ই-পেপার সোমবার ১৪ নভেম্বর ২০২২
সদস্য হোন |  আমাদের জানুন |  পডকাস্ট |  গুগলী |  ডিসকাউন্ট শপ
শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ ১৫ চৈত্র ১৪৩০
আবু ইব্রাহিম আল-কুরাইশি: কে এই নিহত আইএস নেতা?
অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ: Saturday, 5 February, 2022, 9:55 AM

আবু ইব্রাহিম আল-কুরাইশি: কে এই নিহত আইএস নেতা?

আবু ইব্রাহিম আল-কুরাইশি: কে এই নিহত আইএস নেতা?

সিরিয়ার ইদলিব প্রদেশে মার্কিন বিশেষ বাহিনীর এক রাতভর অভিযানে ইসলামিক স্টেট গোষ্ঠীর নেতা আবু ইব্রাহিম আল-হাশিমি আল-কুরাইশি নিহত হয়েছেন বলে ঘোষণা করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। আইএসের এই নেতা সম্পর্কে কি জানা যায়?

তুরস্ক সীমান্তের কাছে আতমেহ এলাকায় একটি দোতলা বাড়িতে সপরিবারে লুকিয়ে ছিলেন আইএসের নেতা আবু ইব্রাহিম আল-হাশিমি আল-কুরাইশি। বৃহস্পতিবার রাতে মার্কিন কমান্ডোরা হেলিকপ্টারে করে এসে বাড়িটির ওপর হামলা চালালে তিনি একটি বোমার বিস্ফোরণ ঘটান - যাতে তিনি নিজে ও তার পরিবারসহ ১৩ জন নিহত হন।
এই হামলার পরিকল্পনা হয়েছিল কয়েক মাস ধরে। প্রেসিডেন্ট বাইডেন অভিযান পরিচালনার চূড়ান্ত নির্দেশ দেবার পর আক্রমণ শুরু হলে মি.বাইডেন হোয়াইট হাউসে বসে তা সরাসরি দেখছিলেন। আল-কুরাইশিকে বহুদিন ধরেই আইএসের ভবিষ্যৎ নেতা হিসেবে গড়ে তোলা হয়েছিল। তাকে একজন রহস্যময় লোক বলে মনে করা হতো - যাকে প্রকাশ্যে প্রায় দেখাই যেতো না।

ইসলামিক স্টেট গোষ্ঠীর ভেতরে আল-কুরাইশিকে ডাকা হতো 'হাজী আবদুল্লাহ কারদাশ' বা 'হাজি আবদুল্লাহ' নামে। তাকে নিয়ে একটি তথ্যবহুল ভিডিও প্রতিবেদন তৈরি করেছেন বিবিসির আরবি বিভাগের ফেরাস কিলানি। তিনি ইরাকের বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে অনেকের সাথে কথা বলে আল-কুরাইশি সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করেছেন।

আল-কুরাইশির জন্ম মসুলের অদূরে
আল-কুরাইশির জন্ম ১৯৭৬ সালে, ইরাকের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর মসুল থেকে ৩৫ কিলোমিটার দূরের আল-মেহালাবিয়ায়। ইরাক সরকারের কাউন্টার-টেররিজম ইউনিটের নাম হচ্ছে ফ্যালকন ব্রিগেড। ইসলামিক স্টেটের ভেতরে নিজেদের গুপ্তচরদের ঢুকিয়ে দেবার কাজে এই ফ্যালকন ব্রিগেড ছিল সিদ্ধহস্ত।

এর ফলে ইসলামী উগ্রপন্থীদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে তাদের ভূমিকা ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাদের একজন এজেন্ট হচ্ছেন মেজর আহমেদ। এটা তার আসল নাম নয়, পরিচয় গোপন রাখার জন্য তাকে এই ছদ্মনাম দেয়া হয়েছে। ইসলামিক স্টেটের সবশেষ নেতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানেন এই মেজর আহমেদ। তিনি বলছিলেন হাজী আবদুল্লাহ বা আল-কুরাইশির আসল নাম আমির মোহাম্মদ সাঈদ আল-মওলা।

তিনি আরও বলেন, আমির মোহাম্মদ সাঈদ আল-মওলার জন্ম আল-মেহালাবিয়ায়, তার বাবা সেখানকার একটি মসজিদের মুয়াজ্জিন ছিলেন। তার ছিল দুই স্ত্রী, এবং ১৭টি সন্তান।

