রাজধানীর গুলশান-২ নম্বরের ক্যাফে সেলেব্রিটা বারের সামনে মদ খেয়ে কয়েকজন নারী মিলে এক নারীকে মারধর ও শরীরের কাপড় খুলে নেওয়ার ঘটনায় তিন তরুণীকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। তারা হলেন- শারমিন আক্তার মিম (২৪), ফাহিমা ইসলাম তুরিন (২৬) ও নুসরাত আফরিন।
গত পহেলা বৈশাখের দিন রাতে ওই নারীকে মারধরের ঘটনা ঘটে।
মারধরের শিকার রিতা আক্তার সুস্মি বুধবার ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা কার্যালয়ে এসেছিলেন। তিনি এ সময় গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেন এবং এ ঘটনার বিচার দাবি করেন তিনি।
সেদিন রাতে কী ঘটেছিল জানতে চাইলে সাংবাদিকদের সুস্মি বলেন, আমি ও আমার এক বন্ধু মিলে খাবার খেতে ওই রেস্তোরাঁয় যাই। খাওয়ার এক পর্যায়ে টয়লেটে যাওয়ার জন্য গিয়ে দেখি চারজন মেয়ে এক সঙ্গে টয়েলেটে প্রবেশ করেছে। বিষয়টি রেস্তোরাঁর ম্যানেজারকে বললে কর্তৃপক্ষ মেয়েদের বের করে দেয়। পরবর্তীতে আমি রেস্তোরাঁ থেকে বের হওয়ার সময় তারা আমার ওপর হামলা করে।
তিনি আরও বলেন, আমাকে চড়-থাপ্পড় দিতে পারতো। কিন্তু রাস্তার মধ্যে আমার কাপড় খুলে ফেলে। আমাকে মারধর করে। একজন মেয়ে হয়ে কখনো আরেকজন মেয়ের কাপড় খুলে ফেলতে পারে না। তিনি তাদের যথাযথ বিচার দাবি করেন।
গুলশানের এ ঘটনায় এদিন সংবাদ সম্মেলন করে ডিবি জানিয়েছে, মারামারির ঘটনায় গ্রেফতার নারীদের মদপানের লাইসেন্স ছিল না। তারা অবৈধভাবে অতিরিক্ত মদ করে মাতাল হয়ে মারামারিতে জড়ান। সেলেব্রিটা বার নারীদের কাছে অবৈধভাবে মদ বিক্রি করায় তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
রাজধানীর মিন্টো রোডে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, আমরা সবাই এই নগরীতে বাস করি। আর নগরে বাস করতে গেলে কিছু নিয়মকানুন মেনে চলতে হয়। মদ খাওয়ার জন্য কোনো পুরুষ বা নারীর লাইসেন্স থাকলে, বৈধ লাইন্স ব্যবহার করে বার থেকে মদ পান করতে পারে। এতে আইনগত কোনো বাধা নেই। কিন্তু গত পহেলা বৈশাখের রাতে গুলশানের মতো একটি এলাকা; যেখানে অভিজাত পরিবারের বসবাস। সেখানে তারা মদ পান করেছেন। কারো কোনো লাইসেন্স ছিল না। লাইসেন্সবিহীন কারো কাছে বার কর্তৃপক্ষ মদ বিক্রি করতে পারে না। তাদের উচিৎ ছিল এসব নারীর মদের লাইসেন্স আছে কিনা পরীক্ষা করা। এমন কি এই নারীদের কাছে অতিরিক্ত পরিমাণে মদ বিক্রি করেছেন। যা পান করে মাতাল, বেসামাল হয়ে গেলেন। বারের লোকজনের উচিৎ ছিল বেসামাল নারীদের নিয়ন্ত্রণ করা। এই নারীরা বার থেকে বের হয়ে রাস্তায় গিয়ে প্রকাশ্যে মারামারিতে জড়ালেন। যা গুলশানের বাসিন্দারা দেখলেন। তারা ভিডিও করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছেড়ে দিলেন। যে বারগুলো লাইসেন্স ছাড়া মদ বিক্রি করেছে তাদের বিরুদ্ধেও আমরা ব্যবস্থা নেব।
ডিবিপ্রধান আরও বলেন, আমি মনে করি আমাদের দেশের সাধারণ মানুষ এ ভিডিও দেখে ভাববে শহরের রাস্তায় নারীরা মাতলামি করবে, মারামারি করবে এটা কোনো অভিভাবকই মেনে নিতে পারবেন না। এই সব নারী কারো না কারো সন্তান। তাদের অভিভাকদের উচিৎ মেয়েরা কোথায় যায়, কী করে, সেদিকে খেয়াল রাখা। আজকে এই নারীরা বারে গিয়ে মদপান করে এমন কার্মকাণ্ড ঘটিয়েছেন যা নেতিবাচক। যে মেয়েকে তারা মেরেছে সেই মেয়েটিও মাতাল ছিল। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী নারী একটি অভিযোগ করেছেন। অভিযোগের প্রেক্ষিতে তাদের গ্রেফতার করা হয়েছে।
এদিকে এ ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায়, গুলশানের একটি বারের সামনে কয়েকজন নারীর চুলাচুলি ও ধাকাধাক্কি করছে। গত ১৪ এপ্রিল রাতে ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে দেখা যায়, বেশ কয়েকজন সাদা পোশাক পরা নারী ও লাল শাড়ি পরা নারীর মধ্যে হাতাহাতি হচ্ছে। এ সময় চিৎকার-চেঁচামেচিও করছিলেন তারা। তিনজন মিলে একজনের শরীরের কাপড় খুলে নেন। তবে কয়েকজন পুরুষ তাদের থামানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন।