ই-পেপার সোমবার ১৪ নভেম্বর ২০২২
ই-পেপার |  সদস্য হোন |  পডকাস্ট |  গুগলী |  ডিসকাউন্ট শপ
শুক্রবার ২৯ নভেম্বর ২০২৪ ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
বাজারে কাঁদছে মানুষ, প্রতিমন্ত্রী বক্তব্যে তোলপাড়
নতুন সময় ডেস্ক
প্রকাশ: Saturday, 13 May, 2023, 1:40 PM
সর্বশেষ আপডেট: Saturday, 13 May, 2023, 1:55 PM

বাজারে কাঁদছে মানুষ, প্রতিমন্ত্রী বক্তব্যে তোলপাড়

বাজারে কাঁদছে মানুষ, প্রতিমন্ত্রী বক্তব্যে তোলপাড়

মানুষ বাজার করতে গিয়ে এখন কাঁদছে। কারণ বাজারের যে অবস্থা তার পকেটে সেই পরিমাণ টাকা নেই। গত বৃহস্পতিবার এক কর্মশালায় শিল্প প্রতিমন্ত্রীর ওই মন্তব্যে সারা দেশে তোলপাড় শুরু হয়েছে। অন্যদিকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও বেশ সমালোচনা চলছে। প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার বলেন, দেশ এগিয়ে চলেছে, বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের রোল মডেল। কিন্তু তারপরও দেশে আজকে যে অরাজকতা ও নৈরাজ্য সৃষ্টি হয়েছে, ব্যবসার নামে আজকে যে লুটপাট হচ্ছে, মানুষের পকেট কাটা হচ্ছে, এগুলো সাংবাদিকদের আরও জোরালোভাবে তুলে ধরতে হবে, এগুলো আরও ফোকাস করতে হবে।


তিনি আক্ষেপ করে বলেন, আমি অনেককে দেখেছি বাজার করতে গিয়ে কাঁদছেন। কারণ বাজারের যে অবস্থা তার পকেটে সেই পরিমাণ টাকা নেই। এটার একমাত্র কারণ সিন্ডিকেট। আমাদের চিনির অভাব নাই, আমাদের চাল-ডাল তরি-তরকারির অভাব নাই।


তিনি বলেন, আমরা যখন বাজারে যাই তখন দেখি দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, কেন ঊর্ধ্বগতি? আমাদের কিন্তু কোনো কিছুর অভাব নেই, আমরা প্রত্যেকটা ক্ষেত্রে স্বয়ংসম্পূর্ণ। চাল, ডাল, তরি-তরকারি, মাছ-মাংস থেকে শুরু করে সবকিছুতেই স্বয়ংসম্পূর্ণ।


তারপরও সিন্ডিকেটের কারণে দেশের এই অবস্থা বিরাজ করছে। তিনি বলেন, অর্থনীতি ও বাজার এই দুই জায়গাতেই সিন্ডিকেট তৈরি হয়েছে। যার কারণে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা ঝরে পড়ছেন এবং পণ্যের মূল্য বেড়ে বাজারে অস্থিরতা তৈরি হয়েছে।


প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, আজকে আমরা দেখছি, যে ব্যক্তি লুটপাট করে বড় লোক হচ্ছে তাকে আরও সুযোগ দিচ্ছি। ফলে কিছু ব্যক্তির কাছে ব্যাংক থেকে শুরু করে গোটা অর্থনীতি জিম্মি হয়ে পড়েছে। এই সিন্ডিকেট আমাদের ভাঙতে হবে। এই সিন্ডিকেট ভাঙতে গেলে আপনারা যারা সাংবাদিক রয়েছেন তারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবেন বলে আমি বিশ্বাস করি। তিনি দৃঢ়ভাবে বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতিতে যেভাবে সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে, এই সিন্ডিকেট যদি আমরা ধরতে না পারি, এই সিন্ডিকেট যদি আমরা ভাঙতে না পারি, দেশের ১৭ কোটি মানুষের যে দুঃখ কষ্ট তা যদি লাঘব না করতে পারি, তবে আমার মনে হয়, আমাদের মতো লোকের মন্ত্রী থাকা উচিত না।


অবাক লাগে বাংলাদেশের মতো একটি উন্নয়নশীল দেশে লাখ লাখ বেকার। আবার ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের ঋণ কিন্তু মওকুফ করা হয় না। কাদের ঋণ মওকুফ করা হচ্ছে? যারা ব্যাংক থেকে লাখ কোটি টাকা নিয়ে খেলাপি হয়েছে তাদেরটাই বার বার মওকুফ করা হচ্ছে। তারা মওকুফ পেয়ে আবার ঋণ নিচ্ছে। বড় খেলাপিদের এই ঋণগুলো যদি এসএমই ফাউন্ডেশনসহ ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প উদ্যোক্তাদের দেয়া হতো, তবে তাদের ব্যবসা আরও সমৃদ্ধশালী হতো। কিন্তু সেটা করা হচ্ছে না। 


মন্ত্রী বলেন, আমি আগেও অর্থ মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোকে বলেছি বড় খেলাপিদের ঋণ যাতে মওকুফ না করা হয়। কিন্তু বার বারই তাদের সুবিধা দেয়া হয়। কারা ব্যাংকের মালিক হয়েছে, কীভাবে হয়েছে এগুলো আপনাদের তুলে ধরতে হবে। তিনি বলেন, আমার ঢাকা শহরে রাজনীতির বয়স ৫০ বছর, আমি দেখেছি অনেকে ব্রিফকেস নিয়ে ঘুরতো, অনেকের কাছে টাকা ছিল না, অন্যের কাছে সিগারেট চেয়ে খেতো। আজকে তারা ব্যাংকের মালিক। তারা সরকারি ব্যাংক থেকে টাকা নিয়ে বেসরকারি ব্যাংকের মালিক হয়েছে। আমি মনে করি, যারা সরকারি ব্যাংক থেকে টাকা নিয়ে বেসরকারি ব্যাংকের মালিক হয়েছেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের উচিত তাদের নামগুলো প্রকাশ করা। কেন ওনারা করেন না, আমি জানি না, এটা একটা বড় প্রশ্ন।


