কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফের একাধিক রোহিঙ্গা ক্যাম্পে প্রতিনিয়ত ঢুকছে অস্ত্র। এসব অস্ত্র দিয়ে রোহিঙ্গা ক্যাম্প অভ্যন্তরে চলে নানান ধরনের অপরাধ। মাঝেমধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে কিছু সংখ্যক অস্ত্রসহ রোহিঙ্গা আটক হচ্ছে। অধিকাংশ অস্ত্রগুলো বিভিন্ন গ্রুপের হাতে চলে যাচ্ছে। রোহিঙ্গাদের হাতে অস্ত্র যাওয়ার কারণে নিরাপত্তার ঝুঁকিতে আছেন বলে জানিয়েছেন অধিকার বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার রবিউল ইসলাম। তিনি আরও বলেন, নিরাপত্তার স্বার্থে চেকপোস্ট বাড়ানোর দাবি করেন।
রোহিঙ্গা ক্যাম্পের অভ্যন্তরে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে অপহরণ, খুন, চাঁদাবাজি, প্রত্যাবাসন বিরোধী কর্মকাণ্ড, মাদক কারবারসহ বিভিন্ন অপরাধ সংঘটিত করে অর্ধশতাধিক সশস্ত্র গ্রুপ। রোহিঙ্গা ক্যাম্পের অভ্যন্তরে প্রায়ই তুচ্ছ ঘটনার জের ধরে গোলাগুলি ও খুনাখুনির মতো ঘটনা ঘটে। গত দুইমাসে আটটি হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। তবে চলিত মাসে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে বলে উখিয়ার বালুখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্পের সাব-মাঝি আবু তাহের জানিয়েছেন। সম্প্রতি উখিয়ার রহমতের বিল সীমান্ত দিয়ে পালিয়ে আসার সময় অস্ত্রসহ ২৩ রোহিঙ্গাকে গ্রামবাসী আটক করে। পরে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের সহযোগিতায় বিজিবির নিকট হস্তান্তর করা হয়।
মিয়ানমারের অভ্যন্তরে আরকান আর্মি ও সামরিক জান্তার মধ্যে সংঘর্ষ চলমান। ওপারে টিকতে না পেরে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে থাকা আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে পালিয়ে আসছে অনেক রোহিঙ্গা। এসব সমস্যা নিরসনে দ্রুত যৌথ অভিযান চালানোর দাবি করছে এখানকার সচেতন মহল। উখিয়া-টেকনাফে ৩৩টি রোহিঙ্গা ক্যাম্প রয়েছে। এসব ক্যাম্পে নিরাপত্তার জন্য তিনটি ব্যাটালিয়ন গঠন করা হয়।
আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন সূত্রে জানা যায়, জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মাসে ২৪টি দেশীয় তৈরি ওয়ান শুটারগান গান, দুইটি পিস্তল, ২৫ হাজার ৭৯০ পিস ইয়াবা, ৮৬ রাউন্ড গুলি, ৬৫ গ্রাম গাঁজা, একটি চাকু, একটি ম্যাগজিন, তিনটি হাতে তৈরি গ্রেনেড, একটি কিরিচসহ নগদ টাকা উদ্ধার এবং ৪০ জনকে আটক করা হয়।
এ ব্যাপারে উখিয়ার পালংখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এম গফুর উদ্দিন চৌধুরী বলেন, রোহিঙ্গারা তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে দল বেঁধে বাড়ি ঘেরাও করে স্থানীয়দের তুলে নিয়ে মারধর করছে। অপহরণ করে মুক্তিপণ দাবি করছে। এতে দিনদিন স্থানীয়দের নিরাপত্তার ঝুঁকি বাড়ছে। সামনে হয়তো ক্যাম্পের আশপাশে বসবাস করা কঠিন হয়ে যাবে। শিগগিরই রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের দাবি জানান তিনি।
এ ব্যাপারে উখিয়ার রাজাপালং ইউনিয়নে রোহিঙ্গা অধ্যুষিত কুতুপালং এলাকার ইউপি সদস্য ইঞ্জিনিয়ার হেলাল উদ্দিন বলেন, মিয়ানমারের অভ্যন্তরে যুদ্ধ চললেও ইয়াবার চালান আসা বন্ধ হয়নি। আর মাদক কারবারকে কেন্দ্র করে ক্যাম্পে প্রতিদিন গোলাগুলি, অস্ত্রবাজির ঘটনা ঘটেই চলছে।
এ ব্যাপারে ৮ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) অধিনায়ক আমির জাফর বলেন, মিয়ানমারের অভ্যন্তরে গোলাগুলির কারণে এখন সীমান্তে অস্থিরতা বিরাজ করছে। তবে অনুপ্রবেশের আশঙ্কা উঠিয়ে দেওয়া যায় না। রোহিঙ্গা ক্যাম্পের অভ্যন্তরের প্রতিদিন অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
ক্যাম্পের একাধিক বাসিন্দা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে এসব গ্রুপের কিছু সদস্যের নামও পাওয়া গেছে। তারা হলেন, কমান্ডার হাফেজ আতা উল্লাহ, আব্দুল হাকিম, মাষ্টার রফিক, সৈয়দ হোসেন, সাব্বির আহমদ লালু, রহিম উল্লাহ মুসা, সৈয়দুল আমিন, মোহাম্মদ হাসিম, মোহাম্মদ আলম, রাদি আলম, মোহাম্মদ আয়াস, মোহাম্মদ ইসমাইল, মো. ইলিয়াস, হাফেজ ইদ্রিস, হাফেজ বদরুল ইসলাম প্রমুখ।
এ ব্যাপারে ১৪ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক মোহাম্মদ ইকবাল বলেন, ক্যাম্পে এপিবিএন পুলিশের তিনটি ইউনিটই সন্ত্রাসী, অস্ত্রবাজি ও মাদক কারবার বন্ধে অভিযানের পাশাপাশি বিট পুলিশিং কাউনসেলিং, সচেতনতা বৃদ্ধির সমাবেশসহ নানা ধরনের কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে।