রাজধানীতে রাত জেগে পাহারা, গাছ কাটতে এসে পালালো দক্ষিণ সিটির লোকজন
নতুন সময় ডেস্ক
|
রাজধানীর ধানমন্ডি সাত মসজিদ সড়কে গাছের প্রাণ বাঁচাতে রোববার রাত সাড়ে ১১টা থেকে পাহারা দিচ্ছেন এলাকাবাসী ও পরিবেশবিদরা। সোমবার রাত ৩টা ১৭মিনিটে আন্দোলনকারীরা সড়কের পাশের গলিতে যাওয়ার পাঁচ মিনিট পরই গাছ কাটাতে আসেন দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) লোকজন। এসময় টের পেয়ে আন্দোলনকারীরা দৌড়ে এলে তারা পালিয়ে যান। পরিবেশবাদী ও সচেতন নাগরিকদের বিরোধিতা সত্ত্বেও রাজধানীর ধানমন্ডি সাত মসজিদ সড়কে বিভাজক তৈরির জন্য গাছ কাটা অব্যাহত রেখেছে ডিএসসিসি। গত এক সপ্তাহ ধরে আন্দোলনের কারণে গাছ কাটতে রাতের আঁধারকে বেঁচে নেওয়া হয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে গাছের প্রাণ বাঁচাতে সড়কে পাহারা দিচ্ছেন এলাকাবাসী ও পরিবেশবিদরা। বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, সাত মসজিদ সড়ক বিভাজকের গাছগুলো কাটার জন্য সিটি করপোরেশনের ঠিকাদার বাহিনীর তৎপর। ইতোমধ্যে ধানমন্ডির জিগাতলা থেকে আবহানী মাঠ পর্যন্ত পাঁচ শতাধিক গাছ কাটা হয়েছে। আন্দোলনেও বন্ধ হয়নি গাছ কাটা। বাকি গাছ রক্ষা করতে মাঠে নেমেছেন এলাকাবাসী। কিন্তু দিনের আলোর বদলে সিটি করপোরেশন গাছগুলো কাটার জন্য রাতের অন্ধকার বেছে নিয়েছে। একটি দেশের নগর কর্তৃপক্ষ তার নাগরিকদের চোখে ধুলা দিতে এভাবে রাতের আঁধার বেছে নিতে পারে না। আমরা এখন গাছের জীবন বাঁচাতে রাতেও পাহারা দেব। সাত মসজিদ সড়ক গাছ রক্ষা আন্দোলনের সমন্বয়ক আমিরুল রাজিব বলেন, রাতের বেলা একটি পাতাও ছেড়া ঠিক না, অথচ গাছের শরীরে করাত চালানো হচ্ছে। মধ্য রাতে গাছের কান্না মেয়র শুনতে পান না। গাছের প্রাণ বাঁচাতে আমরা জেগে থাকবো। সড়কের বাকি গাছ আমরা কোনোভাবেই কাটতে দেবেন না। আগে আমাদের শরীরে পড়বে কুড়ালের কোপ। এরপর গাছে। রাত জেগে পাহারা কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছেন নারীপক্ষের সদস্য শিরিন হক, বেলার প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, নাগরিক উদ্যোগের প্রধান নির্বাহী জাকির হোসেন, স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার, চেঞ্জ ইনিশিয়েটিভের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী মো. জাকির হোসেন খান, গ্রীন ভয়েসের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক আলমগীর কবির, নিরাপদ ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশনের ইবনুল সাঈদ, প্রয়াত ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর ছেলে ছেলে বারীষ চৌধুরী, বাপার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মারুফ রহমান, শিক্ষার্থী ঋদ্ধ অনিন্দ্য গাঙ্গুলি, জয়িতা রায়, সাদমান সাদিফ প্রাঞ্জল, আদৃতা রায়, আশিকুল ইসলাম, সিম্মল ধূলি। এ দিকে ধানমন্ডির সাত মসজিদ রোডে সড়ক বিভাজকের গাছ কাটা বন্ধ ও যেসব স্থানে কাটা হয়েছে সেখানে নতুন করে বৃক্ষ রোপণে পদক্ষেপ নিতে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়রকে চিঠি দিয়েছেন দেশের ৩৭ বিশিষ্ট নাগরিক। রোববার ডাকযোগে মেয়রকে চিঠি পাঠানোর তথ্য সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানান বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) আইনজীবী মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল গালিব। সাত মসজিদ সড়কের বিভাজকে গাছ কাটার প্রতিবাদে গত মঙ্গলবার রাত থেকে রোববার পর্যন্ত তিনটি মানববন্ধন করে পরিবেশবাদী ও সচেতন নাগরিকরা। এর আগে গত জানুয়ারিতে সাত মসজিদ সড়কে কিছু গাছ কাটে সিটি করপোরেশন। পরে প্রতিবাদের মুখে তা বন্ধ রাখা হয়। ওই ঘটনার পর আবার গাছ কাটতে শুরু করেছে সিটি করপোরেশন। গাছ কাটা বন্ধে পদক্ষেপ নিতে গত ২ মে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব ফারহিনা আহমেদকেও চিঠি দেওয়া হয়। একই দাবিতে আজ সোমবার সকাল পৌনে ১১টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছে।
|
� পূর্ববর্তী সংবাদ | পরবর্তী সংবাদ � |