ই-পেপার সোমবার ১৪ নভেম্বর ২০২২
সদস্য হোন |  আমাদের জানুন |  পডকাস্ট |  গুগলী |  ডিসকাউন্ট শপ
শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ ১৫ চৈত্র ১৪৩০
স্বামীকে জেল থেকে ছাড়াতে চাইলে তাকে দেহব্যবসা করতে হবে
নতুন সময় প্রতিবেদক
প্রকাশ: Thursday, 5 August, 2021, 7:30 PM

স্বামীকে জেল থেকে ছাড়াতে চাইলে তাকে দেহব্যবসা করতে হবে

স্বামীকে জেল থেকে ছাড়াতে চাইলে তাকে দেহব্যবসা করতে হবে

"আমার স্বামী জানতো না যে আমি কোথায়। এক মাস পর জেলে যখন আমাদের দেখা হলো তখন আমরা খুব কান্না করেছি। তারা আমাকে বিক্রি করতে যাচ্ছিলো, কিন্তু আমি যাইনি"।

ভারতের পশ্চিমাঞ্চলীয় রাজ্য মহারাষ্ট্রের পুনে শহরের ফরাসখানা পুলিশ স্টেশনে বসে একথা বলছিলেন বাংলাদেশের মাজিদা।

মাজিদা ও তার স্বামী মোহাম্মদ এখন আছেন ফরাসখানা পুলিশ স্টেশনে বা থানা ভবনেই। ফরাসখানা পুলিশ তাদের বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর চেষ্টা করছে।

বাংলাদেশের খুলনার অধিবাসী মোহাম্মদ ও মাজিদার এই ঘটনার সূত্রপাত ২০১৯ সালে। দরিদ্র এই দম্পতির তিন সন্তান আছে।

মোহাম্মদ রিকশা চালাতেন, কিন্তু দুর্ঘটনায় তার এক পা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় তাকে সরকারি হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়েছিলো। সে সময় তার র পরিবারের একমাত্র আয়ের উৎস রিকশাটি চুরি হয়ে যায়।

এদিকে তার মাথায় ছিলো ঋণের বোঝা। মোহাম্মদ ও মাজিদা হতাশ হয়ে পড়েছিলো। মোহাম্মদের এক বন্ধু কাজ দেয়ার আশা দেখিয়ে তাকে ভারতে যেতে অনুরোধ করলো।

তিনি আরও বললেন যে তাদের পাসপোর্ট করা সহ অন্য সব বিষয় তিনিই দেখবেন। ওই বন্ধু তাকে বাংলাদেশেই একজনের সাথে যোগাযোগ করিয়ে দেন যিনি তাদের ভারতে নিয়ে যান এবং পশ্চিমবঙ্গে নিয়ে আরেকজনের হাতে তুলে দেন। সেই ব্যক্তিই ট্রেনে করে তাদের পুনেতে নিয়ে যান।

বাংলাদেশ থেকে পুনের বুধওয়ার পথে

তাদের দুজনকে (মোহাম্মদ ও মাজিদা) পুনের বুধওয়ার পেথ এলাকায় নেয়া হয়। কিন্তু হঠাৎ এক পুলিশী অভিযানে আটক হন মোহাম্মদ।

মাজিদাকে পাচারকারীরা একটি কক্ষে আটকে রেখেছিল। তাকে বলা হয় যে তিনি যদি তার স্বামীকে জেল থেকে মুক্ত করতে চান, তাহলে তাকে দেহব্যবসায় জড়িত হতে হবে।

কিন্তু এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করায় তাকে কয়েকদিন ওই কক্ষে আটকে রাখা হয়। এ সময়টিতে তিনি পার্শ্ববর্তী একটি পুলিশ স্টেশনের কথা জানতে পারেন।

পরে একজন বাঙ্গালী নারীর সহায়তায় তিনি সেখানে যান এবং পুরো ঘটনা খুলে বলেন।

কিন্তু যেহেতু মাজিদা ও মোহাম্মদ ভারতে অবৈধভাবে এসেছেন, সেকারণে পুলিশ মাজিদাকে আটক করে।

আদালতে দুজনই দোষ স্বীকার করে এবং তাদের দুই বছর তিন মাস করে জেল হয়। এই সাজার মেয়াদ শেষ হয় চলতি বছরের ষোলই জুন।

আদালত তাদের কাগজপত্র সংগ্রহ করে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো পর্যন্ত ফরাসখানা থানা হেফাজতে তাদের রাখার নির্দেশ দেয়।

