ই-পেপার সোমবার ১৪ নভেম্বর ২০২২
সদস্য হোন |  আমাদের জানুন |  পডকাস্ট |  গুগলী |  ডিসকাউন্ট শপ
শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ৬ বৈশাখ ১৪৩১
করোনায় শিক্ষকদের বসে বসে ‘হারাম’ খাওয়া নিয়ে কিছু কথা
সৌভিক রেজা
প্রকাশ: Monday, 7 June, 2021, 9:41 PM

করোনায় শিক্ষকদের বসে বসে ‘হারাম’ খাওয়া নিয়ে কিছু কথা

করোনায় শিক্ষকদের বসে বসে ‘হারাম’ খাওয়া নিয়ে কিছু কথা

বৃহস্পতিবার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় খোলার দাবিতে গলায় প্রতীকি ফাঁস দিয়ে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ

 
এই করোনাকালে আমরা সবাই কম-বেশি বিপর্যস্ত, শারীরিক-মানসিক-আর্থিক নানাভাবে। করোনায় ব্যক্তিগতভাবে শোকের অভিজ্ঞতা হয়নি—এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া কঠিন। সবাই নানাভাবে একটা নাজুক পরিস্থিতি পার করছি।


এটা সত্যি যে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের বেশিরভাগই অর্থনৈতিকভাবে একটা নাজুক পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে চলেন। টিউশনি করিয়ে, নোটবই লিখে, এটা-ওটা করে নিজেদের পড়াশোনার খরচ মেটানোর পাশাপাশি অনেককেই বাড়িতেও বাবা-মাকে খানিকটা সহায়তা করতে হয়। এতে দোষের কিছু নেই। আজ যারা জীবনে প্রতিষ্ঠিত, তাদেরও অনেকেই এসব করেছেন। দুঃখের বিষয় এই যে, বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠিত মানুষ সেসব দিনের কথা ভুলতে পারলে স্বস্তি পান।


করোনায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো সঙ্গত কারণে বন্ধ থাকায় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্থিকভাবে নাজুক শিক্ষার্থীরা দুই দিক থেকে বিপদে রয়েছেন। প্রথমত, নিজদের পড়াশোনার ক্ষতি এবং দ্বিতীয়ত যে অর্থনৈতিক উপার্জনটুকুর কথা বলেছি, সেটিও বন্ধ। ফলে তারা যে একটা অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছেন, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। আর এই অনিশ্চয়তা থেকে অনিবার্য প্রতিক্রিয়ায় তাদের মধ্যে হতাশা জন্ম নিচ্ছে।


আবার এ-ও ঠিক যে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী-শিক্ষক-কর্মচারীদের সবাইকে করোনা ভ্যাকসিনের আওতায় না এনে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়াটা হবে একাধারে হঠকারী এবং আত্মঘাতী। এর ফলাফল পুরো জাতিকে বহন করতে হবে। কিন্তু করোনার ভ্যাকসিন নিয়ে সরকারের কিছু ভুল সিদ্ধান্ত, শুধু শিক্ষার্থীদেরই নয়, দেশের প্রতিটি নাগরিককেই আরও বিপদের মুখে ঠেলে দিয়েছে।


সবকিছু মিলিয়ে শিক্ষার্থীরা ক্ষুব্ধ। আর সেইসব ক্ষোভ যতটা না তারা সরকার ও যথাযথ কর্তৃপক্ষের উপর প্রকাশ করছেন, তারও চেয়ে বেশি দোষ দিচ্ছেন সাধারণ শিক্ষকদের।


গত কয়েকদিনের ফেইসবুকে একটা কথা খুব শোনা যাচ্ছে, শিক্ষকেরা বসে-বসে ‘হারাম’ বেতন নিচ্ছেন, ‘হারাম’ খাচ্ছেন!


ক্ষোভ ও হতাশা বেশিরভাগ সময় মানুষকে যুক্তি-বুদ্ধি আর বিবেচনার পথ থেকে সরিয়ে দেয়। এ ক্ষেত্রেও তেমনটা ঘটেছে বলে মনে করি।


শিক্ষকরা বসে বসে বেতন নিচ্ছেন? তাহলে দিনের পর দিন সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত খরচে অনলাইনে যে ক্লাসগুলো নেয়া হলো, সেগুলো কি একেবারে বৃথা গেল? এটার প্রস্তুতি নিতে শিক্ষকদের পড়াশোনা করতে হয়নি? প্রযুক্তিগত, কারিগরি বিদ্যা সামান্য হলেও কি আয়ত্ত করতে হয়নি? তাহলে বসে বসে বেতন নেওয়া, ‘হারাম’ খাওয়ার কথা কীভাবে উঠতে পারে?


