয়ার প্রভাব মূল্যায়নে হিট ইনডেক্স বা ক্লাইমেট ভালনারেবিলিটি ইনডেক্স ধরনের সূচক থাকতে পারে। মনে রাখতে হবে, পৃথিবীর অনেক দেশেই সাইক্লোন, বন্যা, শৈত্যপ্রবাহ, বজ্রপাত প্রভৃতি প্রাকৃতিক দুর্যোগের মতো তাপপ্রবাহকেও দুর্যোগ বিবেচনা করা হয়। মোহন কুমার দাশ: সমস্যা অনেক গভীরে। এখানে বাংলাদেশের আবহাওয়া অধিদপ্তর সম্পূর্ণ অসহায়। তারা তাদের সর্বোচ্চ দিয়ে চেষ্টা করে যাচ্ছে। আবহাওয়ার পূর্বাভাস শতভাগ সঠিক করার জন্য সুদক্ষ জনবল, বিশেষজ্ঞ বিজ্ঞানী, প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি, অবকাঠামো, স্বনির্ভরতা, গবেষণা সহযোগিতা প্রভৃতির সমন্বয় প্রয়োজন। এ অধিদপ্তরের কর্মচারী-কর্মকর্তারা এক দশকের বেশি সময় ধরে নিয়োগ ও পদোন্নতিবঞ্চিত। এমন অনেকে আছেন; ২৫-৩০ বছর ধরে একই পদে কর্মরত। সময়ের সাথে সাথে কাজের পরিধি বেড়েছে! এদিকে শূন্য পদগুলো পূরণ না হওয়ায় সীমিত জনবল নিয়ে রুটিন কাজ করতে হচ্ছে। আবহাওয়া অধিদপ্তর জরুরি সেবামূলক অধিদপ্তর, যা ২৪ ঘণ্টা সচল থাকে। একটি অপারেশনাল অধিদপ্তর রুটিন কাজের সঙ্গে প্রফেশনাল গবেষণা কাজ করতে পারে না! এ জন্য আলাদা গবেষণা কেন্দ্র থাকা প্রয়োজন। মোহন কুমার দাশ: আবহাওয়ার অপারেশনাল ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান আলাদা হওয়া উচিত। যেমন ভারতীয় আবহাওয়া অধিদপ্তরকে গবেষণা সহযোগিতা প্রদান করে থাকে ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল মিটিওরোলজি (আইআইটিএম), ন্যাশনাল সেন্টার ফর মিডিয়াম রেঞ্জ ওয়েদার ফোরকাস্টিং (এনসিএমআরডব্লিউএফ), ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা (ইসরো), প্রতিটি আইআইটিসহ অনেক বিশ্ববিদ্যালয়। কিন্তু দুর্ভাগ্য, বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের একজন সাবেক পরিচালকের অদক্ষতা, প্রতিরক্ষা ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের যথাযথ মনোযোগের অভাবের কারণে আন্তর্জাতিক মানের ‘সেন্টার অব এক্সলেন্স’ সার্ক আবহাওয়া গবেষণা কেন্দ্র (এসএমআরসি) ২০১৫ সালে বন্ধ হয়ে যায়। পরে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের আরেকজন পরিচালকের বন্ধ কেন্দ্রটির অবকাঠামো উন্নয়নের নামে কোটি কোটি টাকা লুটপাটের ঘটনা প্রকাশ হয়। সার্ক আবহাওয়া গবেষণা কেন্দ্র (এসএমআরসি) সচল করা ও সে সময়ের গবেষক বিজ্ঞানীদের যথাযথ সম্মানের সাথে পুনর্বহাল করা প্রয়োজন। মোহন কুমার দাশ: অনেক প্রত্যাশা নিয়ে বাংলাদেশে প্রথম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘আবহাওয়া বিজ্ঞান’ বিভাগ চালু হয়। সেখান থেকে এ পর্যন্ত পাঁচটি মাস্টার্স ব্যাচ পাস করে বের হয়েছে। অথচ তাদের কারও এ অধিদপ্তর থেকে একটি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিও দেখার সুযোগ হয় না। অনেকের হয়তো