এই বাড়িটিতেই সপরিবারে থাকতেন আইএস নেতা আল-কুরাইশি

অল্প বয়সেই উগ্রপন্থায় দীক্ষা
বড় পরিবার ছিল তাদের, এবং স্থানীয় লোকেরা এখনো তাদের মনে রেখেছেন। কারণ তারা শিক্ষিত ছিল, লোকে তাদের সম্মান করতো। কিন্তু তা সত্ত্বেও আল-কুরাইশি স্থানীয় কিছু গোষ্ঠীর মাধ্যমে উগ্রপন্থায় দীক্ষিত হন।

এই আল-মেহলাবিয়া, তাল আবতা এবং আল-হাজার এই তিনটি প্রত্যন্ত এলাকা মিলে একটা দ্বীপের মত তৈরি হছে। এখানেই ২০০৩ সালের মার্কিন অভিযানের পর ইরাকী আল-কায়দার জন্ম হয়েছিল। তাদের এখানে বেশ বড় সমর্থনও ছিল। ইসলামিক স্টেটের সামরিক এবং নিরাপত্তা বিষয়ক নেতাদের বেশির ভাগই এই এলাকাগুলো থেকে আসা - বিশেষ করে নিকটবর্তী তাল-আফার থেকে।

আল-কায়েদায় যোগদান
সাদ্দাম হোসেনের শাসনকালে আল-কুরাইশি কিছুকাল ইরাকের সেনাবাহিনীতে ছিলেন বলে জানা যায়। তা ছাড়া তিনি মসুলের বিশ্ববিদ্যালয়েও ইসলাম বিষয়ে উচ্চশিক্ষা নিয়েছেন। মার্কিন-নেতৃত্বাধীন বাহিনী যখন ২০০৩ সালে ইরাকে অভিযান চালায় তখনই আল-কুরাইশি ছোট ছোট কিছু জিহাদি গোষ্ঠীর সাথে জড়িত ছিলেন। কিন্তু পরে তিনি এসব গোষ্ঠী ছেড়ে দিয়ে আল-কায়েদায় যোগ দেন।

মার্কিন অভিযানে ইরাকি শাসক সাদ্দাম হোসেন উৎখাত হবার কিছুকালের মধ্যেই দেশটিতে শুরু হয় ব্যাপক সহিংসতা। আর তখন হাজি আবদুল্লাহ - তার ধর্মীয় শিক্ষা এবং উগ্রপন্থী গোষ্ঠীগুলোর সাথে দীর্ঘদিন ধরে জড়িত থাকার অভিজ্ঞতার কারণে - খুব তাড়াতাড়িই একজন নেতৃস্থানীয় সদস্যে পরিণত হন। একপর্যায়ে ২০০৮ সালে তাকে গ্রেফতার করা হয়, এবং আমেরিকানরা পুকা কারাগারে আটকে রাখে।

সেখানে মার্কিন সৈন্যরা কয়েক মাস ধরে আল-কুরাইশিকে জিজ্ঞাসাবাদ করে। তারা দাবি করে যে আল-কুরাইশি তাদেরকে আইএস সদস্যদের সম্পর্কে অনেক তথ্য দিয়েছিলেন - যদিও বিবিসির আরবি বিভাগের অনুসন্ধানী প্রতিবেদকরা নিজস্ব সূত্রে তা নিশ্চিত করতে পারেননি। দু’হাজার দশ সালের শুরুতে আল-কুরাইশিকে ছেড়ে দেয়া হয়। এর অল্প কিছুদিনের মধ্যেই তিনি ইসলামিক স্টেটের প্রতিষ্ঠাতা নেতা আবু বকর আল-বাগদাদির সাথে যোগ দেন।

আল-বাগদাদির ঘনিষ্ঠজন হিসেবে তিনি নিনেভেহ প্রদেশে আইএসএর একজন উর্ধতন কর্মকর্তায় পরিণত হন। এটা ছিল এমন এক সময় - যখন আমেরিকান সৈন্যদের একটা বড় অংশকেই ইরাক থেকে প্রত্যাহার করে নেয়া হয়েছে। এর ফলে আইএস নিজেদের পুনর্গঠিত করার সুযোগ পায়। তখন ইরাকের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন নূরী আল-মালিকি। তার সরকার জনপ্রিয় ছিল না, ফলে এসময় ইসলামিক স্টেটের সদস্য সংখ্যাও বাড়তে থাকে।

