ই-পেপার সোমবার ১৪ নভেম্বর ২০২২
সদস্য হোন |  আমাদের জানুন |  পডকাস্ট |  গুগলী |  ডিসকাউন্ট শপ
শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ৫ বৈশাখ ১৪৩১
কুমারীপূজা, কুমারী আদ্যাশক্তি মহামায়ার প্রতীক
নতুন সময় ডেস্ক
প্রকাশ: Thursday, 14 October, 2021, 6:19 AM

কুমারীপূজা, কুমারী আদ্যাশক্তি মহামায়ার প্রতীক

কুমারীপূজা, কুমারী আদ্যাশক্তি মহামায়ার প্রতীক

কুমারীপূজা। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের শ্রেষ্ঠ পূজা দুর্গাপূজার অঙ্গ হিসেবে বিবেচিত। সাধারণত কুমারীপূজা সম্পর্কে ভক্তদের জানার গণ্ডি সীমাবদ্ধ। অনেকেই জানে না কুমারীপূজা কী এবং কী তার রহস্য।


কুমারীপূজা বিষয়ে বিভিন্ন শাস্ত্রীয় ব্যাখ্যা হলো বৃহদ্ধর্মপুরাণের বর্ণনা অনুযায়ী দেবতাদের স্তবে প্রসন্ন হয়ে দেবী চণ্ডিকা কুমারী কন্যারূপে দেবতাদের সামনে দেখা দিয়েছিলেন। দেবীপুরাণে বিস্তারিত এ বিষয় উল্লেখ আছে। তবে অনেকে মনে করেন যে দুর্গাপূজায় কুমারীপূজা সংযুক্ত হয়েছে তান্ত্রিক সাধনামতে। একসময় শক্তিপীঠগুলোতে কুমারীপূজার রীতি প্রচলিত ছিল। শ্বেতাশ্বতর উপনিষদেও কুমারীর কথা উল্লেখ আছে। আর এ থেকে অনুমান করা কঠিন নয় যে দেবীর কুমারী নাম অনেক পুরনো। দেবীর কুমারী নাম যেমন পুরনো, তাঁর আরাধনা ও পূজার রীতিনীতিও তেমনি প্রাচীন এবং ব্যাপক। যোগিনীতন্ত্রে কুমারীপূজা সম্পর্কে উল্লেখ আছে—ব্রহ্মাশাপবশে মহাতেজা বিষ্ণুর দেহে পাপ সঞ্চার হলে সেই পাপ থেকে মুক্ত হতে হিমাচলে মহাকালীর তপস্যা শুরু করেন। বিষ্ণুর তপস্যায় মহাকালী খুশি হন। দেবীর সন্তোষ মাত্রই বিষ্ণুর হৃদ্পদ্ম থেকে সহসা ‘কোলা’ নামক মহাসুরের আবির্ভাব হয়। সেই কোলাসুর ইন্দ্রাদি দেবগণকে পরাজিত করে অখিল ভূমণ্ডল, বিষ্ণুর বৈকুণ্ঠ এবং ব্রহ্মার কমলাসন ইত্যাদি দখল করে নেন। তখন পরাজিত বিষ্ণু ও দেবগণ ‘রক্ষ’ ‘রক্ষ’ বাক্যে ভক্তিবিনম্রচিত্তে দেবীর স্তব শুরু করেন। বিষ্ণু আদি দেবগণের স্তবে সন্তুষ্টা দেবী বলেন—‘হে বিষ্ণু! আমি কুমারীরূপ ধারণ করে কোলানগরী গমন করে কোলাসুরকে সবান্ধবে হত্যা করব।’ দেবী কথামতো কাজ করেন। সেই থেকে দেব-গন্ধর্ব, কিন্নর-কিন্নরী, দেবপত্নীগণ সবাই সমবেত হয়ে কুসুম-চন্দন-ভারে কুমারীর অর্চনা করে আসছেন। এই হলো যোগিনীতন্ত্র অনুসারে কুমারীপূজার উদ্ভব ও বিকাশ।


তন্ত্রসারে এক থেকে ১৬ বছর পর্যন্ত ব্রাহ্মণ বালিকাদের কুমারীপূজার জন্য নির্বাচিত করা যায়। ধর্মের বিধান অনুযায়ী একেক বয়সের কুমারীর একেক নাম রয়েছে, যেমন—এক বছরের কন্যার নাম সন্ধ্যা, দুই বছরের কন্যার নাম সরস্বতী, তিন বছরের কন্যার নাম ত্রিধামূর্তি, চার বছরের কন্যার নাম কালিকা, পাঁচ বছরের কন্যার নাম সুভাগা, ছয় বছরের কন্যার নাম উমা, সাত বছরের কন্যার নাম মালিনী, আট বছরের কন্যার নাম কুব্জিকা, ৯ বছরের কন্যার নাম কালসন্দর্ভা, ১০ বছরের কন্যার নাম অপরাজিতা, ১১ বছরের কন্যার নাম রুদ্রাণী, ১২ বছরের কন্যার নাম ভৈরবী, ১৩ বছরের কন্যার নাম মহালক্ষ্মী, ১৪ বছরের কন্যার নাম পীঠনায়িকা, ১৫ বছরের কন্যার নাম ক্ষেত্রজ্ঞা ও ১৬ বছরের কন্যার নাম অম্বিকা।