চাকরির বয়সসীমা শেষ হয়ে গেছে। মোহন কুমার দাশ: বাংলাদেশ মহাকাশ গবেষণা ও দূর অনুধাবন প্রতিষ্ঠান (স্পারসো) দুই দশক ধরে বিসিএস (প্রশাসন) দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে! স্পারসো সুপারিশ করা সত্ত্বেও ‘মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা’ পদে মন্ত্রণালয় নিয়োগ দেয় না। একমাত্র প্রধানমন্ত্রীর সুদৃষ্টি এ দুটি প্রতিষ্ঠানকে বাঁচাতে ও যুগোপযোগী করতে পারে। মোহন কুমার দাশ: ভারতে ‘আর্থ সায়েন্স মিনিস্ট্রি’ রয়েছে। বাংলাদেশেও আবহাওয়া অধিদপ্তর, স্পারসো, ভূতত্ত্ব, সমুদ্রবিজ্ঞান প্রতিষ্ঠানগুলো নিয়ে নতুন মন্ত্রণালয় তৈরি করা যেতে পারে। এ মন্ত্রণালয় শুধু বিজ্ঞানীদের মাধ্যমে পরিচালিত হতে হবে। দেশের বিজ্ঞানের অগ্রযাত্রা আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন করতে হলে বিজ্ঞান প্রতিষ্ঠান বিজ্ঞানীদের দিয়েই পরিচালিত হতে হবে। মোহন কুমার দাশ: তাপপ্রবাহ অবশ্যই একটি দুর্যোগ। তাপপ্রবাহকে দুর্যোগ ঘোষণা সময়ের দাবি। এটি জনস্বাস্থ্য, জন-উৎপাদনশীলতা, জনমৃত্যুসহ দেশের সার্বিক অর্থনীতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। এ প্রচণ্ড তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকলে কৃষি ও পোলট্রি সেক্টরে ক্ষতির পরিমাণ দুই হাজার কোটি টাকার বেশি হবে বলে বিভিন্ন অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে জানা গেছে। মোহন কুমার দাশ: স্বল্পমেয়াদি কার্যক্রম হলো– তাপপ্রবাহের ঘটনার সময় দ্রুত ত্রাণ এবং সহায়তা প্রদান, স্বাস্থ্যসেবা সহায়তা, জনসচেতনতা প্রচার, শীতল আশ্রয়ের ব্যবস্থা করা। অফিস সময় ও স্কুলের সময়সূচির সমন্বয় করা, যেমন সকাল ৬টা ৩০ মিনিট থেকে সকাল ১০টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত স্কুল কার্যক্রম। সকাল ৭টা থেকে ১১টা আর বিকাল ৩টা ৩০ মিনিট থেকে সন্ধ্যা ৭টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত অফিস কার্যক্রম। এতে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনাও ভালো থাকবে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে আমাদের দেশের আরও বেশি এলাকা তাপপ্রবাহপ্রবণ হয়ে উঠছে। এ জন্য সবুজ ঘাসযুক্ত স্থান, গাছপালা, দূষণ-দখলমুক্ত নদী, খাল, জলাশয়ের যথাযথ সংরক্ষণ শুধু কয়েক বছর নয়, কয়েক দশকব্যাপী অব্যাহত রাখা প্রয়োজন। দীর্ঘমেয়াদি বৈজ্ঞানিক ও সামাজিক গবেষণাও প্রয়োজন। এ জন্য পর্যাপ্ত বরাদ্দ রাখতে হবে। উষ্ণায়নের সার্বিক পরিস্থিতি ও বাংলাদেশের ঝুঁকিপ্রবণতা বিবেচনায় তাপপ্রবাহ নিয়ে অগ্রাধিকারমূলক কাজ করার এখনই সময়। মোহন কুমার দাশ: একটি সময়োপযোগী ও জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয় নির্ধারণের জন্য আপনাদেরও অশেষ ধন্যবাদ।
|
� পূর্ববর্তী সংবাদ | পরবর্তী সংবাদ � |