মিয়ানমারের সংঘাত ছড়িয়েছে টেকনাফ সীমান্তে
নতুন সময় প্রতিবেদক
|
মিয়ানমারের অভ্যন্তরে সরকারি বাহিনী ও বিদ্রোহী গোষ্ঠীর সংঘর্ষ বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি ও কক্সবাজারের উখিয়া সীমান্তের পর টেকনাফ সীমান্তেও ছড়িয়েছে। গত দুই দিন গোলাগুলি, মর্টার শেল ও ভারী অস্ত্রের শব্দ কম শোনা গেছে। তবে আজ মঙ্গলবার সকাল থেকে টেকনাফের হোয়াইক্যংয়ের উলুবনিয়া সীমান্তে প্রচণ্ড গোলাগুলি ও ভারী অস্ত্রের বিস্ফোরণ হচ্ছে বলে জানিয়েছেন সীমান্তের বাসিন্দা ও জনপ্রতিনিধিরা। তাই সীমান্তের এপারের বাসিন্দাদের কিছুটা স্বস্তি ফিরলেও পুরোপুরি আতঙ্ক কাটেনি। সীমান্তের ওপারে কুমিরখালীতে সীমান্ত চৌকি দখল নিয়ে তীব্র লড়াই হচ্ছে। সেখানে অগ্নিসংযোগের ঘটনাও ঘটছে বলে জানান স্থানীয়রা। এদিকে ভয়-আতঙ্ক কিছুটা কেটে ওঠায় পাশের বিভিন্ন গ্রামে আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে আশ্রয় নেওয়া লোকজন ফিরতে শুরু করেছে। অবশ্যই নিরাপত্তা বিবেচনায় বন্ধ রাখা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে এখনো পাঠদান শুরু হয়নি। উখিয়া উপজেলার পালংখালী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান এম গফুর উদ্দিন জানিয়েছেন, তার ইউনিয়নের সীমান্ত আপাতত শান্ত রয়েছে। দুই-তিন দিন ধরে মর্টার শেল কিংবা গোলাগুলির বড় ধরনের শব্দ আসেনি। টেকনাফ উপজেলার হোয়াইক্যং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নূর আহমদ আনোয়ারী জানান, তাঁর ইউনিয়নের সীমান্তে গতকাল সোমবার সকাল থেকে আজ সকাল পর্যন্ত মোটামুটি শান্ত ছিল। তবে আজ সকাল সাড়ে ১০টার দিকে থেমে থেমে প্রচণ্ড গোলাগুলি ও ভারী অস্ত্রের বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যাচ্ছে। এতে লোকজনের মধ্যে আতঙ্ক কাটছে না। গত দুই দিনে সীমান্তে গোলাগুলির ঘটনা না ঘটায় নিকটবর্তী এলাকায় আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে আশ্রয় নেওয়া লোকজন নিজ ভিটেবাড়িতে ফিরতে শুরু করেছে বলে জানিয়েছেন ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এ কে এম জাহাঙ্গীর আজিজ চৌধুরী। তিনি বলেন, আতঙ্ক এখনো পুরোপুরি কেটে যায়নি। তাই জীবনযাত্রা স্বাভাবিক হয়ে আসেনি। এখনো বন্ধ রয়েছে কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাঠদান। সীমান্তে মানুষের চলাফেরায়ও সতর্কতা জারি রয়েছে। এদিকে টেকনাফের হোয়াইক্যং ও হ্নীলা ইউনিয়নের সীমান্ত দিয়ে নাফ নদী পার হয়ে রোহিঙ্গারা কয়েক দিন ধরে অনুপ্রবেশের চেষ্টা করছে। এর মধ্যে ট্রলারে করে আসা বেশ কিছু রোহিঙ্গাকে বিজিবি ও কোস্ট গার্ড পুশব্যাক করেছে। অনুপ্রবেশ ঠেকাতে নাফ নদীতে টহলও বাড়ানো হয়েছে। টেকনাফ-সেন্টমার্টিন রুটে গত শনিবার থেকে পর্যটকবাহী জাহাজসহ নৌযান চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার মো. তোফায়েল ইসলাম ও পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি নুরে আলম মিনা সীমান্ত পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করেন। বিভাগীয় কমিশনার বলেন, সীমান্ত পরিস্থিতি আগের চেয়ে অনেক বেশি উন্নত হয়েছে। এখন যে পরিস্থিতি বিরাজ করছে তা অস্বাভাবিক বলা যাবে না। ডিআইজি নুরে আলম মিনা বলেন, সীমান্তে চলমান পরিস্থিতিতে কোনো রোহিঙ্গা বা সন্ত্রাসীকে ঢুকতে দেওয়া হবে না। বিজিবি ও কোস্ট গার্ড কাজ করছে। উল্লেখ্য, গত ২ ফেব্রুয়ারি থেকে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে সে দেশের সরকারি বাহিনী ও বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির সঙ্গে সীমান্ত চৌকি দখল নিয়ে তীব্র সংঘাত চলছে। এই সংঘাতের আঁচ লাগছে বাংলাদেশেও। মিয়ানমার থেকে ছোড়া মর্টার শেল নাইক্ষ্যংছড়ির জলপাইতলীর এক বাড়িতে এসে পড়ে বাংলাদেশি এক নারী ও এক রোহিঙ্গা পুরুষ নিহত হন। আহত হন বেশ কয়েকজন। গোলা ও মর্টার শেল এসে পড়ছে সীমান্তের বাড়ি-ঘর ও খেতখামারে। এর মধ্যে উখিয়া থানা-পুলিশ অজ্ঞাত দুই ব্যক্তির মরদেহ করেছে। ধারণা করা হচ্ছে, লাশ দুটি বিদ্রোহী বা সরকারি বাহিনীর সদস্যের হতে পারে। বিদ্রোহীদের সঙ্গে লড়াইয়ে ঠিকতে না পেরে মিয়ানমারের সেনা, বিজিপি ও সরকারি দপ্তরের ৩৩০ জন পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। তাদের নিরস্ত্র করে বিজিবির হেফাজতে রাখা হয়েছে। মিয়ানমারের এসব নাগরিকদের স্বদেশে পাঠানোর জন্য কক্সবাজার আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস ইতিমধ্যে ৩২৬ জনের বায়োমেট্রিক শেষ করেছে। বাকি চারজন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার মো. তোফায়েল ইসলাম বলেন, দুই দেশের সরকারের উচ্চ পর্যায়ে মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সদস্যসহ বাংলাদেশে পালিয়ে আসা ৩৩০ জন নাগরিককে ফেরত পাঠাতে কাজ করছে। দু-এক দিনের মধ্যেই ফলাফল পাওয়া যাবে।
|
� পূর্ববর্তী সংবাদ | পরবর্তী সংবাদ � |