ই-পেপার সোমবার ১৪ নভেম্বর ২০২২
ই-পেপার |  সদস্য হোন |  পডকাস্ট |  গুগলী |  ডিসকাউন্ট শপ
সোমবার ২ ডিসেম্বর ২০২৪ ১৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
এক মন্ত্রীর আস্থাভাজন এই বড়মনি
#পরিবহন সেক্টর,মাদক ব্যবসা চাঁদাবাজি #সবই নিয়ন্ত্রণ করেন এই বড়মনি # এর আগেও ধর্ষণ মামলায় কারাগারে ছিলেন বড় মনি # কলেজ সভাপতির পদ থেকে অপসারণ
বিপ্লব বিশ্বাস
প্রকাশ: Tuesday, 2 April, 2024, 12:49 PM

এক মন্ত্রীর আস্থাভাজন এই বড়মনি

এক মন্ত্রীর আস্থাভাজন এই বড়মনি

ধর্ষণের কারণে এর আগেও সংবাদের শিরোনাম হয়েছিলেন বড়মনি। ২০২৩ সালে তার বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগে মামলা হয়। আদালতের নির্দেশে সেই নারী ও জন্ম দেয়া শিশুর ডিএনএ পরীক্ষা করা হয়। তখন ধর্ষণের অভিযোগে  গ্রেপ্তারও হয় বড় মনির। কিন্তু কারাগার থেকে বের হবার কদিন পরেই ধর্ষণ মামলার বাদীর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। ভুক্তভোগীর বোনের দাবি, এই ঘটনার সাথে সরাসরি জড়িত বড় মনির। বড় মনির জেলা বাস মিনিবাস মালিক সমিতির মহাসচিব এবং টাঙ্গাইল-২ (গোপালপুর-ভুঞাপুর) আসনের সংসদ সদস্য তানভীর হাসান ওরফে ছোট মনিরের বড় ভাই। 

টাঙ্গাইলে কলেজ ছাত্রীকে ধর্ষণের পর মৃত্যুর রেশ কাটতে না কাটতেই জেলা আওয়ামী লীগ নেতা বড় মনিরের বিরুদ্ধে আবারো ধর্ষণের অভিযোগে মামলা করেছেন আরেক কলেজ শিক্ষার্থী। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠছে, একে পর এক অপকর্মে জড়িয়ে পার পেয়ে যাওয়া সারাদেশে আলোচিত কে এই বড় মনির।  

গত ২৯ মার্চ শুক্রবার রাতে জরুরি সেবার ‘৯৯৯’ নম্বর থেকে কল পেয়ে পুলিশ রাজধানীর তুরাগ থানার এলাকার প্রিয়াংকা সিটি আবাসিক এলাকায় বড় মনিরের ফ্ল্যাট থেকে ওই কলেজ ছাত্রীকে উদ্ধার করা হয়। এরপর তুরাগ থানায় ধর্ষণের অভিযোগ দেন ভুক্তভোগী নারী, পরে মামলা হয়।

তুরাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মোস্তফা আনোয়ার মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, টাঙ্গাইলের গোলাম কিবরিয়া ওরফে বড় মনিরের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগে ভুক্তভোগী ছাত্রী মামলা করেছেন। পুলিশ বলছে, আসামী যতোই শক্তিশালী হোক না কেন, ছাড় দেয়া হবে না।

ভুক্তভোগী জানান, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বড় মনিরের সাথে তার পরিচয় হয়। বৃহস্পতিবার বড় মনির দেখা করতে বলে তাকে। সরল বিশ্বাসে বড় মনিরের সাথে দেখা করেন। পরদিন আবারো ভুক্তভোগীকে দেখা করতে বলেন বড় মনির। দেখা করার পর তাকে অস্ত্রের মুখে তুলে নিয়ে যায় উত্তরা ১২ সেক্টরের ৬ নম্বর রোডের ৭ নম্বর বাড়িতে। সেখানে আটকে রেখে ধর্ষণ করা হয়। ধর্ষণ মামলার আসামি হলেন মহিলা কলেজের সভাপতি। উদ্ধার হবার পর, বড় মনিরের নাম উল্লেখ করে ভুক্তভোগী থানায় অভিযোগ জানালে তা আমলে নেয় পুলিশ। জানায়, পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা নেয়া। উত্তরার সেই বাসা থেকে জব্দ করা হয় সিসিটিভির যন্ত্রাংশ। আটক করা হয় দারোয়ানকেও।

