চৌগাছায় গম চাষে সুদিন ফিরেছে, আগ্রহ বাড়ছে কৃষকের
মাহমুদুর রহমান, চৌগাছা
|
গত দুই যুগ আগেও যশোরের চৌগাছা উপজেলাতে বীরের মত দাঁড়িয়ে বাতাসে দোল খেত সোনালী ফসল গমের শিষ। এখনকার গ্রামগুলোতে খাদ্যের চাহিদা পূরণের জন্য উপজেলা জুড়ে চাষ হতো গম। দু বেলা ভাত আর একবেলা গমের রুটি এ যেন মহল্লার প্রতিটি বাড়িতে থাকত। কিন্তু ধান চাষে উন্নত প্রযুক্তি ও আধুনিকতার ছোয়া এবং উচ্চ ফলনশীল জাত উদ্বোভবনের ফলে মানুষের খাদ্য চাহিদা পূরণসহ গমের বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হওয়ার কারণে উপজেলার কৃষকেরা গম চাষে এক প্রকার মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিল। তবে চলতি মৌসুমে এখনার কৃষকদের গম চাষে আশার আলো জোগাচ্ছে। উপজেলার মাঠগুলো দেখলে মনে হচ্ছে গম চাষের সুদিন ফিরেছে। ফলন ও দামে বেশ সন্তুষ্ট তারা। জানা যায়, গত বছরের চেয়ে এ বছর প্রায় দ্বিগুণ জমিতে গম চাষ করেছেন কৃষকেরা। উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের কৃষকরা অর্থকরী ফসল হিসেবে গম চাষ করে আসছিলেন। এর মাধ্যমে নিজেদের খাদ্যের চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি বিক্রি করে নগদ অর্থও পাওয়া যেত। কিন্তু ২০১৬ সালে ব্লাস্টের আক্রমণে কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে কৃষকদের গম চাষে নিরুৎসাহিত করা হয়। তবে হুইট ব্লাস্ট ভাইরাস একেবারে নির্মূল না হলেও চলতি মৌসুমে তার প্রভাব পড়েনি গম ক্ষেতে। ২০১৯-২০ মৌসুমে একেবারে শূন্য থেকে ৮০ হেক্টর জমিতে গম চাষ হয়েছিল। ২০২০-২১ মৌসুমে ১শ’ ৫০ হেক্টর জমিতে গম চাষ হয়। সে মৌসুমেও খুব ভালো অবস্থান তৈরি করতে পারেননি কৃষকরা। হুইট ব্লাস্টের দাপট কমলেও অধিকাংশ জমিতেই দেখা যায় এর প্রভাব। ২০২১-২২ মৌসুমে গম চাষে লাভের মুখ দেখেন কৃষকরা। ওই মৌসুমে ব্লাস্টের প্রভাব থাকলেও খুব একটা প্রভাব পড়েনি গম ক্ষেতে। কিছুটা লাভের মুখ দেখা দেয়ায় ২০২২-২৩ মৌসুমে উপজেলায় ২শ ১০ হেক্টর জমিতে গম চাষ হয়। এরই ধারাবাহিকতায় ২০২০-২১, ২০২১-২২, ২০২২-২৩ ও ২০২৩-২০২৪ মৌসুমেও লাভের মুখ দেখতে থাকেন উপজেলার গমচাষিরা। গত মৌসুমে কৃষি অফিসের সহযোগিতায় সেই জাতগুলোর গম চাষে কৃষকদের আগ্রহী করতে নানামুখী প্রচারণা চালানো হয়। ফলে চলতি মৌসুমে উপজেলার কৃষকরা ব্লাস্টমুক্ত গম ঘরে তুলছেন। গম চাষে আবারও সুদিন ফিরছে এ উপজেলার চাষিদের। গমের ব্লাস্ট রোগ ও গম চাষ সম্পর্কে চৌগাছা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মুসাব্বির হোসাইন বলেন, বাংলাদেশে সর্বপ্রথম ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের মাঝামাঝি সময়ে যশোর, কুষ্টিয়া, মেহেরপুর, ঝিনাইদহ, চুয়াডাঙ্গা, বরিশাল ও ভোলা জেলায় প্রায় ১৫ হাজার হেক্টর জমিতে ব্লাস্ট রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা যায়, যা মোট গম আবাদি জমির প্রায় ৩ শতাংশ। গমের জাত ও বপনের সময়ভেদে রোগের মাত্রা এবং ফলনের তারতম্য লক্ষ্য করা যায়। এ রোগের কারণে আক্রান্ত গমের ফলন শতকরা ২৫ থেকে ৩০ ভাগ কমে যায় এবং ক্ষেত্র বিশেষে কোনো কোনো ক্ষেতের ফসল প্রায় সম্পূর্ণ বিনষ্ট হয়ে যায়। যশোরের চৌগাছা এলাকাতেও ব্লাস্ট ভাইরাস দেখা দিলে কৃষকারা আতঙ্কিত হয়ে গম চাষ এক প্রকার ছেড়ে দেয়। ২০১৭-১৮ সালের দিকে উপজেলায় গমের আবাদ অনেকটাই শূন্যের কোঠায় চলে যায়। পরবর্তী সময়ে কৃষি অফিস থেকে চাষিদের গম চাষে উদ্ধুদ্ধ করতে থাকেন। বর্তমানে চৌগাছায় আশানুরূপ গম চাষ শুরু হয়েছে। এই ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। কৃষি অফিস এ উপজেলার কৃষকদের সবসময় সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, উপজেলার আবহাওয়া গমচাষের জন্য উপযোগী। আগামীতে গম চাষ আরও বাড়বে বলে আমরা আশাবাদী। উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্য কর্মকর্তা রাশেদুল ইসলাম জানান, ২০২৩-২০২৪ মৌসুমে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে ৩ শো ২০ হেক্টর জমিতে গম চাষ হয়, যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে প্রায় ১০০ হেক্টর বেশি। চলতি মৌসুমে অধিকাংশ কৃষকই কৃষি বিভাগের পরামর্শ অনুযায়ী ব্লাস্ট প্রতিরোধী জাত বারি-৩০, ৩২ ও ৩৩ গম চাষ করেন। ফলে এক দিকে যেমন বেড়েছে গমের চাষ, অন্য দিকে অধিক ফলন হওয়ায় লাভের মুখ দেখছেন চাষিরা। বলা চলে গমের সুদিন ফিরেছে এ উপজেলায়। ফলন ও দামে খুশি উপজেলার গম চাষিরা। উপজেলার রামকৃষ্ণপুর গ্রামের চাষি জাকির হোসেন বলেন, তিনি তিন বিঘা জমিতে গম চাষ করে ৫৫ মণ গম পেয়েছেন। রোগ বালাই কম থাকায় ফলন ভালো হয়েছে। বাজার দরও ভালো। একই গ্রামের গম চাষি নুরুজ্জামান, হোসেন আলী, উমেদ আলী বলেন, অন্য বছরের চেয়ে এ বছর ফলন খুব ভালো হয়েছে।উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মুসাব্বির হোসাইন বলেন, ২০১৭-১৮ সালের দিকে গমের আবাদ অনেকটাই শূন্যের কোটায় চলে যায়। সে পরিস্থিতি থেকে আমরা বেরিয়ে এসেছি। ব্লাস্ট একেবারে নেই বললেই চলে। উপজেলার আবহাওয়া গমচাষের জন্য উপযোগী। আগামীতে গম চাষ আরো বাড়বে বলে আশা করছি।
|
� পূর্ববর্তী সংবাদ | পরবর্তী সংবাদ � |