‘মেধাবী’ ছিলেন না হাজি আবদুল্লাহ
আইএসএর এক সিনিয়র নেতা- যিনি এখন ইরাকি গোয়েন্দা বিভাগের কারাগারে বন্দী - তিনি বিবিসির আরবি বিভাগকে দেয়া এক সাক্ষাতকারে বলেছেন, তার সাথে আল-কুরাইশি বা হাজি আবদুল্লাহর বেশ কয়েকবার সাক্ষাৎ হয়েছে। এই নেতাটির নাম বিবিসির আরবি বিভাগ প্রকাশ করেনি, কারণ আইএসের নেতৃত্ব এখনো জানে না যে তিনি বন্দী আছেন।

কিছু কিছু বিষয়ে হাজি আবদুল্লাহ অত্যন্ত উগ্রপন্থী, এবং তিনি তার ঘনিষ্ঠ কয়েকজন ছাড়া আর কাউকে বিশ্বাস করেন না। এই বন্দী আইএস নেতা বলছিলেন, আমি লক্ষ্য করেছিলাম যে হাজি আবদুল্লাহ ঠিক মেধাবী লোক নন, এবং আল-বাগদাদির মত বক্তৃতা দেবার ক্ষমতাও তার নেই। আল-বাগদাদি হাতে কোন কাগজ না রেখেই বক্তৃতা দিতে পারতেন কিন্তু হাজি আবদুল্লাহ এটা পারবে বলে আমার মনে হয় না।

আইএসের উচ্চাভিলাষ বাড়তে থাকার সাথে সাথে আল-কুরাইশি বিচার মন্ত্রীর দায়িত্ব পেলেন। তার দায়িত্ব ছিল মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা এবং লোকজনকে নিষ্ঠুর-বীভৎস পন্থায় শাস্তি দেয়ার কাজ তত্ত্বাবধান করা।

ইয়াজিদি মেয়েদের নিয়ে কী করা হবে
আইএস যখন ২০১৪ সালে সিঞ্জার শহরে ঢুকলো, তখন আল-কুরাইশির নিষ্ঠুরতা এবং তিনি যে কত প্রভাবশালী তা স্পষ্ট হলো। এখানে তারা ইয়াজিদি সংখ্যালঘু গোষ্ঠীর হাজার হাজার লোককে হত্যা করে। তবে ইয়াজিদি নারীদের নিয়ে কি করা হবে - এ প্রশ্নে আইএসের মধ্যে মতপার্থক্য দেখা দিল।

ইসলামিক শরিয়া আইনকে তারা যেভাবে ব্যাখ্যা করে - সে অনুযায়ী তাদের কিছু নেতা চাইছিল - ইয়াজিদি মেয়েদের ক্রীতদাসীতে পরিণত করা হোক। সে সময় আবু বকর আল-বাগদাদির একজন সহচর ছিলেন সালেম আল-জুবুরি, যিনি এখন ইরাকের কারাগারে বন্দী।

তিনি বিবিসিকে বলেন, ইয়াজিদি নারীদের বন্দী করার ব্যাপারে একজন শেখ আবু আলি আল-আনবাবির মত ছিল, এটা নিষিদ্ধ করা হোক কারণ এর সুবিধার চাইতে অসুবিধা অনেক বেশি, আর শরিয়া আইন বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে তারা এখনো নতুন। কিন্তু শেখ আবদুল্লাহ ইয়াজিদি নারীদের ক্রীতদাসী করার ওপর জোর দেন।

তার বক্তব্য ছিল - এটা যখন ধর্মে বলা আছে তাই তা করতেই হবে, কারণ সুন্নাহকে পুনরুজ্জীবিত করার জন্যই আইএস কাজ করছে। আইএসের দুটি কমিটি ছিল, একটি ইরাকে আরেকটি সিরিয়ায়। ইরাকি কমিটি ইয়াজিদি নারীদের ক্রীতদাসী করতে অস্বীকার করলো, কারণ তারা ইরাকি । তাদের নিজেদের স্ত্রী-পরিবারের ভয়ও তাদের ছিল। তা ছাড়া ইরাকিরা খ্রিস্টানদের ক্রীতদাসী করার ব্যাপারটাও গ্রহণ করেনি।

অন্যদিকে সিরিয়ার কমিটি ছিল আল-বাগদাদির অধিকতর ঘনিষ্ঠ, কারণ আল-বাগদাদি তখন রাক্কাতেই থাকতেন। তখন একটা আপোষরফা হলো। সেটা হচ্ছে এই রকম যে শুধু ইয়াজিদি নারীদের ক্রীতদাসী করা হবে, খ্রিস্টানদের নয়। মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলো বলে, আইএস সেসময় ৭০০০ নারী ও মেয়েশিশুকে ক্রীতদাসী।