টাঙ্গাইলের ওই মামলার নথি থেকে জানা যায়, সম্পত্তি নিয়ে ভাইয়ের সঙ্গে বিরোধ হলে মামলার বাদী কিশোরী বিষয়টি গোলাম কিবরিয়া ওরফে বড় মনিরকে জানান। কিবরিয়া সমস্যা সমাধান করে দেওয়ার আশ্বাস দেন। এ বিষয়ে কথা বলার জন্য ২০২২ সালের ১৭ ডিসেম্বর শহরের আদালত পাড়ায় একটি ১০ তলা ভবনের চতুর্থ তলার ফ্ল্যাটে কিশোরীকে যেতে বলেন। 

কিশোরীর অভিযোগ, সেখানে যাওয়ার পর তার মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নিয়ে একটি কক্ষে আটকে রেখে ‘ধর্ষণ’ করেন বড় মনির। ঘটনা প্রকাশ করলে ‘মেরে ফেলার হুমকি’ দেন। প্রথমবার ‘ধর্ষণের সময় তোলা ছবি দেখিয়ে’ বড় মনি পরে আরও কয়েকবার ‘ধর্ষণ করেন’ বলে মামলায় অভিযোগ করেছেন কিশোরী। 

মামলায় তিনি বলেছেন, ধর্ষণের ফলে তিনি অন্তস্বঃত্বা হয়ে পড়েন। এ কথা গোলাম কিবরিয়া ওরফে বড় মনিরকে জানালে তাকে গর্ভের সন্তান নষ্ট করার জন্য চাপ ও হুমকি দিতে থাকেন ওই আওয়ামী লীগ নেতা। তাতে রাজি না হওয়ায় গত বছরের ২৯ মার্চ রাত ৮টার দিকে বড় মনির ওই কিশোরীকে ‘তুলে নিয়ে যান’ এবং একটি কক্ষে তালাবন্ধ করে রেখে আবারও ‘ধর্ষণ’ করেন। পরে মেয়েটির একটি সন্তান হয়। এ মামলায় গত বছরের ১৫ মে টাঙ্গাইলের অতিরিক্ত মুখ্য বিচারিক হাকিম মো. মাহমুদুল মহসীনের আদালতে হাজির হয়ে জামিন আবেদন করেন বড় মনির। বিচারক তা নাকচ করে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। পরে উচ্চ আদালতে জামিনের জন্য যান বড় মনির। তখন আদালত বড় মনির ও সদ্যজাত শিশুর ডিএনএ পরীক্ষার প্রতিবেদন দাখিল করতে বলে। ৯ অক্টোবর আপিল বিভাগে দাখিল করা ডিএনএ পরীক্ষার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ধর্ষণের শিকার নারীর গর্ভে জন্ম নেওয়া নবজাতকের বাবা বড় মনির নন। ডিএনএ পরীক্ষার প্রতিবেদন পক্ষে থাকায় গত বছরের ৯ অক্টোবর বড় মনিরকে জামিন দেয় আপিল বিভাগ। অন্যদিকে গত বছরের ১৮ নভেম্বর ওই ধর্ষণ মামলার বাদী কিশোরীর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। 

জানা যায় সেই ভুক্তভোগীর বড় বোন লুনা মির্জাকে দিয়ে তার গর্ভপাত করানোর বিনিময়ে কোটি টাকা ও ফ্লাট দেয়ার লোভ দেখানো হয়। এ সংক্রান্ত টেলিফোন কথোপকথন ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক মাধ্যমে। নিহতের বড় বোন লুনা স্বীকার করেন, ছড়িয়ে পড়া অডিওটি তার। তাকে রাজি করানোর জন্য বোনকে দায়িত্ব দেন বড় মনির। কিন্তু নানা প্রলোভনেও রাজি হয়নি মেয়েটি। মৃত্যুর আগে বাঁচার আকুতি জানিয়ে কয়েকবার টাংগাইল সদর থানায় ফোন করে ওই মেয়ে। সাহায্য চান ট্রিপল নাইনের। কিন্তু কারও সাড়া পাননি। মৃত্যুর আগেই তিনি জানিয়েছিলো তাকে যে কোনো সময়ে হত্যা করা হতে পারে। 