কুমারী দেবী ভগবতীর অতি সাত্ত্বিক রূপ। জগন্মাতা বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের সৃষ্টিকর্ত্রী হয়েও চিরকুমারী। কুমারী আদ্যাশক্তি মহামায়ার প্রতীক। দুর্গার আরেক নাম কুমারী। মহাভারত থেকে জানা যায়, অর্জুন কুমারীপূজা করতেন। মূলত নারীকে যথাযথ মর্যাদায় অধিষ্ঠিত করতেই কুমারীপূজার আয়োজন করা হয়। মাটির প্রতিমায় যে দেবীর পূজা করা হয়, তারই বাস্তবরূপ কুমারীপূজা। কুমারীতে সমগ্র মাতৃজাতির শ্রেষ্ঠ, শক্তি, পবিত্রতা, সৃজনী ও পালনী শক্তি, সব কল্যাণী শক্তি সূক্ষ্মরূপে বিরাজিতা। তা-ই ভক্তদের কুমারীপূজা। শ্রীরামকৃষ্ণ বলতেন, ‘মাতৃভাব বড় শুদ্ধভাব। কুমারীর মধ্যে দৈবভাবের প্রকাশ দেখা বা তাকে জননীরূপে পূজা করা সেই শুদ্ধসত্ত্বভাবেরই এক সার্থক প্রকাশ।’ স্বামী বিবেকানন্দ বলেছেন, ‘মেয়েদের পূজা করেই সব জাত বড় হয়েছে। যে দেশে, যে জাতে মেয়েদের পূজা নেই, সে দেশ, সে জাত কখনো বড় হতে পারেনি, কস্মিনকালেও পারবে না।’ মনু বলেছেন, ‘যত্র নার্যস্তু পূজ্যন্তে রমন্তে তএ দেবতাঃ। যত্রৈতাস্তু ন পূজ্যতে সর্বাস্তত্রাফলাঃ ক্রিয়াঃ।’  অর্থাৎ, যেখানে নারীগণ পূজিতা হন, সেখানে দেবতারা প্রসন্ন। যেখানে নারীগণ সম্মানিতা হন না, সেখানে সব কাজই নিষ্ফল। (মনুসংহিতা, ৩.৫৬)।


কালের অতলে দুর্গাপূজায় কুমারীপূজা হারিয়ে গেলেও স্বামী বিবেকানন্দ মাতৃজাতির মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় ১৯০১ সালে বেলুর মঠে মা সারদাদেবীর অনুমতিক্রমে কুমারীপূজা অনুষ্ঠিত হয়। সাধারণত রামকৃষ্ণ মিশন ও অন্যান্য স্থানে এ পূজা মহাষ্টমীর দিনে অনুষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশের ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, হবিগঞ্জ, সিলেট, কুমিল্লা ও যশোর এর মধ্যে অন্যতম।


শ্রীমৎ স্বামী জগদীশ্বরানন্দজীর সম্পাদিত শ্রীশ্রীচণ্ডীর ভূমিকায় লিখেছেন, ‘মহামায়া বিশ্বব্যাপিণী হলেও নারীমূর্তিতে তার সমধিক প্রকাশ। দেবীর অংশে নারী মাত্রেরই জন্ম। অল্পবয়স্কা, সমবয়স্কা বা বয়োবৃদ্ধা নারী মাত্রই জগদম্ভারই জীবন্ত মূর্তি। প্রত্যেক নারীতে মাতৃবুদ্ধি করা এবং প্রত্যেক নারীকে দেবীমূর্তি জ্ঞানে শ্রদ্ধা করাই মহামায়ার শ্রেষ্ঠ উপাসনা। এ জন্যই দুর্গাপূজাতে কুমারীপূজার বিধি। প্রতিমাতে দেবীর আবির্ভাব চিন্তা করা যেমন আবশ্যিক, নারীমূর্তিতেও দেবীর প্রকাশ অনুধ্যান করাও তেমনি কর্তব্য।


পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ
সম্পাদক ও প্রকাশক: নাজমুল হক শ্যামল
দৈনিক নতুন সময়, গ্রীন ট্রেড পয়েন্ট, ৭ বীর উত্তম এ কে খন্দকার রোড, মহাখালী বা/এ, ঢাকা ১২১২।
ফোন: ৫৮৩১২৮৮৮, ০১৯৯৪ ৬৬৬০৮৯, ইমেইল: info@notunshomoy.com
কপিরাইট © দৈনিক নতুন সময় সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত | Developed By: i2soft
DMCA.com Protection Status