তবে ইসলামিক স্টেট যখন বাগদাদ ও ইরবিলেও তাদের দখল কায়েম করার হুমকি দিল - তখন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় পাল্টা ব্যবস্থা নিতে শুরু করলো। তাদের সামরিক অভিযান ও বোমাবর্ষণে বেশ কিছু শীর্ষ আইএস নেতা নিহত হলো। এর ফলে আল-কুরাইশি নেতৃত্বের লাইনে আরো ওপরের দিকে উঠে এলেন।

তাকে হত্যার বেশ কিছু চেষ্টা ব্যর্থ হয়
আল-কুরাইশিকে হত্যার বেশ কিছু চেষ্টা হয়েছিল, তবে তার বেশির ভাগই ব্যর্থ হয়। একটি আক্রমণে আহত হয়ে তিনি তার একটি পা হারান।
বন্দী আইএস সদস্য সালেম আল-জুবুরি বিবিসিকে জানিয়েছেন, সম্ভবতঃ একটি আমেরিকান ড্রোনের হামলায় আল-কুরাইশি আহত হন। হাসপাতালে তার একটি পা কেটে বাদ দেয়া হয়, এবং সেবার চার মাসেরও বেশি সময় তাকে চিকিৎসা নিতে হয়।

মসুলের পতন, আইএসের পতনের সূচনা
ক্রমাগত বিমান হামলার কারণে আইএস ক্রমশ কোণঠাসা হয়ে পড়ছিল। ব্যাপক যুদ্ধের পর ২০১৭ সালে ইরাকের মসুল শহর থেকে আইএসকে উৎখাত করা হয়, এবং এখান থেকেই শুরু হয় আইএসের পতনের।

আল-বাগদাদি বুঝেছিলেন যে আইএস তার নিয়ন্ত্রিত ভূখন্ড হারাতে যাচ্ছে, সে কারণে তিনি ইসলামী খিলাফত ঘোষণার আগের যুগে আইএসকে ফিরিয়ে নিয়ে যাবার আদেশ তৈরি করছিলেন। এরপর ২০১৭ সালের অক্টোবর মাসে আল-বাগদাদি এবং আল-কুরাইশি সিরিয়ার আল-বুকামাল শহরে চলে আসেন। এখানেও তাদের ওপর একটি বিমান হামলা হয় - যা থেকে অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে যান তারা।

আল-কুরাইশির গায়ে বোমার টুকরোর আঘাত লাগে কিন্তু তার এক সহচর নিহত হয়। তখন হাজি আবদুল্লাহ একটি কৃত্রিম পা লাগিয়ে চলাফেরা করতেন - জানান সালেম আল জুবুরি। এরপর আল-কুরাইশিকে প্রথম হাসপাতালে এবং পরে ইদলিবে পাঠিয়ে দেয়া হয়।

অব্যাহত হামলার ঝুঁকির মধ্যে আইএসের নেতারা শেষ পর্যন্ত আশ্রয় নেয় সিরিয়ার ছোট শহর বাঘুজ-এ। এখানেই ২০১৯ সালে সমাপ্তি ঘটে ইসলামিক স্টেটের খিলাফতের। হাজার হাজার যোদ্ধা ও তাদের পরিবার আত্মসমর্পণ করে।

আল-বাগদাদি নিহত, নতুন আইএস নেতা আল-কুরাইশি
কয়েক মাস পর উত্তর সিরিয়ার ইদলিবে আল-বাগদাদি তার গোপন বাসভবনে অন্য কয়েকজন নেতার সাথে বৈঠক করছেন এমন একটি ভিডিও বেরোয়। আল-বাগদাদি ছাড়া ভিডিওতে অন্য নেতাদের মুখ আইএস নিজেই ঝাপসা করে দেয়। তবে মনে করা হয় যে উপস্থিত এই নেতাদের মধ্যে আল-কুরাইশি একজন।

এই সময়টায় তাকে সম্ভাব্য পরবর্তী নেতা হিসেবে গড়ে তোলা হচ্ছিল। অবশেষে ২০১৯ সালে সেই অবধারিত ঘটনাটি ঘটে, আমেরিকানদের এক হামলায় আবু-বকর আল-বাগদাদি নিহত হন। এর ফলে হাজি আবদুল্লাহ ওরফে আবু ইব্রাহিম আল-হাশিমি আল-কুরাইশির আইএস নেতা হবার পথ খুলে যায়।

