গোপনে শক্তি সঞ্চয় করছে সরকার-বিরোধীসহ জঙ্গী গোষ্ঠীগুলো। খোদ রাজধানীতেই ওদের গোপন আস্তানার তথ্যও আসছে গোয়েন্দাদের কাছে। বিশেষ করে নিজামী-সাঈদীপন্থী জামাতে ইসলামীর বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা ও কর্মীরা এতোটাই শক্তিশালী হয়ে উঠছে যে, ওদের সামনে প্রশাসনের বড় একটা অংশ রীতিমত অসহায় হয়ে পড়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
গত ৯ই মার্চ স্বরাষ্ট্র সচিব (জননিরাপত্তা) এর কাছে একটি দরখাস্ত জমা দিয়েছেন জনৈক ব্যক্তি। সেখানে তিনি উল্লেখ করেছেন রাজধানীর উত্তরা আবাসিক এলাকার ৫ নম্বর সেক্টরে শাহানা রশিদ শানু নামীয় এক নারী ও তার দুই সন্ত্রাসী পুত্র রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের অনুমতির তোয়াক্কা না করেই রাজউক অনুমোদিত ৪ তলা ভবনে অবৈধভাবে একাধিক ফ্লোর নির্মাণ করে সেগুলো বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানকে ভাড়া দিয়েছেন। আর এসব বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের আড়ালে সেখানে গড়ে উঠেছে জামাতে ইসলামীর গোপন আস্তানা। গত ২৮শে ফেব্রুয়ারী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে রাজউকের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ টিম ওই বাড়ীতে উপস্থিত হলে শাহানা রশিদ শানু ও তাঁর দুই ছেলে উপস্থিত ম্যাজিস্ট্রেট এবং পুলিশ সদস্যদের শাসাতে থাকেন। শাহানা চিৎকার করে বলেন, "এই বাড়ীতে পুলিশ কেনো পুলিশের বড় অফিসাররা এলেও আমার বাড়ীতে হাত দিলে হাত ভেঙ্গে দেয়া হবে। অভিযানের নামে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস চালাতে দেয়া হবেনা। প্রয়োজনে আমি রাস্তায় নামবো, আন্দোলন করবো।"
শাহানা রশীদের এই বেপরোয়া মনোভাবের পেছনে মূলত জামাতে ইসলামীসহ সরকার বিরোধী অপশক্তি জড়িত। স্বরাষ্ট্র সচিবের কাছে আসা লিখিত অভিযোগে জানা গেছে, জামাতের প্রভাবের কারণেই ২৮শে ফেব্রুয়ারী রাজউকের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ টিম উত্তরার ওই বাড়ীতে অবৈধভাবে নির্মিত এবং বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নিয়েই ফেরত যেতে বাধ্য হয়।
এদিকে পুলিশের একটি সূত্র বলছে, শাহানা রশিদ শানু এবং তার দুই সন্ত্রাসী পুত্রের কারণে প্রতিবেশীরা বিরক্ত। ওই বাড়ীতে প্রায়ই রাতের গভীরে কিছু সন্দেহজনক লোকজন আসে। ওদের সাথে একাধিক ভিডিও ক্যামেরাও থাকে। এরা ওই বাড়ীর বিভিন্ন ফ্লোরে ঘণ্টার পর ঘন্টা গোপনে কিছু করেন। প্রতিবেশীদের ধারণা, সরকার বিরোধী বিভিন্ন ইউটিউব কন্টেন্ট তৈরী করতেই বাইরের লোকজন সেখানে রাতের গভীরে প্রায় নিয়মিতই আসা-যাওয়া করে।
আরো জানা গেছে, ওই বাড়ীতে জামাত নেতাদের গোপন অফিসের পাশাপাশি একাধিক গুদাম আছে, যেখানে সন্দেহজনক রাসায়নিক এবং জেল-জাতীয় পদার্থের ব্যাপক মজুত রয়েছে।
শানুর বড় ছেলে কানাডার নাগরিক। তিনি নিজেও তার মা এবং ভাইদের অবৈধ কার্যকলাপের কারণে ক্ষুব্ধ। এবিষয়ে তিনি টরোন্টোতে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসের এবং কানাডার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে লিখিত অভিযোগ করেছেন।
উত্তরার ৫ নম্বর সেক্টরে অবস্থিত ভবনটির রাজউক আইন বহির্ভূত বাণিজ্যিক ব্যাবহার প্রসঙ্গে সংস্থাটির পক্ষ থেকে জানানো হয়, রাজউকের টিম ২৮ ফেব্রুয়ারী ওই ভবনের ৫ তলার অবৈধ ফ্লোরটি সিলগালা করে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেছে। অন্য ফ্লোরে আর কোনো বাণিজ্যিক স্থাপনা আছে কিনা তা সরেজমিন তদন্তের ব্যাবস্থা নেয়া হয়েছে।
সূত্রটি জানায়, ক্রমাগত রাজউক আইন লঙ্ঘিত হলে প্রয়োজনে লীজ বাতিলের ক্ষমতা রাজউকের আছে। এক্ষেত্রেও উত্তরার ওই বাড়ীতে রাজউকের আইন অমান্য এবং উচ্ছেদ টিমকে বাঁধা দেয়ার পাশাপাশি সরকার বিরোধী কোনো চক্রকে সেখানে গোপন অপতৎপরতা চালানোয় সহায়তার বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। প্রয়োজনে এবিষয়ে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হতে পারে।
এদিকে অন্য একটি সূত্র জানায়, ঢাকা শহরের গুলশান, বনানী, ধানমন্ডি, নিকুঞ্জ এবং উত্তরা আবাসিক এলাকায় হাজার-হাজার বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান আছে। যেগুলো উচ্ছেদ করা কঠিন। কারণ, উচ্ছেদ হলেও পরবর্তীতে ভবনগুলোর মালিকরা আবারও সেখানে বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান বসাচ্ছেন। এক্ষেত্রে সরকারের নীতিনির্ধারকদের উচিত আইন অমান্যকারী ভবন মালিকদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া। প্রয়োজনে লীজ বাতিলের মতো ব্যাবস্থা নিলেই এ ধরনের অবৈধ কার্যকলাপ বন্ধ করা সম্ভব।