শিল্প প্রতিমন্ত্রী বলেন, সুগার মিলের যারা আখচাষি তারাই সুগার মিলের শ্রমিক, যার কারণে মিলগুলোতে লুটপাট হয়েছে, আর লুটপাটের কারণে মিলগুলো বন্ধ হয়ে গেছে। আমাদের চিনির মিলগুলো যদি যথারীতি চালাতাম তবে বাজারে চিনির দাম এত বাড়তো না। এখন চিনির স্বল্পতা দেখা দিয়েছে, চিনি খুঁজে পাওয়া যায় না- এগুলো হতো না। একইভাবে আমাদের এসএমই খাতের ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের যারা মুড়ি-চানাচুর বিক্রি করে চলতো, সেখানেও দেশের বড় বড় কোম্পানিগুলো হাত বাড়িয়েছে। যার কারণে ক্ষুদ্র প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে পারছে না। 


কামাল আহমেদ মজুমদার বলেন, কয়েকদিন আগে পত্রিকায় দেখলাম বাফার এক গুদামের কাজ তিন মন্ত্রীর আমলেও শেষ করতে পারেনি, এটি মন্ত্রীদের দোষ নয়, আমলাদের দোষ। কারণ লাল ফিতার দৌরাত্ম্য এখনো কমেনি। আমলারা যেটা বলে সেটাই আমাদের করতে হয়। মন্ত্রী যদি দুর্বল হয় আর সচিব যদি সবল হয় তবে সেখানে মন্ত্রীর কিন্তু কোনো ভূমিকা থাকে না।

তিনি বলেন, উন্নত দেশ হওয়ার ক্ষেত্রে এসএমই ফাউন্ডেশন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। ইতিমধ্যে আমরা মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হয়েছি। আমাদের উন্নত বিশ্বের কাতারে যেতে হলে বেকার সমস্যার সমাধান করতে হবে, আমাদের অর্থনীতিকে আরও সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে, তাহলে আমরা স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে পারবো। দেশে যদি ক্ষুধা, দরিদ্র ও বেকার সমস্যা থাকে; তবে আমরা স্মার্ট বাংলাদেশ করতে পারবো না। আমাদের এদিকে নজর রাখতে হবে।


এদিকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও বেশ সমালোচনা চলছে। অনেকেই নানা মন্তব্য করেছেন। মান্নান মজুমদার নামে একজন বলেছেন, সিন্ডিকেট কি রাষ্ট্রের চেয়েও ক্ষমতাধর? ভেঙে দেয়া যায় না? দরকার একটু সদিচ্ছার আর রাষ্ট্রের সহায়তার। কয়েকটাকে ঢুকিয়ে দেন না শিকের ওপার? খুব তো পারেন বিরুদ্ধাচারণ করলে তাদেরকে শায়েস্তা করতে, তাহলে এ বেলায় কোথায় যায় আপনাদের এই সাহসিকতা? এখনো সময় আছে শক্ত হাতে লাগাম ধরুন তা না হলে বাফুফের অবস্থা হবে। বাইরের কেউ এসে ঢুকে পড়বে শুধু একটু উছিলার দরকার।

এম আবদুল্লাহ আল হারুন বলেছেন, জনগণের কষ্ট একটু হলেও বুঝতে পেরেছেন অবশেষে। এজন্য ধন্যবাদ। মারজানা ইয়াসমিন বলেন, একদম ঠিক। বাজার করতে গিয়ে দেখি আবারো একদফা দাম বাড়লো সবকিছুরই। এর শেষ কোথায়? এখন আর টাকা জমানোর কোনো জো নেই। দিন আনি দিন খাই অবস্থা হচ্ছে দিন দিন।


মারুফ আহমেদ অনিক বলেছেন, অসংখ্য ধন্যবাদ সত্যটা শিকার করার জন্য! মোহাম্মদ সেলিম উদ্দীন ব্যঙ্গ করে বলেছেন, কি বলেন? কানাডায় বাজার করতে গিয়ে কি কেউ কাঁদে? শাহেদ মাহমুদ বলেন, তাতে কার কি আসে যায়। পোড়া কপাল আর কি! একই রকম মন্তব্য করেছেন মিজানুর রহমান মির্জা। তিনি বলেছেন, তাতে সরকারের কি আসে যায়? আবদুর রহমান বলেছেন, আওয়ামী লীগের এই একজন মন্ত্রী বললো। বাকিরা তো উপোস থাকে।
সাইফুল আলম বলেছেন, না না, মানুষের ক্রয় ক্ষমতা বেড়েছে। মাহবুব হাসান বলেছেন, প্রতি বছর মানুষের আয় বাড়ছে। মানুষ কাঁদে কেন?
 

� পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ �







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ
সম্পাদক ও প্রকাশক: নাজমুল হক শ্যামল
দৈনিক নতুন সময়, গ্রীন ট্রেড পয়েন্ট, ৭ বীর উত্তম এ কে খন্দকার রোড, মহাখালী বা/এ, ঢাকা ১২১২।
ফোন: ৫৮৩১২৮৮৮, ০১৯৯৪ ৬৬৬০৮৯, ইমেইল: [email protected]
কপিরাইট © দৈনিক নতুন সময় সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত | Developed By: i2soft
DMCA.com Protection Status