মৃত্যুর আগে তিনি অভিযোগ করেন, শিশুটির ডিএনএ পরীক্ষার ফলাফল প্রভাব খাটিয়ে পাল্টে ফেলা হয়েছে। ধর্ষণ মামলার তদন্তে ছিলো পিবিআই। পিবিআই প্রধান বনজ কুমার মজুমদার জানান, এষাকে বড় মনিরের মারধরের ঘটনাটি তারা আমলে নিয়েছেন। তবে প্রভাব খাটিয়ে ডিএনএ’র ফলাফল পরিবর্তন করা হয়নি বলে দাবি করেন তিনি। 

এবার সেই ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই এবার আরেক কলেজ ছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগে মামলা হয়েছে বড় মনিরের বিরুদ্ধে। শুক্রবার রাতে ভুক্তভোগি বড় মনিরের হাত থেকে বাঁচতে ৯৯৯ এ জরুরী সহায়তা চান। পুলিশ বড় মনিরের উত্তরার বাসা থেকে তাকে উদ্ধার করে। 

ভুক্তভোগী জানায়, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম সূত্রে পরিচিত বড় মনিরের সাথে দেখা করতে গেলে অস্ত্রের মুখে উত্তরা ১২ সেক্টরের ৬ নম্বর রোডের ৭ নম্বর বাড়িতে আটকে রেখে তাকে ধর্ষণ করা হয়।

এদিকে টাংগাইলে কথিত আছে, অত্র এলাকায় এই বড় মনির হাত ধরে মাদকের ব্যবসা শুরু হয়। তার নেতৃত্বে অত্র জেলায় এক সময় মাদকের অভ্যয়ারন্যে পরিনত হয়। কেনা বেচা থেকে শুরু করে সেবন পর্যন্ত করেন এই বড় মনি। তার ভাই এমপি হওয়ার সুবাধে কেউ তাদের বিরুদ্ধে টু শব্দ পর্যন্ত করতে পারতো না। বর্তমানে একজন প্রভাবশালী মন্ত্রীর আস্থাভাজন হওয়ায় কোন আইনেই তাকে আটতে পারেনি। 

অস্ত্রের মুখে কলেজ ছাত্রীকে তুলে নিয়ে ধর্ষণে অভিযুক্ত টাঙ্গাইলের আওয়ামী লীগ নেতা গোলাম কিবরিয়া ওরফে বড় মনিরকে কলেজ সভাপতির পদ থেকে অপসারণ করা হয়েছে। সোমবার (১ এপ্রিল) বড় মনিরকে কলেজ সভাপতির পদ থেকে অপসারণ করার কথা জানিয়েছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। বড় মনিরের জায়গায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে সাময়িক নিয়োগ দেয়া হয়েছে।

এর আগে মামলা চলমান থাকার মধ্যেই সম্প্রতি ভুয়াপুর লোকমান ফকির মহিলা কলেজের গভর্নিং বডির সভাপতি পদে নিয়োগ দেয়া হয় বড় মনিরকে। এ ঘটনায় ব্যাপক আলোচনা সমালোচনার সৃষ্টি হয়।

� পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ �







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ
সম্পাদক ও প্রকাশক: নাজমুল হক শ্যামল
দৈনিক নতুন সময়, গ্রীন ট্রেড পয়েন্ট, ৭ বীর উত্তম এ কে খন্দকার রোড, মহাখালী বা/এ, ঢাকা ১২১২।
ফোন: ৫৮৩১২৮৮৮, ০১৯৯৪ ৬৬৬০৮৯, ইমেইল: [email protected]
কপিরাইট © দৈনিক নতুন সময় সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত | Developed By: i2soft
DMCA.com Protection Status