ই-পেপার সোমবার ১৪ নভেম্বর ২০২২
সদস্য হোন |  আমাদের জানুন |  পডকাস্ট |  গুগলী |  ডিসকাউন্ট শপ
শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ৫ বৈশাখ ১৪৩১
পানিফল চাষে সফলতার স্বপ্ন দেখছেন সাতক্ষীরার কৃষক
ফারুক রহমান, সাতক্ষীরা
প্রকাশ: Wednesday, 13 October, 2021, 8:27 PM

পানিফল চাষে সফলতার স্বপ্ন দেখছেন সাতক্ষীরার কৃষক

পানিফল চাষে সফলতার স্বপ্ন দেখছেন সাতক্ষীরার কৃষক

পানিফল (স্থানীয়ভাবে পানি সিংড়া নামে পরিচিত) চাষে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার সম্ভাবনার স্বপ্ন দেখছেন সাতক্ষীরার কৃষকরা। এজন্য এই ফল চাষ করে কৃষকরা অধিক মুনাফা লাভের আশায় প্রতি বছর পানিফল চাষের জমি বৃদ্ধি পাচ্ছে এ জেলায় কৃষি বিভাগ ও ইন্টারনেট থেকে পাওয়া তথ্যমতে, পানিফল একটি সুস্বাদু ও পুষ্টিকর ফল। পানিফলের আদিনিবাস ইউরোপ, এশিয়া ও আফ্রিকা হলেও প্রথমে এটি দেখা পাওয়া যায় উত্তর আমেরিকায়।


দেশের মধ্যে সাতক্ষীরা জেলায় পানিফলের বাণিজ্যিক চাষ অনেক আগেই শুরু হয়েছে। এখন থেকে ত্রিশ বছর আগে এই ফলটি বড় বড় পুকুর ও দিঘীতে প্রাকৃতিকভাবে বেড়ে উঠতো। তখন এই ফলটি বাণিজ্যিকভাবে বেচাকেনা হতো না। সাধারণত শিশুরা এটি পানি থেকে তুলে পানি সিংড়া হিসেবে খেতো। পানিফল একটি বর্ষজীবী জলজ উদ্ভিদ। বড় পুকুর, দিঘী, উন্মুক্ত জলাশয়, বিল ও ঝিলের পানতে ফলটি জন্মে। শেকড় থাকে পানির
নিচে মাটিতে এবং পাতা পানির উপর ভাসে। এক একটি গাছ প্রায় পাঁচ মিটার পর্যন্ত লম্বা হতে পারে। এ কারণে পানিফলের আরেক নাম ‘সিংড়া’।


ফলটির চাষ শুরু হয় ভাদ্র-আশ্বিন মাসে এবং ফল সংগ্রহ করা হয় অগ্রহায়ণ-পৌষ মাসে। কচি অবস্থায় লাল, পরে সবুজ এবং পরিপক্ক হলে কালো রঙ ধারণ করে। ফলটির পুরু নরম খোসা ছাড়ালেই পাওয়া যায় হৃৎপিন্ডাকার বা ত্রিভুজাকৃতির নরম সাদা শাস। কাঁচা ফলের নরম শাস খেতে সুস্বাদু। পানিফলে পর্যাপ্ত পরিমাণ ক্যালসিয়াম রয়েছে। দেহের প্রয়োজনীয় খনিজ লবণগুলোর মধ্যে ক্যালসিয়াম অন্যতম। সাতক্ষীরার কলারোয়া, দেবহাটা, কালিগঞ্জ, আশাশুনি, শ্যামনগর উপজেলায় জলাবদ্ধ এলাকার কৃষকরা পানিফল চাষ করে অধিক লাভবান হচ্ছেন।


সদর উপজেলার কিছু জায়গায়ও ফলটি চাষ হচ্ছে। জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে পানিফলের চাষ। বাড়ছে ফলটির জনপ্রিয়তাও। সুস্বাদু ও পুষ্টিকর এ ফল সারা দেশে ফল হিসেবে পরিচিতি না থাকলেও এর চাহিদা বাড়তে শুরু করেছে। পানিফল চাষ লাভজনক হওয়ায় প্রতিবছর দেবহাটাসহ সাতক্ষীরা জেলার চাষীরা আগ্রহী হয়ে উঠেছে। মৌসুমে ফল হিসেবে জেলার বিভিন্ন উপজেলাতে ব্যাপক পরিমাণ চাষ হচ্ছে। সদর উপজেলা কৃষি অধিদপ্তরের হিসাবে গতবছর যেখানে চাষের লক্ষমাত্রা ধরা হয়েছিল ১৮-২০ হেক্টর জমিতে হেক্টর প্রতি ৩০ মেট্রিকটন এবছর ১৬ মেট্রিকটন যার উৎপাদন লক্ষ্যমাত্র ছাড়িয়ে দ্বিগুন ছাড়িয়েছে।