ফলে গত ষোলই জুন থেকে মাজিদা ও মোহাম্মদ ফরাসখানা থানার হেফাজতেই আছেন।

ওই থানার সিনিয়র পুলিশ ইন্সপেক্টর রাজেন্দ্র লান্দাগে মারাঠি সার্ভিসকে বলেছেন, "আদালতের নির্দেশ মতো ওই দম্পতি থানা ভবন ছাড়তে পারবে না। তারা যে বাংলাদেশী তেমন সব প্রমাণ আমরা আদালতে দিয়েছি। এগুলো বাংলাদেশ দূতাবাসে পাঠানো হয়েছে। এখানে আমাদের পুলিশ সদস্যরা তাদের থাকা খাওয়াসহ যাবতীয় সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে।"

সেই থেকে ওই থানার এক কোণে একটি কক্ষ তাদের আবাসস্থল। পুলিশ কনস্টেবল সমীর পাওয়ার নিজের ফোন দিয়ে ওই দম্পতিকে তাদের স্বজনদের সাথে কথা বলার সুযোগ করে দিয়েছেন।

ফোনে ছোট সন্তানকে দেখে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন মাজিদা। তিনি তার সন্তানদের দেখার জন্য উদগ্রীব।

"আমাদের এখন যাওয়ার কোন উপায় নেই। আমার বাচ্চারা কাঁদছে। মা কাঁদছে। প্রতিনিয়ত জানতে চাইছেন যে আমরা কবে ফিরবো। কেন আমরা এতদিন এখানে। আমরা বলেছি ভারত সরকার বাংলাদেশ সরকারের সাথে আলাপ করছে। বাংলাদেশ সরকার অনুমতি দিলেই তারা আমাদের ছেড়ে দিবে। বাড়িতে খাবার নাই। আমার ছেলেমেয়েরা না খেয়ে ঘুমাতে যেতে হচ্ছে," বলছিলেন মাজিদা।

বাড়ির কথা মনে করে মোহাম্মদেরও চোখে পানি। তিনি বলছেন, "আমাদের ঘরের অবস্থা ভালো নয়। ভিক্ষা করে চলে এখন পুরো পরিবার। আমি ছিলাম একমাত্র অবলম্বন। তিন সন্তান আমার ও তাদের মায়ের ফেরার জন্য অপেক্ষা করছে। আমরা দেড় মাস ধরে এখানে আছি। ভারত সরকারের সাথে সব কাগজপত্র নিয়ে কাজ শেষ। জানি না বাংলাদেশ সরকারের দিক থেকে কি হলো। জানিনা আমাদের ছাড়া আর কতদিন পরিবার বাঁচবে"।

ফরাসখানা পুলিশ মোহাম্মদ এবং মাজিদার গ্রামের বাড়ির ঠিকানা বের করেছে। তারা মোহাম্মদের একটি পরিচয়পত্রও পেয়েছে। মাজিদার জন্ম নিবন্ধন সনদও সংগ্রহ করেছে তারা। বাংলাদেশের স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদও জানিয়েছে যে মোহাম্মদ ও মাজিদাকে তারা চেনে।

মোহাম্মদ বলছেন তিনি আবার বাড়ি ফিরে কাজ করে পরিবারের পাশে দাঁড়াতে চান। "না হলে ভারতে আমাকে কাজের সুযোগ দিন যাতে করে অর্থ উপার্জন করে দেশে পাঠাতে পারি"।

মোহাম্মদ ও মাজিদা এখন ফেরার অপেক্ষায় এবং তাদের তিন সন্তান বাবা-মায়ের পথ চেয়ে অপেক্ষা করছে।

বাড়িতে তাদের ফোন নেই। কনস্টেবল সমীর পাওয়ার তাদের এক আত্মীয়ের ফোনে কল দিয়ে কথা বলিয়ে দেন। কিন্তু যখনই ফোন দেন মাজিদার চোখ ভরে ওঠে অশ্রুতে।

পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ
সম্পাদক ও প্রকাশক: নাজমুল হক শ্যামল
দৈনিক নতুন সময়, গ্রীন ট্রেড পয়েন্ট, ৭ বীর উত্তম এ কে খন্দকার রোড, মহাখালী বা/এ, ঢাকা ১২১২।
ফোন: ৫৮৩১২৮৮৮, ০১৯৯৪ ৬৬৬০৮৯, ইমেইল: info@notunshomoy.com
কপিরাইট © দৈনিক নতুন সময় সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত | Developed By: i2soft
DMCA.com Protection Status