আমেরিকানরা কুরাইশির সন্ধান পায় গত বছর
ইদলিবের যে এলাকাটিতে আল-কুরাইশি তার পরিবার নিয়ে থাকতেন সেটি একটি দরিদ্র এলাকা, যেখানকার বেশির ভাগ বাসিন্দাই সিরিয়ার অন্য এলাকা থেকে গৃহযুদ্ধের কারণে পালিয়ে এসেছেন। জলপাইয়ের গাছে ঘেরা একটি অতিসাধারণ ভবনের চারতলায় থাকতেন আল-কুরাইশি ।

প্রায় ১১ মাস আগে এই বাড়িটির তিন তলায় ভাড়াটি হিসেবে থাকতে আসেন একজন ট্রাক চালক ও তার পরিবার। গত বছরের শেষ দিকে আমেরিকানরা গোপনসূত্রে খবর পায় যে আল-কুরাইশি এই বাড়িটির ওপর তলায় থাকছেন। বিবিসির বিশ্লেষক গর্ডন কোরেরা বলছেন, আইএস বা আল-কায়েদা সংশ্লিষ্ট লক্ষ্যবস্তুর ক্ষেত্রে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রায়ই ড্রোন ব্যবহার করে।

শুধু মাত্র হাই-ভ্যালু লক্ষ্যবস্তুর ক্ষেত্রে, কাউকে জীবিত ধরতে চাইলে বা ঘটনাস্থল থেকে গুরুত্বপূর্ণ গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ করতে চাইলেই মাটিতে কমান্ডো নামিয়ে আক্রমণের পরিকল্পনা হয়ে থাকে - যেটা করা হয়েছিল ওসামা বিন লাদেন বা আল-বাগদাদির ক্ষেত্রে। কারণ এধরনের অভিযানে ঝুঁকি অনেক বেশি।

তবে আল-কুরাইশির নেতৃত্বে আইএস ইরাক ও সিরিয়ায় পুনরায় সংগঠিত হয়ে শক্তি বৃদ্ধির চেষ্টা করছে - সাম্প্রতিক কিছু ঘটনা থেকে এ আভাস যাচ্ছিল। এ প্রেক্ষাপটেই প্রেসিডেন্ট বাইডেন এ আক্রমণের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেন, এবং অভিযান চলার সময় তিনি হোয়াইট হাউসে বসে তা সরাসরি দেখছিলেন।

বাইডেন প্রশাসনের কর্মকর্তাদের উদ্ধৃত করে নিউইয়র্ক টাইমস জানাচ্ছে, তারা খবর পান যে আল-কুরাইশি কখনো বাড়ি থেকে বেরোতেন না, তবে মাঝে মাঝে ছাদের ওপর গোসল করতেন। এই বাড়ি থেকে তার সংগঠনের সাথে যোগাযোগের জন্য তিনি কাজে লাগাতেন তার নিচের তলায় বসবাসরত ট্রাক ড্রাইভারকে। হেলিকপ্টারে আসা আমেরিকান বিশেষ বাহিনী বাড়িটিতে অভিযান চালায় রাত একটার দিকে।

প্রথমে মার্কিন সৈন্যরা লাউডস্পিকারে একজন দোভাষীর মাধ্যমে বাড়ির ভবনটির সবাইকে বের হয়ে আসতে বলে। দোতলার একটি পরিবার বেরিয়ে এলেও অন্যরা আসেনি। মার্কিন বাহিনী এর পর বাড়িটি লক্ষ্য করে ক্ষেপণাস্ত্র ছুঁড়তে শুরু করে। এর কিছু পরই আল-কুরাইশি একটি বোমার বিস্ফোরণ ঘটান - যাতে তিনি নিজে এবং তার পরিবারের অন্যরাও নিহত হন।

মার্কিন কমাণ্ডোরা এর পর ভবনটিতে ঢুকে পড়ে এবং আল-কুরাইশির বার্তাবাহক সেই ট্রাকচালক ও তার স্ত্রীও আক্রমণে নিহত হন। তবে তাদের চার ছেলেমেয়ে প্রাণে রক্ষা পেয়েছে।

পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ
সম্পাদক ও প্রকাশক: নাজমুল হক শ্যামল
দৈনিক নতুন সময়, গ্রীন ট্রেড পয়েন্ট, ৭ বীর উত্তম এ কে খন্দকার রোড, মহাখালী বা/এ, ঢাকা ১২১২।
ফোন: ৫৮৩১২৮৮৮, ০১৯৯৪ ৬৬৬০৮৯, ইমেইল: info@notunshomoy.com
কপিরাইট © দৈনিক নতুন সময় সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত | Developed By: i2soft
DMCA.com Protection Status