বসে বসে বেতন নেওয়া, ক্লাস নেওয়াটা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের একটা বড়ো দায়িত্ব বটে, পাশাপাশি গবেষণা, লেখালেখির কাজে ব্যস্ত থাকাটাও তাদের চাকরির শর্তের সঙ্গে প্রাসঙ্গিক। এটা অনেক সময়ই আমরা মনে রাখি না। শিক্ষকদের অনেকেই যেমন সেটা ভুলে যান আবার শিক্ষার্থীদের অনেকেরই হয়তো বিষয়টা জানা নেই।


বসে বসে হারাম খাচ্ছেন? বিশ্ববিদ্যালয় এক সময় খুলবে। পিছিয়ে থাকা ক্লাসগুলোর জন্যে বাড়তি সময় দিতে হবে—তার জন্যেও তো মানসিক প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছেন অনেক শিক্ষক। তারা দিনের পর দিন রাত জেগে পড়াশোনা করছেন; শুধু তা-ই নয়, নতুন করে শুরু করা সেইসব ক্লাসের অবয়ব কেমন হবে সেসব নিয়ে ভাবছেন, সহকর্মীদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করছেন। তারপরও শুনতে হবে এই অভিযোগ যে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা বসে-বসে বেতন তুলছেন!


সময়টা এখন পারস্পরিক দোষারোপের নয়—এইটা সবার আগে সবাইকে বুঝতে হবে। শিক্ষকরা চাইলেই এখন যেমন বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দিতে পারেন না, তেমনি খুলে দিলেই শিক্ষার্থীরা সব দলে-দলে এসে হাজির হবেন সেটাও মনে কারবার কোনো কারণ নেই। কারণ করোনার প্রভাব দেশের সর্বত্র। বিশ্ববিদ্যালয় তো দেশের, সমাজের বাইরে নয়। আর বাইরের নয় বলেই জনগণের পক্ষে কথা বলতে গিয়ে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের দু’জন শিক্ষককে কারাবরণ করতে হয়েছে এই করোনায়। শিক্ষার্থীদের স্বার্থ নিয়ে প্রতিবাদ জানানোর দায়ে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের তিনজন শিক্ষককে চাকুরি থেকে অপসারণ করা হয়েছে। এসবও তো মনে রাখতে হবে।


সবাইকেই এখন শান্ত থাকতে হবে। বিষয়গুলো গভীরভাবে পর্যালোচনা করতে হবে। যেমন, রাজশাহীতে এখন করোনা-পরিস্থিতি রীতিমতো উদ্বেগজনক। এই অবস্থায় বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দিলে কোনো সচেতন অভিভাবক তাদের সন্তানকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠাতে সম্মত হবেন, হবেন কি আদৌও?


ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্ক যুদ্ধের নয়। বরং পারস্পরিক নিবিড় আর সৌহার্দ্যের। এখানে কেউ কারো শত্রু নয়। শিক্ষার্থীদের জন্যেই শিক্ষক আবার শিক্ষকদের জন্যেই শিক্ষার্থী। এইভাবেই জ্ঞান-বিজ্ঞানের চর্চা যুগ যুগ ধরে এগিয়ে চলেছে।


সবাই সুস্থ ও নিরাপদে থাকুন।


লেখখ: সৌভিক রেজা: অধ্যাপক, বাংলা বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।

পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ
সম্পাদক ও প্রকাশক: নাজমুল হক শ্যামল
দৈনিক নতুন সময়, গ্রীন ট্রেড পয়েন্ট, ৭ বীর উত্তম এ কে খন্দকার রোড, মহাখালী বা/এ, ঢাকা ১২১২।
ফোন: ৫৮৩১২৮৮৮, ০১৯৯৪ ৬৬৬০৮৯, ইমেইল: info@notunshomoy.com
কপিরাইট © দৈনিক নতুন সময় সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত | Developed By: i2soft
DMCA.com Protection Status