এ বছর ২০-২২ হেক্টর জমিতে পানিফলের চাষ হয়েছে। বিগত বছরের তুলনায় জেলার সব উপজেলার পাশাপাশি দেবহাটা উপজেলার সখিপুর, গাজিরহাট, কামটা, কোঁড়া, দেবহাটা, পারুলিয়া, কুলিয়া, বহেরাসহ বিভিন্ন এলাকায় ফলটির চাষ করা হয়েছে। এ চাষ ফসল চাষের জমি, ডোবা, খানা, মৎস্য ঘেরে সুবিধা জনক। সামান্য লবণাক্ত ও মিষ্টি পানিতে চাষ করার সুযোগ থাকায় দিনে দিনে চাষের পরিধি বেড়ে চলেছে। তাছাড়া পানিফল গাছ দেখতে কচুড়িপানার মত পানির উপরে ভেসে থাকে, পাতার গোড়া থেকে শিকড়ের মত ডগা বের হয়ে বংশ বিস্তার করে এবং তাথেকে ফল ধারণ করে। পানি ফল চাষে খুব বেশি প্রশিক্ষনের প্রয়োজন হয় না, সার ও কীটনাশকের পরিমান কম লাগে।


জেলার বিভিন্ন উপজেলার চাষিদের সাথে কথা বললে তারা জানান, পানিফল মৌসুমিও অঞ্চলভিত্তিক হওয়ায় আমরা সঠিক মূল্য ও বাজার তৈরি করতে পারিনি। এটি দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের মৌসুমি ফল বাণিজ্যিক হিসেবে ব্যাপক চাষের পাশপাশি বাজার তৈরি হবে। কালিগঞ্জ উপজেলার কামটা গ্রামের পানিফল ব্যবসায়ী আবদুল আলিম খোকন বলেন, চাষের মৌসুম আসার আগে তিনি অর্ধশতাধিক চাষিদের মাঝে অর্থ বিনিয়োগ করেন। পরবর্তীতে ফলন আসার পরে বাজার দর অনুযায়ী উৎপাদিত ফসল ক্রয় করেন।


এভাবে ৭-৮ বছর তিনি পানি ফল ব্যবসায় নিয়োজিত আছেন। প্রতিদিন তিনি ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, বরগুনা, চিটাগাং, সিলেট, রাজশাহী, বেনাপোল, যশোরসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় এই ফল রপ্তানি করেন। বর্তমান জেলার বাইরের বাজারে ৪০০-৬০০ টাকা মন দরে পাইকারী ভাবে বিক্রি করছেন। তাছাড়া স্থানীয় বাজারে বর্তমানে খুব কম দামে বিক্রি হয়। দেবহাটা উপজেলার পানিফল চাষি রবিউল ইসলাম বলেন, গতবছর অল্প চাষ করছিলাম।


এ বছর তিন বিঘার বেশি জমিতে পানিফল চাষ করছি। ভালো ফলন হলে আগামিতে তিনি আরো বেশি জমিতে এ চাষ করবো। সদর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার শওকত ওসমান জানান, পানিফল চাষ এখনো কৃষির ফসলের আওতায় ধরা হয়নি। তবে, মৌসুমি ফল হিসাবে গণ্য হচ্ছে। আমরা চাষিদের পরামর্শ দিয়ে থাকি। তাছাড়া একদিকে কম খরচ অন্যদিকে অল্প পরিশ্রমে বেশ লাভবান হওয়ায় চহিদা বেড়েছে পানি ফল চাষিদের। পানিফল লাভজনক একটি ফসল। উৎপাদন খরচও কম।


পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ
সম্পাদক ও প্রকাশক: নাজমুল হক শ্যামল
দৈনিক নতুন সময়, গ্রীন ট্রেড পয়েন্ট, ৭ বীর উত্তম এ কে খন্দকার রোড, মহাখালী বা/এ, ঢাকা ১২১২।
ফোন: ৫৮৩১২৮৮৮, ০১৯৯৪ ৬৬৬০৮৯, ইমেইল: info@notunshomoy.com
কপিরাইট © দৈনিক নতুন সময় সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত | Developed By: i2soft
DMCA.com Protection Status